রাজনীতি, আন্তর্জাতিক রাজনীতি এবং সমসাময়িক ঘটনাবলীর বিশ্লেষণ সংক্রান্ত অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর রেহমানের একটি ওয়েবসাইট। লেখকের অনুমতি বাদে এই সাইট থেকে কোনো লেখা অন্য কোথাও আপলোড, পাবলিশ কিংবা ছাপাবেন না। প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন লেখকের সাথে

ভবিষ্যতের পথ মসৃণ নয়

গত ১৪ আগস্ট ছিল যুক্তরাষ্ট্র ও কিউবার মাঝে ‘নয়া সম্পর্ক’ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য একটি দিন। ওইদিন কিউবার রাজধানী হাভানায় দীর্ঘ ৫৪ বছর পর আবারো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পতাকা ওড়ানো হয়। ১৯৬১ সালে এই পতাকা নামিয়ে ফেলা হয়েছিল। আবার এই পতাকা উঠল। গত ডিসেম্বর (২০১৪) থেকেই দু’দেশের মধ্যে সম্পর্কের বরফ গলতে শুরু করেছে। ১৭ ডিসেম্বর বারাক ওবামা পুনরায় কিউবার সঙ্গে সম্পর্ক উন্নত করার কথা বলেন। এরই ফলে ২১ জানুয়ারি থেকে আলোচনা শুরু হয় এবং গত ২০ জুলাই ওয়াশিংটনে কিউবা তার দূতাবাস খোলে। এর আগে গত ১২ এপ্রিল (২০১৫) মধ্য আমেরিকার দেশ পানামায় আমেরিকান দেশগুলোর তিনদিনব্যাপী শীর্ষ সম্মেলনে ওবামা ও কিউবার প্রেসিডেন্ট রাউল ক্যাস্ট্রো এক ঐতিহাসিক বৈঠক করেছিলেন। দু’দেশের মধ্যে সম্পর্ক পুনঃস্থাপিত হয়েছে, এটা ভালো দিক। কিন্তু যেতে হবে অনেকদূর। মার্কিন কংগ্রেস এখন নিয়ন্ত্রণ করে রিপাবলিকানরা। তারা যুক্তরাষ্ট্র-কিউবা সম্পর্ককে কীভাবে দেখে, সেটাই বড় প্রশ্ন। আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ছাত্রদের কাছে যুক্তরাষ্ট্র-কিউবা সম্পর্ক অনেকদিন ধরেই আলোচনার একটি বিষয় হয়েছিল। কিউবা কি আদৌ তার সমাজতান্ত্রিক নীতি পরিত্যাগ করবে, নাকি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ‘আবারো’ হাভানায় সরকারের উৎখাতের উদ্যোগ নেবে এসব প্রশ্ন বারবার মিডিয়ায় ও বিভিন্ন পর্যবেক্ষকের লেখনীতে উঠে আসছিল। ১৯৯১ সালের ডিসেম্বরে পূর্ব ইউরোপে ‘সোভিয়েত ধাঁচের’ সমাজতন্ত্রের পতনের রেশ ধরে সোভিয়েত ইউনিয়নে যখন সমাজতন্ত্রের পতন ঘটল তখন বলতে গেলে সারাবিশ্বের দৃষ্টি এক রকম নিবদ্ধ ছিল কিউবার দিকে। কেননা কিউবা ছিল সোভিয়েত সমাজতন্ত্রের অন্যতম ক্ষেত্র এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের মিত্র। দ্বিতীয় প্রশ্ন ছিল কিউবার অর্থনীতির অন্যতম উৎস সেই সঙ্গে নিরাপত্তার অন্যতম গ্যারান্টার ছিল সোভিয়েত ইউনিয়ন। সোভিয়েত ইউনিয়নের অবর্তমানে অর্থনৈতিকভাবে কিউবা টিকে থাকতে পারবে কিনা এ প্রশ্নটি বারবার উচ্চারিত হয়েছে। একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের ‘আগ্রাসনের’ মুখে থেকে কিউবা তার অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে পারবে কিনা, এ নিয়েও প্রশ্ন ছিল। আরো একটি প্রশ্ন সমাজতান্ত্রিক বিশ্বে আলোচিত হচ্ছিলÑতা হচ্ছে কিউবা কি আদৌ তার সমাজতান্ত্রিক নীতিতে কোনো পরিবর্তন আনবে? কেননা চীন ও ভিয়েতনামের মতো দেশেও স্নায়ুযুদ্ধের অবসানের পর পরিবর্তন এসেছে। এই দুটি দেশ এখন আর ধ্রুপদী মার্কসবাদ অনুসরণ করে না। তাই খুব সঙ্গতকারণেই প্রশ্ন ছিল কিউবা চীন বা ভিয়েতনামের পথ অনুসরণ করবে কিনা? কিউবা-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের ক্ষেত্রে প্রধান অন্তরায় ছিল কিউবার নিরাপত্তাহীনতা। যুক্তরাষ্ট্র কখনই কিউবায় একটি সমাজতান্ত্রিক সরকারকে স্বীকার করে নেয়নি। বরং কিউবায় বিপ্লবের পর (১৯৫৯) কিউবা সরকার যখন লাতিন আমেরিকাজুড়ে বিপ্লব ছড়িয়ে দিতে চাইল, চে গুয়েভারা যখন ‘বিপ্লব’ সম্পন্ন করার জন্য কিউবা সরকারের মন্ত্রিত্ব ত্যাগ করে বলিভিয়ায় গেলেন (সেখানেই তাকে পরে হত্যা করা হয়), তখন যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন ক্ষমতাসীনদের কাছে ভিন্ন একটি বার্তা পৌঁছে দিয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্র কখনই চায়নি ‘তার প্রভাবাধীন এলাকায়’ অন্য কোনো ‘শক্তি’ প্রভাব খাটাক। ‘মনরো ডকট্রিন’ এর আদলে যুক্তরাষ্ট্র চেয়েছে এ এলাকায় তথা লাতিন আমেরিকায় তার পূর্ণ কর্তৃত্ব। কিন্তু কিউবার বিপ্লব যুক্তরাষ্ট্রের এই ‘হিসাব-নিকাশ’-এ বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়। যুক্তরাষ্ট্র কিউবা বিপ্লবের মাত্র দু’বছরের মধ্যে ১৯৬১ সালে ভাড়াটে কিউবানদের দিয়ে কিউবা সরকারকে উৎখাতের চেষ্টা চালায়। সিআইয়ের অর্থে পরিচালিত এই অভিযান ‘বে অব পিগস’-এর অভিযান হিসেবে খ্যাত। বলাই বাহুল্য ওই অভিযান ব্যর্থ হয়েছিল। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র থেমে থাকেনি। ঠিক এর পরের বছর ১৯৬২ সালের অক্টোবরে ‘কিউবা সংকট’ একটি পারমাণবিক যুদ্ধের সম্ভাবনার জš§ দিয়েছিল। ওই সময় যুক্তরাষ্ট্র অভিযোগ করেছিল কিউবায় সোভিয়েত ইউনিয়ন পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র বসিয়েছে, যা তার নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ। সোভিয়েত ইউনিয়ন কিউবায় ক্ষেপণাস্ত্র স্থাপন করেছে, এটা বিবেচনায় নিয়েই যুক্তরাষ্ট্র একটি নৌ অবরোধ আরোপ করে যাতে কিউবায় কোনো ধরনের সামাজিক মারণাস্ত্র সরবরাহ করা না যায়। ওই নৌ অবরোধ অনেকটা সোভিয়েত ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্রকে একটি যুদ্ধের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেয়। ভবিষ্যতের পথ মসৃণ নয়সোভিয়েত ইউনিয়ন তখন দাবি করে যুক্তরাষ্ট্রকে তুরস্ক থেকে তাদের পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রত্যাহার করে নিতে হবে। দীর্ঘ ১৩ দিন ওই নৌ অবরোধ বহাল ছিল। অবশেষে যুক্তরাষ্ট্র তুরস্ক থেকে মিসাইল প্রত্যাহার করে নিলে সোভিয়েত ইউনিয়নও কিউবা থেকে ক্ষেপণাস্ত্রগুলো সরিয়ে নেয়। এর মধ্য দিয়ে পারমাণবিক যুদ্ধের সম্ভাবনা কমে গেলেও সংকট থেকে গিয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্র কিউবার বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপ করে। দীর্ঘ ৫৪ বছর ধরে ওই অর্থনৈতিক অবরোধের বিরুদ্ধে কিউবা ‘যুদ্ধ’ করে আসছে। স্নায়ুযুদ্ধের অবসানের পরও মার্কিন দৃষ্টিভঙ্গিতে কোনো পরিবর্তন আসেনি। প্রেসিডেন্ট ওবামা সম্পর্ক উন্নয়নের ও বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের কথা বললেও এটি খুব সহজ হবে না। কেননা ওবামাকে এ সংক্রান্ত একটি আইন পাস করাতে হবে। কিন্তু সমস্যাটা হচ্ছে কংগ্রেসে তার একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নেই। কংগ্রেসের উভয় কক্ষ এখন নিয়ন্ত্রণ করে রিপাবলিকানরা। রিপাবলিকানরা ওবামার উদ্যোগের ব্যাপারে খুশি নন। একাধিক কংগ্রেস সদস্য তথা সিনেটরের বক্তব্য শুনেছি, যেখানে তারা নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে ওবামার এই উদ্যোগের সমালোচনা করেছেন। সিনেটর জন মেককেইন ও সিনেটর লিন্ডসে গ্রাহাম এক বিবৃতিতে জানিয়েছিলেন, প্রেসিডেন্ট ওবামার এই সিদ্ধান্ত বিশ্বে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবকে সংকুচিত করবে। অন্যদিকে সিনেটর রয় ব্লান্ট মনে করেন, এই ঘোষণা রাহুল ক্যাস্ট্রোকে ক্ষমতায় রাখতে সাহায্য করবে। ডেমোক্রেট দলীয় সিনেটর রবার্ট মেনডেজ মনে করেন, প্রেসিডেন্ট ওবামার এই সিদ্ধান্ত হচ্ছে কিউবার মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ও স্বৈরশাসনকে স্বীকার করে নেয়া। সিনেটর মেনডেজ নিজে কিউবা-আমেরিকান। এতে ধারণা করা স্বাভাবিক যে, কিউবার ওপর থেকে বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার সংক্রান্ত কোনো আইনকে কংগ্রেসকে অনুমোদন দেবে না। ফলে ওবামার ঘোষণা ও উদ্যোগ শেষ পর্যন্ত ‘একটি ঘোষণা’ হিসেবেই থেকে যেতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের আইনপ্রণেতাদের দাবি কিউবায় আরো বেশি গণতন্ত্রায়ণ। আরো বেশি অর্থনৈতিক উদারীকরণ। মানবাধিকার পরিস্থিতির আরো উন্নতি। একই সঙ্গে রাজনৈতিক সংস্কার। এটাই হচ্ছে মোদ্দা কথা। বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের শর্তে কিউবা সব কিছু ‘উš§ুক্ত’ করে দেবে না। সোভিয়েত ইউনিয়নে গর্বাচেভের সংস্কার কর্মসূচির ফলাফল তাদের অজানা নয়। সংস্কার, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক আনতে গিয়েই সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে গিয়েছিল। চীন ও ভিয়েতনামে অর্থনৈতিক সংস্কার এসেছে। কিন্তু রাজনৈতিক সংস্কার আসেনি। অর্থাৎ সোভিয়েত ইউনিয়নের সংস্কার কর্মসূচির ‘পেরেস্ক্রোইকা’ বাস্তবায়ন হয়েছে। কিন্তু ‘গ্লাসনোস্ট’ কার্যকরী হয়নি। রাজনৈতিক সংস্কার আসেনি। কিউবাতে কোনোটাই আসেনি। চীন তার সংস্কার কর্মসূচির সফল বাস্তবায়নের মাধ্যমে বিশ্বের দ্বিতীয় অর্থনৈতিক শক্তিতে পরিণত হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র চীন থেকে এখন ঋণ গ্রহণ করছে। ভিয়েতনামও কম যায়নি। যে ভিয়েতনাম প্রায় ৪০ বছর আগে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যুদ্ধ করেছে, তারাই আজ যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম মিত্র। ভিয়েতনামের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যের পরিমাণ প্রায় ৩০ বিলিয়ন ডলার। যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি পোশাকের যে বিশাল চাহিদা তার একটা বড় অংশ ভিয়েতনাম সরবরাহ করছে। এখানে ‘রাজনীতি’ অগ্রাধিকার পায়নি। পেয়েছে বাণিজ্য। এখন কিউবা কী প্রতিক্রিয়া দেখায়, তাও দেখার বিষয়। তবে হুট করে দু’দেশের সম্পর্কে কোনো বড় পরিবর্তন আসবে না। প্রেসিডেন্ট রাহুল ক্যাস্ট্রো ইতোমধ্যে জানিয়ে দিয়েছেন, ওবামার এই প্রস্তাবের ভিত্তিতে কিউবার রাষ্ট্রব্যবস্থায় কোনো পরিবর্তন আসবে না। কিউবার জনগণ এখনো কিউবার সরকারকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছেন। তবে এটাও ঠিক বিশ্বায়নের এই যুগে কিউবা ‘একা একা’ চলতে পারবে না। দেশটিকে ‘দুয়ার উš§ুক্ত’ করে দিতে হবেই। দেশের অর্থনীতির শতকরা ৮০ ভাগ এখনো সরকার নিয়ন্ত্রিত। কিছু কিছু ক্ষুদ্র ব্যবসা বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। সারাদেশে এ সংখ্যা প্রায় ৪ লাখ ৫০ হাজার। বেসরকারি খাত সম্প্রসারণের সুযোগ রয়েছে। বিশেষ করে ট্যুরিজম খাত। এ খাত কিছুটা উš§ুক্ত করা হয়েছে। আরো উš§ুক্ত করা হলে, যুক্তরাষ্ট্রের হোটেল চেন ব্যবসায়ীরা এই খাতে বিনিয়োগে এগিয়ে আসবে। কিউবাতে সীমিত আকারে ‘ডলারবাণিজ্য’ হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত কিউবার আমেরিকান পাঠানো অর্থ এখন নিয়মিত কিউবাতে আসছে। ক্রেডিট কার্ড ব্যবহƒত হচ্ছে। তবে একটা সমস্যা রয়েছে। কিউবা প্রতিদিন এক লাখ ব্যারেল তেল ‘অত্যন্ত কম মূল্যে’ ভেনিজুয়েলা থেকে পেয়ে আসছে। এর বিনিময়ে কিউবা ডাক্তার, নার্স, শিক্ষক দিচ্ছে। এসব ডাক্তার, নার্স আর শিক্ষক এখন ভেনিজুয়েলার হয়ে ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জে কাজ করছেন। পুরো ব্যয়ভার বহন করছে ভেনিজুয়েলা। প্রয়াত হুগো শ্যাভেজ এই পরিকল্পনা শুরু করলেও বর্তমান প্রেসিডেন্ট মাদুরো এই পরিকল্পনা কতদিন টিকিয়ে রাখতে পারবেন, এ প্রশ্ন ইতোমধ্যেই উঠেছে। কেননা ভেনিজুয়েলার রমরমা তেল ব্যবসার দিন শেষ। অর্থনীতি আগের মতো আর শক্তিশালী নয়। রাজধানী কারাকাসে বিশাল বিশাল ভবন খালি পড়ে আছে। বিদেশি বিনিয়োগকারীরা আসছেন না। রাজনৈতিক অস্থিরতা বাড়ছে। এরই মাঝে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভেনিজুয়েলার সম্পর্কের অবনতি ঘটেছে। ভেনিজুয়েলার ওপর বাণিজ্যিক, নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। যখন ওবামা কিউবার সঙ্গে সম্পর্ক উন্নত করার উদ্যোগ নেন, তার ঠিক একদিন পর ১০ ডিসেম্বর এই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। এই নিষেধাজ্ঞা আরোপের ঘটনাকে যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটর মেনডেজ ‘ভেনিজুয়েলার জনগণের বিজয়’ হিসেবে চিহ্নিত করেছিলেন। গত এপ্রিল থেকেই সেখানে অসন্তোষ চলছে। যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে বেশ কয়েকজন ভেনিজুয়েলার ভিআইপির ব্যাপারে। সম্পদ আটক থেকে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞাও রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগ, ভেনিজুয়েলার মারাত্মক মানবাধিকার পরিস্থিতির অবনতির। এটা সত্য, হুগো শ্যাভেজের মৃত্যুর পর ভেনিজুয়েলায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক নয়। কিন্তু এর চাইতেও খারাপ পরিস্থিতি বিরাজ করছে কলম্বিয়ায় কিংবা মেক্সিকোতে, যেখানে গেল বছর ৪৩ স্কুলশিক্ষার্থীকে অপহরণ করে হত্যা করা হয়। কিন্তু সেখানে কোনো বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়নি। ভেনিজুয়েলার বিষয়টি যে পরিপূর্ণ রাজনৈতিক, তা আর কাউকে বলে দিতে হয় না। এখন খুব সংগত কারণেই ভেনিজুয়েলার ওপর মার্কিনী ‘চাপ’ যদি বাড়ে তাহলে কিউবাকে দেয়া তাদের আর্থিক সহযোগিতা বন্ধ হয়ে যাবে। ফলে তা কিউবার অর্থনীতিকে আঘাত করবে। কিউবার সঙ্গে সম্পর্ক উন্নত করে খোদ যুুক্তরাষ্ট্রও উপকৃত হতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্য খাত মারাত্মক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র পর্যাপ্ত ডাক্তার, নার্স, কিংবা স্বাস্থ্যকর্মী তৈরি করতে পারছে না। স্বাস্থ্যকর্মীদের একটা বড় অংশ আসছে বাইরে থেকে। এ ক্ষেত্রে কিউবার স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা জগদ্বিখ্যাত। তারা যুক্তরাষ্ট্রের এই চাহিদা পূরণ করতে পারে। ২০০২ সালে ফিদেল ক্যাস্ট্রো এ ধরনের একটি প্রস্তাব যুক্তরাষ্ট্রকে দিয়েছিলেন। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র তা গ্রহণ করেনি। গেল বছর পশ্চিম আফ্রিকায় মারাত্মক ইবোলো রোগ ছড়িয়ে পড়ায়, কিউবার স্বাস্থ্যকর্মীরা সেখানে গেছেন। এখন কিউবার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের উন্নত হলে যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্য খাতে উপকৃত হতে পারে। তবে মূল সমস্যাটিই হচ্ছে মানসিকতার। যুক্তরাষ্ট্রের আইন প্রণেতাদের মানসিকতায় কী পরিবর্তন আসে, সেটাই এখন দেখার বিষয়। গত ১৪ আগস্ট হাভানায় যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসে মার্কিন পতাকা উত্তোলনকালে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র সচিব জনকেরি বলেছেন, কিউবা এখন আর শত্রু নয়, বন্ধু। বাস্তব ক্ষেত্রে এই ‘বন্ধুত্ব’ কতটুকু প্রতিফলিত হয়, তাও দেখার বিষয় এখন। তবে সম্পর্ক জোরদারকরণের পথটা মসৃণ নয় এবং এ ক্ষেত্রে বেশি প্রতিকূলতা-প্রতিবন্ধকতা রয়েছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার। Daily Manobkontho 19.08.15

0 comments:

Post a Comment