রাজনীতি, আন্তর্জাতিক রাজনীতি এবং সমসাময়িক ঘটনাবলীর বিশ্লেষণ সংক্রান্ত অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর রেহমানের একটি ওয়েবসাইট। লেখকের অনুমতি বাদে এই সাইট থেকে কোনো লেখা অন্য কোথাও আপলোড, পাবলিশ কিংবা ছাপাবেন না। প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন লেখকের সাথে

পরিবেশ বিপর্যয় : বাংলাদেশ প্রেক্ষিত


যুক্তরাষ্ট্রের ওকলাহোমা থেকে বাংলাদেশের খেপুপাড়ার দূরত্ব অনেক। কিন্তু মিল আছে এক জায়গায়। ঘূর্ণিঝড় ‘মহাসেন’ বাংলাদেশের উপকূলবর্তী অঞ্চলে আঘাত করেছিল। এর পেছনে কারণ ছিল একটিই- পরিবেশ বদলে যাচ্ছে। বিশ্বের উষ্ণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর ফলে বাড়ছে ঘূর্ণিঝড় আর টর্নেডোর মতো ঘটনা। ঘূর্ণিঝড় ‘মহাসেন’-এর আঘাতের পর পরই ওকলাহোমায় মারাত্মক টর্নেডো ল-ভ- করে দেয় সেখানকার জনপদ। ২১ মে’র ওই ঘটনায় ওকলাহোমায় মারা গিয়েছিলেন ৯১ জন মানুষ। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে এটি একটি বড় ধরনের ঘটনা। ওকলাহোমার মুর শহর যেন এখন এক ধ্বংসের নগরী। প্রেসিডেন্ট ওবামা ওই শহরকে দুর্যোগপূর্ণ এলাকা হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন। ঘণ্টায় ৩২০ কিলোমিটার বেগে ধেয়ে আসা ওই টর্নেডোর ব্যাস ছিল তিন দশমিক ২ কিলোমিটার। সে তুলনায় অনেক দুর্বল ছিল ‘মহাসেন’। যথেষ্ট প্রস্তুতি থাকায় ক্ষয়ক্ষতি তুলনামূলকভাবে কম হয়েছে।

এই ঘূর্ণিঝড় আর টর্নেডো এখন যেন নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপারে পরিণত হয়েছে। সমুদ্র উপকূলবর্তী অঞ্চলগুলোর পাশাপাশি বড় বড় শহরগুলোও আক্রান্ত হচ্ছে। সারাবিশ্বই আজ পরিবেশ বিপর্যয়ের মুখে। বায়ুম-লে গ্রিন হাউস গ্যাস, বিশেষ করে কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় উত্তপ্ত হয়ে উঠছে পৃথিবী। ফলশ্রুতিতে সাগর, মহাসাগরে জন্ম হচ্ছে ঘূর্ণিঝড়ের, যা এক সময় প্রবল বেগে আছড়ে পড়ছে উপকূলে। ধ্বংস করে দিচ্ছে জনপদ। ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে উপকূলবর্তী গ্রাম, ছোট ছোট শহর। ‘মহাসেন’ ছিল সেরকম একটি ঘূর্ণিঝড়। এর আগে আমরা ‘সিডর’ ও ‘আইলার’ সঙ্গে পরিচিত ছিলাম। মজার ব্যাপার হচ্ছে, সমুদ্রে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড়গুলোর নাম আগে থেকেই নির্ধারিত থাকে। ইংরেজি বর্ণমালার ক্রম অনুসারে ব্যাকরণের সুযোগ পায় ভারত ‘উপমহাসাগরভুক্ত’ ৮টি দেশ। প্রতিটি দেশকে ৪টি করে নাম পাঠাতে হয়। এর মধ্য থেকে একটি নাম বেছে নেয়া হয়। এক সময়ের শ্রীলংকার রাজা মহাসেন ধ্বংস করেছিলেন বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের বহু মন্দির। সে কারণে ধ্বংসাত্মক ঝড়ের নাম রাখা হয়েছিল ধ্বংসের প্রতীক সেই রাজা মহাসেনের নামে। এদিকে এ অঞ্চলে পরবর্তী ঘূর্ণিঝড়ের নামকরণ হবে থাইল্যান্ডের দেয়া নামে। নাম হবে ‘ফাইলিন’। মহাসেনের পর এখন ফাইলিনের জন্য আমাদের অপেক্ষা।

বাংলাদেশও পরিবেশের এই বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। ঘূর্ণিঝড় ‘মহাসেন’-এর রেশ শেষ হওয়ার আগেই এই জ্যৈষ্ঠ মাসে আমরা প্রত্যক্ষ করলাম একটানা মুষলধারে বৃষ্টি। অথচ আষাঢ় মাস শুরু হতে এখনও বাকি আরও প্রায় তিন সপ্তাহ। জ্যৈষ্ঠ মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ শুরু হওয়ার আগেই এই অসময়ের বৃষ্টি প্রমাণ করে পরিবেশ কীভাবে বদলে যাচ্ছে। যে সময় বৃষ্টি হওয়ার কথা, সে সময় বৃষ্টি হচ্ছে না। শীতের ব্যাপ্তি কমছে। মনে আছে, গেল শীত আসতে আসতেই চলে গেল। এর ফলে সমস্যা হচ্ছে কৃষিতে। উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। তবে বাংলাদেশের মানুষ লড়াকু। ‘সিডর’ ও ‘আইলার’ পর তারা বুঝে গেছে, এই ঘূর্ণিঝড় আর জলোচ্ছ্বাসের সঙ্গেই তাদের বসবাস করতে হবে। লোনা পানি তাদের জীবনযাত্রার মান হুমকির মুখে ঠেলে দিলেও, এই লোনা পানির সঙ্গে ‘যুদ্ধ’ করেই তারা বেঁচে আছে। প্রকৃতিই তাদের শিখিয়েছে, কীভাবে সব ধরনের প্রতিকূলতার সঙ্গে তাদের বেঁচে থাকতে হয়। আগের চেয়ে উপকূল এলাকার মানুষ আজ অনেক সচেতন।

সারাবিশ্ব জানে বিশ্বের উষ্ণতা যে হারে বাড়ছে, তাতে আগামী দিনে বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বাংলাদেশের উপকূলে প্রতি বছর ১৪ মিলিমিটার করে সমুদ্রের পানি বাড়ছে। গত ২০ বছরে সমুদ্রের উচ্চতা বৃদ্ধি পেয়েছে ২৮ সেন্টিমিটার। সমুদ্রের পানি যেভাবে বাড়ছে, তাতে প্রতি ৭ জনে ১ জন উদ্বাস্তুতে পরিণত হবে। তারা হচ্ছেন জলবায়ু উদ্বাস্তু। আগামীতে বাংলাদেশের ১৭ ভাগ এলাকা সমুদ্রে বিলীন হয়ে যাবে। বিশ্ববাসী জলবায়ু উদ্বাস্তুর সঙ্গে প্রথম পরিচিত হয় ২০০৫ সালে, যখন বাংলাদেশে ভোলার চরাঞ্চল থেকে ৫ লাখ মানুষ অন্যত্র চলে যেতে বাধ্য হয়েছিল। ক্রিশ্চিয়ান পেনেনটি (ঈযৎরংঃরধহ চবহবহঃর) তার সদ্য প্রকাশিত গ্রন্থ ঞৎড়ঢ়রপ ড়ভ ঈযধড়ং : ঈষরসধঃব পযধহমব ধহফ ঃযব হবি এবড়মৎধঢ়যু ড়ভ ারড়ষবহপব (২০১১)-এ উল্লেখ করেছেন সে কথা। পেনেনটি আরও উল্লেখ করেছেন, ২০৫০ সালের মধ্যেই ২২ মিলিয়ন, অর্থাৎ ২ কোটি ২০ লাখ মানুষ বাংলাদেশের উপকূল অঞ্চল থেকে অন্যত্র সরে যেতে বাধ্য হবে। আইপিসিসির রিপোর্টেও উল্লেখ করা হয়েছে বাংলাদেশের কথা।

অনেকের মনে থাকার কথা, যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট আল গোরে পরিবেশের ব্যাপারে বিশ্বজনমতের দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য গেল জানুয়ারিতে এন্টারটিকায় গিয়েছিলেন। আমাদের পরিবেশ মন্ত্রীকেও তিনি আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন সেখানে। সেটা ঠিক আছে। কেননা বিশ্বের উষ্ণতা বেড়ে গেলে যেসব দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে, তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে বাংলাদেশ। ২০০৭ সালে বাংলাদেশ পরপর দু’বার বন্যা ও পরবর্তী সময়ে ‘সিডর’-এর আঘাতের সম্মুখীন হয়। এরপর ২০০৯ সালের মে মাসে আঘাত করে ‘আইলা’। এর পরিপ্রেক্ষিতে দেশে ব্যাপক খাদ্যদ্রব্যের ঘাটতি দেখা দেয়। দেশে খাদ্যশস্যের দাম বেড়ে যায়। অর্থনীতিতে একটা নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। ‘সিডর’-এর পর বাংলাদেশের পরিবেশ বিপর্যয়ের বিষয়টি বারবার বিশ্ব সভায় আলোচিত হচ্ছে! সিডরের ক্ষতি গোর্কির চেয়েও বেশি। মানুষ কম মারা গেলেও, সিডরের অর্থনৈতিক ক্ষতি ছিল ব্যাপক। সিডরে ৩০ জেলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত ছিল ৯টি জেলা। ২০০ উপজেলার ১ হাজার ৮৭১টি ইউনিয়ন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। মোট ১৯ লাখ ২৮ হাজার ২৬৫ পরিবারের ৮৫ লাখ ৪৫ হাজার ৪৫৬ জন মানুষ সিডরের আঘাতপ্রাপ্ত ছিল। মারা গিয়েছিলেন ৩ হাজার ৩০০-এর বেশি। তবে অর্থনৈতিক ক্ষতি ছিল ব্যাপক। সব মিলিয়ে ক্ষতির পরিমাণ ধরা হয়েছিল ১৬ হাজার কোটি টাকা। ‘সিডর’ ও ‘আইলা’র পর এখন ‘মহাসেন’ বাংলাদেশে আঘাত করল। এতে কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে, তার হিসাব আমরা পাব আরও কিছুদিন পর। ‘সিডর’ ও ‘আইলা’র আঘাত আমরা এখনও পরিপূর্ণভাবে কাটিয়ে উঠতে পারিনি। আইলার আঘাতের পর খুলনার দাকোপ, কয়রা ও পাইকগাছায় যে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছিল, তা দূর করা সম্ভব হয়নি। জলাবদ্ধতা কোথাও কোথাও ১ মিটার থেকে ৩ মিটার পর্যন্ত। আইলায় ৮০ ভাগ ফলদ ও বনজ গাছ মরে গিয়েছিল। দক্ষিণাঞ্চলজুড়ে আজ লোনা পানির আগ্রাসন। সুপেয় পানির বড়ই অভাব ওইসব অঞ্চলে। এখন ‘মহাসেন’ আমাদের আবারও ক্ষতিগ্রস্ত করে গেল।

আমাদের মন্ত্রী, সচিব কিংবা পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের কর্তাব্যক্তিরা বিদেশ সফর ও সম্মেলনে অংশ নিতে ভালোবাসেন। কানকুন, ডারবান, কাতার, কিংবা তারও আগে কোপেনহেগেনে (কপ সম্মেলন) আমাদের পরিবেশমন্ত্রী গেছেন। আমাদের কয়েকজন সংসদ সদস্য কোপেনহেগেনে প্ল্যাকার্ড ও ফেস্টুন হাতে নিয়ে বিশ্ব জনমত আকৃষ্ট করার চেষ্টা করেছেন। আমরা পরিবেশ রক্ষায় ফাস্ট স্টার্ট ফান্ডে পাওয়া টাকার (বাংলাদেশের জন্য ১৩০ মিলিয়ন ডলার) ব্যাপারে উৎসাহী। আরও টাকা চাই। সেটা হয়তো ঠিক আছে। কিন্তু ‘তিতাসকে হত্যা’ করে আমরা নিজেরাই (এর জন্য বিদেশিরা দায়ী নয়) যে বাজে দৃষ্টান্ত স্থাপন করলাম, তার কী হবে? বাগেরহাটের রামপালে ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য ভারতের সঙ্গে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে ২৯ জানুয়ারি। বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহার করা হবে কয়লা। এজন্য বছরে ৪ মিলিয়ন টন কয়লা আমদানি করতে হবে। বিদ্যুৎ আমাদের দরকারÑ সন্দেহ নেই তাতে। কিন্তু কয়লা পুড়িয়ে যে বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে এবং তাতে যে পরিবেশ বিপর্যয় ঘটবে, তা কী আমরা বিবেচনায় নিয়েছি? না, নেইনি। ভারতীয় ন্যাশনাল থার্মাল পাওয়ারের সঙ্গে একটি চুক্তি হয়েছে বটে; কিন্তু পরিবেশের প্রভাব নিরূপণের জন্য ইআইএ সমীক্ষাÑ তা করা হয়নি। রামপালের গৌরম্ভর কৈকরদশকাঠি ও সাতমারি মৌজায় ১ হাজার ৮৪৭ একর জমিতে এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি নির্মিত হবে, যা সুন্দরবন থেকে মাত্র ১৬ কিলোমিটার দূরে। কয়লা পোড়ানো হলে কার্বন ডাই অক্সাইড, সালফার, নাইট্রিক এসিড বায়ুম-লে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়বে। এতে করে হবে এসিডবৃষ্টি। ঘটবে পরিবেশ বিপর্যয়। সুন্দরবনের গাছ ও উদ্ভিদ মরে যাবে। পশু-পাখির প্রজনন বাধাগ্রস্ত হবে। ধ্বংস হয়ে যাবে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য। এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি কী অন্যত্র স্থানান্তরিত করা যেত না? আমাদের গর্ব এই সুন্দরবন। এরই মধ্যে সুন্দরবনকে গ্লোবাল হেরিটেজ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। আমরা এমন কিছু করতে পারি না, যেখানে বিশ্বের বৃহত্তম এ প্যারাবনের অস্তিত্ব হুমকির সম্মুখীন হবে! রামপালে বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করে সুন্দরবনের অস্তিত্ব হুমকির মুখে ঠেলে দিয়ে আমরা আন্তর্জাতিক প্রাকৃতিক ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণ সংক্রান্ত ইউনেস্কো কনভেনশন লংঘন করেছি। মাননীয় মন্ত্রী, এ ব্যাপারে আপনি কী বলবেন? সরকারের সিদ্ধান্ত আপনি চ্যালেঞ্জ করতে পারেন না, জানি। কিন্তু একজন বিবেকবান মন্ত্রী হিসেবে আপনি যখন পরিবেশ নিয়ে কথা বলার জন্য আন্তর্জাতিক আসরে যান, যখন সুদূর এন্টারটিকায় জনমত সৃষ্টি করার জন্য যান, তখন আপনার কাছে আমাদের প্রত্যাশা অনেক বেশি। কেননা, বাংলাদেশের পরিবেশ রক্ষায় আপনি নেবেন অগ্রণী ভূমিকা। তিতাস নদীকে আমরা ‘হত্যা’ করতে চলেছি। সুন্দরবনকেও ঝুঁকির মাঝে ঠেলে দিলাম। খুলনার দাকোপ, কয়রা আর পাইকগাছায় আইলার কারণে যে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছিল, তা আমরা তিন বছরেও সমাধান করতে পারিনি। মাননীয় মন্ত্রী, আপনি যখন দক্ষিণ মেরুতে পা রেখেছেন, আপনার গর্ব অনুভব করারই কথা। কিন্তু ২০১২ সালের এনভায়রনমেন্ট পারফরম্যান্স সূচকে (ইপিআই) বাংলাদেশকে যখন ১৩২টি দেশের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বায়ু দূষণকারী দেশ হিসেবে চিহ্নিত করা হয় (প্রথম ভারত), তখন পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক। আদৌ কী এর কোনো ভূমিকা আছে? বলা ভালো, ইপিআই পরিচালিত হয় দ্য ইয়েল সেন্টার ফর এনভারমেন্টাল ল’ অ্যান্ড পলিসি এবং কলাম্বিয়ার সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল আর্থ সায়েন্স ইনফরমেশন নেটওয়ার্ক কর্তৃক।

বাংলাদেশ এককভাবে বিশ্বের জলবায়ু পরিবর্তন রোধে কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে পারে না। বাংলাদেশ এককভাবে যদি কোনো সিদ্ধান্ত নেয়ও, তা সামগ্রিকভাবে বিশ্বের উষ্ণতা রোধ করতে খুব একটা প্রভাব রাখবে না। এজন্য বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল বিশ্বের দেশগুলোর সঙ্গে মিলে ঐক্যবদ্ধভাবে আন্তর্জাতিক আসরে জলবায়ু পরিবর্তনের ব্যাপারে সোচ্চার হতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবেলায় বিদেশি সাহায্যের প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে। কিন্তু এই সাহায্যের ওপর নির্ভর করা ঠিক নয়। পরিবেশ বিপর্যয়ে পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের বড় ভূমিকা রয়েছে। ঘূর্ণিঝড় ‘মহাসেন’ আবার আমাদের সে কথাটাই স্মরণ করিয়ে দিল। আমাদের প্রস্তুতি ভালো ছিল বিধায় ক্ষয়ক্ষতি তেমন হয়নি। কিন্তু ‘সিডর’ ও ‘আইলার’ আঘাতে আমাদের যা ক্ষতি হয়েছিল, সেই ক্ষতি সারাতে সরকারের বড় বড় উদ্যোগ লক্ষ্য করা যায় না। জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবেলায় ১ হাজার ২৬৮ কোটি টাকার তহবিল গঠন করা হলেও, এখানে ‘রাজনীতি’ ঢুকে গেছে। দলীয় বিবেচনায় টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে (কালের কণ্ঠ ২৭ মে)। ভাবতে অবাক লাগে, যেসব এনজিও জলবায়ু নিয়ে কাজ করেনি, যাদের কোনো অভিজ্ঞতাও নেই, শুধু দলীয় বিবেচনায় তাদের নামে টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে; জলবায়ু তহবিলের অর্থ পাওয়া উচিত ওইসব অঞ্চলে, যেখানে ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাসের আঘাত বেশি, আর মানুষ ‘যুদ্ধ’ করে সেখানে বেঁচে থাকে। অথচ দেখা গেছে, জলবায়ুর জন্য বরাদ্দকৃত টাকা দেয়া হয়েছে ময়মনসিংহ পৌরসভা, মানিকগঞ্জের একটি প্রকল্পে কিংবা নীলফামারী তিস্তা বহুমুখী সমাজকল্যাণ সংস্থাকে। সিরাজগঞ্জের প্রগতি সংস্থাও পেয়েছে থোক বরাদ্দ। অথচ এসব প্রতিষ্ঠানের একটিরও জলবায়ু সংক্রান্ত কাজের কোনো অভিজ্ঞতাই নেই। জলবায়ু তহবিলের টাকা বরাদ্দেও যদি ‘রাজনীতি’ ঢুকে যায়, তাহলে এর চেয়ে দুঃখজনক আর কিছু হতে পারে না। পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ অনুযায়ী দেখা যায়, বরাদ্দ পাওয়া এনজিওগুলোর সঙ্গে সরকারি দলের নেতা ও কর্মীরা জড়িত। জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর শীর্ষে রয়েছে বাংলাদেশ। কিন্তু দুর্নীতি যদি এখানেও স্পর্শ করে, তাহলে জলবায়ু ফান্ডে আর অর্থ সাহায্য পাওয়া যাবে না। সুতরাং, সচেতন হওয়ার সময় তাই এখনই।
Alokitobangladesh
02.06.13

0 comments:

Post a Comment