রাজনীতি, আন্তর্জাতিক রাজনীতি এবং সমসাময়িক ঘটনাবলীর বিশ্লেষণ সংক্রান্ত অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর রেহমানের একটি ওয়েবসাইট। লেখকের অনুমতি বাদে এই সাইট থেকে কোনো লেখা অন্য কোথাও আপলোড, পাবলিশ কিংবা ছাপাবেন না। প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন লেখকের সাথে

বিএনপি কি ঘুরে দাঁড়াতে পারবে?




আগামী ১৯ মার্চ বিএনপির কাউন্সিল অধিবেশন। এটি বিএনপির ষষ্ঠ কাউন্সিল। এই কাউন্সিল নিয়ে কর্মীদের মধ্যে যেমন ব্যাপক কর্মচাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে, ঠিক তেমনি সুশীলসমাজের মধ্যেও একটা প্রশ্ন বড় হয়ে দেখা দিয়েছে, তা হচ্ছে বিএনপি কি ঘুরে দাঁড়াতে পারবে? এরশাদবিরোধী আন্দোলনে বেগম জিয়া অবিসংবাদিত নেত্রীতে পরিণত হয়েছিলেন। তার জনপ্রিয়তা সেদিন তুঙ্গে উঠেছিল। এই জনপ্রিয়তা তার দলকে ১৯৯০ সালে পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিপুল ভোটে বিজয়ী করেছিল। তিনি সরকার পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছিলেন। তারপর থেকে আর তাকে পেছনের দিকে তাকাতে হয়নি। তার নেতৃত্বে বিএনপি বাংলাদেশের রাজনীতিতে অন্যতম একটি শক্তিতে পরিণত হয়েছিল। কিন্তু ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ না নেয়া এবং নির্বাচন বয়কট করার ডাক দিয়ে বড় ধরনের সংকটের মধ্যে পড়ে দলটি। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যে 'সহিংস রাজনীতির' জন্ম হয় তার জন্য অভিযুক্ত করা হয় বেগম জিয়া ও তারেক রহমানকে। শত শত নেতাকর্মীর নামে মামলা করা হয়। শীর্ষস্থানীয় নেতাকর্মীদের নামে শত শত মামলা হয়। এমনকি আজো শীর্ষ নেতাদের কেউ কেউ 'বাস পোড়ানোর' মামলা থেকে নিষ্কৃতি পাননি। বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে এরকম ঘটনা আগে কখনো ঘটেনি। এভাবে কোনো দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা অতীতে কখনো এভাবে মামলা-মোকদ্দমা ও জেল-জুলুম মোকাবেলা করেননি। এতকিছুর পরও বাস্তবতা হচ্ছে বিএনপির অবর্তমানে জাতীয় পার্টি 'বিএনপির অবস্থান'টা নিতে পারেনি। বিএনপি এখনো প্রধান বিরোধী দল। ফলে সঙ্গত কারণেই বিএনপি যখন এরকম একটি বিরূপ রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে তাদের কাউন্সিল করতে যাচ্ছে তখন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের দৃষ্টি তাদের দিকেই থাকবে, এটাই স্বাভাবিক। তাই সংবাদপত্র যখন মন্তব্য করে 'বিএনপি কি ঘুরে দাঁড়াতে পারবে', তখন তা যুক্তিসঙ্গত বৈকি! তবে এই কাউন্সিলের ওপর অনেককিছু নির্ভর করছে। দলটিকে গোছানো দরকার। নেতৃত্বের সারিতে পরিবর্তনও প্রয়োজন। বেগম জিয়া কিংবা তারেক রহমানকে চ্যালেঞ্জ করার দলের কেউ নেই বটে, কিন্তু শীর্ষ পদগুলোতে পরিবর্তন, যারা দল ত্যাগ করেছিলেন কিংবা বহিষ্কৃত হয়েছিলেন তাদের ফিরিয়ে আনা_ এই মুহূর্তে বিএনপির জন্য এগুলোই জরুরি।
গেল পহেলা সেপ্টেম্বর বিএনপি ৩৭ বছরে পা রেখেছে। একটি রাজনৈতিক দলের জন্য এই ৩৭ বছর একেবারে কম সময় নয়। দলটি একাধিকবার রাষ্ট্র ক্ষমতায় ছিল। ১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর জন্ম নেয়া এই রাজনৈতিক দলটি বর্তমানে এক কঠিন সংকটের মধ্যদিয়ে যাচ্ছে। বোধকরি অতীতে কখনই দলটি এ ধরনের সংকটের মধ্যে পড়েনি। যারা রাজনীতির গতি প্রকৃতি নিয়ে কাজ করেন তারা জানেন বাংলাদেশের সংসদীয় রাজনীতিতে দলটির একটি শক্ত অবস্থান আছে। তিনবার দলটি ক্ষমতায় ছিল (১৯৭৮-১৯৮২, ১৯৯১-৯৬, ২০০১-২০০৬)। ফলে তৃণমূল পর্যায়ে দলটির একটি অবস্থান আছে। ১৯৮২ সালে এরশাদের সামরিক অভ্যুত্থান ও ক্ষমতা থেকে বিএনপির উৎখাতের পর ওইসময় যখন বিএনপির অস্তিত্ব হুমকির মুখে ছিল ঠিক তখনই একজন গৃহবধূ থেকে (১৯৮৩) রাজনীতির পদপ্রদীপে আসেন বেগম জিয়া। এখন তিনিই বিএনপির অবিসংবাদিত নেত্রী। তাকে কেন্দ্র করেই বিএনপির রাজনীতি আবর্তিত হচ্ছে। তবে বাস্তবতা হচ্ছে ৯০-এ এরশাদবিরোধী আন্দোলনে সাধারণ মানুষ যে বেগম জিয়াকে দেখেছিল একজন অবিসংবাদিত নেত্রী হিসেবে, সেই বেগম জিয়াকে এখন খুঁজে পাওয়া মুশকিল। বয়স বেড়েছে। অসুস্থ তিনি। ৫ জানুয়ারির (২০১৪) নির্বাচনে অংশ না নেয়া কিংবা পরে সরকারবিরোধী আন্দোলন করতে গিয়ে যে সহিংস রাজনীতির জন্ম হয়েছে এ দেশে, তা ব্যক্তিগতভাবে বেগম জিয়া তথা বিএনপির রাজনীতিকে উজ্জ্বল করেনি। বেগম জিয়াকে আমার এমন মনে হয়েছে 'নিঃসঙ্গ একজন নাবিক হিসেবে, যিনি আদৌ জানেন না কোনদিকে এবং কোন পথে বিএনপি নামক 'জাহাজ'টিকে তিনি পরিচালনা করবেন। এক সন্তানহারা, অন্য সন্তান অনেক দূরে, নেতাকর্মীরা জেলে। 'নিঃসঙ্গ বেগম জিয়া' এখন একাই বিএনপি।
বর্তমানে বিএনপি নানা সমস্যায় আক্রান্ত_ এটা তো অস্বীকার করা যাবে না। বাস্তবতা হচ্ছে বিএনপি ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে। একটি মধ্যবর্তী নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। বিএনপি দল গোছানোর কথা বলছে। তবে অতীতে বিএনপির কয়েকজন নেতার ফোনালাপ ফাঁস হয়ে যাওয়ার ঘটনা প্রমাণ করে শীর্ষস্থানীয় বিএনপি নেতাদের মধ্যে এক ধরনের হতাশা আছে। বিএনপি ভাঙার 'গুজব' এ কারণেই। বেগম জিয়াকে দিয়ে হবে না, কিংবা 'জিয়ার আদর্শে ফিরে যেতে হবে'_ এ ধরনের বক্তব্য যখন বিএনপির শীর্ষস্থানীয় নেতাদের মুখ থেকে বের হয় তখন গুজবের নানা ডালপালা গজায়।
মীর্জা ফখরুল জামিন পেলেও কেউ কেউ জেলে আছেন এখনো। অনেকের বিরুদ্ধেই মামলা আছে। আর যারা হাইকোর্ট থেকে জামিন পেয়েছেন, ওই জামিনের বিরুদ্ধে আপিল করেছে সরকার। এর অর্থ পরিষ্কার_ মামলা-মোকদ্দমা দিয়ে বিএনপির শীর্ষ নেতাদের ব্যস্ত রাখতে চায় সরকার, যাতে করে তারা 'আন্দোলনে' নিজেদের জড়িত করতে না পারেন। বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে অতীতে এমনটি কখনই দেখা যায়নি_ এত বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা। ফলে এসব নেতাকর্মীরা আর রাজপথে সক্রিয় হতে পারবেন না। বেগম জিয়াকে সন্ত্রাসবিরোধী আইন ২০০৯-এর ২৭ ধারা অনুযায়ী (বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠনসংক্রান্ত ধারা) বিচার, জিয়া চেরিটেবল ট্রাস্ট মামলা কিংবা গ্যাটকো দুর্নীতি মামলায় শাস্তি দিয়ে নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করা, একই সঙ্গে ডান্ডি ডায়িং মামলায় তারেক রহমানকে শাস্তি দিয়ে তাকেও অযোগ্য ঘোষণার মধ্যদিয়ে সরকার 'মাইনাস ওয়ান' ফর্মুলার দিকেই ধীরে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছে বলে অনেকের ধারণা। এ ক্ষেত্রে বেগম জিয়াকে নির্বাচন 'অযোগ্য ঘোষণা' করা হলে আইনি প্রক্রিয়ায় তিনি নির্বাচনের জন্য যোগ্য হবেন কিনা জানি না। তবে নির্বাচনে অংশ নেয়ার প্রশ্ন হবে তখন অবান্তর। বেগম জিয়াই বিএনপির মূল শক্তি। বেগম জিয়া যদি নির্বাচনে অংশ নিতে না পারেন বিএনপির 'বিকল্প নেতৃত্ব' নির্বাচনে অংশ নেবে, এটা মনে করার কোনো কারণ নেই। বেগম জিয়া কিংবা তারেক রহমানকে বাদ দিয়ে বিএনপি সংগঠিত হবে_ এটাও আমার মনে হয় না। সরকারের নীতি-নির্ধারকরা যদি 'মাইনাস ওয়ান' ফর্মুলা কার্যকর করতে চান, আমার ধারণা তা কোনো কার্যকর 'ফল' দেবে না। 'আসল বিএনপি' কিংবা নাজমুল হুদার 'ফালতু কথাবার্তায়' মানুষ খুব আস্থাশীল এটা আমার মনে হয় না। জাতীয় পার্টিকে বিরোধী দলের আসনে বসিয়েও সরকার খুব লাভবান হয়নি। জাতীয় পার্টি এখন নানা 'জটিলতার' মুখে। ফলে সরকারের কাছে এখন বিকল্প পথ দুটি। এক. বিএনপিকে যে কোনোভাবে আস্থায় নিয়ে ২০১৭ সালের প্রথমদিকে একটি মধ্যবর্তী নির্বাচন দেয়া। দুই. অথবা সংবিধান অনুযায়ী ২০১৮ সালের শেষেরদিকে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আয়োজন করা। যে কোনো সময়ের চেয়ে সরকারের অবস্থান এখন অনেক শক্তিশালী। উপরে উলি্লখিত দুটি সিদ্ধান্তের মধ্যে একটি, অর্থাৎ প্রথমটির ব্যাপারে সরকারের আগ্রহ কম। এ ক্ষেত্রে দ্বিতীয় সিদ্ধান্ত, অর্থাৎ সংবিধান অনুযায়ী পরবর্তী নির্বাচনটিই সরকার করতে চায়। কিন্তু প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপিকে বাদ দিয়ে যদি ২০১৮ সালের শেষে নির্বাচন হয়, তাহলে সমস্যা যা ছিল তাই থেকে যাবে। বিএনপির সঙ্গে আস্থার সম্পর্ক তৈরি না হলে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে আরো শক্তিশালী করা যাবে না। সম্প্রতি ঢাকা সফর করে যাওয়া ইউরোপীয় ইউনিয়নের একটি প্রতিনিধি দলও বলে গেছে, 'সকল দলের অংশগ্রহণের' স্বার্থে নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে এখনই সংলাপ শুরু হওয়া প্রয়োজন। কিন্তু সরকার তাতে সায় দেবে বলে মনে হয় না।
এটা স্বীকার করতেই হবে বাংলাদেশে একটি দ্বিদলীয় ব্যবস্থার জন্ম হয়েছে। আওয়ামী লীগের বিকল্পই বিএনপি, ঘুরেফিরে এটা প্রমাণিত। দশম সংসদে জাতীয় পার্টি পারেনি। তাই যে কোনো বিবেচনায় বিএনপির সঙ্গে একটা আস্থার সম্পর্ক গড়ে তোলা সরকারের জন্য জরুরি। কেননা বাংলাদেশ নিম্নমধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে। ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৬ ভাগের উপরে, যেখানে ইউরোপে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে শ্লথগতি এসেছে। এখন নিম্নমধ্যম আয়ের দেশের চূড়ান্ত স্বীকৃতি পেতে হলে এই প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে হবে। আর এর পূর্বশর্ত হচ্ছে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা। বিএনপিকে আস্থায় নিয়েই এই স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে হবে। এটা সবাই বলেন, সংসদীয় রাজনীতিতে শক্তিশালী একটি বিরোধী দল থাকা দরকার। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি অংশ না নেয়ায় জাতীয় পার্টি সংসদে বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করছে। কিন্তু গত প্রায় দুই বছরের সংসদীয় রাজনীতির কার্যক্রম পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, জাতীয় পার্টি সেই দায়িত্বটি পালন করতে পারছে না। জাতীয় পার্টিতে দ্বন্দ্ব আছে সরকারের থাকা না থাকা নিয়ে। ফলে সংসদকে আরো গ্রহণযোগ্য, আরো অর্থবহ এবং সর্বোপরি একটি সঠিক জাতীয় নীতি প্রণয়নে সংসদে একটি শক্তিশালী বিরোধী দল থাকা বাঞ্ছনীয়। আর বিএনপিই সেই দায়িত্বটি পালন করতে পারে। বলা বাহুল্য, বিএনপি সংসদে না থাকলেও বিএনপি যে বাংলাদেশের রাজনীতির একটি অপরিহার্য অংশ, দাতাগোষ্ঠী এটা স্বীকার করে এবং তারা সবাই বিএনপিকে মূলধারার রাজনীতিতে দেখতে চায়। ভারতীয় নীতি-নির্ধারকদের অবস্থানও আমার ধারণা, অনেকটা সেরকম। সরকারের ভূমিকা তাই এ ক্ষেত্রে অগ্রগণ্য। এটা স্বীকার করতেই হবে বাংলাদেশের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি অন্যতম দুটি শক্তি। এই দুটি দল দুটি রাজনৈতিক ধারার প্রতিনিধিত্ব করছে। অতীত ইতিহাস প্রমাণ করে এই দুটো দলের একটিকে বাদ দিয়ে যে গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি তা স্থায়ী হয়নি। বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর দীর্ঘ ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফিরে এসেছিল জনগণের ভোটে। এর আগে ১৯৮৬ সালে এরশাদীয় জামানায় যে সংসদ নির্বাচন হয়েছিল তাতে আওয়ামী লীগ অংশগ্রহণ করলেও বিএনপি নির্বাচন বয়কট করায় ওই সংসদ টিকে থাকেনি। ১৯৮৮ সালের সংসদও টেকেনি আওয়ামী লীগ ও বিএনপির অংশ না নেয়ার কারণে। এ দু'দলের অংশগ্রহণ থাকার কারণেই ৫ম সংসদ (১৯৯১), ৭ম সংসদ (১৯৯৬), ৮ম সংসদ (২০০১) ও ৯ম সংসদ (২০০৮) গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছিল। কিন্তু বিএনপির অংশগ্রহণ না থাকায় ৫ জানুয়ারির (২০১৪) দশম জাতীয় সংসদের নির্বাচন গ্রহণযোগ্যতা পায়নি।
পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বিএনপি অনেক নমনীয় হয়েছে এবং তাদের আগের অবস্থান থেকে কিছুটা সরে এসেছে। বিএনপির পক্ষ থেকে দেয়া অনেক বক্তব্য বিশ্লেষণ করে আমার মনে হয়েছে বিএনপি সরকারের সঙ্গে একটি 'শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানে' যেতে চায় এবং যা গুরুত্বপূর্ণ তা হচ্ছে বিএনপি আগামী নির্বাচনে অংশ নিতে চায়। এ ক্ষেত্রে সরকারের দায়িত্বটি অনেক বেশি বলেই আমার মনে হয়েছে। যদিও এটা সত্য একটি 'আস্থার সম্পর্ক' গড়ে তুলতে হলে বিএনপিরও দায়িত্ব অনেক। তাই যে কোনো বিবেচনায় আগামী ১৯ মার্চের কাউন্সিল অধিবেশন বিএনপির জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এক. স্থায়ী পরিষদকে পুনর্গঠন করা এবং বয়োজ্যেষ্ঠ নেতাদের উপদেষ্টা পরিষদে পাঠানো। এ ক্ষেত্রে একজন উপদেষ্টা পরিষদের চেয়ারম্যান হতে পারেন। উপদেষ্টা পরিষদে এমন অনেক ব্যক্তি আছেন যাদের সাংগঠনিক কাঠামোয় আনা যায়। দুই. বিএনপির জন্য একটি 'থিংক ট্যাঙ্ক' গঠন জরুরি। আমি পৃথিবীর অনেক রাজনৈতিক দলের খবর জানি, যেখানে দলের রাজনীতি সমর্থিত বুদ্ধিজীবীদের দিয়ে একটি 'থিংক ট্যাঙ্ক' গঠন করা হয়। এই 'থিংক ট্যাঙ্ক' দলের জন্য নীতি-নির্ধারণ করেন। এ ক্ষেত্রে দশটি সেক্টরকে ভাগ করে বুদ্ধিজীবীদের নীতি-নির্ধারণী প্রক্রিয়ায় আনা যায়। তিন. সাংগঠনিক কাঠামো আরো শক্তিশালী করা প্রয়োজন। প্রতিটি বিভাগের জন্য একজন করে সাংগঠনিক সম্পাদক থাকা দরকার। যুগ্ম মহাসচিবের সংখ্যাও বাড়ানো দরকার। চার. ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে একটি কো-চেয়ারম্যান ও কার্যকরী সভাপতির পদ সৃষ্টি করা প্রয়োজন। কেননা দুর্নীতির মামলায় বেগম জিয়ার যদি শাস্তি হয়ে যায় তাহলে দলের দেখভাল কে করবে এ ব্যাপারে স্পষ্ট নির্দেশনা থাকা দরকার। পাঁচ. আগামী ২০৫০ সালকে সামনে রেখে বিএনপির একটি 'কর্ম পরিকল্পনা' উপস্থাপন করা প্রয়োজন। বিএনপি ২০৫০ সালকে কিভাবে দেশটিকে দেখতে চায় এটা জানা দরকার।
সুষ্ঠুভাবে কাউন্সিলটি সম্পন্ন হোক_ এটা আমরা চাই। সরকার কোনো প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে না এটাও কাম্য। এই কাউন্সিলের মধ্যদিয়ে বিএনপি ঘুরে দাঁড়াতে পারবে কিনা, সেটাই দেখার বিষয় এখন।
Daily   Jai Jai Din
15.03.16

0 comments:

Post a Comment