শেষ
পর্যন্ত সেই আশঙ্কাই সত্য হলো। নভেম্বরের (২০১৫) সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী
হয়েও অং সান সুচি মিয়ানমারের প্রেসিডেন্ট হতে পারলেন না। মিয়ানমারে
রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার বিদ্যমান। আর সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার কারণে অং সান
সুচি প্রেসিডেন্ট পদে যোগ্য বলে বিবেচিত হলেন না। তার সন্তানরা বিদেশি
নাগরিক, সংবিধানের এই বিশেষ ধারাটির কারণে জনগণের ম্যান্ডেট পেয়েও তার
পক্ষে সম্ভব হলো না প্রেসিডেন্ট পদে প্রার্থী হওয়া। তার দল প্রেসিডেন্ট পদে
মনোনীত করে অং সান সূচি দীর্ঘদিনের বন্ধু টিন কি আউকে। দেশটির আইন
প্রণেতারা পার্লামেন্টে ভোটাভুটির মাধ্যমে তাকে এ পদে নির্বাচিত করেন। ৬৯
বছর বয়সী টিন কি আউ পার্লামেন্টের দুই কক্ষের ৬৫২ ভোটের মধ্যে ৩৬০টি ভোট
পান। টিন কি আউ-এর প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচিত হওয়ার বিষয়টিকে সূচির বিজয়
বলে চিহ্নিত হলেও টিন কি আউ, যিনি অং সান সুচির খুব ঘনিষ্ঠ এবং ধারণা করা
হচ্ছে তিনি হতে যাচ্ছেন একজন ‘প্রস্ক্রি প্রেসিডেন্ট।’ মূল ক্ষমতা থেকে
যাবে অং সান সুচির হাতে। নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার পর তিনি একাধিকবার মিটিং
করেছেন প্রেসিডেন্ট থেইন সেইন ও সেনাবাহিনী প্রধানের সঙ্গে। বিদেশি
গণমাধ্যমে প্রকাশিত একটি খবর থেকে জানা যায় সুচি বর্তমান প্রেসিডেন্ট ও
সেনাবাহিনী প্রধানকে একটি প্রস্তাব দিয়েছিলেন নির্বাচিত সংসদ বর্তমান
সংবিধান সাময়িকভাবে ‘স্থগিত’ করবে। অথবা প্রেসিডেন্ট এক অধ্যাদেশ বলে
সংবিধান সাময়িকভাবে স্থগিত করার কথা ঘোষণা করবেন। বিনিময়ে সুচি
সেনাবাহিনীকে ১৪ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী নিয়োগের ক্ষমতা দেবেন। কিন্তু
অত্যন্ত ক্ষমতাধর সেনাবাহিনী তাতে রাজি হয়নি। ফলে সুচিকে বাধ্য হয়েই উচ্চ
কক্ষ ও নি¤œ কক্ষ থেকে তার দলের দুই নেতাকে ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে মনোনয়ন
দিতে হয়। নির্বাচনে একজন বিজয়ী হবেন এবং বাকি দুজন (মোট ৩ জন
প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন) ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিয়োগ পাবেন। এর অর্থ
হচ্ছে নির্বাচনে এনএলডির দুই প্রার্থী প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্ট
হিসেবে নির্বাচিত হবেন এবং তৃতীয় ব্যক্তি সেনা সমর্থিত, যিনি একই সঙ্গে
ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হবেন। এখানে নির্বাচন হবে বটে।
কিন্তু এই নির্বাচনে কেউ হেরে যায় না। এখানে বলা ভালো সংসদে সুচির দলের
সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকলেও এরা সংবিধান পরিবর্তন করতে পারবেন না। কেননা সংবিধান
অনুযায়ী সংবিধানের যে কোনো পরিবর্তনে সেনাবাহিনী ‘ভেটো’ দিতে পারবে। ফলে
অং সান সুচি গেল নির্বাচনে বিজয়ী হলেও এবং তার দল থেকে একজন প্রেসিডেন্ট
হিসেবে নির্বাচিত হলেও পর্দার অন্তরালে মূল ক্ষমতা থেকে যাচ্ছে সেনাবাহিনীর
হাতে। সুচি ইতোমধ্যে ‘বিতর্কিত’ হয়েছেন তার কোনো কোনো বক্তব্যের জন্য।
তিনি বিদেশি গণমাধ্যমে নিজের মনোনয়ন যেভাবে তুলে ধরেছিলেন তাতে করে তার এক
ধরনের কর্তৃত্ববাদী মনোভাব ফুটে উঠেছিল। যেখানে তার উচিত ছিল একটা আস্থার
সম্পর্ক গড়ে তোলা, ঐক্য ও শান্তি প্রতিষ্ঠার ওপর গুরুত্ব দেয়া, এটা না করে
তিনি এক ধরনের ‘হুমকির সুরে’ সরকার পরিচালনার কথা বলেছিলেন। গণতন্ত্রের
নামে এ ধরনের কর্তৃত্ববাদী আচরণ আমরা কোনো কোনো দেশে লক্ষ্য করি।
মালয়েশিয়ায় ক্ষমতাসীন জোট গণতন্ত্রের নামে এক ধরনের কর্তৃত্ববাদী আচরণের
জš§ দিয়েছেন। সিঙ্গাপুরে এক দলীয় (পিপলস অ্যাকশন পার্টি) শাসন বজায় রয়েছে।
যদিও জনগণই তাদের ভোট দিয়ে নির্বাচিত করে। কম্পুচিয়ায় সমাজতন্ত্র পরবর্তী
কাঠামোয় এক দলীয় (পিপলস পার্টি) শাসন বর্তমান। থাইল্যান্ডে সামরিক বাহিনী
ক্ষমতাগ্রহণ করলেও সেখানে থাকসিন সিনাওয়াত্রার দলের প্রভাব অনেক বেশি। তার
নামেই তার বোন ইংলাক সিনাওয়াত্রা বিজয়ী হয়েছিলেন এবং সরকারও গঠন করেছিলেন।
সমাজতন্ত্র পরবর্তী মধ্য এশিয়ার প্রতিটি দেশে গণতন্ত্রের নামে এক দলীয়
কর্তৃত্ব বজায় রয়েছে। আমরা বেলারুশের কথাও বলতে পারি। এখানে নির্বাচন হচ্ছে
বটে, কিন্তু কারচুপির মাধ্যমে নির্বাচন ক্ষমতাসীন দলের পক্ষে নেয়া হচ্ছে।
এখন অং সান সুচির দল কি এ পথেই যাচ্ছে? ক্ষমতা প্রয়োগ করতে হলে তাকে
সংবিধান সংশোধন করতে হবে। সংবিধান সংশোধনের কোনো উদ্যোগ তিনি নিতে পারবেন
না। কেননা সেনাবাহিনী এই উদ্যোগকে সমর্থন করবেÑএটা মনে হয় না। ফলে প্রশ্ন
থেকেই গেল। জনগণই যে ‘সব ক্ষমতার উৎস’ মিয়ানমারের সংসদ নির্বাচন এই কথাটা
আবার প্রমাণ করেছিল। এই নির্বাচন পরবর্তী থাইল্যান্ড ও বাংলাদেশের
সাংবিধানিক শক্তিকে নিঃসন্দেহে উৎসাহিত করেছিল। দুঃখের কথা এই প্রথমবারের
মতো সেখানে সংসদে কোনো মুসলিম প্রতিনিধিত্ব নেই। ফলে মুসলমানদের মাঝে
ক্ষোভ ও অসন্তোষ আরো দানা বাঁধবে। উগ্রপন্থি বৌদ্ধরা মুসলিম নিধন ও উৎখাতে
এতে আরো উৎসাহিত হবে। রোহিঙ্গা সমস্যা আরো বৃদ্ধি পাবে। সংবিধান অনুযায়ী
নির্বাচিত সংসদের মেয়াদ ৫ বছর। অর্থাৎ মার্চ মাসে যখন সংসদ বসছে, তারপর
২০২১ সাল পর্যন্ত এই সংসদ টিকে থাকার কথা। সময়টা অনেক লম্বা। নতুন সংসদ
নির্বাচনের পর সুচি প্রায় চার মাস সময় পেয়েছিলেন হাতে। সুচি ওই সময়টা কাজে
লাগিয়েছিলেন সেনাবাহিনীর সঙ্গে একটি ‘সমঝোতায়’ যেতে। সম্ভবত এটাই তার জন্য
শেষ সময়। ২০১০ সালেও একটি নির্বাচন হয়েছিল। তার দল ঠিক সময়মতো নিবন্ধন করতে
না পারায় অথবা নিবন্ধন না করায় ৫ বছর পিছিয়ে গিয়েছিলেন সুচি। এবারো যদি
তিনি ভুল করতেন, তাহলে তাকে অপেক্ষা করতে হতো ২০২১ সাল পর্যন্ত। সময়টা অনেক
বেশি। সুচির বয়স গিয়ে দাঁড়াবে তখন ৭৪। এরপর তার পক্ষে আর রাজনীতিতে সক্রিয়
থাকা সম্ভব হবে না। সে কারণেই তিনি মিয়ানমারের সামাজে সেনাবাহিনীর
ভূমিকাকে মেনে নিয়েছেন। আমরা তার বাস্তবমুখী একটি সিদ্ধান্তই আশা করেছি।
এখানে একটা কথা বলা প্রয়োজন। বাংলাদেশের জন্য মিয়ানমারের একটি বন্ধুপ্রতিম
সরকার থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পূর্বমুখী পররাষ্ট্রনীতিতে মিয়ানমার
আমাদের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশ-মিয়ানমার সড়ক পথ চালু হলে এই সড়ক
পথ একদিকে যেমনি আমাদের চীনের সঙ্গে সংযোগ ঘটাবে অন্যদিকে আমরা আমাদের পণ্য
নিয়ে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতেও যেতে পারব। আমাদের পণ্যের বিশাল এক
বাজার সৃষ্টি হবে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায়। এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে,
বাংলাদেশ-মিয়ানমার সম্পর্কের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে উভয় দেশই
বিমসটেক (BIMSTEC, পরবর্তিত নাম BBIMSTEC) এবং BCIM জোটের সদস্য। যদিও
প্রস্তাবিত BCIM জোটটি এখনো আলোর মুখ দেখেনি। ভুটান ও নেপাল বিমসটেক জোটে
যোগ দেয়ায় এই জোটটি শক্তিশালী হয়েছে। এই জোটের উদ্দেশ্য হচ্ছে বাংলাদেশ,
ভারত, মিয়ানমার, শ্রীলঙ্কা ও থাইল্যান্ডে একটি মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চল
প্রতিষ্ঠা করা। মিয়ানমারের সঙ্গে সম্পর্ক বৃদ্ধিতে চট্টগ্রামে মিয়ানমারের
কাঁচামালভিত্তিক ব্যাপক শিল্প-কারখানা স্থাপিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
কৃষিভিত্তিক মিয়ানমারে বাংলাদেশি সারের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। মিয়ানমার
সীমান্ত সংলগ্ন চট্টগ্রাম এলাকায় বেশ কিছু সার কারখানা স্থাপন করে বাংলাদেশ
মিয়ানমারে সার রফতানি করতে পারে। মিয়ানমারের আকিয়াব ও মংড়ুর আশপাশের
অঞ্চলে প্রচুর বাঁশ, কাঠ ও চুনাপাথর পাওয়া যায়। এসব কাঁচামালের ওপর ভিত্তি
করে চট্টগ্রাম অঞ্চলে সিমেন্ট ও কাগজ শিল্প বিকশিত হতে পারে। মিয়ানমারে
প্রচুর জমি অনাবাদী রয়েছে। এ অবস্থায় মিয়ানমারের ভূমি লিজ নিয়ে বাংলাদেশের
জন্য চাল উৎপাদনের সম্ভাবনা খতিয়ে দেখা যেতে পারে। মান্দালয়-ম্যাগওয়ের
তুলা আমদানি করতে পারে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ তার ক্রমবর্ধিষ্ণু গার্মেন্টস
সেক্টরের কাঁচামাল হিসেবে তুলা মিয়ানমারের এই অঞ্চল থেকে আমদানি করতে পারে।
গবাদিপশু আমদানি করার সম্ভাবনাও রয়েছে। বাংলাদেশিরা মিয়ানমারে গবাদিপশুর
খামারও গড়ে তুলতে পারে। মিয়ানমারের সেগুন কাঠ পৃথিবী বিখ্যাত। আমাদের
ফানির্চার শিল্পের চাহিদা মেটাতে পারে এই সেগুন কাঠ। যার ওপর ভিত্তি করে
আমরা মধ্যপ্রাচ্যসহ ইউরোপে আমাদের ফানির্চার শিল্পের প্রসার ঘটাতে পারি।
মিয়ানমারে মূল্যবান পাথর, যেমন রুবি, জেড, বোম আর মার্বেলসমৃদ্ধ। এসব
মূল্যবান পাথর আমাদের জুয়েলারি শিল্পকে সমৃদ্ধ করে ভ্যালুএডিশনের মাধ্যমে
বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে সহায়ক হতে পারে। ভারত-মিয়ানমার-বাংলাদেশ ও চীনের
সমন্বয়ে যে আঞ্চলিক সহযোগিতার কথা বলা হচ্ছে (বিসিআইএম) সেখানেও বাংলাদেশের
স্বার্থ রয়েছে। সুতরাং মিয়ানমারে যে সরকার গঠিত হতে যাচ্ছে, তার সঙ্গে
সম্পর্ক বৃদ্ধি করা আমাদের পররাষ্ট্রনীতির অন্যতম অগ্রাধিকার হওয়া উচিত।
কিন্তু মিয়ানমারকে নিয়ে প্রশ্ন অনেক। মিয়ানমারে একটি নির্বাচন হয়েছিল বটে।
কিন্তু এই নির্বাচন সত্যিকার অর্থে একটি গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি জšে§র
সম্ভাবনাকে উজ্জ্বল করে না। দীর্ঘ ৫৪ বছর সেখানে যে সংস্কৃতির জš§ হয়েছে,
তা হুট করে ভেঙে ফেলা যাবে না। সেনাবাহিনীর রাজনীতিতে যে প্রভাব, তা হ্রাস
করা যাবে না। পরিবর্তিত পরিস্থিতির কারণে সেনাবাহিনীর একটি নির্বাচন দেয়া
প্রয়োজন ছিল। সেটা তারা দিয়েছে। কিন্তু তারা ব্যারাকে ফিরে যাবে, এটা আমার
মনে হয় না। মিসরের মতো পরিস্থিতিরও জš§ হতে পারে মিয়ানমারে। ‘আরব বসন্ত’
মিসরে পরিবর্তন ডেকে এনেছিল। সেনা নিয়ন্ত্রিত একটি রাজনৈতিক সংস্কৃতি ভেঙে
পড়েছিল কায়রোর ‘তেহরির স্কোয়ার’ এর দীর্ঘ ১৭ দিনের গণঅবস্থানের কারণে। তার
পরের ঘটনা সবাই জানেন। হোসনি মোবারকের ক্ষমতা হস্তান্তর, একটি নির্বাচন,
নির্বাচনে ড. মুরসির বিজয় (জুন ২০১২) এবং পরবর্তীতে (২০১৩) সামরিক
অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ফিল্ড মার্শাল সিসির ক্ষমতাগ্রহণ। ‘আরব বসন্ত’ মিসরে
জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেনি। এখন মিয়ানমার কি সেদিকেই হাঁটছে।
সেনাবাহিনী নির্বাচন ও সংসদকে মেনে নিয়েছে। কিন্তু সব ‘সুযোগ-সুবিধা’ তারা
ছেড়ে দেবেন, এটা মনে হয় না। এক্ষেত্রে সুচিকে সেনাবাহিনীর সঙ্গে একটা
সহাবস্থানে যেতে হবে। নতুবা তিনি ‘পর্দার অন্তরালে’ থেকে ক্ষমতা পরিচালনা
করতে পারবেন না। এর অর্থ পরিষ্কার সেনা সমর্থন তিনি পেলেন না। তিনি
প্রেসিডেন্ট হিসেবে টিন কি আউকেই সামনে নিয়ে আসলেন। তিনি নিজে আদৌ প্রার্থী
না হয়ে সংবিধান মেনে নিলেন। এর মাধ্যমে তিনি সেনাবাহিনীর আস্থা অর্জন করতে
পারেন। সরকার তার ‘ভূমিকা’ নিয়েও প্রশ্ন থাকবে এবং প্রধানমন্ত্রীর পদ
মর্যাদায় তিনি একটি ‘পদ’ পেতে পারেন। মিয়ানমারের বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনের
ইতিহাস অনেক পুরনো। নির্বাচনের আগে প্রেসিডেন্ট থেইন সেইন বিচ্ছিন্নতাবাদী
৮টি গ্রুপের সঙ্গে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছিলেন। কিন্তু চুক্তির বাইরে
আরো বিচ্ছিন্নবাদী গ্রুপ রয়েছে। এদেরও চুক্তির আওতায় আনা দরকার। অর্থনৈতিক
সংস্কারটা খুবই জরুরি। বৈদেশিক বিনিয়োগে দীর্ঘদিন এ দেশে বন্ধ ছিল। এখন এটি
উš§ুক্ত। বিশেষ করে গভীর সমুদ্রে বিপুল জ্বালানি সম্পদ থাকার সম্ভাবনা
রয়েছে। বৈদেশিক বিনিয়োগ আসলেই এই সম্পদ আহরণ সম্ভব। মার্কিন বিনিয়োগকারীরা
মিয়ানমারে আসতে শুরু করেছেন। এখন ‘পরিবর্তিত পরিস্থিতির’ কারণে মার্কিন
বিনিয়োগকারীরা আরো উৎসাহিত হবেন। রোহিঙ্গা সমস্যা বহির্বিশ্বে মিয়ানমারের
ভাবমূর্তি অনেক নষ্ট করেছে। রোহিঙ্গা মুসলমানরা মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে
এক অমানবিক জীবনযাপন করছে। সুচি এদের ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করেননি। তিনি
উগ্র বৌদ্ধ মানসিকতায় নিজেকে সম্পর্কিত করেছিলেন। উদ্দেশ্য পরিষ্কার ভোট
প্রাপ্তি নিশ্চিত করা। সেটা নিশ্চিত হয়েছে। কিন্তু একজন নোবেল পুরস্কার
বিজয়ীর কাছ থেকে মানুষ আরো বেশি কিছু প্রত্যাশা করে। রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব
দেয়া, তাদের চলাচলে বাধা নিষেধ প্রত্যাহার করে নেয়া কিংবা তাদের নিজ
বাসভূমিতে বসবাসের অধিকার নিশ্চিত করা জরুরি। নয়া সরকার এই কাজটি করবে এটাই
মানুষ প্রত্যাশা করে।
১৯৬২ সালের পর মিয়ানমার এই প্রথমবারের মতো একজন
সিভিলিয়ান প্রেসিডেন্ট পেল। নয়া প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব ও কর্তব্য অনেক
বেশি। দীর্ঘ ৫৪ বছর সামরিক বাহিনী সেখানে ক্ষমতা পরিচালনা করেছে। ফলে
সেখানে গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি বিকশিত হয়নি। সংবাদপত্র যেখানে স্বাধীন নয়,
বিচার বিভাগও স্বাধীন নয়। এগুলো সবই একটি গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির জন্য
প্রয়োজন। এখন একটি গণতান্ত্রিক সরকার ক্ষমতা নিতে যাচ্ছে। ৩১ মার্চ নয়া
প্রেসিডেন্ট তার দায়িত্ব নেবেন। একটি সরকারও গঠিত হবে তখন। ফলে নতুন এক
মিয়ানমারকে দেখার জন্য আমাদের আরো কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে মাত্র।
Daily Manobkontho
16 March 2016
0 comments:
Post a Comment