১৭ আগস্ট শ্রীলংকার সংসদ নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহের
নেতৃত্বাধীন ইউনাইটেড ন্যাশনাল পার্টির একক সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে বিজয় অনেক
প্রশ্ন সামনে নিয়ে এসেছে। যেটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তা হচ্ছে, শ্রীলংকায়
ভারতীয় ‘প্রভাব’ বেড়ে যাওয়ায় ভারত মহাসাগরভুক্ত এলাকায় এর প্রভাব কতটুকু
পড়বে? শ্রীলংকায় গত জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তৎকালীন
ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট মহিন্দা রাজাপাকসে হেরে গেছেন। তখন ভারত ও শ্রীলংকার
সংবাদপত্রে গুরুত্ব দিয়ে একটা সংবাদ প্রকাশিত হয়েছিল : নির্বাচনে
রাজাপাকসের হেরে যাওয়ার পেছনে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা একটা বড় ভূমিকা পালন
করেছে! এর পেছনে যে যুক্তি ছিল তা হচ্ছে, কলম্বোতে শ্রীলংকার গভীর সমুদ্র
বন্দরে (যা চীনা অর্থে ও চীনাদের দ্বারা নির্মিত) চীনা ডুবোজাহাজের
উপস্থিতি। ভারত এটাকে তার নিরাপত্তার প্রতি হুমকিস্বরূপ বলে মনে করেছিল।
এটাকে ‘বিবেচনায়’ নিয়েই মিথ্রিলা সিরিসেনাকে রাজাপাকসের বলয় থেকে বের করে
এনে তাকেই নির্বাচনে রাজাপাকসের বিরুদ্ধে দাঁড় করানো হয়। ওই সময় প্রধান
বিরোধীদলীয় নেতা রনিল বিক্রমাসিংহে ওই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করে
সিরিসেনাকে সমর্থন করেছিলেন। একই সঙ্গে আরও একটা বিষয় গুরুত্বপূর্ণ ছিল-
মার্চে ভুবনেশ্বরে ‘ইন্ডিয়ান ওসেন রিমে’র শীর্ষ সম্মেলন। সেখানে ভারতের
জয়েন্ট ইন্টেলিজেন্স কমিটির চেয়ারম্যান আরএন রবি যে বক্তব্য রেখেছিলেন, তা
যদি বিশ্লেষণ করা যায়, তাহলে ভারতের উদ্দেশ্য পরিষ্কার হবে আমাদের কাছে।
সম্মেলনে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ স্পষ্ট করেই বলেছিলেন, ভারত
মহাসাগরে চীনের প্রবেশ ভারতের কাছে কাক্সিক্ষত নয়। আর শীর্ষ গোয়েন্দা
কর্তা আরএন রবি বলেছিলেন, ভারত মহাসাগরকে কোনোভাবেই শক্তিশালী দেশগুলোর
দাবার বোর্ড বানাতে দেয়া যাবে না। তিনি স্পষ্ট করেই জানিয়ে দিয়েছিলেন,
ভারতের কর্তৃত্ব থাকলে এ অঞ্চলে শান্তি বজায় থাকবে (আনন্দবাজার, ২১ মার্চ)।
বার্তাটা স্পষ্ট, এ অঞ্চলে ভারত কাউকে প্রভাব বিস্তার করতে দেবে না।
পাঠক
স্মরণ করতে পারেন, ভুবনেশ্বর শীর্ষ সম্মেলনের আগে নরেন্দ্র মোদি মরিশাস,
সিসিলি ও শ্রীলংকা সফর করেছিলেন। মরিশাস সফরের সময় মরিশাসের সঙ্গে সেখানে
একটি ভারতীয় ঘাঁটি স্থাপনের ব্যাপারে চুক্তি হয়েছে। এর অর্থ পরিষ্কার-
দিল্লি ভারত মহাসাগরে তার আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করতে চায়। এ ব্যাপারে মালদ্বীপ
ও শ্রীলংকার সঙ্গে একটি মৈত্রী জোট গড়ার উদ্যোগ নিয়েছিল ভারত। এবং ওই জোটে
মরিশাস ও সিসিলিকে পর্যবেক্ষক হিসেবে আমন্ত্রণও জানানো হয়েছে। ফলে ভারত
মহাসাগরে আগামী দিনে যে ভারতের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হতে যাচ্ছে, শ্রীলংকার
সবশেষ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে তা স্পষ্ট হল। এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চল তথা ভারত
মহাসাগর আগামী দিনে প্রত্যক্ষ করবে এক ধরনের প্রভাব বিস্তারের প্রতিযোগিতা।
এ দুই অঞ্চলে সাম্প্রতিক সময়ে বেশকিছু ‘সামরিক তৎপরতা’ লক্ষণীয়। দক্ষিণ
চীন সাগরে যুক্তরাষ্ট্র, জাপান ও অস্ট্রেলিয়ার সমন্বয়ে একটি সামরিক ঐক্য
জোট গঠিত হয়েছে। উদ্দেশ্য, চীনের ওপর ‘চাপ’ প্রয়োগ করা। অন্যদিকে ভারত
মহাসাগরীয় অঞ্চলে চীন তার নৌবাহিনীর তৎপরতা বাড়িয়েছে। দক্ষিণ চীন সাগর থেকে
মাল্লাক্কা প্রণালী হয়ে ভারত মহাসাগর অতিক্রম করে অ্যারাবিয়ান গালফ
পর্যন্ত যে সমুদ্রপথ, তার নিয়ন্ত্রণ নিতে চায় চীন। কারণ এটি তার জ্বালানি
সরবরাহের পথ। চীনের জ্বালানি চাহিদা প্রচুর। এদিকে ভারতও ভারত মহাসাগরে তার
কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে চায়। ভারতের নৌবাহিনীর ‘নিউ ইস্টার্ন ফ্লিটে’
যুক্ত হয়েছে বিমানবাহী জাহাজ। রয়েছে পারমাণবিক শক্তিচালিত সাবমেরিন।
আন্দামান ও নিকোবরে রয়েছে তাদের ঘাঁটি। ফলে এক ধরনের প্রতিযোগিতা এরই মধ্যে
চীন ও ভারতের মধ্যে শুরু হয়েছে। এশিয়া-প্যাসিফিক ও দক্ষিণ এশিয়ার কর্তৃত্ব
নিয়ে চীন ও ভারতের অবস্থান এখন অনেকটা পরস্পরবিরোধী। যেখানে চীনা নেতৃত্ব
একটি নয়া ‘মেরিটাইম সিল্ক রুটে’র কথা বলছে, সেখানে মোদি সরকার বলছে
‘ইন্দো-প্যাসিফিক ইকোনমিক করিডোরে’র কথা। স্বার্থ মূলত অভিন্ন- এ অঞ্চলে
কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করা। আর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে গিয়েই এশিয়ার এ দুটি
বড় দেশের মাঝে দ্বন্দ্ব অনিবার্য। আর এটাকেই কাজে লাগাতে চায় যুক্তরাষ্ট্র।একসময়
মার্কিন গবেষকরা একটি সম্ভাব্য চীন-ভারত অ্যালায়েন্সের কথা বলেছিলেন।
জনাথন হোলসলাগ ফরেন পলিসি ম্যাগাজিনে লিখিত এক প্রবন্ধে Chindia-এর (অর্থাৎ
চীন-ভারত) ধারণা দিয়েছিলেন। চীনা প্রেসিডেন্টের ভারত সফরের পর ধারণা করা
হয়েছিল, দেশ দুটি কাছাকাছি আসবে। কিন্তু শ্রীলংকার অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে
ভারতের ভূমিকা, চীন-ভারত সীমান্ত নিয়ে দ্বন্দ্ব এবং চীনা প্রেসিডেন্টের
প্রতিক্রিয়া দেখে মনে হচ্ছে, এ সম্ভাবনা এখন ক্ষীণ। নতুন আঙ্গিকে ‘ইন্ডিয়া
ডকট্রিনে’র ধারণা আবার ফিরে এসেছে। এই ইন্ডিয়া ডকট্রিন মনরো ডকট্রিনের
দক্ষিণ এশীয় সংস্করণ। অর্থাৎ দক্ষিণ এশিয়ায় অন্য কারও কর্তৃত্ব ভারত
স্বীকার করে নেবে না। একসময় এ এলাকা, অর্থাৎ ভারত মহাসাগরীয় এলাকা ঘিরে
‘প্রিমাকভ ডকট্রিনে’র (২০০৭ সালে রচিত। শ্রীলংকা, চীন, ইরান ও রাশিয়ার
মধ্যকার ঐক্য) যে ধারণা ছিল, শ্রীলংকায় সিরিসেনার বিজয়ের পর এ ধারণা এখন আর
কাজ করবে না। ফলে বাংলাদেশ তার পূর্বমুখী ধারণাকে আরও শক্তিশালী করতে
বিসিআইএমের (বাংলাদেশ, চীনের ইউনান রাজ্য, ভারতের সাতবোন, মিয়ানমার) প্রতি
যে আগ্রহ দেখিয়েছিল, তাতে এখন শ্লথগতি আসতে পারে। সামরিক ও অর্থনৈতিক
নিরাপত্তার প্রশ্নে ভারত এখন আর বিসিআইএম ধারণাকে ‘প্রমোট’ করবে না। আর
বাংলাদেশের একার পক্ষে চীন ও মিয়ানমারকে সঙ্গে নিয়ে এ ধারণাকে এগিয়ে নিয়ে
যাওয়াও সম্ভব হবে না। ভারত এখন উপআঞ্চলিক জোট বিবিআইএনের কথা বলছে।ভারতের
কর্তৃত্ব করার প্রবণতা এ অঞ্চলের দৃশ্যপটকে আগামী দিনে বদলে দিতে পারে। এ
ক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকাও লক্ষণীয়। ভারত বড় অর্থনীতির দেশে
পরিণত হয়েছে। সেখানে মার্কিন বিনিয়োগ বাড়ছে। ফলে সেখানে মার্কিন স্বার্থ
থাকবেই। এ অঞ্চলে মার্কিন স্বার্থের অপর একটি কারণ চীন। চীনকে ‘ঘিরে ফেলা’র
একটি অপকৌশল নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র এগিয়ে যাচ্ছে। এরই মধ্যে ভারত ও
যুক্তরাষ্ট্র একটি ‘কৌশলগত সম্পর্কে’ নিজেদের জড়িত করেছে। এ দুই দেশের
স্বার্থ এক ও অভিন্ন। তবে ভারত মহাসাগরের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দুই দেশের মাঝে
অবিশ্বাস সৃষ্টি হওয়া বিচিত্র কিছু নয়।ভারত
মহাসাগরভুক্ত অঞ্চলের এই যখন পরিস্থিতি, ঠিক তখনই অনুষ্ঠিত হয়ে গেল
শ্রীলংকার সংসদ নির্বাচন। এ নির্বাচনে রাজাপাকসের পরাজয় শুধু যে
প্রেসিডেন্ট সিরিসেনাকেই স্বস্তি এনে দেবে তা নয়, বরং ভারতীয়
নীতিনির্ধারকদেরও স্বস্তি দেবে। কিন্তু শ্রীলংকার সঙ্গে চীনের সম্পর্ক এখন
কোন পর্যায়ে যাবে? শ্রীলংকায় চীনা বিনিয়োগের পরিমাণ প্রায় ১ দশমিক ৪ বিলিয়ন
ডলার। রাজাপাকসে সরকার চীন থেকে ওই ঋণ গ্রহণ করে কলম্বোর আশপাশের এলাকা
আরও সম্প্রসারিত করেছিল। সমুদ্র থেকে জমি উদ্ধারের এক মহাপরিকল্পনাও এর
অন্তর্ভুক্ত ছিল। কিন্তু সিরিসেনা প্রেসিডেন্টের দায়িত্বভার গ্রহণ করে এ
কার্যক্রম স্থগিত করেছেন। অভিযোগ করা হয়েছে, চীনা কোম্পানি সাবেক
প্রেসিডেন্ট রাজাপাকসে ও তার সহযোগীদের প্রায় ১ দশমিক ১ মিলিয়ন ডলার ঘুষ
দিয়েছিল। রাজাপাকসে কলম্বোকে দুবাইয়ের মতো উন্নত করতে চেয়েছিলেন সাগর থেকে
জমি উদ্ধার করে। এতে করে পরিবেশের ক্ষতি হয়েছে- এই অভিযোগে এ পরিকল্পনা
স্থগিত রাখা হয়েছে। শুধু তাই নয়, রাজাপাকসের নিজের এলাকা হামবানতোতাকে চীনা
অর্থে একটি আন্তর্জাতিক নগরীতে পরিণত করেছেন রাজাপাকসে। সেখানে এখন একাধিক
ফাইভ স্টার হোটেলসহ আন্তর্জাতিক মানের স্টেডিয়াম রয়েছে। ২০১৬ সালে সেখানে
কমনওয়েলথ ক্রীড়া প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হবে। কিন্তু চীনা এ বিনিয়োগকে খুব
ভালো চোখে দেখেননি প্রেসিডেন্ট সিরিসেনা। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে তিনি
বারবার চীনা বিনিয়োগের সমালোচনা করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, চীনা ঋণের বোঝা
শ্রীলংকাকে দাসত্বের জাতিতে পরিণত করতে পারে। সিরিসেনার প্রেসিডেন্ট
নির্বাচনের সময় যে ‘নির্বাচনী ঘোষণাপত্র’ তৈরি করা হয়েছিল, তাতে
গুরুত্বপূর্ণ কিছু বক্তব্য আছে। যেমন বলা আছে, 'The land that the Whiteman
took over by means of military strength is now being obtained by
foreigners by paying ransom to a handful of persons. If these trend
continues for another six years, our country would become a colony and
we would become slaves.' নির্বাচনী ঘোষণাপত্রের কোথাও চীনের কথা বলা হয়নি।
কিন্তু ইঙ্গিতটা বোঝা যায়।তামিল
টাইগারদের সঙ্গে যুদ্ধের অবসানের পর রাজাপাকসে শ্রীলংকাকে বিভিন্ন পণ্যের
রফতানিকারক দেশে পরিণত করতে চেয়েছিলেন। এ জন্যই তিনি কলম্বোভিত্তিক গভীর
সমুদ্র বন্দরটি ব্যবহার করে শ্রীলংকাকে অন্যতম একটি রফতানিকারক দেশে পরিণত
করার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। তিনি রফতানির তালিকায় চা, তৈরি পোশাক আর রবারের ওপর
নির্ভরতা থেকে বের হয়ে আসতে চেয়েছিলেন। এ জন্যই দরকার ছিল চীনা বিনিয়োগের।
কিন্তু চীনা বিনিয়োগের সূত্র ধরে কলম্বো গভীর সমুদ্র বন্দরে চীনা
ডুবোজাহাজের উপস্থিতি বড় ধরনের জটিলতা তৈরি করে। ফলে সরকারের পতন ঘটে। তবে
এটা বলা যায়, শ্রীলংকার ব্যাপারে চীনের যথেষ্ট আগ্রহ থাকলেও ভারত কখনোই
চীনের বিকল্প হতে পারেনি বা আগামীতেও পারবে না। ভারতের আর্থিক ভিত্তি অত
শক্তিশালী নয়। এ জন্যই দরকার একটা ভারসাম্যমূলক নীতি- ভারত ও চীনের মধ্যে
ভারসাম্য রক্ষা করে নিজের স্বার্থ আদায় করে নেয়া। শ্রীলংকার যথেষ্ট
সম্ভাবনা রয়েছে। সেখানে রয়েছে একটি দক্ষ জনশক্তি। বৈদেশিক বিনিয়োগ সেখানে
প্রয়োজন। এটা সত্য, ২০০০ সালে যেখানে জিডিপিতে রফতানি খাতের অবদান ছিল ৪০
ভাগ, ২০১৩ সালে তা কমে এসে দাঁড়ায় মাত্র ২২ ভাগে। শ্রীলংকা সরকার বৈদেশিক
বিনিয়োগের পরিমাণ ২ বিলিয়ন ডলার থেকে ৫ বিলিয়ন ডলারের মধ্যে টার্গেট করেছে।
কিন্তু এটা করা খুব সহজ হবে বলে মনে হয় না। যদিও একটা আশার কথা শুনিয়েছেন
প্রধানমন্ত্রী বিক্রমাসিংহে। তিনি সিরিসেনার মতো চীনা বিনিয়োগকে সরাসরি
প্রত্যাখ্যান করেননি।এটা এখন স্পষ্ট,
সংসদ নির্বাচনে রাজাপাকসের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার স্বপ্ন ধূলিসাৎ হয়ে যাওয়ায়
শ্রীলংকা-চীন সম্পর্ক প্রশ্নের মুখে থাকল। এ দ্বীপদেশটিতে ভারতের প্রভাব
আরও বাড়বে। ইতিমধ্যে নরেন্দ্র মোদি শ্রীলংকা সফর করে গেছেন। আগামী
দিনগুলোতে ভারত মহাসাগরকে কেন্দ্র করে ভারত ও চীনের দ্বন্দ্ব কোন পর্যায়ে
উন্নীত হয়, সেদিকে লক্ষ্য থাকবে অনেকের। বিশ্বের সমুদ্রপথে যত কনটেইনার
পরিবাহিত হয়, তার অর্ধেক হয় ভারত মহাসাগরের ওপর দিয়ে। অন্যদিকে বিশ্বের
পেট্রোলিয়ামের চাহিদার ৭০ ভাগ এই সমুদ্রপথ ব্যবহার করেই বিভিন্ন দেশে যায়।
ফলে ভারত মহাসাগরের গুরুত্ব যে থাকবেই, তা অস্বীকার করা যাবে না। শ্রীলংকার
গুরুত্ব যে শুধু চীনারাই উপলব্ধি করেছিল তা নয়, বরং ভারতও এখন তা উপলব্ধি
করছে। ভারত নতুন করে যে তার ‘কটন রুট’কে সামনে নিয়ে আসছে, সেখানে শ্রীলংকা
একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে।আপাতত
শ্রীলংকার সংসদ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে প্রেসিডেন্ট সিরিসেনার হাতই
শক্তিশালী হল। তবে সিরিসেনার সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বিক্রমাসিংহের সম্পর্ক
আগামীতে কোন পর্যায়ে উন্নীত হয়, তা লক্ষ্য করার বিষয়। কেননা সিরিসেনা
প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তিনি প্রেসিডেন্টের অনেক ক্ষমতা সংসদের হাতে ফিরিয়ে
দেবেন। তিনি সংবিধানের ১৮তম সংশোধনী বাতিল ও পুনরায় সংসদীয় রাজনীতিতে ফিরে
যাওয়ারও প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। এটা যদি রক্ষিত না হয়, তাহলে তার সঙ্গে
প্রধানমন্ত্রীর দ্বন্দ্ব অনিবার্য। তিনটি তামিল জেলায় তামিলদের
প্রতিনিধিত্বকারী তামিল ন্যাশনাল অ্যালায়েন্স (টিএনএ) ১৫টি আসন পেয়েছে।
টিএনএ বলছে, তারা ইস্যুভিত্তিকভাবে প্রধানমন্ত্রী বিক্রমাসিংহকে সমর্থন
করবে। কিন্তু এতে করে স্পষ্ট হয়নি তারা আগামীতে সরকারে যোগ দেবে কি-না।
তামিল অধ্যুষিত এলাকায় আরও বেশি স্বায়ত্তশাসন এবং তামিলদের ‘গণহত্যার’ (৪০
হাজার সাধারণ মানুষ) অভিযোগ রয়েছে। জাতিসংঘ একটি তদন্ত তথা অনুসন্ধান কমিটি
গঠন করেছে। আন্তর্জাতিক পরিসরে (জাতিসংঘ ও ইইউ) দ্রুত তদন্ত কমিটির
রিপোর্ট প্রকাশের দাবি রয়েছে। এর আগে রাজাপাকসে অনুসন্ধানের অনুমতি দেননি।
এখন তামিলদের সমর্থন পেতে হলে জাতিসংঘকে রিপোর্ট প্রকাশের ব্যাপারে
সহযোগিতা করতে হবে সরকারকে।রাজনীতিতে
কতদিন রাজাপাকসে থাকবেন, এটাও একটা প্রশ্ন। তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি, তার
ছেলের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ রয়েছে। সংসদ সদস্য হিসেবে এখন তিনি কি আদৌ
বিচারকে প্রভাবিত করতে পারবেন? কিংবা সরকার যদি তাকে বিচারের মুখোমুখি করে,
তাহলে ‘জটিলতা’ বাড়তে পারে। প্রধানমন্ত্রী বিক্রমাসিংহে বলেছেন, তিনি
সবাইকে সঙ্গে নিয়ে সরকার গঠন করতে চান। তার এই ‘এপ্রোচটি’ ভালো। কট্টরপন্থী
জনতা ভিমুক্তি প্যারামুনা (জেভিপি) নির্বাচনে ৫টি আসন পেয়েছে। তাদের
ভূমিকার দিকেও লক্ষ্য থাকবে অনেকের।জানুয়ারিতে
প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের মধ্য দিয়ে একটি পরিবর্তনের ধারা সূচিত হয়েছিল। এখন
সংসদ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে এ পরিবর্তনটি সম্পন্ন হল।
Daily Jugantor
২৩ আগস্ট, ২০১৫
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
0 comments:
Post a Comment