রাজনীতি, আন্তর্জাতিক রাজনীতি এবং সমসাময়িক ঘটনাবলীর বিশ্লেষণ সংক্রান্ত অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর রেহমানের একটি ওয়েবসাইট। লেখকের অনুমতি বাদে এই সাইট থেকে কোনো লেখা অন্য কোথাও আপলোড, পাবলিশ কিংবা ছাপাবেন না। প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন লেখকের সাথে

নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া গত্যন্তর নেই

চারটি সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থীরা বিপুল ভোটে বিজয়ী হওয়ার পর পরই প্রধানমন্ত্রী বলেছেন দলীয় সরকারের আওতায় যে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব, এটা তার প্রমাণ। প্রধানমন্ত্রীর দেখাদেখি দলের অন্য নেতারাও একই সুরে কথা বলতে শুরু করেছেন। আমি এটাই প্রত্যাশা করেছিলাম, এ ধরনের কথাই আওয়ামী লীগের নেতারা বলবেন। বলতে দ্বিধা নেই, চারটি সিটি কর্পোরেশনের ভোটাররা আওয়ামী লীগকে পরিত্যাগ করেছে। এই যে চিত্র, তা শুধু চারটি সিটি কর্পোরেশনেই সীমাবদ্ধ নেই, এটা সারা বাংলাদেশের চিত্র। স্থানীয় নির্বাচন আর জাতীয় নির্বাচন এক নয়। অনেকগুলো কারণ রয়েছে, যা আমাদের বোঝার জন্য যথেষ্ট যে, বর্তমান সরকারপ্রধানকে ক্ষমতায় রেখে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচন সম্ভব নয়। প্রথমত, তিনি একটি দলের প্রধান। দলীয় প্রধান যদি অন্তর্বর্তীকালীন সময়ের জন্য প্রধানমন্ত্রী হন, সেখানে তিনি চাইবেন যেনতেনভাবে দলকে বিজয়ী করতে। দ্বিতীয়ত, প্রধানমন্ত্রী থাকার ফলে প্রশাসন থাকবে তার নিয়ন্ত্রণে। ইতোমধ্যে সরকার প্রশাসন সাজাতে শুরু করে দিয়েছেন। প্রতিটি জেলা, উপজেলা প্রশাসনে দলীয় ক্যাডারদের নিয়োগ দেয়া হয়েছে। নির্বাচনের সময় এরা রিটার্নিং অফিসারের দায়িত্ব পালন করবেন। দলীয় ক্যাডারদের দিয়ে নির্বাচন পরিচালনা করলে, নির্বাচন নিরপেক্ষ হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ। তৃতীয়ত, নির্বাচনে সেনা মোতায়েনের বিষয়টি থাকছে না। ফলে পোলিং বুথগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে কীভাবে? যে পুলিশ দলীয়ভাবে পরিচালিত হয়, তাদের কাছে সুষ্ঠু নির্বাচন প্রত্যাশা করা যায় কী? চতুর্থত, নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষ নয়। নানা কারণে তারা সরকারের ওপর নির্ভরশীল। তারা নির্বাচন পরিচালনার জন্য নির্ভর করবেন হাজার হাজার সরকারি কর্মচারী এবং স্কুল শিক্ষকদের ওপর। যে প্রশাসনে ইতোমধ্যে বেশি মাত্রায় রাজনীতিকরণ হয়েছে, সেই প্রশাসনে নির্বাচনের সময় নিরপেক্ষ থাকবে, এটা বিশ্বাস করা যায় না।


তবে আমি নিশ্চিত করেই বলতে পারি সরকারের নীতি নির্ধারকরা এখন হাজারটা যুক্তি দেখাবেন যে, দলীয় সরকারের আওতায়ও সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব। এখানে যে বিষয়টি মুখ্য, তা হচ্ছে এটা স্থানীয় সরকার পর্যায়ের নির্বাচন। এই নির্বাচনের সাথে জাতীয় পর্যায়ের নির্বাচনের তুলনা করা যাবে না। সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে কাজ করে স্থানীয় ইস্যু। যেমন সিলেটের সাধারণ মানুষ মেয়র কামরানের ‘পারফরমেন্স’ এ খুশি ছিলেন না। জলাবদ্ধতা দূরীকরণে তার ব্যর্থতা ছিল চরমে। উপরন্তু নির্বাচনের ঠিক আগ মুহূর্তে তার দ্বিতীয় স্ত্রী’র আবিষ্কারের ঘটনা (?) নারী ভোটারদের প্রভাবিত করে থাকতে পারে। ঠিক একই ঘটনা ঘটেছে খুলনাতে। দক্ষ প্রশাসক হিসেবে তালুকদার আব্দুল খালেক ছিলেন ব্যর্থ। উপরন্তু তার শুভাকাক্সিদের কেউ কেউ এমন সব কাণ্ড করেছেন, যা তাকে বিতর্কিত করেছে। তিনি মানুষের আস্থা হারিয়েছেন। খুলনার পাইওনিয়ার মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের ১০ম শ্রেণীর পরীক্ষায় (ইসলাম ধর্মশিক্ষা) তালুকদার আবদুল খালেককে হজরত উমর (রা.) এর সাথে তুলনা করা হয়েছে। এটা অনভিপ্রেত এবং ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা এটা ভালো চোখে নেয়নি। তার ব্যক্তিগত আচরণে (রিকশাওয়ালাকে থাপ্পর মারার ঘটনা) অনেকে অখুশি ছিলেন। এটা সত্য সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন দলীয়ভাবে হয়নি। কিন্তু দেখা গেল চূড়ান্ত বিচারে দু’টি বড় দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা তাদের প্রার্থীর পক্ষে ব্যাপক গণসংযোগ করেছেন। মন্ত্রীরা নির্বাচনী বিধি লঙ্ঘন করে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে ক্যাম্পেইন করেছেন। অর্থমন্ত্রী জাইকার সাথে গুরুত্বপূর্ণ মিটিং বাদ দিয়ে সিলেটে চলে গিয়েছিলেন। তিনি রিকশায় চড়ে এবং সরকারি গাড়ি ব্যবহার না করেও তার ‘নিরপেক্ষতা’ নিশ্চিত করতে পারেননি। এ ক্ষেত্রে ইসির যতটুকু কঠোর হওয়া উচিত ছিল, তারা ততটুকু কঠোর হতে পারেননি। ইসির ভূমিকা তাই প্রশ্নের মধ্যে থেকেই গেল। সিলেটে রিটার্নিং অফিসারের ভূমিকা কিছুটা হলেও নির্বাচনকালীন সময়ে সরকারি কর্মচারীদের ভূমিকাকে প্রশ্নের মাঝে ঠেলে দিয়েছে। যখন সিলেটের ১২৮টি কেন্দ্রের ফলাফল রাতের মধ্যেই এসে গিয়েছিল, তখন তিনি বিরোধী ১৮ দলের প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরীকে বিজয়ী হিসেবে ঘোষণা করতে ইতঃস্তত করছিলেন। এ নিয়ে বিএনপির নেতাদের সাথে তার তর্কও হয়। রিটার্নিং অফিসার পরদিন, অর্থাৎ রোববার দুপুরে এটা ঘোষণা করতে চেয়েছিলেন। পরে অবিশ্যি শনিবার রাতেই আরিফুল হক চৌধুরীকে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এই একটি ‘ছোট্ট’ ঘটনা প্রমাণ করে জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও প্রশাসনের কর্মকর্তারা এ ধরনের আচরণ করতে পারেন। ইতোমধ্যে সংবাদপত্রে খবর বের হয়েছে যে,আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সরকার তার প্রশাসন সাজাচ্ছেন। এই জুন মাসেই বেশ ক’জন কর্মকর্তাকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে। বেশ কিছু কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেয়া হয়েছে রাজনৈতিক বিবেচনায়। এর একটা নেতিবাচক প্রভাব পড়বেই। এখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যদি অন্তর্বর্তীকালীন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে থেকে যান, তাহলে মাঠ পর্যায়ের প্রশাসন কেন্দ্রীয় প্রশাসনের বাইরে কাজ করতে পারবেÑ এই গ্যারান্টি কেউ দিতে পারবে না। প্রশাসনের কাছে নির্বাচন কমিশন যে কত দুর্বল, তা একাধিক ঘটনায় প্রমাণিত হয়েছে। নির্বাচনবিধি অনুযায়ী নির্বাচনী এলাকায় মন্ত্রীদের যাবার কথা নয়। কিন্তু মন্ত্রীরা গেছেন। নির্বাচনী এলাকায় সরকার কোনো উন্নয়ন কাজ করতে পারবেন না, যাতে করে ভোটাররা প্রভাবান্বিত হতে পারেন। কিন্তু রাজশাহীতে গ্যাস সরবরাহ চালু হয়েছে নির্বাচনের মাত্র দু’দিন আগে। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী তা উদ্বোধন করেছেন। প্রধানমন্ত্রী তো নির্বাচনের পরেও এ কাজটি করতে পারতেন। এখন অন্তর্বর্তীকালীন সময়ের জন্য ইসির যে কর্তৃত্ব তা কাগজ কলমে থাকবে, ইসি তা প্রয়োগ করতে পারবে না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একটি দলের সভানেত্রী। তিনি যখন অন্তর্বর্তীকালীন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ক্ষমতায় থাকবেন, তখন স্থানীয় পর্যায়ের নেতা ও কর্মীরা আরো বেশি মাত্রায় উৎসাহিত হবেন। তাদেরকে নিয়ন্ত্রণ করা প্রশাসনের পক্ষে সম্ভব হবে না। তবে প্রধানমন্ত্রী যদি আওয়ামী লীগের সভানেত্রী হিসেবে পদত্যাগ করেন, কিংবা রাজনীতি থেকে অবসরে যাবার ঘোষণা দেন, তখন আর এ প্রশ্নগুলো উঠবে না। আরপিওতে সেনাবাহিনী মোতায়েনের বিষয়টি থাকছে না। সেনাবাহিনী ছাড়া আমাদের দেশে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আয়োজন করা অকল্পনীয় একটি বিষয়। অবশ্যই সেনা মোতায়েনের বিষয়টি বিবেচনায় নিতে হবে।


যোগাযোগমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রী সঠিক কথাই বলেছেন। যোগাযোগ মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘ওয়েক আপ কল ফর দি রুলিং পার্টি’। আর অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, একটি ‘অশনি সঙ্কেত’ এর কথা। তারা মিথ্যা বলেননি। দু’জনই যথেষ্ট অভিজ্ঞ। তারা বোঝেন ও জানেন কেন মানুষ আওয়ামী লীগের ওপর থেকে মুখ ঘুরিয়ে নিল। নিশ্চয়ই আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ এর মূল্যায়ন করবেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী যখন বলেন, ‘তত্ত্বাবধায়ক চাইলে নির্বাচনই হবে না।’ (যায়যায়দিন, ১৭ জুন) তখন আমি এক ধরনের হতাশার মাঝে পড়ে যাই। আমি জানি না কোন প্রেক্ষাপটে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘নির্বাচন হবে না’। নিশ্চয়ই নির্বাচন হবে। আর সেই নির্বাচন গ্রহণযোগ্য করে তোলার দায়িত্ব সরকারের। বাংলাদেশে দ্বিতীয়বার আর ‘এক-এগারো’র জন্ম হবে না। শুধুমাত্র ‘এক-এগারো’র ঘটনা দিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে যাচাই করা ঠিক নয়। আমরা ১৯৯৬ সালে, ২০০১ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পেয়েছিলাম, যারা সাফল্যের সাথে নির্বাচন পরিচালনা করেছে। এর আগে বিচারপতি সাহাবুদ্দিন আহমেদ যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন সেখানেও বিতর্ক ছিল কম। শুধুমাত্র ‘এক-এগারো’র ঘটনা দিয়ে সবকিছু বিবেচনা করা ঠিক নয়।


অথচ দুঃখজনক হলেও সত্য, এ দেশের কিছু চিহ্নিত বুদ্ধিজীবী ‘এক-এগারো’র ঘটনাকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের একটা বড় ত্রুটি হিসেবে চিহ্নিত করেন। অথচ তারা কখনোই বলেন না, ১৯৯৬ সালে সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তিত হবার পর এই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নেতৃত্বে অনুষ্টিত ৭ম জাতীয় সংসদে নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন করেছিল। এমনকি যারা ৯ম জাতীয় সংসদ নির্বাচন পরিচালনা করেছিল, সেই সরকারও ছিল সেনানিয়ন্ত্রিত একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকার। যদি তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা খারাপই হয়ে থাকে, তাহলে ৭ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা থাকে না। ২০০৬ সালের অক্টোবরে বিএনপির নেতৃত্বাধীন সরকারের মেয়াদ শেষ হবার পর যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল, তার জন্য কী আওয়ামী লীগ দায়ী নয়?


লগি-বৈঠার রাজনীতি তো আওয়ামী লীগ ওই সময় শুরু করেছিল। তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ইয়াজুদ্দিন আহমেদ নিজে নিজেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন। সেটা সঠিক ছিল না। একজনের ভুলের জন্য পুরো ব্যবস্থাকে দায়ী করা যাবে না। আজ সাংবিধানিকভাবে তত্ত্বাবধায়ক সরকার নেই বটে, কিন্তু একটি দল নিরপেক্ষ সরকার প্রতিষ্ঠা করা যায়, যাদের কাজ হবে শুধু নির্বাচন পরিচালনা করা। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর তত্ত্বাবধায়ক সরকারে কেন ভয় এটা আমার কাছে বোধগম্য নয়। গত ১৯ জুন তিনি সংসদে বলেছেন, ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার এলে আর সরানো যাবে না। গত এক সপ্তাহে তিনি একাধিকবার তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে কথা বলেছেন। অথচ ইতিহাস বলে অতীতে জামায়াতের সাবেক আমীর অধ্যাপক গোলাম আযমের পর তিনিই দ্বিতীয় ব্যক্তি, যিনি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আওতায় নির্বাচনের দাবি করেছিলেন। এখন তিনি ভোল পাল্টাচ্ছেন কেন?


একমাত্র আওয়ামী লীগ বাদে প্রতিটি দলই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পক্ষে। এমনকি মহাজোটের অংশীদার জাতীয় পার্টি এবং ওয়ার্কার্স পার্টিও চায় একটি নিরপেক্ষ সরকার। এ ক্ষেত্রে সরকার এ দাবি মেনে না নেয়ায় সরকারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন থাকবেই। আর প্রধানমন্ত্রী যখন সুস্পষ্ট করেই বলেন, ‘ওরা ক্ষমতায় এলে আর নির্বাচন দেবে না’, তখন নানা প্রশ্ন এসে ভিড় করে। কেন প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলছেন বারবার? প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যের সাথে বাস্তবতার কোনো মিল নেই। কেননা কোনো অসংবিধানিক সরকারের পক্ষে এখন আর ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করা সম্ভব নয়। তারা চাইলেও পারবেন না। একদিকে রয়েছে সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা, অন্যদিকে বিদেশী দাতাগোষ্ঠীর চাপ। মাঝখানে রয়েছে রাজনৈতিক দলগুলো। কারো পক্ষেই আর নির্ধারিত সময়ের অতিরিক্ত থাকা সম্ভব নয়। ২০০৭ সালের পরিস্থিতির সাথে আজকের পরিস্থিতিকে মেলানো যাবে না। তবে ‘একজন নির্বাচিত ব্যক্তিও’ এই নির্বাচন পরিচালনা করতে পারেন। রাজনৈতিক দলগুলো চাইলে এই ব্যবস্থা প্রবর্তন করা সম্ভব।


সুতরাং সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিএনপি বিজয়ী হলেও তাদের সামনের দিনগুলো বেশ কঠিন। যেকোনো ভুল সিদ্ধান্ত তাদেরকে আবারো পাঁচ বছরের জন্য ক্ষমতার বাইরে রাখতে পারে। কোনো হটকারী সিদ্ধান্ত নয়, বরং বুঝে শুনে বিএনপি তথা ১৮ দলকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আবারো ষড়যন্ত্র হচ্ছে। এ দেশের সবচেয়ে বড় দল ও জোটকে বাইরে রাখার। একটি নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ সরকারের দাবি অব্যাহত রাখতে হবে। বেগম জিয়া এখন বিরোধী দলের আন্দোলনের প্রাণ। তাকে যেতে হবে জেলাগুলোতে, ন্যূনতম বিভাগীয় শহরগুলোতে। স্থায়ী কমিটির নেতৃবৃন্দকে যেতে হবে প্রতিটি জেলায়। চারজন নির্বাচিত মেয়র তাদের প্লাস পয়েন্ট। তাদেরকে সাথে নিয়ে গণসংযোগ বাড়াতে হবে। শুধু ঢাকায় বসে থাকলে চলবে না। বিভিন্ন পেশাজীবী মানুষের সাথে গণযোগাযোগ বাড়াতে হবে। বিদেশী বন্ধুদের কাছে দল ও জোটের অবস্থান তুলে ধরতে হবে। দলীয় নেতৃবৃন্দকে রাজনৈতিক দূরদর্শিতার পরিচয় দিতে হবে। একটি ভুল সিদ্ধান্ত দলকে অনেক পেছনে ফেলে দিতে পারে। নানা ধরনের ফাঁদ তৈরি হয়েছে। দেশী ও বিদেশী শক্তি দশম নির্বাচনকে সামনে রেখে নানা ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছে। দেশপ্রেমিক প্রতিটি নাগরিককে আজ এ ব্যাপারে সচেতন থাকতে হবে।


নির্বাচন হচ্ছে এমন একটি প্রক্রিয়া, যেখানে জনসাধারণ তাদের অধিকার প্রয়োগ করে তাদের প্রতিনিধি নির্বাচিত করে। আজ সাধারণ মানুষকে সেই সুযোগটি দেয়া উচিত। এ ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী যদি সংসদ ভেঙ্গে দেয়ার পরও থেকে যান, তাহলে প্রশাসনের সাজানো মাঠ পর্যায়ের প্রশাসন দিয়ে নির্বাচন আয়োজন করলে, তাতে জনগণের মতামত প্রতিফলিত হবে তার সম্ভাবনা ক্ষীণ। তাই নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া কোনো বিকল্প নেই।

0 comments:

Post a Comment