রাজনীতি, আন্তর্জাতিক রাজনীতি এবং সমসাময়িক ঘটনাবলীর বিশ্লেষণ সংক্রান্ত অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর রেহমানের একটি ওয়েবসাইট। লেখকের অনুমতি বাদে এই সাইট থেকে কোনো লেখা অন্য কোথাও আপলোড, পাবলিশ কিংবা ছাপাবেন না। প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন লেখকের সাথে

কেমন হলো বিএনপির কাউন্সিল

কেমন হলো বিএনপির জাতীয় কাউন্সিল? এটি বোধকরি এ মুহূর্তে আলোচনার অন্যতম একটি বিষয়। এ কাউন্সিলের গুরুত্ব বেড়েছে একাধিক কারণে। প্রথমত, ৫ জানুয়ারির (২০১৪) নির্বাচন কেন্দ্র করে দেশে যে সহিংসতা রাজনীতির সূচনা হয়েছিল এবং বিএনপিকে যার জন্য অভিযুক্ত করা হয়েছিল, সেই পরিস্থিতি থেকে বিএনপি বেরিয়ে এসে নতুন দিকনির্দেশনা ও অনুপ্রেরণা পেয়েছে। দ্বিতীয়ত, এ কাউন্সিলে বিএনপি নেত্রী নতুন কিছু বক্তব্য উপস্থাপন করেছেন, যা আমার বিবেচনায় আগামী দিনের রাজনীতিতে প্রভাব ফেলবে। তৃতীয়ত, বিএনপির কাউন্সিল নিয়ে অন্য একটি বড় দল আওয়ামী লীগের কোনো ‘ভূমিকা’ না থাকলেও আমরা দেখেছিÑ শীর্ষস্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ এ ব্যাপারে মন্তব্য করেছেন, যা কিনা প্রকারান্তরে বিএনপির কাউন্সিলের গুরুত্বকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। এটি সবাই স্বীকার করেছেন, এ কাউন্সিলের মধ্য দিয়ে বিএনপি ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে। দলটি ঘুরে দাঁড়াতে আদৌ পারবে কিনা, সেটি ভবিষ্যতের ব্যাপার। কিন্তু কাউন্সিল উপলক্ষে ঢাকায় হাজার হাজার তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীর উপস্থিতি প্রমাণ করে হতাশা থাকা সত্ত্বেও বিএনপির কর্মীরা উজ্জীবিত। তারা বিএনপিকে নতুন আঙ্গিকে দেখতে চান। তবে অনেক ‘অভিযোগের’ কথাও আমি শুনেছি টক শোগুলোতে। মজার কথা, বিএনপি সমর্থিত বুদ্ধিজীবীরা এসব টক শোতে যত না ‘অভিযোগ’ উত্থাপন করেছেন, তার চেয়ে বেশি ‘অভিযোগ’ উত্থাপিত হয়েছে সরকারকেন্দ্রিক বুদ্ধিজীবীদের পক্ষ থেকে। একটা অভিযোগ আমি শুনেছিÑ কেন কাউন্সিলে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের ‘ভার’মুক্ত করা হলো না। অর্থাৎ গত ৫-৬ বছর ধরে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন। সবাই ধারণা করেছিলেন এই কাউন্সিলে তাকে পূর্ণাঙ্গ মহাসচিব হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হবে। সেটি আপাতত হয়নি। এটি বোধকরি বিএনপির অনেক নেতাকর্মীকেও আহত করে থাকবে। এটি হলে ভালো হতো। দ্বিতীয় আরেকটি অভিযোগ উঠেছে, আর তা হচ্ছেÑ কেন পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের দায়িত্ব এককভাবে বেগম জিয়ার হাতে তুলে দেওয়া হলো? একটি ধ্রুপদী গণতান্ত্রিক সমাজে হয়তো এমনটি হয় না। কিন্তু আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশে এটি একটি স্বাভাবিক ঘটনা। বড় দল আওয়ামী লীগের ক্ষেত্রেও এমনটি আমরা দেখেছি। এমনকি জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানও একই ‘কাজ’ করেন। এককভাবে তিনি কো-চেয়ারম্যান নিয়োগ দিয়ে কম বিতর্ক সৃষ্টি করেননি। ফলে এগুলো একটি ‘স্বাভাবিক’ প্রক্রিয়া। বেগম জিয়া দল পুনর্গঠন করবেনÑ এটিই স্বাভাবিক। তবে কাউন্সিলের ভোটে নেতা-নেত্রী নির্বাচিত হলে আমি খুশি হতাম। কিন্তু বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতি সম্পূর্ণ ভিন্ন। এখানে ব্যক্তিই মুখ্য। ব্যক্তিকে কেন্দ্র করেই রাজনীতি, দল বিকশিত হচ্ছে। সব দলের ক্ষেত্রেই এই কথাটি প্রযোজ্য।
বলতে দ্বিধা নেই বিএনপি বড় একটি রাজনৈতিক দল। দলটির নেতৃবৃন্দের অভিমত অনেক বেশি। সাম্প্রতিক সময়গুলোতে দলটির নেতাকর্মীরা যেভাবে জেল-জুলুম মোকাবিলা করছেন, অন্য কোনো দলের নেতৃবৃন্দ তা করেননি। গেল ১ সেপ্টেম্বর বিএনপি ৩৭ বছরে পা রেখেছে। একটি রাজনৈতিক দলের জন্য এই ৩৭ বছর একবারে কম সময় নয়। দলটি একাধিকবার রাষ্ট্রক্ষমতায় ছিল। ১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর জন্ম নেওয়া এই রাজনৈতিক দলটি বর্তমানে এক কঠিন সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। বোধকরি অতীতে কখনোই দলটি এ ধরনের সংকটের মাঝে পড়েনি। যারা রাজনীতির গতি-প্রকৃতি নিয়ে কাজ করেন, তারা জানেন বাংলাদেশের সংসদীয় রাজনীতিতে দলটির একটি শক্ত অবস্থান আছে। তিনবার দলটি ক্ষমতায় ছিল (১৯৭৮-১৯৮২, ১৯৯১-৯৬, ২০০১-২০০৬)। ফলে তৃণমূল পর্যায় দলটির একটি অবস্থান আছে। ১৯৮২ সালে এরশাদের সামরিক অভ্যুত্থান ও ক্ষমতা থেকে বিএনপির উৎখাতের পর ওই সময় যখন বিএনপির অস্তিত্ব হুমকির মুখে ছিল, ঠিক তখনই একজন গৃহবধূ থেকে (১৯৮৩) রাজনীতির পাদপ্রদীপে আসেন বেগম জিয়া। এখন তিনিই বিএনপির অবিসংবাদিত নেত্রী। তাকে কেন্দ্র করেই বিএনপির রাজনীতি আবর্তিত হচ্ছে। তবে বাস্তবতা হচ্ছে, নব্বইয়ে এরশাদবিরোধী আন্দোলনে সাধারণ মানুষ যে বেগম জিয়াকে দেখেছিল একজন অবিসংবাদিত নেত্রী হিসেবে, সেই বেগম জিয়াকে এখন খুঁজে পাওয়া মুশকিল। বয়স বেড়েছে। অসুস্থ তিনি। ৫ জানুয়ারির (২০১৪) নির্বাচনে অংশ না নেওয়া কিংবা পরবর্তী সময় সরকারবিরোধী আন্দোলন করতে গিয়ে যে সহিংস রাজনীতির জন্ম হয়েছে এ দেশে, তা ব্যক্তিগতভাবে বেগম জিয়া তথা বিএনপির রাজনীতিকে উজ্জ্বল করেনি। বেগম জিয়াকে আমার মাঝে মধ্যে মনে হয়েছে ‘নিঃসঙ্গ একজন নাবিক’ হিসেবে, যিনি আদৌ জানেন না কোন দিকে এবং কোন পথে বিএনপি নামক ‘জাহাজ’টিকে তিনি পরিচালনা করবেন। এক সন্তানহারা, অপর সন্তান অনেক দূরে, নেতাকর্মীরা জেলে। নিঃসঙ্গ বেগম জিয়া এখন একাই বিএনপি।
বিএনপি নানা সমস্যায় আক্রান্ত এটা তো অস্বীকার করা যাবে না। বাস্তবতা হচ্ছে, কাউন্সিলের মধ্য দিয়ে বিএনপি ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে। একটি মধ্যবর্তী নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। বিএনপি দল গোছানোর কাজ শুরু করেছে। তবে অতীতে বিএনপির কয়েকজন নেতার ফোনালাপ ফাঁস হয়ে যাওয়ার ঘটনা প্রমাণ করে শীর্ষস্থানীয় বিএনপি নেতাদের মধ্যে এক ধরনের হতাশা আছে। বিএনপি ভাঙার ‘গুজব’ ছিল এ কারণেই! ‘বেগম জিয়াকে দিয়ে হবে না’ কিংবা ‘জিয়ার আদর্শে ফিরে যেতে হবে’Ñ এ ধরনের বক্তব্য যখন বিএনপির শীর্ষস্থানীয় নেতাদের মুখ থেকে বের হয়, তখন গুজবের নানা ডালপালা গজায়। মির্জা ফখরুল জামিন পেলেও কেউ কেউ জেলে আছেন এখনো। অনেকের বিরুদ্ধেই মামলা আছে। আর যারা হাইকোর্ট থেকে জামিন পেয়েছেন, ওই জামিনের বিরুদ্ধে আপিল করেছে সরকার। এর অর্থ পরিষ্কারÑ মামলা, মোকদ্দমা দিয়ে বিএনপির শীর্ষ নেতাদের ‘ব্যস্ত’ রাখতে চায় সরকার, যাতে করে তারা ‘আন্দোলনে’ নিজেদের জড়িত করতে না পারেন! বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে অতীতে এমনটি কখনোই দেখা যায়নিÑ এত বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা! ফলে এসব নেতাকর্মী আর রাজপথে সক্রিয় হতে পারেননি। বেগম জিয়াকে সন্ত্রাসবিরোধী আইন ২০০৯-এর ২৭ ধারা অনুযায়ী (বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠনসংক্রান্ত ধারা) বিচার, জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় কিংবা গ্যাটকো দুর্নীতি মামলায় শাস্তি দিয়ে নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করা, একই সঙ্গে ডা-ি ডায়িং মামলায় তারেক রহমানকে ‘শাস্তি’ দিয়ে তাকেও অযোগ্য ঘোষণার মধ্য দিয়ে সরকার ‘মাইনাস ওয়ান’ ফর্মুলার দিকেই ধীরে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছে বলে অনেকের ধারণা। এ ক্ষেত্রে বেগম জিয়াকে নির্বাচনে ‘অযোগ্য ঘোষণা’(?) করা হলে আইনি প্রক্রিয়ায় তিনি নির্বাচনের জন্য যোগ্য হবেন কিনা জানি না। তবে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার প্রশ্ন হবে তখন অবান্তর। বেগম জিয়াই বিএনপির মূলশক্তি। বেগম জিয়া যদি নির্বাচনে অংশ নিতে না পারেন, বিএনপির ‘বিকল্প নেতৃত্ব’ নির্বাচনে অংশ নেবে, এটি মনে করার কোনো কারণ নেই। বেগম জিয়া কিংবা তারেক রহমানকে বাদ দিয়ে কেউ যদি বিএনপিকে সংগঠিত করেÑ এটিও গ্রহণযোগ্য হবে বলে আমার মনে হয় না। সরকারের নীতিনির্ধারকরা যদি ‘মাইনাস ওয়ান’ ফর্মুলা কার্যকর করতে চান, আমার ধারণা তা কোনো কার্যকর ‘ফল’ দেবে না। ‘আসল বিএনপি’ কিংবা নাজমুল হুদার ‘ফালতু কথাবার্তায়’ মানুষ খুব আস্থাশীল এটি আমার মনে হয় না। জাতীয় পার্টিকে বিরোধী দলের আসনে বসিয়েও সরকার খুব লাভবান হয়নি। জাতীয় পার্টি আগামীতে অস্তিত্বের সম্মুখীন হতে পারে। বাহ্যত জাতীয় পার্টির মধ্যে দুটি ধারা বিদ্যমান। একটি ধারা- যারা সরকারের অংশ হিসেবেই থাকতে চায়। আর অন্য একটি ধারাÑ সত্যিকার অর্থেই ‘বিরোধী দলের’ ভূমিকা পালন করতে চায়। জাতীয় পার্টির এ ‘দ্বৈত ভূমিকা’ পার্টিকে এরশাদের অবর্তমানে, এমনকি ২০১৯ সালে অনুষ্ঠেয় নির্বাচনের আগে আরও একবার ভাঙনের মুখে ঠেলে দিতে পারে। বিএনপির অবর্তমানে জাতীয় পার্টির একটি সম্ভাবনা ছিল বিরোধী দল হিসেবে দাঁড়িয়ে যাওয়ার। কিন্তু তা হয়নি। ফলে জাতীয় পার্টি নিয়ে সাধারণ মানুষের তেমন কোনো আগ্রহ নেই। ব্যক্তি এরশাদের নিজস্ব একটি ‘ইমেজ’ আছে, তাও আবার তার নিজস্ব এলাকায়। তিনি শারীরিকভাবে সুস্থ আছেন। ফলে ২০১৯ সালে অনুষ্ঠেয় নির্বাচনে এরশাদ নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি তার অবস্থান ধরে রাখতে পারবে। বিএনপির কাউন্সিলে হাজার হাজার ডেলিগেটের উপস্থিতি প্রমাণ করল রাজনীতিতে ‘বিএনপির অবস্থান’টি জাতীয় পার্টি নিতে পারেনি। যদিও জাতীয় পার্টি এ মুহূর্তে সংসদে আছে।
এটি স্বীকার করতেই হবে বাংলাদেশে একটি দ্বিদলীয় ব্যবস্থার জন্ম হয়েছে। আওয়ামী লীগের বিকল্পই বিএনপি, ঘুরেফিরে এটি প্রমাণিত। দশম সংসদে জাতীয় পার্টি পারেনি। তাই যে কোনো বিবেচনায় বিএনপির সঙ্গে একটি আস্থার সম্পর্ক গড়ে তোলা সরকারের জন্য তথা গণতন্ত্রের জন্য মঙ্গল। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ নিম্নমধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে। ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৬ ভাগের ওপরে, যেখানে ইউরোপে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে শ্লথগতি এসেছে। এখন নিম্নমধ্যম আয়ের দেশের চূড়ান্ত স্বীকৃতি পেতে হলে এই প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে হবে। আর এর পূর্বশর্ত হচ্ছে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা। বিএনপিকে আস্থায় নিয়েই এই স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে হবে। এটি সবাই বলেনÑ সংসদীয় রাজনীতিতে শক্তিশালী একটি বিরোধী দল থাকা দরকার। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি অংশ না নেওয়ায় জাতীয় পার্টি সংসদে বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করছে। কিন্তু গত প্রায় দুই বছরের সংসদীয় রাজনীতির কার্যক্রম পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, জাতীয় পার্টি সেই দায়িত্বটি পালন করতে পারছে না। জাতীয় পার্টিতে দ্বন্দ্ব আছে সরকারে থাকা না থাকা নিয়ে। ফলে সংসদকে আরও গ্রহণযোগ্য ও অর্থবহ এবং সর্বোপরি একটি সঠিক জাতীয় নীতি প্রণয়নে সংসদে একটি শক্তিশালী বিরোধী দল থাকা বাঞ্ছনীয়। আর বিএনপিই সেই দায়িত্বটি পালন করতে পারে। বলা ভালো, বিএনপি সংসদে না থাকলেও বিএনপি যে বাংলাদেশের রাজনীতির একটি অপরিহার্য অংশ, দাতাগোষ্ঠী এটি স্বীকার করে এবং তারা সবাই বিএনপিকে মূল ধারার রাজনীতিতেই দেখতে চায়। ভারতীয় নীতিনির্ধারকদের অবস্থান ও আমার ধারণা অনেকটা সে রকম। সরকারের ভূমিকা তাই এ ক্ষেত্রে অগ্রগণ্য। এটি স্বীকার করতেই হবে, বাংলাদেশের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি অন্যতম দুটি শক্তি। তাই দুটি দল দুটি রাজনৈতিক ধারার প্রতিনিধিত্ব করছে। অতীত ইতিহাস প্রমাণ করে, এই দুটি দলের একটিকে বাদ দিয়ে যে গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি, তা স্থায়ী হয়নি। বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর দীর্ঘ ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফিরে এসেছিল জনগণের ভোটে। এর আগে ১৯৮৬ সালে এরশাদীয় জামানায় যে সংসদ নির্বাচন হয়েছিল, তাতে আওয়ামী লীগ অংশগ্রহণ করলেও বিএনপি নির্বাচন বয়কট করায় ওই সংসদ টিকে থাকেনি। ১৯৮৮ সালের সংসদও টেকেনি আওয়ামী লীগ ও বিএনপির অংশ না নেওয়ার কারণে। এ দুদলের অংশগ্রহণ থাকার কারণেই ৫ম সংসদ (১৯৯১), ৭ম সংসদ (১৯৯৬), ৮ম সংসদ (২০০১) ও ৯ম সংসদ (২০০৮) গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছিল। কিন্তু বিএনপির অংশগ্রহণ না থাকায় ৫ জানুয়ারির (২০১৪) নির্বাচন কোনো গ্রহণযোগ্যতা পায়নি। তাই ঘুরেফিরে বিএনপি আলোচনায় আছে এবং আমার বিবেচনায় আগামীতেও থাকবে।
বিএনপির কাউন্সিলে বিএনপি তার আগামী দিনের ‘রাজনীতি’ চূড়ান্ত করেছে। বেগম জিয়ার বক্তব্যের মধ্য দিয়ে এই ‘রাজনীতি’ প্রকাশ পেয়েছে। কতগুলো বিষয় কেন্দ্র করে বিএনপির রাজনীতি এখন আবর্তিত হবে। প্রথমত, বিএনপি ‘ভিশন-২০৩০’-এর কথা বলেছে। অর্থাৎ বিএনপি কীভাবে ২০৩০ সালের বাংলাদেশকে দেখতে চায়, তার কিছু রূপকল্পের কথা বলেছে। যদিও বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেওয়া হয়নি। একটি বড় দলের জন্য এ ধরনের সুস্পষ্ট পরিকল্পনা থাকা দরকার। দ্বিতীয়ত, বিএনপি দ্বিকক্ষবিশিষ্ট একটি সংসদের কথা বলছে। বিএনপির জন্য এটি নতুন। তবে এ ক্ষেত্রে জটিলতা রয়েছে। এ ব্যাপারে আরও গবেষণা, আলাপ-আলোচনা প্রয়োজন। একসময় জাসদের (রব) প্রবক্তা ছিল। সংবিধানে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদের কথা বলা হয়নি। তৃতীয়ত, একটি অন্তর্বর্তীকালীন ও নিরপেক্ষ সরকারের কথা বিএনপি বলছে। যদিও এর বিস্তারিত ব্যাখ্যা বিএনপি দেয়নি। বিএনপি তার কাউন্সিল শেষ করেছে। কর্মীরা এক নতুন দিকনির্দেশনা পেয়েছে। এখন দেখতে হবে এই ‘নতুন রাজনীতি’ নিয়ে বিএনপি সুস্থধারার রাজনীতিতে ফিরে আসে কিনা।
Daily AaderSomoy
27.03.16

0 comments:

Post a Comment