রাজনীতি, আন্তর্জাতিক রাজনীতি এবং সমসাময়িক ঘটনাবলীর বিশ্লেষণ সংক্রান্ত অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর রেহমানের একটি ওয়েবসাইট। লেখকের অনুমতি বাদে এই সাইট থেকে কোনো লেখা অন্য কোথাও আপলোড, পাবলিশ কিংবা ছাপাবেন না। প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন লেখকের সাথে

বাংলাদেশ-পাকিস্তানের ভবিষ্যৎ সম্পর্ক প্রসঙ্গ

পাকিস্তান একজন নয়া প্রধানমন্ত্রী পেয়েছে। গত ১১ মে’র নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার পর মুসলিম লীগ (এন) নওয়াজ শরিফকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মনোনীত করে। গত ৪ জুন তিনি প্রেসিডেন্ট আসিফ আলি জারদারির কাছে শপথ নিলেন। প্রধানমন্ত্রীর এই পদটির মধ্যে তিনি যেন কেমন বেমানান! কেননা দু-দু’বার তিনি নির্বাচিত হয়ে দায়িত্ব নিয়েছিলেন, কিন্তু একবারও তিনি টার্ম পূরণ করতে পারেননি। ১৯৯০ ও ১৯৯৭ সালে দু-দু’বারই নির্বাচনে বিজয়ী হলেন। কিন্তু পাকিস্তানের অন্যতম ‘রাজনৈতিক শক্তি’ সেনবাহিনীর কাছে তিনি কখনোই গ্রহণযোগ্য ব্যক্তি ছিলেন না। ১৯৯৩ সালের ১৮ এপ্রিল তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ইসহাক খান তাকে ক্ষমতাচ্যুত করলেও পেছনে ছিল সেনাবাহিনী। আর ১৯৯৯ সালের ১২ অক্টোবর সেনাপ্রধানের সঙ্গে দ্বন্দ্বের পরিণতিতে তিনি সামরিক অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হন। কিন্তু এবার? তিনি কী পারবেন তার ৫ বছরের টার্ম পূরণ করতে? এ প্রশ্নের জবাব এই মুহূর্তে দেয়া কঠিন। তবে সেনাপ্রধান জেনারেল কায়ানি তার সঙ্গে দেখা করেছেন। তাদের দু’জনের ছবি পত্রিকায় ছাপাও হয়েছে। তবে কায়ানিকে নিয়ে তার ভয় কম। কেননা সামনের নভেম্বরেই কায়ানির দ্বিতীয় মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছে। একজন নয়া সেনাপ্রধান পাচ্ছে পাকিস্তান এই বছরেই। তার সঙ্গে নওয়াজ শরিফের সম্পর্ক কেমন হয়, সে ব্যাপারটার প্রতিও দৃষ্টি থাকবে অনেকের। নওয়াজ শরিফের জন্যও এটা একটা কঠিন পরীক্ষা। কোনো আস্থাভাজন জেনারেলকে কি তিনি সেনাপ্রধান হিসেবে নিয়োগ করবেন? দু’জন পূর্ণ জেনারেল ও ২১ লেফটেন্যান্ট জেনারেলের মধ্য থেকেই তাকে বেছে নিতে হবে নয়া সেনাপ্রধানকে। কায়ানির মতোই একজন পাঞ্জাবি জেনারেল যে পাক সেনাবাহিনীকে নেতৃত্ব দেবেন, এটা নিশ্চিত করেই বলা যায়।
তাই এসব কথা ইতোমধ্যে চাউর হয়ে গেছে যে, নয়া সেনাপ্রধান অথবা সেনাবাহিনী যা চাইবে এর বাইরে যেতে পারবেন না নয়া প্রধানমন্ত্রী। এ ক্ষেত্রে যে বিষয়গুলো প্রধানমন্ত্রী ও সেনাপ্রধানের মধ্যকার সম্পর্কের ওপর প্রভাব বিস্তার করবে, তা হচ্ছে পাকিস্তানপন্থি তালেবানের সঙ্গে সরকারের সংলাপ ও সংলাপের ভবিষ্যৎ, ভারতের সঙ্গে নওয়াজ শরিফের সম্পর্ক উন্নয়নের উদ্যোগ, ২০১৪ সালে আফগানিস্তান থেকে সব বিদেশি সৈন্য প্রত্যাহার ইত্যাদি। প্রধানমন্ত্রী এখন যে সিদ্ধান্তই নিন না কেন, সেনাবাহিনীর স্বার্থ যাতে বিঘিœত না হয়, সেটা বিবেচনায় নিয়েই তিনি সিদ্ধান্ত নেবেন। এ ক্ষেত্রে সরাসরি বিবাদে জড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা কম। সিভিল প্রশাসনকে ক্ষমতায় রেখেই সেনাবাহিনী তাদের প্রভাব অব্যাহত রাখবে।
এই নির্বাচন পাকিস্তানের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কেননা পাকিস্তানের ইতিহাসে এই প্রথমবারের মতো একটি সরকার তার টার্ম শেষ হওয়ার পরই এই নির্বাচনের আয়োজন করেছিল। দ্বিতীয় যে বিষয়টি আরো গুরুত্বপূর্ণ তা হচ্ছে একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে এই নির্বাচন সম্পন্ন হলো।পাকিস্তানে ২০১২ সালের ফেব্র“য়ারি মাসে সংবিধানের ২০তম সংশোধনী এনে সেখানে পরবর্তী নির্বাচন পরিচালনার জন্য একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হয়েছিল। সাবেক বিচারপতি মির হাজার খান খোসো ওই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নেতৃত্ব দেন। তারা সাফল্যের সঙ্গে এই সংসদ নির্বাচনে (১৪তম) পরিচালনা করলেও পাকিস্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে রেখে গেছে নানা প্রশ্ন। বিশেষ করে যে জঙ্গিবাদ পাকিস্তানের অস্তিত্বকে এখন প্রশ্নের মুখে ঠেলে দিয়েছে। নয়া সরকার এই জঙ্গিবাদের উত্থান ঠেকাতে এখন কী পদক্ষেপ নেবে তা দেখার বিষয়। তিনটি প্রধান জঙ্গি সংগঠনের কথা বলা যায়। যাদের কর্মকাণ্ড আজ আন্তর্জাতিক পরিসরেও ব্যাপক সমালোচিত। তেহরিকে তালেবান, লস্কর-ই-তৈয়্যেবা ও জইসই মোহাম্মদ।
এর মধ্যে লস্কর-ই-তৈয়্যেবা ও জইসই মোহাম্মদ পাকিস্তানের বাইরে ভারতে জঙ্গি তৎপরতার সঙ্গে জড়িত বলে অভিযোগ পোক্ত। ২০০১ সালের ডিসেম্বরে ভারতের পার্লামেন্ট ভবনে হামলার জন্য এই দুই জঙ্গি সংগঠনকে দায়ী করা হয়। এ দুটি সংগঠনের তৎপরতার কারণে ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক উন্নত হয়নি। অন্যদিকে তেহরিকে তালেবান বেশিমাত্রায় আফগানিস্তানের তালেবানের দ্বারা প্রভাবিত। এরা পাকিস্তানের ভেতরেই এদের সন্ত্রাসী তৎপরতা অব্যাহত রেখেছে। ইসলামবিরোধী রাজনীতিকদের হত্যা, জনসভায় আত্মঘাতী বোমা হামলা এদের অন্যতম কর্মকাণ্ড। নির্বাচনের আগে নওয়াজ শরিফ ও ইমরান খান এদের সঙ্গে সংলাপের প্রস্তাব করেছিলেন। এই সংলাপ আদৌ অনুষ্ঠিত হয় কি-না, সেটা বড় প্রশ্ন এখন। একই সঙ্গে পাকিস্তানের অত্যন্ত ক্ষমতাধর বিচার বিভাগ, বিশেষ করে প্রধান বিচারপতি ইফতেখার মোহাম্মদ চৌধুরীর ভূমিকা এখন লক্ষ্য রাখার বিষয়। সাম্প্রতিক সময়ে তার ভূমিকা, বিশেষ করে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইউসুফ রাজা গিলানির ক্ষমতা হারানো, মকদুম শাহাবুদ্দিনকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মনোনয়ন অযোগ্য ঘোষণা ইত্যাদি ঘটনায় প্রধান বিচারপতি তথা বিচার বিভাগের ভূমিকা এখন প্রশ্নের মুখে। এই বিচার বিভাগের কারণেই সাবেক প্রেসিডেন্ট পারভেজ মোশারফ বেশ কিছুদিন গৃহবন্দি ছিলেন। নির্বাচনে তার প্রার্থিতা অযোগ্য ঘোষিত হয়েছিল। ফরেন পলিসি ম্যাগাজিনে প্রকাশিত একটি প্রবন্ধে তাই বিচার বিভাগকে Activist judges হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এখন দেখার বিষয় নয়া সরকারের সঙ্গে বিচার বিভাগের সম্পর্ক কোন পর্যায়ে উন্নীত হয়। পশ্চিমা পর্ষবেক্ষকরা অনেকেই মন্তব্য করেছেন, বিচারপতি ইফতেখার চৌধুরী অবসর নিলেও উচ্চ আদালতে যেসব সিনিয়র বিচারপতি রয়েছেন, তারা বিচারপতি চৌধুরীর পদাঙ্ক অনুসরণ করতে পারেন। সে ক্ষেত্রে নয়া সরকার তথা নয়া প্রধানমন্ত্রী দুর্নীতিসহ নানা জটিলতার মধ্যে জড়িয়ে যেতে পারেন। নওয়াজ শরিফের বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা রয়েছে। সেই মামলা পুনরুজ্জীবিত হতে পারে। এ ক্ষেত্রে হঠাৎ করে বিচার বিভাগ এ ধরনের কার্যক্রম শুরু করবে না।
সম্ভবত তারা অপেক্ষা করবে আরো কিছুদিনের জন্য। পর্দার অন্তরালে থেকে সেনাবাহিনী কী কলকাঠি নাড়ে, সেটাও দেখার বিষয়। অনেকেই বিশ্বাস করেন সেনাবাহিনীর সঙ্গে বিচার বিভাগের একটা ‘সখ্য’ রয়েছে। তবে নওয়াজ শরিফের মূল সমস্যা হচ্ছে অর্থনীতি। পাকিস্তানের অর্থনীতির অবস্থা খুবই শোচনীয়। প্রায় ১৮০ মিলিয়ন, অর্থাৎ ১৮ কোটি জনসংখ্যা অধ্যুষিত দেশটির প্রবৃদ্ধির হার মাত্র ৩ শতাংশ। বৈদেশিক রিজার্ভে যা আছে, তা দিয়ে মাত্র দু’মাসের আমদানি ব্যয় মেটানো সম্ভব। সাম্প্রতিক সময়ে রেমিট্যান্সের প্রবাহও কম। বাজেট ঘাটতির হার শতকরা ৮ শতাংশ। বেকার সমস্যা প্রকট। বিনিয়োগের পরিস্থিতিও আশাব্যঞ্জক নয়। জাতিসংঘের ঐউজ (Human Development Report) অনুযায়ী ১৮৬ দেশের মধ্যে পাকিস্তানের অবস্থান ১৪৬-এ। বাংলাদেশের অবস্থান তুলনামূলক বিচারে পাকিস্তানে চেয়ে ভালো। বয়স্কদের মধ্যে শতকরা ৫৫ শতাংশই অশিক্ষিত। পাখতুনখোয়া প্রদেশ কিংবা FATA এলাকায় শিশু, বিশেষ করে মেয়েশিশুদের স্কুলে না যাওয়ার হার সবচেয়ে বেশি। এমনকি দাঙ্গা-বিক্ষুব্ধ করাচি শহরের চার ভাগের এক ভাগ শিশু স্কুলে যায় না। তবে পাঞ্জাব প্রদেশে শিশুদের স্কুলে যাওয়ার হার সবচেয়ে বেশি। আইএমএফ’র সঙ্গে প্রায় ৯ মিলিয়ন ডলারের ঋণ চুক্তি নিয়ে আলোচনা আটকে আছে। নয়া সরকারের জন্য এটা হবে বড় চ্যালেঞ্জ। আইএমএফ যেসব শর্ত দিয়েছে তা এখন মানতে বাধ্য হবে নয়া সরকার। বিনিয়োগের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে বিদ্যুৎ ঘাটতি। ১৫ বছর আগেও পাকিস্তান ছিল বিদ্যুতে সারপ্লাস। তখনকার পরিস্থিতির সঙ্গে আজকের পরিস্থিতিকে মেলানো যাবে না। বিদ্যুতের লোডশেডিং এখন খুব স্বাভাবিক ব্যাপার পাকিস্তানে। দিনের বেশিরভাগ সময়ই বিদ্যুৎ থাকে না। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, বেকারত্ব, অসমতা ইত্যাদি নানা সমস্যা পাকিস্তানের অর্থনৈতিক অবস্থাকে অত্যন্ত নাজুক অবস্থায় নিয়ে গেছে।
এদিকে বৈদেশিক সম্পর্কের ক্ষেত্রেও নয়া সরকারকে নানা ধরনের প্রতিকূলতার মুখোমুখি হতে হবে। পাকিস্তান-ইরান গ্যাস পাইপ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রচণ্ড আপত্তি রয়েছে। পাকিস্তান তার জ্বালানি সংকট মেটাতে ইরান থেকে গ্যাস আমদানি করা সংক্রান্ত একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের তাতে আপত্তি রয়েছে। এমনিতেই পাকিস্তান-আফগান সীমান্তে অব্যাহত ড্রোন বিমান হামলা এই সম্পর্কের ক্ষেত্রে নানা জটিলতা তৈরি করেছে। বিগত সরকার এই ড্রোন বিমান হামলা বন্ধের ব্যাপারে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারেনি। নয়া সরকারের জন্য বিষয়টি হবে বেশ স্পর্শকাতর। কেননা এই ড্রোন হামলা পাকিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী একটি জনমত তৈরি করেছে। নির্বাচনের আগে নির্বাচনী প্রচারণায় ইমরান খান ড্রোন বিমান গুলি করে ফেলে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। ভারতের সঙ্গেও সম্পর্কের তেমন উন্নতি হয়নি। সম্প্রতি পাকিস্তানের কারাগারে একজন ভারতীয় বন্দির মৃত্যুকে (যিনি ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা র’-এর এজেন্ট ছিলেন) কেন্দ  করে এই সম্পর্কের আরো অবনতি ঘটেছে। একই সঙ্গে বেলুচিস্তানের বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন এখন পাকিস্তানের কেন্দ ীয় সরকারের জন্য চিন্তার অন্যতম কারণ। বেলুচিস্তানের প্রাকৃতিক গ্যাস দিয়ে পাকিস্তানের অন্যান্য প্রদেশে উন্নয়ন ঘটলেও খোদ বেলুচিস্তানে এর ছোঁয়া লাগেনি। বরং বেলুচিদের অভিযোগ রয়েছে, সেনাবাহিনী দিয়ে তাদের জাতীয় নেতাদের হত্যা করা হচ্ছে। বেলুচিস্তানে একাধিক সশস্ত্র গ্রুপের জন্ম হয়েছে, যারা স্বাধীন বেলুচ রাষ্ট্রের জন্য সশস্ত্র যুদ্ধ পরিচালনা করছে। এই বেলুচিস্তানের ভবিষ্যৎ এখন নানা প্রশ্নের মুখে। সাম্প্রতিক সময়গুলোতে বেলুচিস্তানের ভূ-রাজনৈতিক গুরুত্ব অনেক বেড়েছে। বেলুচিস্তানের সঙ্গে সীমান্ত রয়েছে ইরানি প্রদেশ সিসতান বেলুচিস্তানের। অন্যদিকে বেলুচিস্তানের গাওদারে রয়েছে একটি গভীর সমুদ্রবন্দর। চীন এই বন্দরটি নির্মাণ করে দিয়েছে। ভারত মহাসাগরে চীনা নৌ-বাহিনীর তৎপরতা বৃদ্ধি পাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে গাওদারের গুরুত্ব অনেক বেড়েছে। এমনকি সিসতান বেলুচিস্তানের সঙ্গে একত্রিত হয়ে অদূর ভবিষ্যতে একটি গ্রেটার বেলুচিস্তান রাষ্ট্র গঠন বিচিত্র কিছু নয়। ভারত মহাসাগরে জ্বালানি সরবরাহ লাইন নিশ্চিত রাখা কিংবা তেহরানের কেন্দ ীয় সরকারকে ‘চাপে’ রাখার কাজে এই বেলুচিস্তান আগামী দিনে বাইরের শক্তির কাছে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে। অনেকেরই মনে থাকার কথা, বেলুচিস্তানের গভীর মরুভূমিতে যুক্তরাষ্ট্রের একটি বিমান ঘাঁটি ছিল। ২০১২ সালে পাকিস্তানের আপত্তির মুখে যুক্তরাষ্ট্র এই ঘাঁটিটি বন্ধ করে দেয়।
সুতরাং নয়া সরকার বেলুচিস্তানের ব্যাপারে কী পদক্ষেপ নেয়, সে ব্যাপারে লক্ষ্য থাকবে অনেকের। পাকিস্তানে অব্যাহত জঙ্গি তৎপরতা বৃদ্ধি পাওয়ায় পাকিস্তানে বিদেশি বিনিয়োগ নেই। সরকারের আয় কমে গেছে। রেমিট্যান্সের প্রবাহও কম। এখন নয়া সরকারের দায়িত্ব হবে বিদেশিদের আস্থা ফিরিয়ে আনা। কিন্তু কাজটি সহজ নয়। একটি তরুণ প্রজšে§র জন্ম হয়েছে পাকিস্তানে। মোট ভোটারের তিন ভাগের এক ভাগ হচ্ছে এই তরুণ প্রজন্ম। ইমরান খান হচ্ছেন এই তারুণ্যের প্রতীক। যদিও তার বয়স ৬০। তথাপি এই তরুণদের নিয়েই এক ‘নয়া পাকিস্তানের’ গল্প শুনিয়েছেন ইমরান খান। তিনি যাদের নির্বাচনে প্রার্থী করেছিলেন, তাদের বেশিরভাগের বয়স ৩৫-এর নিচে। এই তরুণ সমাজকে নিয়ে এখন কাজ করতে হবে নয়া সরকারকে।
নির্বাচনের পর পরই একটা শঙ্কা তৈরি হয়েছিল যে, নওয়াজ শরিফ হয়তো এককভাবে সরকার গঠন করতে পারবেন না।
 কিন্তু নির্বাচনের পর পরই ১৮ জন স্বতন্ত্র এমপি পাকিস্তান মুসলিম লীগকে (এন) সমর্থন দেয়ায় দলটি সংসদে সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিশ্চিত করেছে। নির্বাচনে নওয়াজ শরিফের দল পেয়েছিল ১২৬টি আসন। ১৮ জনের সমর্থন থাকায় এ সংখ্যা এখন ১৪৪। সংরক্ষিত (৭৭) আসন থেকে দলটি পাবে ৩৭ আসন। অর্থাৎ ৩৪২ আসনের সংসদে নওয়াজ শরিফ নিশ্চিত করেছেন ১৭১টি আসন। তারপরও তিনি একটি কোয়ালিশন সরকার গঠন করবেন বলে আমার ধারণা। এ ক্ষেত্রে ইমরানের দল কোয়ালিশনে যোগ না দিলেও সরকারকে সমর্থন করবে। তবে নওয়াজ শরিফ চাইবেন ইমরান খান সরকারে যোগ দিন। এ ক্ষেত্রে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হয়ে উঠবেন ইমরান খান। ইসলামপন্থি মাওলানা ফজলুর রেহমানের নেতৃত্বাধীন জামায়াতে ইসলামের সমর্থনও তিনি পেয়েছেন। তালেবানের সঙ্গে সংলাপে জেইউআই-এফ তাকে সমর্থন করেছে। পাকিস্তানে ‘শান্তির’ জন্য তেহরিকে তালেবানের সঙ্গে যে কোনো ‘সমঝোতা’ পাকিস্তানে স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে পারে।
তারপরও কথা থেকে যায়। পাকিস্তানকে ক্রিকেটের মতোই বলা হয় ‘আনপ্রেডিকটিভ কান্ট্রি’। অর্থাৎ পাকিস্তানকে নিয়ে সুস্পষ্ট কোনো মন্তব্য করা যায় না। পাকিস্তানে নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। কিন্তু এই নির্বাচনই গণতন্ত্রের বিজয়কে নিশ্চিত করতে পারবে না।
একইভাবে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের বিষয়টি নিয়েও একটা প্রশ্ন থেকে গেল। বাংলাদেশে মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধে পাকবাহিনীর অত্যাচারের ব্যাপারে পাকিস্তানের পক্ষ থেকে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানানো হয়। কিন্তু বিগত পাক সরকার ব্যাপারটিকে গুরুত্ব দেয়নি। বাংলাদেশে আটকে পড়া আড়াই লাখ পাকিস্তানি নাগরিকের (যারা বিহারি হিসেবে পরিচিত) পাকিস্তানে প্রত্যাবর্তনের বিষয়টিও ঝুলে আছে। পাকিস্তানের কাছে বাংলাদেশের পাওনার পরিমাণ ১৯৭৪ সালের হিসাব অনুযায়ী ছিল ২৪৪৬ কোটি টাকা, যা বর্তমান অঙ্কে ৩০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে। কিন্তু পাকিস্তান ওই অর্থ পরিশোধ করেনি। দু’দেশের বাণিজ্য চিত্র পর্যালোচনা করলে দেখা যায় পরিস্থিতি পাকিস্তানের অনুকূলে।
বাণিজ্যিক ভারসাম্যতা কমিয়ে আনার ব্যাপারেও পাকিস্তানের কোনো উদ্যোগ চোখে পড়ে না। সপ্তম সার্ক সম্মেলনে যোগ দিতে বাংলাদেশে এসেছিলেন নওয়াজ শরিফ ১৯৯৩ সালের এপ্রিল মাসে। তৃতীয়বারের মতো নওয়াজ শরিফ প্রধানমন্ত্রী হওয়ায় আমাদের প্রত্যাশা দু’দেশের সম্পর্ক উন্নয়নের ব্যাপারে তিনি উদ্যোগ নেবেন এবং বিরাজমান সমস্যার সমাধানে একটা পদক্ষেপ নেবেন। অনেক সমস্যাই দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে আছে। উভয় দেশের বৃহৎ স্বার্থেই এসব কিছুর নিরসন খুব দরকার।
Daily Manobkontho
05.06.13

0 comments:

Post a Comment