২২
মার্চ ২০১৬ তারিখে বেলজিয়ামের রাজধানী ব্যাসেলসে ইসলামিক স্টেটের জঙ্গিদের
সন্ত্রাসী হামলার পর যে প্রশ্নটি এখন গণমাধ্যমে ব্যাপকভাবে আলোচিত হচ্ছে,
তা হচ্ছে এই সন্ত্রাসী হামলা কী বার্তা দিয়ে গেল আমাদের। ব্রাসেলসের
জাভেনতেম বিমানবন্দরের বহির্গমন বিভাগে দুটি বিস্ফোরণ এবং এর ঘণ্টাখানেক পর
মায়লবেক মেট্রো স্টেশন বোমা হামলায় ৩৬ জন নিহত হয়েছেন আর আহত হয়েছেন ২৭০
জন। ১৩ নভেম্বর (২০১৫) প্যারিসে একাধিক জঙ্গি হামলা হয়েছিল এবং তাতে মারা
গিয়েছিলেন ১২৯ জন সাধারণ মানুষ। এই দুটি হামলার পেছনে একটি যোগসূত্র আছে
এবং তা গণমাধ্যমেও প্রকাশিত হয়েছে। মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার উদ্ধৃতি দিয়ে
সংবাদ সংস্থা এপি জানাচ্ছে যে, ইউরোপজুড়ে বড় ধরনের সন্ত্রাসী হামলা চালাতে
৪০০ প্রশিক্ষিত যোদ্ধা পাঠিয়েছে আইএস অর্থাৎ ইসলামিক স্টেট। এরা ছোট ছোট
গ্রুপে বিভক্ত হয়ে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে হামলা চালাতে পারে। সন্ত্রাসী
কর্মকাণ্ড এখন ছড়িয়ে পড়েছে পৃথিবীর সর্বত্র। কিছুদিন আগে জার্কাতায় যে বড়
ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড হয়েছিল তার দায়-দায়িত্ব স্বীকার করেছিল আইএস।
প্যারিসের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের পরপরই পশ্চিম আফ্রিকার দেশ মালিতে ইসলামিক
জঙ্গিরা হোটেল রেডিসনে ১৭০ বিদেশিকে জিম্মি করেছিল। জিম্মিদের উদ্ধার করতে
গিয়ে ২৭ বিদেশি সেদিন মারা গিয়েছিলেন। সম্প্রতি পশ্চিম আফ্রিকায় ইসলামিক
জঙ্গিদের তৎপরতা বেশ লক্ষণীয়।
উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, মালির উত্তরে বা তুয়ারেগ অঞ্চলে ন্যূনতম চারটি ইসলামিক জঙ্গি গোষ্ঠীর খবর আমরা জানি, যারা সেখানে একটি ‘জিহাদি যুদ্ধ’ পরিচালনা করছে। একটি ইসলামিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যেও তারা কাজ করে যাচ্ছে। এই চারটি সংগঠন হচ্ছে আনসার দ্বীন, আল কায়েদা ইন ইসলামিক মাগরেব, মোজওআ ও আল মুয়াক্কিন বি ডিমা। সম্প্রতি ‘সাহেল জোন’-এর অন্তর্ভুক্ত মালি, মৌরিতানিয়া ও নাইজারে ইসলামিক জঙ্গিদের তৎপরতা বেড়েছে। মাগরেবভুক্ত এ অঞ্চলের বাইরে নাইজেরিয়াতে ইসলামিক জঙ্গি গোষ্ঠী বোকো হারামের নৃশংস ঘটনাবলি সারা বিশ্বের দৃষ্টি কেড়েছিল। বোকো হারামের জঙ্গিরা কিশোরী মেয়েদের স্কুল থেকে অপহরণ করত এবং তারা জঙ্গি কমান্ডারদের তথাকথিত যৌনদাসী হিসেবে ব্যবহার করত। শত শত বিরোধী মেয়েদের অপহরণের পর আর তাদের খুঁজে পাওয়া যায়নি। বোকো হারাম সম্প্রতি ইসলামিক স্টেটের নেতৃত্বের প্রতি তাদের আনুগত্য প্রকাশ করেছে। একিউআইএম চাচ্ছে একটি ইসলামিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে। ২০০৭ সালে তারা এই ঘোষণা দেয়। আলজেরিয়া, লিবিয়া, মালি, মরক্কো ও তিউনেশিয়ায় তাদের তৎপরতা সীমাবদ্ধ। অন্যদিকে নাইজেরিয়াতে বোকা হারাম ও আনসারুর মতো সংগঠন একটি খিলাফত প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। নাইজার ও ক্যামেরুনেও তাদের কর্মকাণ্ড সম্প্রসারিত হয়েছে। বলা হয় নাইজেরিয়ার ৩৬টি প্রদেশের মাঝে ১৪টিতে বোকো হারামের অবস্থান অত্যন্ত শক্তিশালী আর মালিতে ২০১১ সালে জঙ্গি সংগঠন আনসার দ্বীন সেখানে তাদের নিয়ন্ত্রিত এলাকায় শারিয়া আইন বলবৎ করেছে। ফলে এ অঞ্চলগুলো একটি বড় ধরনের ঝুঁকির মধ্যে আছে। উত্তর আফ্রিকার অনেক দেশ এক সময় ফ্রান্সের উপনিবেশ ছিল। ফলে এসব দেশের অনেক মানুষ ফ্রান্স, বিশেষ করে রাজধানী প্যারিসে বসবাস করেন। এদের দ্বিতীয় তথা তৃতীয় জেনারেশন ফ্রান্সে বসবাস করে আসছেন। কিন্তু ফ্রান্সের নাগরিকত্ব পেলেও এরা দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক। চাকরির ক্ষেত্রে সামাজিক দিক দিয়ে এরা বৈষম্যের শিকার হয়ে আসছিলেন। আর এই সুযোগটি নিয়েছিল আইএস। এরা তরুণ সমাজের মাঝে তাদের অবস্থান শক্তিশালী করেছিল। ধর্ম, বিশেষ করে ইসলাম ধর্ম এক্ষেত্রে আদৌ কোনো ভূমিকা পালন করেনি। এর বড় প্রমাণ হাসনাআইত বুলাচেনের ঘটনা, যিনি ইউরোপে প্রথম নারী আত্মঘাতী হিসেবে পরিচিতি পান। বুলাচেন কিছুদিন আগ পর্যন্ত পশ্চিমা পোশাক ও পশ্চিমা সংস্কৃতিতে আকৃষ্ট ছিলেন। তার বন্ধুরা ইংল্যান্ডের টেলিগ্রাফকে জানিয়েছিল হাসনা ব্যক্তিজীবনে জিন্স প্যান্ট, কোকাকোলা আর পশ্চিমা সংগীতে বুঁদ হয়ে থাকতেন। তার কাছে ইসলাম ধর্মের কোনো আবেদন ছিল না। হঠাৎ করেই তিনি ‘হিজাবি’ হয়ে যান এবং জিহাদি তৎপরতায় জড়িয়ে যান। আইএসের সমর্থক হাসনা বুলাচেন পুলিশের আক্রমণের মুখে গত ১৯ নভেম্বর প্যারিসে নিজেকে উড়িয়ে দেন। আইএস এভাবেই তরুণ প্রজšে§র ভেতরে তার ‘প্রভাব’ বিস্তার করেছিল।
সিরিয়ায় আইএস অর্থাৎ ইসলামিক স্টেটের নাম প্রথম শোনা যায় ২০১৩ সালে। তখন সংগঠনটির নাম ছিল ইসলামিক স্টেট আর ইরাক অ্যান্ড লেভান্ট। এই এলাকার ঐতিহাসিক নাম লেভান্ট। জঙ্গিরা এই নামটি গ্রহণ করেছিল। পরে নামটি পরিবর্তন করে। তবে ১৯৯১ সালে জামায়াত আল তওহিদ ওয়াল জিহাদ নামে একটি সংগঠনের ব্যাপারে মূলত এটি সংগঠিত হয়েছিল। পরে এরা ‘আলকায়েদা ইন ইরাক’ নাম ধারণ করে। এই সংগঠনটি মূলত সুন্নি প্রভাবাধীন ও সুন্নি সম্প্রদায়নির্ভর। ২০০৬ সালে ইরাকে সুন্নি প্রভাবাধীন মুজাহিদিন শূরা কাউন্সিলে সংগঠনটি যোগ দেয়। ২০১৩ সালে সারা বিশ্ব প্রথমবারের মতো আবু বকর বুগদাদির নাম জানতে পারে। ২০১৪ সালের ২৯ জুন বুগদাদি একটি খেলাফতের ডাক দিলে সংগঠনটি ব্যাপক পরিচিতি পায়। তখন সংগঠনটি নতুন নাম ধারণ করে আইএস বা ইসলামিক স্টেট। তবে আলকায়েদার সঙ্গে সংগঠনটির সম্পর্ক কী এটা নিয়েও প্রশ্ন আছে। বলা হচ্ছে, ২০১৪ সালের জুন মাস থেকে আইএসের সঙ্গে আলকায়েদার কোনো সম্পর্ক নেই। আল কায়েদার রাজনৈতিক দর্শন ও ইসলামিক স্টেটের রাজনীতির মাঝে কিছুটা পার্থক্য রয়েছে। দুটি সংগঠনই মূলত জিহাদি, গালাফি ও ওয়াহাবি মতবাদ দ্বারা পরিচালিত হয়। আল কায়েদা জিহাদি ও ওয়াহাবি মতবাদ অনুসরণ করলেও খেলাফতের কথা বলেনি কখনো। আইএস খেলাফতের কথা বলেছে। বুগদাদি নিজেকে খলিফা বা আমিরুল মুমেনিন হিসেবে ঘোষণা করেছেন যা আল কায়েদার নেতা লাদেন যতদিন জীবিত ছিলেন ততদিন নিজেকে খলিফা ঘোষণা করেননি। বুগদাদি নিজেকে সব মুসলিম বিশ্বের নেতা বা খলিফা হিসেবে ঘোষণা করার মধ্য দিয়ে দাবি করেছেন সব মুসলমানের দায়িত্ব হচ্ছে এই খেলাফতের প্রতি একাত্মতা প্রকাশ করা। তিনি মুসলমান প্রধান সব দেশকে নিয়ে এক রাষ্ট্রের স্বপ্ন দেখেন। অন্যদিকে আল কায়েদা স্ট্রাটেজি হচ্ছে ছোট ছোট আমিরাত প্রতিষ্ঠা করা। আল কায়েদা মধ্যপ্রাচ্যে বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন নামে অপারেট করে। কিন্তু আইএস তা করে না। তবে বলার অপেক্ষা রাখে না আল কায়েদা ও আইএস উভয় সংগঠনই যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলি গোয়েন্দা সংস্থার জš§ দেয়া। পুরো মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের একটা বড় স্ট্রাটেজি রয়েছে। এখানে তার স্বার্থ অনেক। স্বার্থ রয়েছে ফ্রান্সেরও। বাহরাইন ও কাতারে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ঘাঁটি। ফ্রান্স ও ব্রিটেনের সামরিক ঘাঁটি রয়েছে আমিরাত ও সাইপ্রাসে। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকে সস্তায় তেল পাওয়া যায়। এই তেলের ওপর যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্বের নির্ভরশীলতা অনেক বেশি। লিবিয়ার তেলের ওপর ৩টি পশ্চিমা দেশের নির্ভরশীলতা ইতোমধ্যে অনেক প্রশ্নের জš§ দিয়েছে। ইতালির প্রয়োজনীয় জ্বালানি তেলের ২৯ ভাগ আসে লিবিয়া থেকে। ফ্রান্সের ও স্পেনের এই নির্ভরশীলতার হার যথাক্রমে ১৪ ভাগ ও ১০ ভাগ। তারা চাইবে সস্তায় তেল নিতে। সিরিয়ায় খুব বেশি তেল সম্পদ নেই। কিন্তু এই তেলই এখন ইসলামি স্টেটের জঙ্গিদের আয়ের অন্যতম উৎস। আইএস প্রতিদিন তাদের নিয়ন্ত্রিত এলাকা থেকে ৪০ হাজার ব্যারেল তেল উত্তোলন করে। কালোবাজারে তা বিক্রি করে। এর মূল্য বছর হিসাবে ৩২ কোটি ডলার আর প্রতিদিনের তেল বিক্রির অর্থ জমা হচ্ছে ইসলামিক স্টেটের ফান্ডে। এই ফান্ড ব্যবহƒত হয় জঙ্গিদের মাসিক বেতন (৪৩০ ডলার থেকে ১ হাজার ডলার) ও সেই সঙ্গে বিদেশে জঙ্গি তৎপরতার কাজে। যেমন বলা যেতে পারে প্যারিসে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের জন্য প্রায় ৫০ হাজার ডলার ব্যয় হয়েছে বলে একটি গোয়েন্দা সংস্থার ধারণা।
আইএস তার ‘দূরবর্তী খেলাফত’ প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দিয়ে তাদের কর্মকাণ্ড দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া তথা পাক-ভারত উপমহাদেশে সম্প্রসারিত করার কথা বলছে। এটা আমাদের জন্য চিন্তার কারণ। বড় ধরনের সন্ত্রাসবাদের ঝুঁকিতে এখন ভারত ও বাংলাদেশ। পাকিস্তান ইতোমধ্যে তাদের প্রভাব বলয়ে চলে গেছে। পাকিস্তানে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড এখন নিত্যদিনের ঘটনা। এ অঞ্চলের মানুষ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পছন্দ করে না। কিন্তু সন্ত্রাসীদের কাছে তারা অনেক সময় জিম্মি হয়ে যান। আইএসের এটাই স্ট্রাটেজি। জিম্মি করে মানুষ হত্যা করা। ভারত ও বাংলাদেশ ঘনবসতিপূর্ণ দুটি দেশ। এই ঘনবসতিপূর্ণ এলাকাই বেছে নেয় আইএসের জঙ্গিরা। জাকার্তার ঘটনা এর বড় প্রমাণ। বলা হচ্ছে, প্রায় ৭০০ ইন্দোনেশিয়ার নাগরিক সিরিয়ায় আইএসের কাছে প্রশিক্ষণ নিয়ে দেশে ফিরে এসেছিল। এরাই সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত। ভারত কিংবা বাংলাদেশের কারা কারা সিরিয়ায় গিয়েছিল তার পরিসংখ্যান জানাটা জরুরি। ভারতীয় গোয়েন্দারা এ ব্যাপারে সক্রিয় থাকলেও আমরা বারবার পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বলতে শুনেছি বাংলাদেশে কোনো আইএস নেই। আমরাও তেমনটাই মনে করি। কিন্তু এ দেশে জঙ্গি আছে। তাদের কেউ কেউ যে আইএসের আদর্শে উদ্দীপ্ত হয়নি তা স্পষ্ট করে বলা যাবে না। কয়েকটি জঙ্গি সংগঠন এ দেশে নিষিদ্ধ। এসব সংগঠনের শীর্ষ নেতারা আইএসের সঙ্গে যোগাযোগ রাখার চেষ্টা করতে পারেন। ভয়টা এখানেই। সর্বশেষ পাকিস্তান-আফগানিস্তান সীমান্তে খোরাসান অঞ্চলে ইসলামিক স্টেট তাদের প্রভাব ও প্রতিপত্তি সম্প্রসারিত করেছে। তারা ঘোষণা করেছে ভারতীয় উপমহাদেশে তাদের ‘খিলাফত’ সম্প্রসারিত করার। বিষয়টাকে হালকাভাবে নেয়ার কোনো সুযোগ নেই। আমি বিশ্বাস করি পুলিশের যে কাউন্টার টেররিজম ইউনিটটি গঠিত হয়েছে, তারা বিষয়টি দেখছে। এই ইউনিটি নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের অন্তর্ভুক্ত হওয়া প্রয়োজন।
ব্যাসেলসে সন্ত্রাসী হামলার পর আমি একাধিক গবেষণাধর্মী প্রবন্ধ পড়েছি। প্রতিটি গবেষণা প্রবন্ধে আইএসের ভবিষ্যৎ কর্মকাণ্ডের দিকে নজর রাখার জন্য বলা হয়েছে। আইএসের মুখপত্র ‘দাবিগ’ ম্যাগাজিনে যেসব মন্তব্য করা হয়েছে তা বিশ্লেষণ করে মন্তব্য করা হয়েছে যে, আইএসের পরবর্তী টার্গেট হচ্ছে অস্ট্রিয়া, জার্মানি, স্পেন আর ইতালি। এসব অঞ্চল থেকে ‘থার্ড জেনারেশনের’ যেসব মুসলমান সম্প্রদায়ের তরুণ স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে ‘জিহাদি’ যুদ্ধে অংশ নেয়ার জন্য সিরিয়া গিয়েছিল, আইএস তাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে স্ব স্ব দেশে ফেরত পাঠাচ্ছে আত্মঘাতী বোমা হামলা চালানোর জন্য। প্যারিস ও ব্রাসেলসে হামলা যে হলো এটা তার বড় প্রমাণ। আইএসের উদ্দেশ্য পরিষ্কার ইউরোপবাসীকে এক ধরনের ‘শাস্তি’ দেয়া। কেননা সিরিয়ার আইএসের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র যে বিমান হামলা শুরু করেছিল ইউরোপীয় শক্তিগুলো ছিল যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগী মিত্র। ফলে আইএস এক ধরনের ‘প্রতিশোধ’ নিতে চেয়েছে। Institute for the Study of war-এ গত ২৫ মার্চ (২০১৬) হার্লিন গাম্ভীর (Harleen Gambhir) যে প্রবন্ধটি লেখেন (ISISÕS Campaign in Europe) তাতে এ ধরনের মন্তব্য করা হয়েছে। আইএসের জঙ্গিরা (Crusoder Belgium) যে প্রতিশোধ নিয়েছে তাও বলা হয়েছে।ফলে ইউরোপে যে জঙ্গি তৎপরতা কমে যাবে, এটা মনে করার কোনো কারণ নেই। এর প্রতিক্রিয়া হিসেবে সমগ্র ইউরোপে যে মুসলমানবিদ্বেষী একটি জনমত গড়ে উঠবে তা বলার আর অপেক্ষা রাখে না। ইউরোপে মুসলিম প্রধান দেশগুলো থেকে বিশেষ করে পাক-ভারত-বাংলাদেশ থেকে ইউরোপে অভিযান প্রক্রিয়া আরো কঠিন হবে। সিরিয়া থেকে যেসব অভিবাসী ইউরোপে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছেন তারা মানবেতর জীবনযাপন করবেন। স্বদেশে কিংবা তুরস্কে ফেরত পাঠানোর ঝুঁকির মুখে তারা এখন থাকবেন। স্থানীয়ভাবে দক্ষিণপন্থি রাজনৈতিক দলগুলো আরো শক্তিশালী হবে এবং স্থানীয় নির্বাচনে তারা ভালো করবে। চলতি বছর ইউরোপীয় ইউনিয়নে থাকা না থাকা নিয়ে সেখানে গণভোট হবে। গণভোটে ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পক্ষে রায় পড়তে পারে। অর্থাৎ ৯/১১- এর পর যুক্তরাষ্ট্রে যে ধরনের পরিস্থিতি বিরাজ করছিল আজ ১৫ বছর পর ইউরোপে ঠিক একই ধরনের পরিস্থিতি বিরাজ করছে। ইউরোপ বদলে যাচ্ছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপ আর কখনো এ ধরনের নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে পড়েনি। সবচেয়ে বড় কথা, ইউরোপে এই সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনী প্রচারণায় প্রভাব ফেলতে পারে। দক্ষিণপন্থিরা ডোনাল্ড ট্রাম্পের দিকে সমর্থন ছুড়ে দিতে পারে। সুতরাং ব্রাসেলস হামলার একটি প্রতিক্রিয়া থেকে যাবেই। - Daily Manobkontho 31.03.16
উল্লেখ করা প্রয়োজন যে, মালির উত্তরে বা তুয়ারেগ অঞ্চলে ন্যূনতম চারটি ইসলামিক জঙ্গি গোষ্ঠীর খবর আমরা জানি, যারা সেখানে একটি ‘জিহাদি যুদ্ধ’ পরিচালনা করছে। একটি ইসলামিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যেও তারা কাজ করে যাচ্ছে। এই চারটি সংগঠন হচ্ছে আনসার দ্বীন, আল কায়েদা ইন ইসলামিক মাগরেব, মোজওআ ও আল মুয়াক্কিন বি ডিমা। সম্প্রতি ‘সাহেল জোন’-এর অন্তর্ভুক্ত মালি, মৌরিতানিয়া ও নাইজারে ইসলামিক জঙ্গিদের তৎপরতা বেড়েছে। মাগরেবভুক্ত এ অঞ্চলের বাইরে নাইজেরিয়াতে ইসলামিক জঙ্গি গোষ্ঠী বোকো হারামের নৃশংস ঘটনাবলি সারা বিশ্বের দৃষ্টি কেড়েছিল। বোকো হারামের জঙ্গিরা কিশোরী মেয়েদের স্কুল থেকে অপহরণ করত এবং তারা জঙ্গি কমান্ডারদের তথাকথিত যৌনদাসী হিসেবে ব্যবহার করত। শত শত বিরোধী মেয়েদের অপহরণের পর আর তাদের খুঁজে পাওয়া যায়নি। বোকো হারাম সম্প্রতি ইসলামিক স্টেটের নেতৃত্বের প্রতি তাদের আনুগত্য প্রকাশ করেছে। একিউআইএম চাচ্ছে একটি ইসলামিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে। ২০০৭ সালে তারা এই ঘোষণা দেয়। আলজেরিয়া, লিবিয়া, মালি, মরক্কো ও তিউনেশিয়ায় তাদের তৎপরতা সীমাবদ্ধ। অন্যদিকে নাইজেরিয়াতে বোকা হারাম ও আনসারুর মতো সংগঠন একটি খিলাফত প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। নাইজার ও ক্যামেরুনেও তাদের কর্মকাণ্ড সম্প্রসারিত হয়েছে। বলা হয় নাইজেরিয়ার ৩৬টি প্রদেশের মাঝে ১৪টিতে বোকো হারামের অবস্থান অত্যন্ত শক্তিশালী আর মালিতে ২০১১ সালে জঙ্গি সংগঠন আনসার দ্বীন সেখানে তাদের নিয়ন্ত্রিত এলাকায় শারিয়া আইন বলবৎ করেছে। ফলে এ অঞ্চলগুলো একটি বড় ধরনের ঝুঁকির মধ্যে আছে। উত্তর আফ্রিকার অনেক দেশ এক সময় ফ্রান্সের উপনিবেশ ছিল। ফলে এসব দেশের অনেক মানুষ ফ্রান্স, বিশেষ করে রাজধানী প্যারিসে বসবাস করেন। এদের দ্বিতীয় তথা তৃতীয় জেনারেশন ফ্রান্সে বসবাস করে আসছেন। কিন্তু ফ্রান্সের নাগরিকত্ব পেলেও এরা দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক। চাকরির ক্ষেত্রে সামাজিক দিক দিয়ে এরা বৈষম্যের শিকার হয়ে আসছিলেন। আর এই সুযোগটি নিয়েছিল আইএস। এরা তরুণ সমাজের মাঝে তাদের অবস্থান শক্তিশালী করেছিল। ধর্ম, বিশেষ করে ইসলাম ধর্ম এক্ষেত্রে আদৌ কোনো ভূমিকা পালন করেনি। এর বড় প্রমাণ হাসনাআইত বুলাচেনের ঘটনা, যিনি ইউরোপে প্রথম নারী আত্মঘাতী হিসেবে পরিচিতি পান। বুলাচেন কিছুদিন আগ পর্যন্ত পশ্চিমা পোশাক ও পশ্চিমা সংস্কৃতিতে আকৃষ্ট ছিলেন। তার বন্ধুরা ইংল্যান্ডের টেলিগ্রাফকে জানিয়েছিল হাসনা ব্যক্তিজীবনে জিন্স প্যান্ট, কোকাকোলা আর পশ্চিমা সংগীতে বুঁদ হয়ে থাকতেন। তার কাছে ইসলাম ধর্মের কোনো আবেদন ছিল না। হঠাৎ করেই তিনি ‘হিজাবি’ হয়ে যান এবং জিহাদি তৎপরতায় জড়িয়ে যান। আইএসের সমর্থক হাসনা বুলাচেন পুলিশের আক্রমণের মুখে গত ১৯ নভেম্বর প্যারিসে নিজেকে উড়িয়ে দেন। আইএস এভাবেই তরুণ প্রজšে§র ভেতরে তার ‘প্রভাব’ বিস্তার করেছিল।
সিরিয়ায় আইএস অর্থাৎ ইসলামিক স্টেটের নাম প্রথম শোনা যায় ২০১৩ সালে। তখন সংগঠনটির নাম ছিল ইসলামিক স্টেট আর ইরাক অ্যান্ড লেভান্ট। এই এলাকার ঐতিহাসিক নাম লেভান্ট। জঙ্গিরা এই নামটি গ্রহণ করেছিল। পরে নামটি পরিবর্তন করে। তবে ১৯৯১ সালে জামায়াত আল তওহিদ ওয়াল জিহাদ নামে একটি সংগঠনের ব্যাপারে মূলত এটি সংগঠিত হয়েছিল। পরে এরা ‘আলকায়েদা ইন ইরাক’ নাম ধারণ করে। এই সংগঠনটি মূলত সুন্নি প্রভাবাধীন ও সুন্নি সম্প্রদায়নির্ভর। ২০০৬ সালে ইরাকে সুন্নি প্রভাবাধীন মুজাহিদিন শূরা কাউন্সিলে সংগঠনটি যোগ দেয়। ২০১৩ সালে সারা বিশ্ব প্রথমবারের মতো আবু বকর বুগদাদির নাম জানতে পারে। ২০১৪ সালের ২৯ জুন বুগদাদি একটি খেলাফতের ডাক দিলে সংগঠনটি ব্যাপক পরিচিতি পায়। তখন সংগঠনটি নতুন নাম ধারণ করে আইএস বা ইসলামিক স্টেট। তবে আলকায়েদার সঙ্গে সংগঠনটির সম্পর্ক কী এটা নিয়েও প্রশ্ন আছে। বলা হচ্ছে, ২০১৪ সালের জুন মাস থেকে আইএসের সঙ্গে আলকায়েদার কোনো সম্পর্ক নেই। আল কায়েদার রাজনৈতিক দর্শন ও ইসলামিক স্টেটের রাজনীতির মাঝে কিছুটা পার্থক্য রয়েছে। দুটি সংগঠনই মূলত জিহাদি, গালাফি ও ওয়াহাবি মতবাদ দ্বারা পরিচালিত হয়। আল কায়েদা জিহাদি ও ওয়াহাবি মতবাদ অনুসরণ করলেও খেলাফতের কথা বলেনি কখনো। আইএস খেলাফতের কথা বলেছে। বুগদাদি নিজেকে খলিফা বা আমিরুল মুমেনিন হিসেবে ঘোষণা করেছেন যা আল কায়েদার নেতা লাদেন যতদিন জীবিত ছিলেন ততদিন নিজেকে খলিফা ঘোষণা করেননি। বুগদাদি নিজেকে সব মুসলিম বিশ্বের নেতা বা খলিফা হিসেবে ঘোষণা করার মধ্য দিয়ে দাবি করেছেন সব মুসলমানের দায়িত্ব হচ্ছে এই খেলাফতের প্রতি একাত্মতা প্রকাশ করা। তিনি মুসলমান প্রধান সব দেশকে নিয়ে এক রাষ্ট্রের স্বপ্ন দেখেন। অন্যদিকে আল কায়েদা স্ট্রাটেজি হচ্ছে ছোট ছোট আমিরাত প্রতিষ্ঠা করা। আল কায়েদা মধ্যপ্রাচ্যে বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন নামে অপারেট করে। কিন্তু আইএস তা করে না। তবে বলার অপেক্ষা রাখে না আল কায়েদা ও আইএস উভয় সংগঠনই যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলি গোয়েন্দা সংস্থার জš§ দেয়া। পুরো মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের একটা বড় স্ট্রাটেজি রয়েছে। এখানে তার স্বার্থ অনেক। স্বার্থ রয়েছে ফ্রান্সেরও। বাহরাইন ও কাতারে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ঘাঁটি। ফ্রান্স ও ব্রিটেনের সামরিক ঘাঁটি রয়েছে আমিরাত ও সাইপ্রাসে। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকে সস্তায় তেল পাওয়া যায়। এই তেলের ওপর যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্বের নির্ভরশীলতা অনেক বেশি। লিবিয়ার তেলের ওপর ৩টি পশ্চিমা দেশের নির্ভরশীলতা ইতোমধ্যে অনেক প্রশ্নের জš§ দিয়েছে। ইতালির প্রয়োজনীয় জ্বালানি তেলের ২৯ ভাগ আসে লিবিয়া থেকে। ফ্রান্সের ও স্পেনের এই নির্ভরশীলতার হার যথাক্রমে ১৪ ভাগ ও ১০ ভাগ। তারা চাইবে সস্তায় তেল নিতে। সিরিয়ায় খুব বেশি তেল সম্পদ নেই। কিন্তু এই তেলই এখন ইসলামি স্টেটের জঙ্গিদের আয়ের অন্যতম উৎস। আইএস প্রতিদিন তাদের নিয়ন্ত্রিত এলাকা থেকে ৪০ হাজার ব্যারেল তেল উত্তোলন করে। কালোবাজারে তা বিক্রি করে। এর মূল্য বছর হিসাবে ৩২ কোটি ডলার আর প্রতিদিনের তেল বিক্রির অর্থ জমা হচ্ছে ইসলামিক স্টেটের ফান্ডে। এই ফান্ড ব্যবহƒত হয় জঙ্গিদের মাসিক বেতন (৪৩০ ডলার থেকে ১ হাজার ডলার) ও সেই সঙ্গে বিদেশে জঙ্গি তৎপরতার কাজে। যেমন বলা যেতে পারে প্যারিসে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের জন্য প্রায় ৫০ হাজার ডলার ব্যয় হয়েছে বলে একটি গোয়েন্দা সংস্থার ধারণা।
আইএস তার ‘দূরবর্তী খেলাফত’ প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দিয়ে তাদের কর্মকাণ্ড দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া তথা পাক-ভারত উপমহাদেশে সম্প্রসারিত করার কথা বলছে। এটা আমাদের জন্য চিন্তার কারণ। বড় ধরনের সন্ত্রাসবাদের ঝুঁকিতে এখন ভারত ও বাংলাদেশ। পাকিস্তান ইতোমধ্যে তাদের প্রভাব বলয়ে চলে গেছে। পাকিস্তানে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড এখন নিত্যদিনের ঘটনা। এ অঞ্চলের মানুষ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পছন্দ করে না। কিন্তু সন্ত্রাসীদের কাছে তারা অনেক সময় জিম্মি হয়ে যান। আইএসের এটাই স্ট্রাটেজি। জিম্মি করে মানুষ হত্যা করা। ভারত ও বাংলাদেশ ঘনবসতিপূর্ণ দুটি দেশ। এই ঘনবসতিপূর্ণ এলাকাই বেছে নেয় আইএসের জঙ্গিরা। জাকার্তার ঘটনা এর বড় প্রমাণ। বলা হচ্ছে, প্রায় ৭০০ ইন্দোনেশিয়ার নাগরিক সিরিয়ায় আইএসের কাছে প্রশিক্ষণ নিয়ে দেশে ফিরে এসেছিল। এরাই সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত। ভারত কিংবা বাংলাদেশের কারা কারা সিরিয়ায় গিয়েছিল তার পরিসংখ্যান জানাটা জরুরি। ভারতীয় গোয়েন্দারা এ ব্যাপারে সক্রিয় থাকলেও আমরা বারবার পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বলতে শুনেছি বাংলাদেশে কোনো আইএস নেই। আমরাও তেমনটাই মনে করি। কিন্তু এ দেশে জঙ্গি আছে। তাদের কেউ কেউ যে আইএসের আদর্শে উদ্দীপ্ত হয়নি তা স্পষ্ট করে বলা যাবে না। কয়েকটি জঙ্গি সংগঠন এ দেশে নিষিদ্ধ। এসব সংগঠনের শীর্ষ নেতারা আইএসের সঙ্গে যোগাযোগ রাখার চেষ্টা করতে পারেন। ভয়টা এখানেই। সর্বশেষ পাকিস্তান-আফগানিস্তান সীমান্তে খোরাসান অঞ্চলে ইসলামিক স্টেট তাদের প্রভাব ও প্রতিপত্তি সম্প্রসারিত করেছে। তারা ঘোষণা করেছে ভারতীয় উপমহাদেশে তাদের ‘খিলাফত’ সম্প্রসারিত করার। বিষয়টাকে হালকাভাবে নেয়ার কোনো সুযোগ নেই। আমি বিশ্বাস করি পুলিশের যে কাউন্টার টেররিজম ইউনিটটি গঠিত হয়েছে, তারা বিষয়টি দেখছে। এই ইউনিটি নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের অন্তর্ভুক্ত হওয়া প্রয়োজন।
ব্যাসেলসে সন্ত্রাসী হামলার পর আমি একাধিক গবেষণাধর্মী প্রবন্ধ পড়েছি। প্রতিটি গবেষণা প্রবন্ধে আইএসের ভবিষ্যৎ কর্মকাণ্ডের দিকে নজর রাখার জন্য বলা হয়েছে। আইএসের মুখপত্র ‘দাবিগ’ ম্যাগাজিনে যেসব মন্তব্য করা হয়েছে তা বিশ্লেষণ করে মন্তব্য করা হয়েছে যে, আইএসের পরবর্তী টার্গেট হচ্ছে অস্ট্রিয়া, জার্মানি, স্পেন আর ইতালি। এসব অঞ্চল থেকে ‘থার্ড জেনারেশনের’ যেসব মুসলমান সম্প্রদায়ের তরুণ স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে ‘জিহাদি’ যুদ্ধে অংশ নেয়ার জন্য সিরিয়া গিয়েছিল, আইএস তাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে স্ব স্ব দেশে ফেরত পাঠাচ্ছে আত্মঘাতী বোমা হামলা চালানোর জন্য। প্যারিস ও ব্রাসেলসে হামলা যে হলো এটা তার বড় প্রমাণ। আইএসের উদ্দেশ্য পরিষ্কার ইউরোপবাসীকে এক ধরনের ‘শাস্তি’ দেয়া। কেননা সিরিয়ার আইএসের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র যে বিমান হামলা শুরু করেছিল ইউরোপীয় শক্তিগুলো ছিল যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগী মিত্র। ফলে আইএস এক ধরনের ‘প্রতিশোধ’ নিতে চেয়েছে। Institute for the Study of war-এ গত ২৫ মার্চ (২০১৬) হার্লিন গাম্ভীর (Harleen Gambhir) যে প্রবন্ধটি লেখেন (ISISÕS Campaign in Europe) তাতে এ ধরনের মন্তব্য করা হয়েছে। আইএসের জঙ্গিরা (Crusoder Belgium) যে প্রতিশোধ নিয়েছে তাও বলা হয়েছে।ফলে ইউরোপে যে জঙ্গি তৎপরতা কমে যাবে, এটা মনে করার কোনো কারণ নেই। এর প্রতিক্রিয়া হিসেবে সমগ্র ইউরোপে যে মুসলমানবিদ্বেষী একটি জনমত গড়ে উঠবে তা বলার আর অপেক্ষা রাখে না। ইউরোপে মুসলিম প্রধান দেশগুলো থেকে বিশেষ করে পাক-ভারত-বাংলাদেশ থেকে ইউরোপে অভিযান প্রক্রিয়া আরো কঠিন হবে। সিরিয়া থেকে যেসব অভিবাসী ইউরোপে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছেন তারা মানবেতর জীবনযাপন করবেন। স্বদেশে কিংবা তুরস্কে ফেরত পাঠানোর ঝুঁকির মুখে তারা এখন থাকবেন। স্থানীয়ভাবে দক্ষিণপন্থি রাজনৈতিক দলগুলো আরো শক্তিশালী হবে এবং স্থানীয় নির্বাচনে তারা ভালো করবে। চলতি বছর ইউরোপীয় ইউনিয়নে থাকা না থাকা নিয়ে সেখানে গণভোট হবে। গণভোটে ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পক্ষে রায় পড়তে পারে। অর্থাৎ ৯/১১- এর পর যুক্তরাষ্ট্রে যে ধরনের পরিস্থিতি বিরাজ করছিল আজ ১৫ বছর পর ইউরোপে ঠিক একই ধরনের পরিস্থিতি বিরাজ করছে। ইউরোপ বদলে যাচ্ছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপ আর কখনো এ ধরনের নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে পড়েনি। সবচেয়ে বড় কথা, ইউরোপে এই সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনী প্রচারণায় প্রভাব ফেলতে পারে। দক্ষিণপন্থিরা ডোনাল্ড ট্রাম্পের দিকে সমর্থন ছুড়ে দিতে পারে। সুতরাং ব্রাসেলস হামলার একটি প্রতিক্রিয়া থেকে যাবেই। - Daily Manobkontho 31.03.16
0 comments:
Post a Comment