বান্দরবানের
থানচির বলিপাড়া মদক ও বাতংপাড়া এলাকায় বিজিবির সঙ্গে মিয়ানমারের
বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির গোলাবিনিময়ের পর যে প্রশ্নটি বড় হয়ে
দেখা দিয়েছে, তা হচ্ছে এ ঘটনা বাংলাদেশ-মিয়ানমার সম্পর্কের ক্ষেত্রে আদৌ
কোনো প্রভাব ফেলবে কি না? সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের সঙ্গে মিয়ানমারের
সম্পর্ক খুব ভালো যাচ্ছে এটা বলা যাবে না। রোহিঙ্গা শরণার্থী প্রশ্নে কিংবা
বিজিবির নায়েক আবদুর রাজ্জাকের অপহরণ ও পরে ফেরত দেয়ার ঘটনার
পরিপ্রেক্ষিতে সম্পর্ক কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আবার দ্বিপক্ষীয় আলোচনায়
সাগরে ভাসা বেশ কিছু বাংলাদেশিকে মিয়ানমার থেকে ফেরত আনার ঘটনায় দুই দেশের
মাঝে আস্থা ও বিশ্বাসের সম্পর্ক কিছুটা ফিরে এসেছে, এটাও সত্য। তবে আরাকান
আর্মির গুলিবর্ষণের ঘটনার সঙ্গে মিয়ানমার বর্ডার গার্ড পুলিশ বা বিজিপির
কোনো সম্পর্ক নেই। এবং আরাকান আর্মি ২০০৯ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকেই বিজিপি
তথা মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধ করে আসছে। ফলে এ ক্ষেত্রে আরাকান
আর্মি বাংলাদেশের মাটি ব্যবহার করে তাদের অপতৎপরতা চালাবে, এটা চলতে দেয়া
যায় না। বিজিবি ইতোমধ্যে সীমান্তে তাদের তৎপরতা বাড়িয়েছে।
বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে ১১৭ কিলোমিটার কাঁটাতারের বেড়া দেয়ার সিদ্ধান্ত
হয়েছে। নতুন আরো ৮৫টি বিওপি বা সীমান্ত ঘাঁটি নির্মাণের সিদ্ধান্ত হয়েছে।
এসব সিদ্ধান্ত ভালো এবং তা আমাদের সীমান্ত রক্ষায় বড় অবদান রাখবে। এখানে
একটা কথা বলা প্রয়োজন, আরাকান আর্মি মিয়ানমারে একটি নিষিদ্ধ সংগঠন। আগামী ৮
নভেম্বর মিয়ানমারে সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এ নির্বাচনকে
কেন্দ্র করে প্রেসিডেন্ট থেইন মেইন যে ১৫টি বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীর সঙ্গে
সংলাপ শুরু করেছেন, তার মাঝে আরাকান আর্মির নাম নেই। ইতোমধ্যে মিয়ানমারের
পক্ষ থেকে যৌথ সীমান্ত টহলের প্রস্তাব করা হয়েছে। বাংলাদেশ এতে নীতিগতভাবে
রাজি হয়েছে। মিয়ানমারকে আমাদের আস্থায় নিতে হবে। দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় অঞ্চলে
মিয়ানমার দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশ। মিয়ানমারের পশ্চিমে বাংলাদেশ, পশ্চিম ও
উত্তরে ভারত, উত্তর ও উত্তর-পশ্চিমে চীন, পূর্বে থাইল্যান্ড ও লাওস।
মিয়ানমারের ওই ভৌগোলিক অবস্থানের সুযোগ নিতে পারে বাংলাদেশ। মিয়ানমারের
সঙ্গে যে সড়ক যোগাযোগের উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল, তাতে বাংলাদেশ তার পক্ষ নিয়ে
সড়কপথে কেবল মিয়ানমারের বাজারেই নয় বরং মিয়ানমার সরকারের সহযোগিতা নিয়ে
পূর্বের অন্যান্য দেশের বাজারেও প্রবেশ করতে পারে, বিশেষ করে আসিয়ানভুক্ত
দেশগুলোর বাজারে। ঘুমধুম-মুসে হাইওয়ে চালু হলে সড়কপথেই চীনে যাওয়া সম্ভব।
ঘুমধুম বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে বাংলাদেশি এলাকা। আর মুসে হচ্ছে চীনের
সীমান্ত শহর।
বাংলাদেশ-মিয়ানমার সম্পর্কের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে উভয় দেশই বিমসটেক (ইওগঝঞঊঈ, পরিবর্তিত নাম ইইওগঝঞঊঈ) এবং ইঈওগ জোটের সদস্য। যদিও প্রস্তাবিত ইঈওগ জোটটি এখনো আলোর মুখ দেখেনি। ভুটান ও নেপাল বিমসটেক জোটে যোগ দেয়ায় এ জোটটি শক্তিশালী হয়েছে। এ জোটের উদ্দেশ্য হচ্ছে বাংলাদেশ, ভারত, মিয়ানমার, শ্রীলংকা ও থাইল্যান্ডে একটি মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করা। মিয়ানমারের সঙ্গে সম্পর্ক বৃদ্ধিতে চট্টগ্রামে মিয়ানমারের কাঁচামালভিত্তিক ব্যাপক শিল্প কারখানা স্থাপিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কৃষিভিত্তিক মিয়ানমারে বাংলাদেশি সারের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। মিয়ানমার সীমান্তসংলগ্ন চট্টগ্রাম এলাকায় বেশ কিছু সার কারখানা স্থাপন করে বাংলাদেশ মিয়ানমারে সার রপ্তানি করতে পারে। মিয়ানমারের আকিয়াব ও মংডুর আশপাশের অঞ্চলে প্রচুর বাঁশ, কাঠ ও চুনাপাথর পাওয়া যায়। এসব কাঁচামালের ওপর ভিত্তি করে চট্টগ্রাম অঞ্চলে সিমেন্ট ও কাগজ শিল্প বিকশিত হতে পারে। মিয়ানমারে প্রচুর জমি অনাবাদি রয়েছে। এ অবস্থায় মিয়ানমারের ভূমি লিজ নিয়ে বাংলাদেশের জন্য চাল উৎপাদনের সম্ভাবনা খতিয়ে দেখা যেতে পারে। মান্দালয়-ম্যাগওয়ের তুলা আমদানি করতে পারে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ তার ক্রমবর্ধিষ্ণু গার্মেন্ট সেক্টরের কাঁচামাল হিসেবে তুলা মিয়ানমারের এ অঞ্চল থেকে আমদানি করতে পারে। গবাদিপশু আমদানি করার সম্ভাবনাও হয়েছে। বাংলাদেশিরা মিয়ানমারে গবাদিপশুর খামারও গড়ে তুলতে পারে। মিয়ানমারের সেগুন কাঠ পৃথিবী বিখ্যাত। আমাদের ফার্নিচার শিল্পের চাহিদা মেটাতে পারে এ সেগুন কাঠ, যার ওপর ভিত্তি করে আমরা মধ্যপ্রাচ্যসহ ইউরোপে আমাদের ফার্নিচার শিল্পের প্রসার ঘটাতে পারি। মিয়ানমারের মূল্যবান পাথর যেমন_ রুবি, জেড, বোম আর মারবেল সমৃদ্ধ। এমন মূল্যবান পাথর আমাদের জুয়েলারি শিল্পকে সমৃদ্ধ করে ভ্যালুওভিশনের মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে সহায়ক হতে পারে। ভারত-মিয়ানমার প্রস্তাবিত গ্যাস পাইপলাইন থেকে ভবিষ্যতে বাংলাদেশও উপকৃত হতে পারে। ভারতীয় কোম্পানি রিলায়েন্স মিয়ানমারের গভীর সমুদ্রে গ্যাস উত্তোলনে নিয়োজিত রয়েছে। ওই গ্যাস তারা পাইপলাইনের মাধ্যমে বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে ভারতে নিয়ে যেতে চায়। অতীতে এ ব্যাপারে বাংলাদেশের আপত্তি ছিল। তখন পরিস্থিতি ভিন্ন। বাংলাদেশ মিয়ানমারের গ্যাস ব্যবহার করে সেখানে বিদ্যুৎ তথা জলবিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারে, যা পরে বাংলাদেশে রপ্তানি করা সম্ভব হবে। বলার অপেক্ষা রাখে না, বাংলাদেশের যে পূর্বমুখী পররাষ্ট্রনীতি, সেখানে মিয়ানমার একটি গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর। এ কারণে মিয়ানমারের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। রোহিঙ্গা ইস্যু এবং সর্বশেষ নায়েক রাজ্জাকের অপহরণের ঘটনায় এ সম্পর্কে কিছুটা অবিশ্বাসের সৃষ্টি হয়েছিল। কিন্তু এ অবিশ্বাসকে নিয়ে বেশি দূর যাওয়া ঠিক হবে না। একমাত্র ঝসধৎঃ উরঢ়ষড়সধপু-এর মাধ্যমেই বাংলাদেশ মিয়ানমারের সঙ্গে সম্পর্ককে আগের অবস্থায় নিয়ে যেতে পারে। একদিকে মিয়ানমারের পরর 'চাপ' প্রয়োগ অব্যাহত রাখতে হবে, অন্যদিকে মিয়ানমারের ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে রোহিঙ্গা সম্পর্কের বিষয়টির সমাধান করতে হবে। এ ক্ষেত্রে কোনোভাবেই মিয়ানমারের 'চাপ'-এর কাছে আমাদের আত্মসমর্পণ করা যাবে না। তবে ইতোমধ্যে পরিস্থিতির অনেক উন্নতি হয়েছে। আন্দামান সাগরে রোহিঙ্গা তথা বাংলাদেশিদের নৌকায় করে পাচারের খবর আমরা তেমন একটা পাচ্ছি না।
বাংলাদেশ যখন মিয়ানমারের সঙ্গে সমস্যার সমাধানের উদ্যোগী হয়েছে তখনই এলো এই আরাকান আর্মির কথা। গোলাগুলির ঘটনায় বড় ধরনের কোনো 'দুর্ঘটনা' ঘটেনি, এটা সত্য। কিন্তু ওই ঘটনা আমাদের কিছু শিক্ষা দেয়। এক. বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত অরক্ষিত। সীমান্তে বিজিবি তথা সেনা মোতায়েন বাড়ানো জরুরি। প্রয়োজনে বিজিবির জন্য আরো ফান্ড দেয়া প্রয়োজন। একই সঙ্গে বৃহত্তর বান্দরবান এলাকায় আরো সেনা ক্যাম্প প্রতিষ্ঠা করা জরুরি হয়ে পড়েছে। এটা এখন প্রমাণিত হলো যে, পার্বত্য অঞ্চল থেকে সেনা ক্যাম্প প্রত্যাহার অথবা গুটিয়ে নেয়ার কারণে সেখানে 'আশ্রয়' নিয়েছে দেশি ও বিদেশি সন্ত্রাসীরা। বাংলাদেশ নীতিগতভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, আমাদের সীমান্তে ভিনদেশি কোনো জঙ্গি বা সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে আশ্রয় দেবে না। সুতরাং দ্রুত থানচি এলাকায় 'চিরুনি অভিমান' চালানো প্রয়োজন এবং সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে উৎখাত করা দরকার। দুই. একটা অভিযোগে এসেছে যে, রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন এ এলাকায় তৎপর। এ সংগঠনটির তৎপরতা ইতোমধ্যে নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। সুতরাং এ অভিযোগটি তদন্ত করে দেখা প্রয়োজন। তিন. বৃহত্তর থানচি এলাকায় যোগাযোগব্যবস্থা খুব খারাপ। ফলে সীমান্তরক্ষীদের অবর্ণনীয় দুঃখ-কষ্টের মধ্য দিয়ে তাদের দায়িত্ব পালন করতে হয়। এ জন্য দ্রুত সীমান্ত সড়ক নির্মাণ করতে হবে। থানচি এলাকায় সেনা ক্যাম্পের সংখ্যা বাড়াতে হবে। এ এলাকায় গোয়েন্দা কার্যক্রম বৃদ্ধি করতে হবে। যোগাযোগের সুবিধার জন্য একাধিক হেলিপ্যাড নির্মাণও জরুরি। চার. অভিযোগ আছে, থানচিতে নিরাপত্তার কারণে ইউএনও সেখানে থাকেন না। তিনি অফিস করেন বান্দরবান জেলা প্রশাসকের অফিসে। ফলে খুব সংগত কারণেই ওই এলাকায় সরকারি কর্মকা- তেমন একটা থাকে না। সেখানে দ্রুত ইউএনওর নিরাপত্তাসহ তাকে থাকার ব্যবস্থা ও সেই সঙ্গে সেনা ও পুলিশ ক্যাম্প প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
থানচির ঘটনা আমাদের চোখ খুলে দিল। বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত এখন চিহ্নিত। কিন্তু বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত এখনো অরক্ষিত। সন্ত্রাসীরা ওই সীমান্ত এলাকা তাদের স্বার্থে ব্যবহার করছে। দ্রুত সিদ্ধান্ত নেয়া তাই জরুরি। কোনো সন্ত্রাসী গোষ্ঠী আমাদের এলাকা ব্যবহার করে সন্ত্রাসী কর্মকা- চালাবে, তা আমরা হতে দিতে পারি না। Daily Jai Jai Din 31.08.15
বাংলাদেশ-মিয়ানমার সম্পর্কের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে উভয় দেশই বিমসটেক (ইওগঝঞঊঈ, পরিবর্তিত নাম ইইওগঝঞঊঈ) এবং ইঈওগ জোটের সদস্য। যদিও প্রস্তাবিত ইঈওগ জোটটি এখনো আলোর মুখ দেখেনি। ভুটান ও নেপাল বিমসটেক জোটে যোগ দেয়ায় এ জোটটি শক্তিশালী হয়েছে। এ জোটের উদ্দেশ্য হচ্ছে বাংলাদেশ, ভারত, মিয়ানমার, শ্রীলংকা ও থাইল্যান্ডে একটি মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করা। মিয়ানমারের সঙ্গে সম্পর্ক বৃদ্ধিতে চট্টগ্রামে মিয়ানমারের কাঁচামালভিত্তিক ব্যাপক শিল্প কারখানা স্থাপিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কৃষিভিত্তিক মিয়ানমারে বাংলাদেশি সারের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। মিয়ানমার সীমান্তসংলগ্ন চট্টগ্রাম এলাকায় বেশ কিছু সার কারখানা স্থাপন করে বাংলাদেশ মিয়ানমারে সার রপ্তানি করতে পারে। মিয়ানমারের আকিয়াব ও মংডুর আশপাশের অঞ্চলে প্রচুর বাঁশ, কাঠ ও চুনাপাথর পাওয়া যায়। এসব কাঁচামালের ওপর ভিত্তি করে চট্টগ্রাম অঞ্চলে সিমেন্ট ও কাগজ শিল্প বিকশিত হতে পারে। মিয়ানমারে প্রচুর জমি অনাবাদি রয়েছে। এ অবস্থায় মিয়ানমারের ভূমি লিজ নিয়ে বাংলাদেশের জন্য চাল উৎপাদনের সম্ভাবনা খতিয়ে দেখা যেতে পারে। মান্দালয়-ম্যাগওয়ের তুলা আমদানি করতে পারে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ তার ক্রমবর্ধিষ্ণু গার্মেন্ট সেক্টরের কাঁচামাল হিসেবে তুলা মিয়ানমারের এ অঞ্চল থেকে আমদানি করতে পারে। গবাদিপশু আমদানি করার সম্ভাবনাও হয়েছে। বাংলাদেশিরা মিয়ানমারে গবাদিপশুর খামারও গড়ে তুলতে পারে। মিয়ানমারের সেগুন কাঠ পৃথিবী বিখ্যাত। আমাদের ফার্নিচার শিল্পের চাহিদা মেটাতে পারে এ সেগুন কাঠ, যার ওপর ভিত্তি করে আমরা মধ্যপ্রাচ্যসহ ইউরোপে আমাদের ফার্নিচার শিল্পের প্রসার ঘটাতে পারি। মিয়ানমারের মূল্যবান পাথর যেমন_ রুবি, জেড, বোম আর মারবেল সমৃদ্ধ। এমন মূল্যবান পাথর আমাদের জুয়েলারি শিল্পকে সমৃদ্ধ করে ভ্যালুওভিশনের মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে সহায়ক হতে পারে। ভারত-মিয়ানমার প্রস্তাবিত গ্যাস পাইপলাইন থেকে ভবিষ্যতে বাংলাদেশও উপকৃত হতে পারে। ভারতীয় কোম্পানি রিলায়েন্স মিয়ানমারের গভীর সমুদ্রে গ্যাস উত্তোলনে নিয়োজিত রয়েছে। ওই গ্যাস তারা পাইপলাইনের মাধ্যমে বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে ভারতে নিয়ে যেতে চায়। অতীতে এ ব্যাপারে বাংলাদেশের আপত্তি ছিল। তখন পরিস্থিতি ভিন্ন। বাংলাদেশ মিয়ানমারের গ্যাস ব্যবহার করে সেখানে বিদ্যুৎ তথা জলবিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারে, যা পরে বাংলাদেশে রপ্তানি করা সম্ভব হবে। বলার অপেক্ষা রাখে না, বাংলাদেশের যে পূর্বমুখী পররাষ্ট্রনীতি, সেখানে মিয়ানমার একটি গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর। এ কারণে মিয়ানমারের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। রোহিঙ্গা ইস্যু এবং সর্বশেষ নায়েক রাজ্জাকের অপহরণের ঘটনায় এ সম্পর্কে কিছুটা অবিশ্বাসের সৃষ্টি হয়েছিল। কিন্তু এ অবিশ্বাসকে নিয়ে বেশি দূর যাওয়া ঠিক হবে না। একমাত্র ঝসধৎঃ উরঢ়ষড়সধপু-এর মাধ্যমেই বাংলাদেশ মিয়ানমারের সঙ্গে সম্পর্ককে আগের অবস্থায় নিয়ে যেতে পারে। একদিকে মিয়ানমারের পরর 'চাপ' প্রয়োগ অব্যাহত রাখতে হবে, অন্যদিকে মিয়ানমারের ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে রোহিঙ্গা সম্পর্কের বিষয়টির সমাধান করতে হবে। এ ক্ষেত্রে কোনোভাবেই মিয়ানমারের 'চাপ'-এর কাছে আমাদের আত্মসমর্পণ করা যাবে না। তবে ইতোমধ্যে পরিস্থিতির অনেক উন্নতি হয়েছে। আন্দামান সাগরে রোহিঙ্গা তথা বাংলাদেশিদের নৌকায় করে পাচারের খবর আমরা তেমন একটা পাচ্ছি না।
বাংলাদেশ যখন মিয়ানমারের সঙ্গে সমস্যার সমাধানের উদ্যোগী হয়েছে তখনই এলো এই আরাকান আর্মির কথা। গোলাগুলির ঘটনায় বড় ধরনের কোনো 'দুর্ঘটনা' ঘটেনি, এটা সত্য। কিন্তু ওই ঘটনা আমাদের কিছু শিক্ষা দেয়। এক. বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত অরক্ষিত। সীমান্তে বিজিবি তথা সেনা মোতায়েন বাড়ানো জরুরি। প্রয়োজনে বিজিবির জন্য আরো ফান্ড দেয়া প্রয়োজন। একই সঙ্গে বৃহত্তর বান্দরবান এলাকায় আরো সেনা ক্যাম্প প্রতিষ্ঠা করা জরুরি হয়ে পড়েছে। এটা এখন প্রমাণিত হলো যে, পার্বত্য অঞ্চল থেকে সেনা ক্যাম্প প্রত্যাহার অথবা গুটিয়ে নেয়ার কারণে সেখানে 'আশ্রয়' নিয়েছে দেশি ও বিদেশি সন্ত্রাসীরা। বাংলাদেশ নীতিগতভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, আমাদের সীমান্তে ভিনদেশি কোনো জঙ্গি বা সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে আশ্রয় দেবে না। সুতরাং দ্রুত থানচি এলাকায় 'চিরুনি অভিমান' চালানো প্রয়োজন এবং সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে উৎখাত করা দরকার। দুই. একটা অভিযোগে এসেছে যে, রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন এ এলাকায় তৎপর। এ সংগঠনটির তৎপরতা ইতোমধ্যে নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। সুতরাং এ অভিযোগটি তদন্ত করে দেখা প্রয়োজন। তিন. বৃহত্তর থানচি এলাকায় যোগাযোগব্যবস্থা খুব খারাপ। ফলে সীমান্তরক্ষীদের অবর্ণনীয় দুঃখ-কষ্টের মধ্য দিয়ে তাদের দায়িত্ব পালন করতে হয়। এ জন্য দ্রুত সীমান্ত সড়ক নির্মাণ করতে হবে। থানচি এলাকায় সেনা ক্যাম্পের সংখ্যা বাড়াতে হবে। এ এলাকায় গোয়েন্দা কার্যক্রম বৃদ্ধি করতে হবে। যোগাযোগের সুবিধার জন্য একাধিক হেলিপ্যাড নির্মাণও জরুরি। চার. অভিযোগ আছে, থানচিতে নিরাপত্তার কারণে ইউএনও সেখানে থাকেন না। তিনি অফিস করেন বান্দরবান জেলা প্রশাসকের অফিসে। ফলে খুব সংগত কারণেই ওই এলাকায় সরকারি কর্মকা- তেমন একটা থাকে না। সেখানে দ্রুত ইউএনওর নিরাপত্তাসহ তাকে থাকার ব্যবস্থা ও সেই সঙ্গে সেনা ও পুলিশ ক্যাম্প প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
থানচির ঘটনা আমাদের চোখ খুলে দিল। বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত এখন চিহ্নিত। কিন্তু বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত এখনো অরক্ষিত। সন্ত্রাসীরা ওই সীমান্ত এলাকা তাদের স্বার্থে ব্যবহার করছে। দ্রুত সিদ্ধান্ত নেয়া তাই জরুরি। কোনো সন্ত্রাসী গোষ্ঠী আমাদের এলাকা ব্যবহার করে সন্ত্রাসী কর্মকা- চালাবে, তা আমরা হতে দিতে পারি না। Daily Jai Jai Din 31.08.15
0 comments:
Post a Comment