রাজনীতি, আন্তর্জাতিক রাজনীতি এবং সমসাময়িক ঘটনাবলীর বিশ্লেষণ সংক্রান্ত অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর রেহমানের একটি ওয়েবসাইট। লেখকের অনুমতি বাদে এই সাইট থেকে কোনো লেখা অন্য কোথাও আপলোড, পাবলিশ কিংবা ছাপাবেন না। প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন লেখকের সাথে

ওবামার ঐতিহাসিক কিউবা সফর

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ওবামা তার দ্বিতীয় টার্মের শেষ পর্যায়ে এসে ‘পরিবর্তিত’ কিউবায় তিনদিনের সফর শেষ করলেন ২৩ মার্চ। ১৯২৮ সালে আমেরিকার ৩০তম প্রেসিডেন্ট ক্যালভিন কুলিজ (১৯২৩-২৯) সে দেশে গিয়েছিলেন। কুলিজ ছিলেন রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট। আর একজন ডেমোক্রেট প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা হাভনায় নামলেন ২০১৬ সালে। মাঝখানে চলে গেছে ৮৮ বছর। এ দীর্ঘ সময়ে দুই দেশের মাঝে আরেক পরিবর্তন এসেছে। কুলিজের কিউবা সফরের আগে কিউবায় আগ্রাসন চালিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র, ১৮৯৮-১৯০২ সালে, আবার ১৯১৭-২২ সালে। কিন্তু ১৯৫৯ সালের বিপ্লব বদলে দেয় দৃশ্যপট। মার্কিনি আগ্রাসন ফিদেল ক্যাস্ট্রোকে ঠেলে দেয় সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের দিকে। সেই থেকে যুক্তরাষ্ট্র-কিউবা সম্পর্কে কোনো সুবাতাস বইছিল না। কিন্তু ওবামা উদ্যোগ নিলেন সম্পর্কোন্নয়নের। ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে ওবামা কিউবার সঙ্গে সম্পর্ক উন্নত করার কথা বলেছিলেন। এরপর শুরু হয় আলোচনা। ১৪ আগস্ট (২০১৫) দীর্ঘ ৫৪ বছর পর হাভানায় যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসে মার্কিনি পতাকা উড়ানো হয়েছিল, যা ১৯৬১ সালে নামিয়ে ফেলা হয়েছিল। এরপর এখন ওবামা গেলেন হাভানায়। এর মধ্যে দিয়ে কী পেল যুক্তরাষ্ট্র? কিউবারই বা স্বার্থ কী? আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ছাত্রদের কাছে যুক্তরাষ্ট্র-কিউবা সম্পর্ক অনেকদিন ধরেই আলোচনার একটি বিষয়। কিউবা কি আদৌ তার সমাজতান্ত্রিক নীতি পরিত্যাগ করবে, নাকি যুক্তরাষ্ট্র ‘আবারও’ হাভানায় সরকারের উৎখাতের উদ্যোগ নেবে- এসব প্রশ্ন বারবার মিডিয়ায় ও বিভিন্ন পর্যবেক্ষকের লিখনীতে উঠে আসছিল। ১৯৯১ সালের ডিসেম্বরে পূর্ব ইউরোপে ‘সোভিয়েত ধাঁচের’ সমাজতন্ত্রের পতনের রেশ ধরে সোভিয়েত ইউনিয়নে যখন সমাজতন্ত্রের পতন ঘটল, তখন বলতে গেলে সারা বিশ্বের দৃষ্টি এক রকম নিবদ্ধ ছিল কিউবার দিকে। কেননা কিউবা ছিল সোভিয়েত সমাজতন্ত্রের অন্যতম সমর্থক এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের মিত্র। দ্বিতীয় প্রশ্ন ছিল কিউবার অর্থনীতির অন্যতম উৎস এবং সেই সঙ্গে নিরাপত্তার অন্যতম গ্যারান্টার ছিল সোভিয়েত ইউনিয়ন। সোভিয়েত ইউনিয়নের অবর্তমানে অর্থনৈতিকভাবে কিউবা টিকে থাকতে পারবে কিনা- এ প্রশ্নটিও বারবার উচ্চারিত হয়েছে। একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের ‘আগ্রাসনের’ মুখ থেকে কিউবা তার অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে পারবে কিনা, এটা নিয়েও প্রশ্ন ছিল। আরও একটি প্রশ্ন সমাজতান্ত্রিক বিশ্বে আলোচিত হচ্ছিল- তা হচ্ছে কিউবা কি আদৌ তার সমাজতান্ত্রিক নীতিতে কোনো পরিবর্তন আনছে? কেননা চীন ও ভিয়েতনামের মতো দেশেও স্নায়ুযুদ্ধের অবসানের পর পরিবর্তন এসেছে। এ দুটো দেশ এখন আর ধ্রুপদী মার্কসবাদ অনুসরণ করে না। তাই খুব সঙ্গত কারণেই প্রশ্ন ছিল কিউবা চীন বা ভিয়েতনামের পথ অনুসরণ করবে কিনা। কিউবা-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের ক্ষেত্রে প্রধান অন্তরায় ছিল কিউবার নিরাপত্তাহীনতা। যুক্তরাষ্ট্র কখনোই কিউবায় একটি সমাজতান্ত্রিক সরকারকে স্বীকার করে নেয়নি। বরং কিউবায় বিপ্লবের পর (১৯৫৯), কিউবা সরকার যখন ল্যাতিন আমেরিকাজুড়ে বিপ্লব ছড়িয়ে দিতে চাইল, চে গুয়েভারা যখন ‘বিপ্লব’ সম্পন্ন করার জন্য কিউবা সরকারের মন্ত্রিত্ব ত্যাগ করে বলিভিয়ায় গেলেন (সেখানেই তাকে পরে হত্যা করা হয়), তখন যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন ক্ষমতাসীনদের কাছে ভিন্ন একটি বার্তা পৌঁছে গিয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্র কখনই চায়নি ‘তার প্রভাবাধীন এলাকায়’ অন্য কোনো ‘শক্তি’ প্রভাব খাটাক। যুক্তরাষ্ট্র চেয়েছে এ এলাকায় তথা ল্যাতিন আমেরিকায় তার পূর্ণ কর্তৃত্ব। কিন্তু কিউবার বিপ্লব যুক্তরাষ্ট্রের এই ‘হিসাব-নিকাশ’-এ বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়। যুক্তরাষ্ট্র কিউবা বিপ্লবের মাত্র দু’বছরের মধ্যে ১৯৬১ সালে ভাড়াটে কিউবানদের দিয়ে কিউবা সরকারকে উৎখাতের চেষ্টা চালায়। সিআইএ’র অর্থে পরিচালিত এই অভিযান ‘বে অফ পিগস’-এর অভিযান হিসেবে খ্যাত। বলা বাহুল্য ওই অভিযান ব্যর্থ হয়েছিল। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র থেমে থাকেনি। ঠিক এর পরের বছর ১৯৬২ সালের অক্টোবরে ‘কিউবা সংকট’ একটি পারমাণবিক যুদ্ধের সম্ভাবনার জন্ম দিয়েছিল। ওই সময় যুক্তরাষ্ট্র অভিযোগ করেছিল কিউবায় সোভিয়েত ইউনিয়ন পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র বসিয়েছে, যা তার নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ। সোভিয়েত ইউনিয়ন কিউবায় ক্ষেপণাস্ত্র স্থাপন করেছে, এটা বিবেচনায় নিয়েই যুক্তরাষ্ট্র একটি নৌ-অবরোধ আরোপ করে, যাতে করে কিউবায় কোনো ধরনের সামরিক মারণাস্ত্র সরবরাহ করা না যায়। এই নৌ-অবরোধ আরেকটা সোভিয়েত ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্রকে একটি যুদ্ধের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেয়। সোভিয়েত ইউনিয়ন তখন দাবি করে যুক্তরাষ্ট্রকে তুরস্ক থেকে তাদের পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রত্যাহার করে নিতে হবে। দীর্ঘ ১৩ দিন এই নৌ-অবরোধ বহাল ছিল। অবশেষে যুক্তরাষ্ট্র তুরস্ক থেকে মিসাইল প্রত্যাহার করে নিলে সোভিয়েত ইউনিয়নও কিউবা থেকে ক্ষেপণাস্ত্রগুলো সরিয়ে নেয়। এর মধ্য দিয়ে পারমাণবিক যুদ্ধের সম্ভাবনা কমে গেলেও সংকট থেকে গিয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্র কিউবার বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপ করে। দীর্ঘ ৫৪ বছর ধরে এ অর্থনৈতিক অবরোধের বিরুদ্ধে কিউবা ‘যুদ্ধ’ করে আসছে। স্নায়ুযুদ্ধের অবসানের পরও মার্কিন দৃষ্টিভঙ্গিতে তখন অবধি কোনো পরিবর্তন আসেনি। প্রেসিডেন্ট ওবামা সম্পর্কোন্নয়নের ও বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের কথা বললেও, এটি খুব সহজ হবে না। কেননা ওবামাকে এ সংক্রান্ত একটি আইন পাস করাতে হবে। কিন্তু সমস্যাটা হচ্ছে কংগ্রেসে তার একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নেই। কংগ্রেসের উভয় কক্ষ এখন নিয়ন্ত্রণ করে রিপাবলিকানরা। রিপাবলিকানরা ওবামার উদ্যোগের ব্যাপারে খুশি নন। আমি একাধিক কংগ্রেস সদস্য তথা সিনেটরের বক্তব্য দেখেছি, যেখানে তারা নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে ওবামার এ উদ্যোগের সমালোচনা করেছেন। সিনেটর জন মেককেইন ও সিনেটর লিন্ডসে গ্রাহাম এক বিবৃতিতে জানিয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট ওবামার বাণিজ্য নিয়ে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের ওই সিদ্ধান্ত বিশ্বে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবকে সংকুচিত করবে। অন্যদিক সিনেটর রয় ব্লান্ট মনে করেন এ ঘোষণা রাউল ক্যাস্ট্রোকে ক্ষমতায় রাখতে সাহায্য করবে। ডেমোক্রেট দলীয় সিনেটর রবার্ট মেনডেজ মনে করেন প্রেসিডেন্ট ওবামার ওই সিদ্ধান্ত হচ্ছে কিউবার মানবাধিকার লংঘনের ঘটনা ও স্বৈরশাসনকে স্বীকার করে নেয়ার শামিল। সিনেটর মেনডেজ নিজে কিউবা-আমেরিকান। এতে করে ধারণা করা স্বাভাবিক যে কিউবার ওপর থেকে বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার সংক্রান্ত কোনো আইনকে কংগ্রেস অনুমোদন দেবে না। ফলে ওবামার ঘোষণা ও উদ্যোগ শেষ পর্যন্ত ‘একটি ঘোষণা’ হিসেবে থেকে যেতে পারে! যুক্তরাষ্ট্রের আইনপ্রণেতাদের দাবি কিউবায় আরও বেশি গণতন্ত্রায়ন। আরও বেশি অর্থনৈতিক উদারীকরণ। মানবাধিকার পরিস্থিতির আরও উন্নতি। একই সঙ্গে রাজনৈতিক সংস্কার। এটাই হচ্ছে মোদ্দা কথা। বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের শর্তে কিউবা সবকিছু ‘উন্মুক্ত’ করে দেবে না। সোভিয়েত ইউনিয়নে সংস্কার কর্মসূচির ফলাফল তাদের অজানা নয়। চীন ও ভিয়েতনামে অর্থনৈতিক সংস্কার এসেছে। কিন্তু রাজনৈতিক সংস্কার সেখানে আসেনি। চীনের বিরুদ্ধে ভিয়েতনামকে ব্যবহার করার সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। ফলে ভিয়েতনাম-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক নিয়ে প্রশ্ন থাকবেই। আজ যুক্তরাষ্ট্র যখন কিউবার সঙ্গে সম্পর্কের উন্নতি করতে চাইছে, তখন এ প্রশ্নটিও উঠছে। যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশ্য সৎ কিনা। লাতিন আমেরিকা ও ক্যারিবীয় অঞ্চলে ‘কর্তৃত্ব’ বাড়াচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। এরই মধ্যে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে বেশ কয়েকজন ভেনিজুয়েলার ভিআইপির ব্যাপারে। সম্পদ আটক থেকে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞাও রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগ ভেনিজুয়েলার মারাত্মক মানবাধিকার পরিস্থিতির অবনতির। এটা সত্য হুগো শ্যাভেজের মৃত্যুর পর ভেনিজুয়েলার পরিস্থিতি স্বাভাবিক নয়। কিন্তু এর চেয়েও খারাপ পরিস্থিতি বিরাজ করছে কলম্বিয়া কিংবা মেক্সিকোতে। যেখানে ২০১৪ সালে ৪৩ স্কুল শিক্ষার্থীকে অপহরণ করে হত্যা করা হয়। কিন্তু সেখানে কোনো বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়নি। ভেনিজুয়েলার বিষয়টি যে পরিপূর্ণ রাজনৈতিক, তা আর কাউকে বলে দিতে হয় না। তখন খুব সঙ্গতকারণেই ভেনিজুয়েলার ওপর মার্কিনি ‘চাপ’ যদি বাড়ে, তাহলে কিউবাকে দেয়া তাদের আর্থিক সহযোগিতা বন্ধ হয়ে যাবে। ফলে তা কিউবার অর্থনীতিকে আঘাত করবে। কিউবার সঙ্গে সম্পর্ক উন্নত করে খোদ যুক্তরাষ্ট্রও উপকৃত হতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্য খাত মারাত্মক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র পর্যাপ্ত ডাক্তার, নার্স কিংবা স্বাস্থ্যকর্মী তৈরি করতে পারছে না। স্বাস্থ্যকর্মীদের একটা বড় অংশ আসছে বাইরে থেকে। এ ক্ষেত্রে কিউবার স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা জগৎ বিখ্যাত। তারা যুক্তরাষ্ট্রের এই চাহিদা পূরণ করতে পারে। ২০০২ সালে ফিদেল ক্যাস্ট্রো এ ধরনের একটি প্রস্তাব যুক্তরাষ্ট্রকে দিয়েছিলেন। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র তা গ্রহণ করেনি। ২০১৪ সালে পশ্চিম আফ্রিকায় মারাত্মক ইবোলা রোগ ছড়িয়ে পড়ায় কিউবার স্বাস্থ্যকর্মীরা সেখানে গিয়েছিলেন। তখন কিউবার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক উন্নত হলে যুক্তরাষ্ট্র স্বাস্থ্য খাতে উপকৃত হতে পারে। তবে মূল সমস্যাটিই হচ্ছে মানসিকতার। যুক্তরাষ্ট্রের আইনপ্রণেতাদের মানসিকতায় কী পরিবর্তন আসে, সেটাই দেখার বিষয় এখন। ১৪ আগস্ট (২০১৫) হাভানায় যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসে মার্কিন পতাকা উত্তোলনকালে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র সচিব জন কেরি বলেছিলেন কিউবা এখন আর শত্রু নয়, বন্ধু। বাস্তব ক্ষেত্রে এ ‘বন্ধুত্ব’ কতটুকু প্রতিফলিত হয়, সেটাই দেখার বিষয় এখন। ওবামার কিছু কিছু বক্তব্যও এখানে উল্লেখ করা যায়। তিনি কি মনে করেন রাউল ক্যাস্ট্রোর নেতৃত্বাধীন কিউবায় পরিবর্তন এসেছে? এর অর্থ কী? কিউবা কি আসলেই সব ‘উন্মুক্ত’ করে দিয়েছে? আমার তা মনে হয় না। অর্থনীতিতে কেন্দ্রীয় ‘কমান্ড’ এখনও বজায় রয়েছে। এখানে ভিয়েতনামের ‘দইমই’ স্টাইলে কিছু কিছু পরিবর্তনের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে, এটা সত্য। বিনিয়োগকে স্বাগত জানানো হচ্ছে। কিন্তু সর্বক্ষেত্রে বিনিয়োগ উন্মুক্ত নয়। দুই দেশের মাঝে এখনও বেশকিছু বিষয়ে ন্যূনতম ঐকমত্যের অভাব রয়েছে। ওবামার হাভানা সফরের সময়ও তা লক্ষ করা গেছে। মানবাধিকার ইস্যু কিংবা গুয়ান্তানামো বে’তে যুক্তরাষ্ট্রের কারাগার, কিউবাতে রাজনৈতিক বন্দি ইত্যাদি ইস্যুতে দুই রাষ্ট্রপ্রধান হাভানায় সংবাদ সম্মেলনে বিতর্কে জড়িয়ে পড়েছিলেন। এসব ইস্যুতে দুটো দেশের দৃষ্টিভঙ্গি আলাদা আলাদা। সংবাদ সম্মেলনে রাউল ক্যাস্ট্রো জানিয়েছেন তার দেশে কোনো রাজনৈতিক বন্দি নেই। গুয়ান্তানামো বে কিউবার কাছে হস্তান্তরিত করারও কোনো প্রতিশ্র“তি দেননি ওবামা। তবে প্রতিশ্র“তি দিয়েছেন বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের। কিউবার মানবাধিকার অবনতি হয়েছে এটাও স্বীকার করেননি ক্যাস্ট্রো। স্পষ্টতই এসব ইস্যুতে দুটো দেশের দৃষ্টিভঙ্গি আলাদা। যুক্তরাষ্ট্র যাদের ‘রাজনৈতিক বন্দি’ হিসেবে গণ্য করছে, কিউবা তা করছে না। মানবাধিকার লংঘনের বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্র যেভাবে দেখে, কিউবা সেভাবে দেখে না। ফলে মতপার্থক্য রয়েই গেছে। তবে বৃহত্তর দৃষ্টিভঙ্গির আলোকে এ মতপার্থক্য সম্পর্কোন্নয়নের ক্ষেত্রে কোনো প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে না। বিশ্ব দ্রুত বদলে যাচ্ছে। ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে একজন নয়া প্রেসিডেন্ট হোয়াইট হাউসে যাবেন। এ ক্ষেত্রে হিলারি ক্লিনটন যদি ‘সেই ব্যক্তি’ হন তাহলে ওবামার অনুসৃত নীতি তিনি খুব একটা পরিবর্তন করবেন না। রিপাবলিকান কেউ প্রেসিডেন্ট হলে পরিবর্তন আসবে। সে ক্ষেত্রে কিউবা-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কে বরফ গলবে না। ওবামার এ সফর একটি ঐতিহাসিক সফর হিসেবে চিহ্নিত হবে এবং বলার অপেক্ষা রাখে না, এই সফর দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক উন্নত করতে আরও অবদান রাখবে। Daily Jugantor 28/03.16

0 comments:

Post a Comment