রাজনীতি, আন্তর্জাতিক রাজনীতি এবং সমসাময়িক ঘটনাবলীর বিশ্লেষণ সংক্রান্ত অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর রেহমানের একটি ওয়েবসাইট। লেখকের অনুমতি বাদে এই সাইট থেকে কোনো লেখা অন্য কোথাও আপলোড, পাবলিশ কিংবা ছাপাবেন না। প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন লেখকের সাথে

তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থায় ভয় কেন?


গত ২০ জুন যায়যায়দিনের প্রথম পৃষ্ঠায় শীর্ষ শিরোনাম ছিল 'তত্ত্বাবধায়ক সরকার এলে আর সরানো যাবে না'। এটা প্রধানমন্ত্রীর উক্তি। জাতীয় সংসদে তিনি কথাগুলো বলেছেন। প্রধানমন্ত্রীর ভাষায় তত্ত্বাবধায়ক সরকার এলে তারা নির্বাচন দেবে না। মাইনাস টু ফর্মুলা যারা করেছিলেন, তারা এখনো আছেন। তারা তৎপর। তারা সুযোগের অপেক্ষায় বসে আছেন। তারা কেয়ামত পর্যন্ত থাকবেন, এমন কথাও বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী যখন এ ধরনের কথা বলেন, তাকে গুরুত্ব না দিয়ে পারা যায় না। প্রধানমন্ত্রী মনে করেন তাকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান করে যে সরকার গঠিত হবে, সে সরকার সুষ্ঠু নির্বাচনের নিশ্চয়তা দিতে পারে। কিন্তু বিপরীত মতটি স্পষ্ট, বর্তমান সরকারপ্রধানকে ক্ষমতায় রেখে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচন সম্ভব নয়। প্রথম তিনি একটি দলের প্রধান। দলীয় প্রধান যদি অন্তর্বর্তী সময়ের জন্য প্রধানমন্ত্রী হন, সেখানে তিনি চাইবেন যেনতেনভাবে দলকে বিজয়ী করতে। দ্বিতীয়ত প্রধানমন্ত্রী থাকার ফলে প্রশাসন থাকবে তার নিয়ন্ত্রণে। এরই মধ্যে সরকার প্রশাসন সাজাতে শুরু করে দিয়েছে। প্রতিটি জেলা-উপজেলায় প্রশাসনে দলীয় ক্যাডারদের নিয়োগে দেয়া হয়েছে। নির্বাচনের সময় এরা রিটার্নিং অফিসারের দায়িত্ব পালন করবেন। দলীয় ক্যাডারদের দিয়ে নির্বাচন পরিচালনা করলে নির্বাচন নিরপেক্ষ হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ। তৃতীয়ত নির্বাচনে সেনা মোতায়েনের বিষয়টি থাকছে না। ফলে পোলিং বুথগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে কীভাবে? একটি অভিযোগ আছে যে পুলিশ দলীয়ভাবে পরিচালিত হয়। তাদের কাছে সুষ্ঠু নির্বাচন প্রত্যাশা করা যায় না এ অভিযোগ বিরোধী পক্ষের। চতুর্থত নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষ নয়। নানা কারণে তারা সরকারের ওপর নির্ভরশীল। তারা নির্বাচন পরিচালনার জন্য নির্ভর করবে হাজার হাজার সরকারি কর্মচারী এবং স্কুল শিক্ষকদের ওপর। যে প্রশাসনে এরই মধ্যে বেশি মাত্রায় রাজনৈতিকীকরণ হয়েছে, সেই প্রশাসন নির্বাচনের সময় নিরপেক্ষ থাকবে, তা বিশ্বাস করা যায় না।
তবে আমি নিশ্চিত করেই বলতে পারি, সরকারের নীতিনির্ধারকরা এখন হাজারটা যুক্তি দেখাবেন যে দলীয় সরকারের আওতায়ও সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব! এখানে যে বিষয়টি মুখ্য তা হলো এটা স্থানীয় সরকার নির্বাচন। এ নির্বাচনের সঙ্গে জাতীয় নির্বাচনের তুলনা করা যাবে না। সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কাজ করে স্থানীয় ইস্যু। যেমন সিলেটের সাধারণ মানুষ মেয়র কামরানের 'পারফরম্যান্স'-এ খুশি ছিল না। জলাবদ্ধতা দূরীকরণে তার ব্যর্থতা ছিল চরমে। উপরন্তু নির্বাচনের ঠিক আগমুহূর্তে তার 'দ্বিতীয় স্ত্রী' আবিষ্কারের ঘটনা (?) নারী ভোটারদের প্রভাবিত করে থাকতে পারে। ঠিক একই ঘটনা ঘটেছে খুলনায়। দক্ষ প্রশাসক হিসেবে তালুকদার আবদুল খালেক ছিলেন ব্যর্থ। উপরন্তু তার শুভাকাঙ্ক্ষীদের কেউ কেউ এমনসব কা- করেছেন, যা তাকে বিতর্কিত করেছে। তিনি মানুষের আস্থা হারিয়েছেন। খুলনার পাইওনিয়ার বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির পরীক্ষায় (ইসলাম শিক্ষা) তালুকদার আবদুল খালেককে হজরত ওমর (রা.)-এর সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। এটা অনভিপ্রেত এবং ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা ভালো চোখে নেয়নি। তার ব্যক্তিগত আচরণে (রিকশাওয়ালাকে থাপ্পড় মারার ঘটনা) অনেকে অখুশি ছিলেন। এটা সত্য, সিটি করপোরেশন নির্বাচন দলীয়ভাবে হয়নি। কিন্তু দেখা গেল চূড়ান্ত বিচারে দুটি বড় দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা তাদের প্রার্থীর পক্ষে ব্যাপক গণসংযোগ করেছেন। মন্ত্রীরা নির্বাচনবিধি লঙ্ঘন করে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে ক্যাম্পেইন করেছেন। অর্থমন্ত্রী জাইকার সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ মিটিং বাদ দিয়ে সিলেটে চলে গিয়েছিলেন। তিনি রিকশায় চড়ে এবং সরকারি গাড়ি ব্যবহার না করেও তার 'নিরপেক্ষতা' নিশ্চিত করতে পারেননি। এ ক্ষেত্রে ইসির যতটুকু কঠোর হওয়া উচিত ছিল ততটুকু কঠোর হতে পারেনি। ইসির ভূমিকা তাই প্রশ্নের মধ্যে থেকেই গেল। সিলেটে রিটার্নিং অফিসারের ভূমিকা কিছুটা হলেও নির্বাচনকালীন সরকারি কর্মচারীদের ভূমিকাকে প্রশ্নের মাঝে ঠেলে দিয়েছে। যখন সিলেটের ১২৮টি কেন্দ্রের ফল রাতের মধ্যেই এসে গিয়েছিল, তখন তিনি বিরোধী ১৮ দলের প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরীকে বিজয়ী হিসেবে ঘোষণা করতে ইতস্তত করছিলেন। এ নিয়ে বিএনপি নেতাদের সঙ্গে তার তর্কও হয়। রিটার্নিং অফিসার পর দিন অর্থাৎ রোববার দুপুরে এটা ঘোষণা করতে চেয়েছিলেন। পরে অবশ্য শনিবার রাতেই আরিফুল হক চৌধুরীকে বেসরকারিভাবে বিজয়ী হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এই একটি 'ছোট্ট' ঘটনা প্রমাণ করে জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও প্রশাসনের কর্মকর্তারা এ ধরনের আচরণ করতে পারেন। এরই মধ্যে সংবাদপত্রে খবর বের হয়েছে যে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে সরকার তার প্রশাসন সাজাচ্ছে। এই জুন মাসেই বেশ কজন কর্মকর্তাকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে। বেশ কিছু কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেয়া হয়েছে রাজনৈতিক বিবেচনায়। এর একটা নেতিবাচক প্রভাব পড়বেই। এখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যদি অন্তর্বর্তীকালীন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে থেকে যান, তাহলে মাঠ পর্যায়ের প্রশাসন কেন্দ্রীয় প্রশাসনের বাইরে কাজ করতে পারবে_ এই গ্যারান্টি কেউ দিতে পারবে না। প্রশাসনের কাছে নির্বাচন কমিশন যে কত দুর্বল, তা একাধিক ঘটনায় প্রমাণিত হয়েছে। নির্বাচনবিধি অনুযায়ী নির্বাচনী এলাকায় মন্ত্রীদের যাওয়ার কথা নয়। কিন্তু মন্ত্রীরা গেছেন। নির্বাচনী এলাকায় সরকার কোনো উন্নয়ন কাজ করতে পারবে না, যাতে করে ভোটাররা প্রভাবান্বিত হতে পারে। কিন্তু রাজশাহীতে গ্যাস সরবরাহ চালু হয়েছে নির্বাচনের মাত্র দুই দিন আগে। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী তা উদ্বোধন করেছেন। প্রধানমন্ত্রী তো নির্বাচনের পরেও এ কাজটি করতে পারতেন। এখন অন্তর্বর্তী সময়ের জন্য ইসির যে কর্তৃত্ব তা কাগজ-কলমে থাকবে, ইসি তা প্রয়োগ করতে পারবে না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একটি দলের সভানেত্রী। তিনি যখন অন্তর্বর্তীকালীন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ক্ষমতায় থাকবেন, তখন স্থানীয় পর্যায়ের নেতা ও কর্মীরা আরো বেশি মাত্রায় উৎসাহিত হবেন। তাদের নিয়ন্ত্রণ করা প্রশাসনের পক্ষে সম্ভব হবে না। তবে প্রধানমন্ত্রী যদি আওয়ামী লীগের সভানেত্রী হিসেবে পদত্যাগ করেন (?) কিংবা রাজনীতি থেকে অবসরে যাওয়ার ঘোষণা দেন (?) তখন আর এ প্রশ্নগুলো উঠবে না। আরপিওতে সেনাবাহিনী মোতায়েনের বিষয়টি থাকছে না। সেনাবাহিনী ছাড়া আমাদের দেশে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আয়োজন করা অপকল্পনীয় একটি বিষয়। অবশ্যই সেনা মোতায়েনের বিষয়টি বিবেচনায় নিতে হবে। অতীতে তা-ই হয়েছে। এবার বাধা কেন?
যোগাযোগমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রী সঠিক কথাই বলেছেন। যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, 'ওয়েব আপ কল ফর দ্য রুলিং পার্টি' আর অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন একটি 'অশনি সংকেত'-এর কথা। তারা মিথ্যা বলেননি। দুজনই যথেষ্ট অভিজ্ঞ। তারা শোনেন ও জানেন কেন মানুষ আওয়ামী লীগের ওপর থেকে মুখ ঘুরিয়ে নিল। নিশ্চয়ই আওয়ামী লীগ নেতারা এর মূল্যায়ন করবেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী যখন বলেন_ 'তত্ত্বাবধায়ক চাইলে নির্বাচনই হবে না' (যায়যায়দিন, ১৭ জুন) তখন আমি একধরনের হতাশার মাঝে পড়ে যাই। আমি জানি না কোন প্রেক্ষাপটে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন 'নির্বাচন হবে না'। নিশ্চয়ই নির্বাচন হবে। আর সে নির্বাচনকে গ্রহণযোগ্য করে তোলার দায়িত্ব সরকারের। বাংলাদেশে দ্বিতীয়বার আর 'এক-এগারো'র জন্ম হবে না। শুধু 'এক-এগারো'র ঘটনা দিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থাকে যাচাই করা ঠিক নয়। আমরা ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পেয়েছিলাম, যারা সাফল্যের সঙ্গে নির্বাচন পরিচালনা করেছে। এর আগে বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, সেখানেও বিতর্ক ছিল কম। শুধু 'এক-এগারো'র ঘটনা দিয়ে সবকিছু বিবেচনা করা ঠিক নয়।
অথচ দুঃখজনক হলেও সত্য, কয়েকজন মন্ত্রী ও বুদ্ধিজীবী 'এক-এগারো'র ঘটনাকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের একটা বড় ত্রুটি হিসেবে চিহ্নিত করেন। অথচ তারা কখনই বলেন না ১৯৯৬ সালে সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা প্রবর্তিত হওয়ার পর এ সরকারের নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন করেছিল। এমনকি যারা নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন পরিচালনা করেছিল, সেই সরকারও ছিল সেনানিয়ন্ত্রিত একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকার। যদি তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা খারাপই হয়ে থাকে, তাহলে সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা থাকে না। ২০০৬ সালের অক্টোবরে বিএনপি নেতৃত্বাধীন সরকারের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল, তার জন্য কি আওয়ামী লীগ কিংবা বিএনপি দায়ী ছিল না?
দেয়ালের লিখন থেকে আমরা কেউ শিখি না। কোন পরিস্থিতিতে সেনানিয়ন্ত্রিত সরকারের আত্মপ্রকাশ ঘটেছিল, ইতিহাস তার সাক্ষী। রাজনৈতিক দলগুলো যদি ওই সময়ে নূ্যনতম ইস্যুতে এক হতে পারত, তাহলে সে পরিস্থিতির উদ্ভব হতো না। এ জন্য আমাদের রাজনীতিবিদরা কম দায়ী নন। আজকে রাজনৈতিক দলগুলোকে এ কথাটা উপলব্ধি করতে হবে। বিশেষ করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের জন্যও এই নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের ধারণা ভালো। তাতে করে তারা একটা সুযোগ পাবে তাদের আমলের যে অবদান তা ভবিষ্যতে তুলে ধরতে। উপরন্তু আগামী দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন যদি নিরপেক্ষ ও নির্দলীয় সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত হয়, তাহলে আওয়ামী লীগ তাদের বক্তব্য নিয়ে জনসাধারণের কাছে যাক। জনগণ যদি তা সমর্থন করে তাহলে তারা আবার পুনরায় ক্ষমতায় ফিরে আসবে। এতে তো ক্ষতির কিছু নেই।
একমাত্র আওয়ামী লীগ বাদে প্রতিটি দলই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পক্ষে। এমনকি মহাজোটের অংশীদার জাতীয় পার্টি এবং ওয়ার্কার্স পার্টিও চায় একটি নিরপেক্ষ সরকার। এ ক্ষেত্রে সরকার এ দাবি মেনে না নেয়ায়, সরকারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন থাকবেই। আর প্রধানমন্ত্রী যখন সুস্পষ্ট করেই বলেন, 'ওরা ক্ষমতায় এলে আর নির্বাচন দেবে না', তখন নানা প্রশ্ন এসে ভিড় করে। কেন প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলছেন বার বার? প্রধানমন্ত্রীর এ বক্তব্যের সঙ্গে বাস্তবতার কোনো মিল নেই। কেননা কোনো অসাংবিধানিক সরকারের পক্ষে এখন আর ক্ষমতা গ্রহণ করা সম্ভব নয়। তারা চাইলেও পারবে না। কেননা একদিকে রয়েছে সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা, অন্যদিকে বিদেশি দাতাগোষ্ঠীর চাপ। মাঝখানে রয়েছে রাজনৈতিক দলগুলো। কারো পক্ষেই আর নির্ধারিত সময়ের বাইরে থাকা সম্ভব নয়। ২০০৭ সালের পরিস্থিতির সঙ্গে আজকের পরিস্থিতি মেলানো যাবে না। তবে 'একজন নির্বাচিত ব্যক্তিও' এ নির্বাচন পরিচালনা করতে পারেন। রাজনৈতিক দলগুলো চাইলে এ ব্যবস্থা প্রবর্তন করা সম্ভব। আর সে জন্য সংলাপটা জরুরি।
জাতির বৃহত্তর স্বার্থের খাতিরেই সরকারপ্রধান একটি সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। তিনি ইতিহাসে তার নাম রেখে যেতে পারবেন, যদি তিনি নির্দলীয় সরকারের ব্যাপারে একটি সিদ্ধান্ত দেন। এ নির্দলীয় সরকার তত্ত্বাবধায়ক সরকার হবে না। এর কাঠামোও হবে ভিন্ন। শুধু প্রয়োজন আন্তরিকতার। না হলে দেশ এক চরম সংকটের মুখে পড়বে। এ জন্য একটা সমঝোতা প্রয়োজন। বিএনপি নেত্রী স্পষ্ট করেই বলেছেন দলীয় সরকারের অধীনে তারা কোনো নির্বাচনে অংশ নেবেন না। এ ক্ষেত্রে জাতীয় পার্টিও অংশ নেবে না বলে মনে হচ্ছে। এর ফলে সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার দোহাই দিয়ে চলতি বছরের শেষের দিকে সরকার যদি নির্বাচনের আয়োজন করে, তার পরিণতি তৃতীয় (১৯৮৬), চতুর্থ (১৯৮৮) কিংবা ষষ্ঠ (১৯৯৬) সংসদ নির্বাচনের মতো হবে। এর কোনো গ্রহণযোগ্যতা থাকবে না। আমাদের মতো একটি গরিব দেশে নির্বাচনের নামে শত শত কোটি টাকা খরচ করা বিলাসিতা মাত্র। তাই আওয়ামী লীগ নেতাদের রাজনৈতিক দূরদর্শিতার পরিচয় দিতে হবে। একটি ভুল সিদ্ধান্ত দলকে অনেক পেছনে ফেলে দিতে পারে। নানা ধরনের ফাঁদ তৈরি হয়েছে। দেশি ও বিদেশি শক্তি দশম নির্বাচন সামনে রেখে নানা ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছে। দেশপ্রেমিক প্রতিটি নাগরিককে আজ এ ব্যাপারে সচেতন থাকতে হবে।
নির্বাচন হচ্ছে এমন একটি প্রক্রিয়া, যেখানে জনসাধারণ তাদের অধিকার প্রয়োগ করে প্রতিনিধি নির্বাচিত করে। আজ সাধারণ মানুষকে সে সুযোগটি দেয়া উচিত। এ ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী যদি সংসদ ভেঙে দেয়ার পরও থেকে যান, তাহলে সরকারের সাজানো মাঠ পর্যায়ের প্রশাসন দিয়ে নির্বাচন আয়োজন করলে, তাতে জনগণের মতামত প্রতিফলিত হবে তার সম্ভাবনা ক্ষীণ। তাই নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া কোনো বিকল্প নেই।
প্রধানমন্ত্রী যে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, তার কোনো ভিত্তি নেই। অসাংবিধানিক শক্তির পক্ষে আর বাংলাদেশের রাষ্ট্রক্ষমতায় অংশীদার হওয়া সম্ভব নয়। সেনা নেতৃত্ব বার বার বলছেন তারা সংবিধানের কাছে দায়বদ্ধ। আমাদের এক শ্রেণির বুদ্ধিজীবী সেনাবাহিনীকে যথেষ্ট বিতর্কিত করেছে। সুতরাং তারা আর কোনো রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় অংশ নেবে, এটা আমার মনে হয় না। তাই উদ্যোগটি নিতে হবে সরকারপ্রধানকেই। তিনিই পারেন একটা দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে।
Daily JAI JAI DIN29.06.13

0 comments:

Post a Comment