রাজনীতি, আন্তর্জাতিক রাজনীতি এবং সমসাময়িক ঘটনাবলীর বিশ্লেষণ সংক্রান্ত অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর রেহমানের একটি ওয়েবসাইট। লেখকের অনুমতি বাদে এই সাইট থেকে কোনো লেখা অন্য কোথাও আপলোড, পাবলিশ কিংবা ছাপাবেন না। প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন লেখকের সাথে

কেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা প্রবর্তন জরুরি


শেষ পর্যন্ত পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশন সে দেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নেতৃত্ব দেয়ার জন্য বিচারপতি (সাবেক) মির হাজার খান খোসোকে মনোনীত করেছে এবং তিনি শপথও নিয়েছেন। আগামী ১২ মে সেখানে সাধারণ নির্বাচন। এই সময়সীমায় বিচারপতি খোসো একটি অন্তর্বর্তীকালীন প্রশাসনের নেতৃত্ব দেবেন। পাকিস্তানের নির্বাচিত সংসদ এই প্রথমবারের মতো পাঁচ বছরের টার্ম পূরণ করেছে। পাকিস্তানের ইতিহাসের জন্য সেটা একটা বড় খবর। পাকিস্তানের রাজনীতি, সেনাবাহিনীর ভূমিকা, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে দ্বন্দ্ব ইত্যাদি নানা কারণে অনেকেরই পাকিস্তানের ব্যাপারে একটা বিরূপ মনোভাব আমরা লক্ষ্য করি। পাকিস্তানে গণতন্ত্র সেভাবে বিকশিত হয়নি, এটা সত্য কথা। কিন্তু এই প্রথমবারের মতো পাকিস্তান একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠা করেছে, যারা নিরপেক্ষভাবে পাকিস্তানের ১৪তম সংসদ নির্বাচন পরিচালনা করবেন। শুধু পাকিস্তানের কথা কেন বলি, দক্ষিণ এশিয়ার অন্য একটি দেশ, নেপালও সে দেশের প্রধান বিচারপতিকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারপ্রধান হিসেবে নিয়োগ করেছে। নেপালের রাজনৈতিক দলগুলো একত্রিত হয়েই তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের ব্যাপারে এ সিদ্ধান্তটি নেয়।
পাকিস্তান ও নেপালের রাজনৈতিক পরিস্থিতির সঙ্গে আমাদের দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির তেমন কোনো পার্থক্য নেই। পাকিস্তানে প্রধান দুটি রাজনৈতিক দল, পিপল্স পার্টি ও মুসলিম লীগের (নওয়াজ শরিফ) মধ্যকার দ্বন্দ্বের কারণে একাধিকবার সেখানে সরকারের পতন ঘটেছে। পিপিপি নেত্রী বেনজির ভুট্টো দুবার প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন। কিন্তু টার্ম পূরণ করতে পারেননি। ঠিক তেমনি মুসলিম লীগ নেতা নওয়াজ শরিফও দুবার প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন। তিনিও কোনোবারই তার টার্ম শেষ করতে পারেননি। এমনি এক পরিস্থিতিতে জেনারেল পারভেজ মোশাররফ রক্তপাতহীন সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা গ্রহণ করেন। কিন্তু ২০০৮ সালে আত্মঘাতী বোমা হামলায় বেনজির ভুট্টো নিহত হলে দৃশ্যপট বদলে যায়। নির্বাচনে পিপিপি বিজয়ী হয় ও ১৭ মার্চ পিপিপি তাদের ৫ বছরের টার্ম শেষ করেছে।
একই কথা প্রযোজ্য নেপালের ক্ষেত্রে। নেপালে রাজতন্ত্র অবসানের পর সংবিধান প্রণয়নের লক্ষ্যে যে সাংবিধানিক পরিষদ গঠিত হয়েছিল, সেখানে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে কোনো ঐক্য ছিল না। সাংবিধানিক পরিষদের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পরই নয়া সংসদ নির্বাচনের জন্য তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠা করেছে। পাকিস্তানে একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বটে। কিন্তু পাকিস্তান নিয়ে শেষ কথা বলার সময় এখনো আসেনি। সাবেক প্রেসিডেন্ট পারভেজ মোশাররফ ২৪ মার্চ করাচি ফিরে এসেছেন। তার দল নির্বাচনে অংশ নেবে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারপ্রধান দায়িত্ব নিয়েছেন বটে; কিন্তু অনেক প্রশ্ন এখনো অমীমাংসিত। এসব ব্যাপারে কোনো সমঝোতা যদি না হয়, তাহলে কি আবার সেই সেনাবাহিনী ক্ষমতা গ্রহণ করবে? সেনাপ্রধান জেনারেল আশফাক কায়ানিকে ঘিরে বারবার সংবাদ হয়েছে। তার চাকরির মেয়াদ বেড়েছে। ক্ষমতা নেয়ার ব্যাপারে তার অনাগ্রহের কথা তিনি জানিয়েছেন। কিন্তু তারপরও কথা থেকে যায়। এখন দেখার বিষয় পাকিস্তানের রাজনীতিবিদরা কতটুকু দূরদর্শিতার পরিচয় দেন।
নেপালে গঠিত হয়েছে একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকার। আগামী ২১ জুন সেখানে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আর এ লক্ষ্যে ১৪ মার্চ একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দায়িত্ব নিয়েছেন নেপাল সুপ্রিমকোর্টের প্রধান বিচারপতি খিলরাজ রেগমি। প্রায় ১০ মাস ধরে সেখানে রাজনীতিতে অচলাবস্থা চলে আসছিল। প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ নিয়ে একটি বড় ধরনের জটিলতা তৈরি হয়েছিল নেপালে। মূলত চারটি প্রধান দলের পক্ষ থেকেই গত ১০ মাসে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগপ্রাপ্ত হয়েছেন। কিন্তু পার্লামেন্টের সমর্থন না পাওয়ায় কেউই ক্ষমতা দীর্ঘস্থায়ী করতে পারেননি। গত মে মাসে পার্লামেন্টের মেয়াদ শেষ হয়। কিন্তু ওই সময়ে দেশটির জন্য একটি সংবিধান প্রণয়ন করা সম্ভব হয়নি। শেষ পর্যন্ত প্রধান চারটি দল একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পক্ষে নীতিগতভাবে একমত হয়ে বিচারপতি রেগমিকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারপ্রধান করেন। রেগমি ইতোমধ্যে শপথও নিয়েছেন। তার প্রধান ও একমাত্র কাজ হচ্ছে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন পরিচালনা করা। এখানে মূল সমস্যা ছিল রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আস্থার অভাব। কেউ কাউকে বিশ্বাস করছিল না। এমনকি মাওবাদীদের মধ্যেও দ্বন্দ্ব প্রকাশ পেয়েছিল। যারা বিশ্বরাজনীতির কিছুটা খোঁজখবর রাখেন, তারা জানেন অতি সম্প্রতি ইউরোপের একটি দেশ বুলগেরিয়ায় সরকার ভেঙে দেয়া হয়েছে। বুলগেরিয়ার প্রেসিডেন্ট রোজেন প্লেভনেলিয়েভ সাবেক কূটনীতিক মারিয়ান রায়কভকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হিসেবে নিযুক্ত করেছেন। রায়কভ মে মাস পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করবেন এবং মে মাসে তিনি সাধারণ নির্বাচনের আয়োজন করবেন। অনেকের মনে থাকার কথা অর্থনৈতিক সঙ্কটের কারণে গ্রিসে পাপেন্দ্র সরকারের পতন ঘটেছিল। পরে সেখানে একজন বিচারপতি পাপাদেমাসের নেতৃত্বে একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠিত হয় এবং তিনি ইতোমধ্যে একটি নির্বাচন সম্পন্ন করে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা ফিরিয়ে দিয়েছেন।
গণতান্ত্রিক সংস্কৃতিতে একটি অনির্বাচিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার বেমানান। কিন্তু কখনো-সখনো রাষ্ট্রকে এমন সব সিদ্ধান্ত নিতে হয়, যা গণতান্ত্রিক চিন্তা-চেতনার পরিপন্থী। গ্রিস, যেখানে এক সময় গণতন্ত্রের বীজ বপিত হয়েছিল, সেখানেও পরিস্থিতি বাধ্য করেছিল সরকারের নীতিনির্ধারকদের একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ধারণা গ্রহণ করতে। ২০০৭ সালে কেনিয়া ও জিম্বাবুয়েতে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করা হয়েছিল, অথচ সংবিধানে প্রধানমন্ত্রীর কোনো পদ ছিল না। বৃহত্তর ঐক্য ও সঙ্কট এড়াতে সরকারকে সংবিধান-বহির্ভূত অনেক সিদ্ধান্তই নিতে হয়। এসব ঘটনা থেকে আমরা কী শিখছি? আন্দোলনের ফলে ছিল এ তত্ত্বাবধায়ক সরকার। সেটা ১৯৯৩-এর পরবর্তী সময়ের কথা। জামায়াতও সেদিন বিএনপি সরকারের বিরুদ্ধে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলন করেছিল। খালেদা জিয়া প্রথমে রাজি ছিলেন না। কিন্তু ষষ্ঠ সংসদ নির্বাচন আওয়ামী লীগ কর্তৃক বয়কট এবং ১৩ দিনের ওই সংসদে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা সংবিধানে লিপিবদ্ধ হয়েছিল। পরে সপ্তম (১৯৯৬), অষ্টম (২০০১) ও নবম (২০০৮) সংসদ নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত হয়, যা সারাবিশ্বে প্রশংসিত হয়। এরপর সংবিধানে সংশোধনী এনে এ তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল ঘোষিত হয়। তবে এ ক্ষেত্রে উচ্চ আদালতের একটি রায় বড় ভূমিকা পালন করেছে। এখন যে প্রশ্নটি বড় হয়ে দেখা দিয়েছে, তা হচ্ছে দশম সংসদ নির্বাচন কীভাবে অনুষ্ঠিত হবে? সরকার সংবিধান অনুসরণ করবে_ এটাই স্বাভাবিক। আর সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার কোনো সুযোগ নেই। তবে এটাও সত্য, সব দলের, বিশেষ করে প্রধান বিরোধী দল বিএনপির অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হলে, তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা না হোক, একটি নির্দলীয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই।
একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের ব্যাপারে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত না হলে দেশ গভীর সঙ্কটে পড়বে। এ ক্ষেত্রে সংবিধানে কোনো সংশোধনী না এনেও, একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রতিষ্ঠা করা যায়। এটা নিয়ে সংলাপ প্রয়োজন। সংলাপে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হতে পারে। নবম সংসদে নির্বাচিত একজন সংসদ সদস্যের নেতৃত্বে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, যার বয়স হবে মাত্র তিন মাস। এবং এই তিন মাসের মধ্যে ওই সরকার নির্বাচন পরিচালনা সম্পূর্ণ করতে বাধ্য থাকবে। প্রধানমন্ত্রী সংবিধানের নির্দেশনা অনুযায়ী তিন মাস আগে ক্ষমতা ছেড়ে দেবেন। দুটি প্রধান দলের পক্ষ থেকে সমানসংখ্যক প্রতিনিধি নিয়ে ওই সরকার গঠিত হবে। নিরপেক্ষতার স্বার্থে সংসদের একমাত্র স্বতন্ত্র সদস্যকে এ দায়িত্বটি দেয়া যায়। অথবা সর্বজন গ্রহণযোগ্য একজন ব্যক্তির ব্যাপারে ঐকমত্যে পেঁৗছলে তিনি শূন্য আসনে বিজয়ী হয়ে একজন সংসদ সদস্য হিসেবে এ দায়িত্বটি পালন করবেন। নির্বাচনে সেনা মোতায়েনের বিষয়টি আরপিওতে থাকতে হবে, যা সম্প্রতি বাতিল করা হয়েছে। নির্বাচনপূর্ব তিন মাস প্রধান দু'দলের নেত্রী সমমর্যাদা ভোগ করবেন। মোটা দাগে যে কথাটা বলা যায়, তা হচ্ছে নির্বাচনপূর্ব তিন মাস প্রধানমন্ত্রী নিজেকে 'অন্তর্বর্তীকালীন প্রধানমন্ত্রী' হিসেবে ঘোষণা করলেও, তা গ্রহণযোগ্য হবে না।
ইতোমধ্যে রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান ইন্তেকাল করায় দেশে নতুন করে একটি 'সঙ্কট' তৈরি হয়েছে। কে রাষ্ট্রপতি হবেন, এর ওপর অনেক কিছু নির্ভর করছে। দেশের বুদ্ধিজীবীদের একটা বড় অংশ, এবং সেই সঙ্গে দুজন সিনিয়র সিটিজেন অধ্যাপক বি. চৌধুরী ও ড. কামাল হোসেনের অভিমতও গ্রহণযোগ্যতায় নেয়া প্রয়োজন। দেশের এ দুজন সিনিয়র সিটিজেন নিরপেক্ষ নির্বাচনের স্বার্থে একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকার তথা নিরপেক্ষ রাষ্ট্রপ্রধান নিয়োগের দাবি জানিয়েছেন। কিন্তু সরকারের দৃষ্টি এদিকে নেই। রাষ্ট্রপতির মৃত্যুতে বিএনপি যে সম্মান ও উদারতা দেখিয়েছিল, সরকার তার প্রতি এতটুকুও সম্মান জানায়নি। গ্রেপ্তারকৃত নেতাকর্মীদের তো সরকার ছেড়ে দিতে পারত। কিন্তু সরকার কোনো উদ্যোগ নেয়নি। বরং নতুন করে দলের কয়েকজন সিনিয়র নেতার নামে চার্জশিট দেয়া হয়েছে। বগুড়ায় খালেদা জিয়ার একটি বক্তব্যের ভিন্ন ব্যাখ্যা করেছেন সরকারের মন্ত্রীরা। শুধু তাই নয়_ অসৌজন্যমূলকভাবে খালেদা জিয়ার সমালোচনা করা হয়েছে। খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা করারও হুমকি দিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী! রাষ্ট্রপতির মৃত্যুতে বিএনপির শ্রদ্ধা একটি সংলাপের তথা সমঝোতার সম্ভাবনা সৃষ্টি করলেও সেই সম্ভাবনার 'মৃত্যু' ঘটেছে বলে ধারণা করছি। ২৭ ও ২৮ মার্চ ১৮ দলের উদ্যোগে আবারো হরতাল পালিত হয়েছে সেই হরতালেও মানুষ মারা গেছে। হরতালে পুলিশের গুলি এখন যেন নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপারে পরিণত হয়েছে।
দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি দিনে দিনে খারাপ হচ্ছে। পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, ১৭৫ কোটি ডলারের বিনিয়োগে ও ১৮০ কোটি ডলার আমানত রাখাতে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার শর্ত দিয়েছে কাতার। সেই সঙ্গে কুয়েতের ১০০ কোটি ডলার বিনিয়োগের প্রস্তাব পিছিয়ে গেছে। সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুটি গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের প্রস্তাব ঝুলে আছে। বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে দ্বন্দ্ব ও বিরোধের সর্বশেষ জের হিসেবে বিশ্বব্যাংক ওয়াসার প্রকল্প থেকে ৯৮ মিলিয়ন ডলার প্রত্যাহার করে নিয়েছে। সংবাদপত্রে অর্থনীতির নেতিবাচক দিকগুলো প্রকাশিত হলেও, সরকারের দৃষ্টি এদিকে নেই। সরকার এখনো ব্যস্ত বিরোধী মত ঠেকাকে। নতুন করে সরকারি উদ্যোগে একটি 'নাগরিক সমাজ' গঠিত হয়েছে। উদ্দেশ্য একটাই_ যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি কার্যকর করা। যেখানে একটি বিচার হচ্ছে, সেখানে এভাবে আন্দোলনকে উসকে দেয়া 'বিচার বিভাগের ওপর অনেকটা হস্তক্ষেপের শামিল', এ ধরনের অভিযোগ সুশীল সমাজের কাছ থেকে উচ্চারিত হলেও, সরকার 'অন্ধ' ও 'বয়রা'। জনমতের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর আগ্রহ নেই।
সরকার এককভাবে সব সিদ্ধান্ত নিচ্ছে এবং দেশকে কঠিন সঙ্কটের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। সঙ্কট থেকে উত্তরণের পথ একটাই_ আর তা হচ্ছে একটি তত্ত্বাবধায়ক তথা নিরপেক্ষ সরকার গঠনের লক্ষ্যে ১৮ দলীয় জোটের সঙ্গে সংলাপ শুরু করা। সরকার যত দেরি করবে, ততই দেশ ও জাতির জন্য তা অমঙ্গল বয়ে আনবে। এত সঙ্কট, বিভেদ আর বিদ্বেষ থাকা সত্ত্বেও পাকিস্তান আর নেপাল যদি একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের সিদ্ধান্ত নিতে পারে, তাহলে আমরা তা পারব না কেন?
আসলে যা দরকার তা হচ্ছে সরকারের নীতিনির্ধারকদের শুভবুদ্ধির উদয়। শুভবুদ্ধির উদয় না হলে সঙ্কট আরো বাড়বে। জোর করে ক্ষমতায় থাকা ও ক্ষমতা ধরে রাখার মধ্যে কোনো কৃতিত্ব থাকতে পারে না। জনগণের কাছে যেতে হবে। জনগণই হচ্ছে সব ক্ষমতার উৎস। আজ একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে যদি নির্বাচন হয়, আর সেই নির্বাচনে যদি মহাজোট সরকারকে আবার ক্ষমতায় নিয়ে আসে (?) তাহলে কারো কিছু বলার নেই। দাতাগোষ্ঠীর প্রতিনিধিরা সে কথাই বলছেন। মহাজোট সরকারের গত পাঁচ বছরের কর্মকা- বিচার-বিশ্লেষণ করার অধিকার দেয়া হোক জনগণকে। তাদের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। কিন্তু তা না করে এককভাবে একটি নির্বাচন করলে, সেই নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা কারো কাছেই থাকবে না। ১৮ দলীয় জোটকে নির্বাচনে অংশ নেয়ার সুযোগ দিতে হবে। আর দায়িত্বটি সরকারের। তাই তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকারই পারে সুষ্ঠু নির্বাচনের নিশ্চয়তা দিতে।
Daily JAI JAI DIN05.04.2013

0 comments:

Post a Comment