রাজনীতি, আন্তর্জাতিক রাজনীতি এবং সমসাময়িক ঘটনাবলীর বিশ্লেষণ সংক্রান্ত অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর রেহমানের একটি ওয়েবসাইট। লেখকের অনুমতি বাদে এই সাইট থেকে কোনো লেখা অন্য কোথাও আপলোড, পাবলিশ কিংবা ছাপাবেন না। প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন লেখকের সাথে

‘জঙ্গি’ দমনে বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র নয়া চুক্তি

অতি সাম্প্রতিককালে ন্যাটোর কর্মসূচিতে যে পরিবর্তন এসেছে, সেই কর্মসূচিতে বাংলাদেশ কি অংশ নেবে? গত ৩১ মে ন্যাটো ও বাংলাদেশকে নিয়ে এমন একটি সংবাদ ছাপা হয়েছে, তাতে করে এ ধরনের একটি সম্ভাবনার জন্ম হয়েছে। এমন একটি ধারণার জন্ম হয়েছে যে, বাংলাদেশ ন্যাটোর স্ট্রাটেজিক পার্টনারশিপ কর্মসূচিতে অংশ নেবে! গত ১৫ মে বাংলাদেশের কূটনীতিকরা ন্যাটোর সদরদফতর ব্রাসেলসে ন্যাটোর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে মিলিত হন। তারা আলোচনায় ন্যাটোর কর্মসূচিতে বাংলাদেশের অংশগ্রহণের আগ্রহের কথা জানান। ন্যাটোর ওয়েবসাইটে এ সংবাদটি আছে। যদিও এ সংক্রান্ত কোনো খবর বাংলাদেশের পত্র-পত্রিকায় ছাপা হয়নি। এমনকি দীপু মনি সাংবাদিকদের সাথে কথাবার্তা বললেও এ সম্পর্কে কিছু বলেননি। বিষয়টি আমাদের কাছে এখনও অস্পষ্ট যে ন্যাটোর এ ধরনের কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে আমরা কতটুকু উপকৃত হব। ন্যাটোর strategic concept সম্পর্কে যারা ধারণা রাখেন, তারা জানেন ন্যাটোর লিসবন সম্মেলনে ২০১০ সালে এই ধারণাপত্র গ্রহণ করা হয়েছিল। এই ধারণাপত্রের মূল বিষয়টি হচ্ছে ন্যাটোর সম্প্রসারিত ভূমিকা। ন্যাটোর কর্মকাণ্ড এখন আর শুধু ইউরোপেই সীমাবদ্ধ নেই। বরং তা দক্ষিণ এশিয়াতে সম্প্রসারিত হয়েছে। স্মরণ থাকার কথা, যুক্তরাষ্ট্র তার নৌবাহিনীর প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের কর্মকাণ্ড ভারত মহাসাগর এলাকায় সম্প্রসারিত করেছে। আগামীতে মার্কিন ষষ্ঠ ফিটের বেশ কটি জাহাজ দক্ষিণ এশিয়ার সমুদ্রসীমায় মোতায়েন করা হবে। যে কারণে বাংলাদেশে সম্ভাব্য মার্কিনী ভূমিকা নিয়ে একটা প্রশ্ন থেকে গেল। জানার কথা, বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের সাথে ইতোমধ্যে একটি অংশীদারিত্ব সংলাপ চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। এই তথাকথিত ‘অংশীদারিত্ব সংলাপ’ চুক্তির আওতায় দৃশত বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র সন্ত্রাসবাদ দমন, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ, পরিবেশ, শ্রমমান, পণ্যের শুল্ক ইত্যাদি বিষয় নিয়ে মতবিনিময় করলেও, মূল বিষয় একটিইÑ যুক্তরাষ্ট্রের গৃহীত নীতির ব্যাপারে বাংলাদেশকে সম্পৃক্ত করা। ‘সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলায় যৌথ কর্মসূচি গ্রহণ’ এর আড়ালে এ অঞ্চলে মার্কিন সেনা মোতায়েনের বিষয়টি উড়িয়ে দেয়া যায় না। বলা ভালো প্রতি বছর একবার ‘অংশীদারিত্ব সংলাপ চুক্তির’ আওতায় বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র মিলিত হবে। প্রথম সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়েছিল গেল বছরের ১৯-২০ সেপ্টেম্বর ওয়াশিংটনে। আর এবার দ্বিতীয় সংলাপ হলো ঢাকায়, গত ২৬ মে। সংলাপ শেষে একটি ব্রিফিং করা হয় বটে, কিন্তু ‘ভেতরের অনেক কথাই’ জানান হয় না। তাই বাংলাদেশ যখন ন্যাটোর স্ট্রাটেজিক পার্টনারশিপ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের আগ্রহ প্রকাশ করে, তখন গুজবের ডালপালা বেড়েছে এবং আগামীতে তা আরও ছড়াবে। গেল বছরের ১৮ জুন ইউরোপের দেশ ক্রোয়েশিয়ায় একটি ন্যাটোর শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ন্যাটোর ২৫টি সদস্য দেশের বাইরেও মোট ৫৫টি দেশ অংশ নিয়েছিল। ওই সম্মেলনকে তারা বলছে Strategic Military Partnership Conference। যারা সরাসরি ন্যাটোর সদস্য রাষ্ট্র নয়, তারাও এই সম্মেলনে অংশ নিয়েছিল। ন্যাটোর সাথে কাজ করতে পারে এমন দেশগুলোকে ন্যাটোর নীতি নির্ধারকরা মোট ৪ ভাগে ভাগ করেছে। যারা ন্যাটোর সদস্য নয়, তবে ন্যাটোর সহযোগী। যেমন ইউরোপের ১২টি দেশকে নিয়ে গঠিত হয়েছে The Partnership for Peace। ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলভুক্ত আলজেরিয়া, তিউনেসিয়ার মতো দেশগুলোকে নিয়ে গঠিত হয়েছে Mediterrian Dialogue Members। সৌদি আরব কিংবা ওমানের মতো দেশগুলোকে নিয়ে গঠিত হয়েছে Istanbul Cooperation Initiative। অস্ট্রেলিয়া কিংবা জাপানের মতো দেশগুলোকেও ন্যাটো Partners Accross the Globe এর ব্যানারে একত্রিত করেছে। আফগানিস্তান ও পাকিস্তানও এই ব্যানারে রয়েছে। দক্ষিণ আমেরিকার দেশগুলোতে ন্যাটোর কোনো কর্মকাণ্ড নেই। এখন এল সালভাদর ও কলম্বিয়ার মতো দেশও ন্যাটোর সাথে জড়িত হতে যাচ্ছে। মজার ব্যাপার ইউরোপে ন্যাটোর কমান্ডার এডমিরাল স্টাভরিডিস সম্প্রতি বলেছেন, তারা ভারত ও ব্রাজিলের মতো দেশকে নিয়ে ভাবছেন এবং আশা করছেন এই দেশ দুটো Partners Accross the Globe এর ব্যানারে আগামীতে ন্যাটোর কর্মকাণ্ডে শরিক হবে। ২০১০ সালে ন্যাটো লিসবন সম্মেলনে ন্যাটোর Strategic Concept গ্রহণ করেছিল। এরই ধারাবাহিকতায় ক্রোয়েশিয়ায় সর্বশেষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়ে গেল। এর মাধ্যমে এটা প্রমাণিত হয়ে গেল একুশ শতকে ন্যাটো নতুন এক কৌশলগত ধারণা নিয়ে উপস্থিত হচ্ছে। ন্যাটোর এই ভূমিকা, অর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক বিশ্বকে কর্তৃত্ব করার প্রবণতা নতুন করে স্নায়ুযুদ্ধের জন্ম দিতে পারে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপে প্রভাব বলয়কে কেন্দ্র করে জন্ম হয়েছিল স্নায়ুযুদ্ধের। আর ১৯৯১ সালের ডিসেম্বরে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের মধ্যে দিয়ে সেই স্নায়ুযুদ্ধের অবসান, ঘটেছিল। আশির দশকে সোভিয়েত ইউনিয়নের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা ওয়ারশ সামরিক জোট ভেঙ্গে দেয়া হলেও, ন্যাটো জোট ভেঙ্গে দেয়া হয়নি। বরং এর সম্প্রসারণ ঘটেছিল। স্নায়ুযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে ন্যাটো ও ওয়ারশ’ জোটের মধ্যে সামরিক প্রতিযোগিতা এসব একটা পর্যায়ে গিয়ে উন্নীত হয়েছিল। যে ইউরোপে একাধিকবার ‘পারমাণবিক যুদ্ধ’ এর সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছিল। সেই ‘যুদ্ধ’ হয়নি বটে, কিন্তু বিংশ শতাব্দীর পুরোটা সময় ওই দুই শক্তির মাঝে প্রতিযোগিতা বজায় ছিল। দুই পরাশক্তিই ইউরোপে পারমাণবিক বোমা বহনযোগ্য অত্যাধুনিক মারণাস্ত্র মোতায়েন করেছিল। শুধু সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পরই এই স্নায়ুযুদ্ধের অবসান ঘটে। এর প্রধান কারণ ছিল একটিÑ রাশিয়া এখন আর ইউরোপের নিরাপত্তার প্রতি হুমকি নয়। দুটি আদর্শের (সমাজতন্ত্র বনাম পুঁজিবাদ) মাঝে যে দ্বন্দ্ব ছিল, সেই দ্বন্দ্বেরও অবসান ঘটে, যখন রাশিয়া আদর্শ হিসেবে মুক্তবাজার ও পুঁজিবাদকে গ্রহণ করে। উপরন্তু সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙ্গে যাবার অনেক আগেই ১৯৮৮ সালে গরবাচেভ ‘ওয়ারশ’ সামরিক জোট ভেঙ্গে দিয়েছিলেন। যে কারণে ইউরোপে রাশিয়ার উত্থান যুক্তরাষ্ট্র তথা ইউরোপের নিরাপত্তার প্রতি হুমকি নয়। আর তাই নতুন করে এই অঞ্চলে স্নায়ুযুদ্ধের জন্মের সম্ভাবনাও ক্ষীণ। এখন ভারত মহাসাগর হচ্ছে সম্ভাব্য ক্ষেত্র, যেখানে নতুন করে স্নায়ুযুদ্ধের জন্ম হতে যাচ্ছে। এর একমাত্র কারণ হচ্ছে চীন। চীনকে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ভয় ও শঙ্কা এখন অনেক বেশি। প্রথমত, তত্ত্বগতভাবে চীন এখন আর সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র নয়। কিন্তু একটি অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে চীন এখন বিশ্বকে কর্তৃত্ব করছে। চীন বিশ্বের অন্যতম অর্থনৈতিক পরাশক্তিতে পরিণত হওয়ায় তা এখন মার্কিন স্বার্থকে আঘাত করছে। দ্বিতীয়ত, যুক্তরাষ্ট্র চীনের কাছ থেকে ঋণ গ্রহণ করে নিজের অভ্যন্তরীণ বাজারকে সচল রাখছে। এটা মার্কিন নীতি নির্ধারকদের অনেকেরই অপছন্দের। গত ৮ জুন নয়া চীনা প্রেসিডেন্ট মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সফর করেছেন। এই সফরে ওবামার সাথে শীর্ষ বৈঠক হয়েছে। কিন্তু বেশ কিছু ইস্যুতে বিরোধ রয়েছে। তৃতীয়ত, দক্ষিণ এশিয়া তথা দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় চীনের প্রভাব বাড়ছে। এটা মার্কিনীদের চিন্তার কারণ। বিশেষ করে ভারত মহাসাগর ও আফগানিস্তানের ব্যাপারে তাদের আশঙ্কার কারণ রয়েছে যথেষ্ট। ২০১৪ সালে আফগানিস্তান থেকে সকল মার্কিন সৈন্য ও সেইসাথে সকল বিদেশী সৈন্য প্রত্যাহার করা হবে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র এ অঞ্চলে তার স্বার্থকে জলাঞ্জলি দিচ্ছে না। এ অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্র তার উপস্থিতি নিশ্চিত করতে চায়। এ কারণেই তথাকথিত ‘অংশীদারিত্ব চুক্তি’ করছে যুক্তরাষ্ট্র এবং ন্যাটোকে ব্যবহার করে এ অঞ্চলে তার উপস্থিতি নিশ্চিত করতে চায়। ন্যাটোর স্ট্রাটেজিক পার্টনারশিপ প্রোগ্রাম এক ধরনের কর্মসূচি, যার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র এ অঞ্চলে তার উপস্থিতিকে নিশ্চিত করতে চায়।


সমগ্র দক্ষিণ এশিয়া জুড়ে একটা পরিবর্তন এসেছে। পাকিস্তানে নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে নওয়াজ শরিফ তৃতীয়বারের মতো সে দেশের প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। তিনি ইতোমধ্যে পাকিস্তানে মার্কিন ড্রোন বিমান হামলা বন্ধের দাবি জানিয়েছেন। ভারতে আগামী বছর নির্বাচন হবার কথা। সেই নির্বাচন এ বছর এগিয়ে নিয়ে আসা হতে পারে। নেপালে জুন মাসেই নির্বাচন হবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আওতায়। আর বাংলাদেশে ২৫ অক্টোবর হচ্ছে সংসদের শেষ দিন। এরপর তিন মাসের মধ্যে নির্বাচন। সুতরাং এ অঞ্চলে সরকার পরিবর্তনের সাথে সাথে মার্কিন নীতির ব্যাপারটিও লক্ষণীয়। এ অঞ্চলে বিশেষ করে ভারত মহাসাগরে মার্কিনী স্বার্থ রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কখনও চাইবে না তার স্বার্থ বিঘিœত হোক।
ভারত মহাসাগর আগামী দিনে প্রত্যক্ষ করবে এক ধরনের ‘স্নায়ুযুদ্ধ’। এখানে কার নিয়ন্ত্রণে থাকবে এই বিপুল জলসীমা, তা নিয়ে প্রতিযোগিতায় নামবে চীন, যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত। এ অঞ্চল জুড়ে গাওদার (বেলুচিস্তান, পাকিস্তান), হামবানটোটা (শ্রীলংকা), সিটওয়ে, কিয়াউক-পাইউই বন্দরে (মিয়ানমার) রয়েছে চীনের নৌবাহিনীর রিফুয়েলিং সুবিধা ও সাবমেরিন ঘাঁটি। কোকো দ্বীপপুঞ্জও চীনা নৌবাহিনী ব্যবহার করে। চীনের জ্বালানি চাহিদা প্রচুর। চীনের জ্বালানির চাহিদার শতকরা ৮০ ভাগ এ অঞ্চলে অবস্থিত মালাক্কা প্রণালী দিয়ে পরিবহন করা হয়। মধ্যপ্রাচ্য হয়ে শ্রীলংকা পর্যন্ত ভারত মহাসাগর। তারপর এই মহাসাগর হয়ে মালাক্কা প্রণালী (মালয়েশিয়া) অতিক্রম করে ইন্দোনেশিয়ার পাশ দিয়ে প্রশান্ত মহাসাগর যাবার যে সমুদ্র পথÑ এই পথের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিতে চায় চীন। যুক্তরাষ্ট্রও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের অন্যতম নৌশক্তি। এ অঞ্চলে চীনা নৌ শক্তির উপস্থিতি তার কাম্য নয়। অথচ জ্বালানি সরবরাহের নিশ্চয়তার জন্যও এই রুটটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠুক, চীন তা কখনওই চাইবে না। এমনকি মধ্য এশিয়ার গ্যাস গাওদার বন্দরের মধ্যে দিয়ে পাইপ লাইনের মাধ্যমে চীনের পূর্বাঞ্চলে নিয়ে যাবার এক বিশালও ব্যয়বহুল প্রকল্পও হাতে নিয়েছে চীন। এজন্য ভারত মহাসাগর তার নিয়ন্ত্রণে থাকা প্রয়োজন রয়েছে। অথচ যুক্তরাষ্ট্রও চায় এই অঞ্চলে তার কর্তৃত্ব থাকুক। কেননা ইরানের পারমাণকি কর্মসূচি নিয়ে দিনে দিনে পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র ইরান আক্রমণ করতে পারে। সে ক্ষেত্রে ভারত মহাসাগর তথা গাওদার পোর্টের গুরুত্ব রয়েছে। গাওদার থেকে ‘স্ট্রেইট অব হরমুজ’ এর দূরত্ব মাত্র ১৮০ নটিক্যাল মাইল (এ পথ দিয়ে ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের তেলবাহী জাহাজ চলাচল করে), আর ৭২ কি. মি. দূরে রয়েছে ইরান সীমান্ত। বেলুচিস্তানের মরুভূমিতে কিছুদিন আগ পর্যন্ত একটি বিশাল ঘাঁটি যুক্তরাষ্ট্র ব্যবহার করতো। সুতরাং আগামী দিনে ভারত মহাসাগর অনেক গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে মার্কিন সমর নায়কদের কাছে।


সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নকে ঘিরে ফেলার জন্য যুক্তরাষ্ট্র ‘Containment theory’ প্রয়োগ করেছিল। পশ্চিম ইউরোপ এ ক্ষেত্রে পালন করেছিল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। আজ সেই ‘Containment theory’ আবার নতুনভাবে প্রয়োগ হতে যাচ্ছে। আর এ ক্ষেত্রে ভারত হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম অংশীদার। যুক্তরাষ্ট্র যেভাবে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়কে চারদিক থেকে ঘিরে চাপ প্রয়োগ করে সোভিয়েত ইউনিয়নের ক্ষমতাকে সঙ্কুচিত করতে চেয়েছিল, আজ চীনকে সামনে রেখেই সেই একই স্ট্রাটেজি রচনা করছে যুক্তরাষ্ট্র। এতে লাভ কতটুকু হবে বলা মুশকিল। তবে নতুন করে আবার উত্তেজনার জন্ম হবে। নতুন করে আবার জন্ম হবে স্নায়ুযুদ্ধের। ফলে ভারত মহাসাগরভুক্ত দেশগুলো এই প্রতিযোগিতায় কোনো একটি পক্ষ অবলম্বন করতে বাধ্য হবে। অতীতে স্নায়ুযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে বিশ্ব দু’ভাগে ভাগ হয়ে গিয়েছিল। অস্ত্র প্রতিযোগিতা বেড়েছিল। আজও সে রকম একটি পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে যাচ্ছে বিশ্ব। নিশ্চিত করেই বলা যায়, আগামী দিনে এ অঞ্চলে উত্তেজনা বাড়বে। এ অঞ্চলে ন্যাটো বা যে কোনো মার্কিন সেনার উপস্থিতি উত্তেজনাকে আরও উসকে দেবে। যুক্তরাষ্ট্র ভারত মহাসাগরীয় দেশ মালদ্বীপের সাথেও এ ধরনের একটি চুক্তি করতে চাচ্ছে। ওই চুক্তিটির নাম হচ্ছে Status Forces Agreement (SOFA)। কিন্তু তা ইতোমধ্যে বিতর্কের সৃষ্টি করেছে। সাবেক রাষ্ট্রপতি গাইয়ুম এই চুক্তির বিরোধিতা করেছেন (সিনহুয়া বার্তা সংস্থা, ৭ জুন ২০১৩) বাংলাদেশ কোনোভাবেই মার্কিন স্ট্রাটেজির অংশ হতে পারে না। যে কোনো চুক্তি, যা মার্কিনী বা ন্যাটোর স্বার্থে করা হবে, তা বাংলাদেশে বিতর্ক বাড়বে মাত্র। বাংলাদেশে কোনো জঙ্গিবাদ নেই। এখানে কোনো জঙ্গি নেই। সুতরাং জঙ্গিবাদ (?) দমনের নামে বাংলাদেশ যদি কোনো চুক্তিতে আবদ্ধ হয়, তা বড় ধরনের বিতর্ক সৃষ্টি করবে।
14.6.13

0 comments:

Post a Comment