রাজনীতি, আন্তর্জাতিক রাজনীতি এবং সমসাময়িক ঘটনাবলীর বিশ্লেষণ সংক্রান্ত অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর রেহমানের একটি ওয়েবসাইট। লেখকের অনুমতি বাদে এই সাইট থেকে কোনো লেখা অন্য কোথাও আপলোড, পাবলিশ কিংবা ছাপাবেন না। প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন লেখকের সাথে

কেন চীনা রাষ্ট্রদূতের বক্তব্যকে গুরুত্বের সঙ্গে নিতে হবে




ঢাকায় নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত মা মিং ছিয়াং একটি গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেছেন ২১ মার্চ কূটনৈতিক সংবাদদাতাদের সংগঠন ডিকাবের অনুষ্ঠানে। তিনি বলেছেন, চীন অন্য যে কোনো দেশের সঙ্গে যুক্ত হয়ে সোনাদিয়া কিংবা পায়রায় একটি গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ করতে আগ্রহী। বাংলাদেশে কোনো গভীর সমুদ্রবন্দর নেই। অথচ শ্রীলংকার মতো দেশেও গভীর সমুদ্রবন্দর আছে। বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্য যেভাবে বাড়ছে তাতে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ করা ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। গভীর সমুদ্রবন্দরে বড় বড় জাহাজগুলো ভিড়তে পারে এবং তাতে মালামাল খালাস খুব সহজ হয়। বাংলাদেশ অনেক আগেই কক্সবাজার উপকূলে সোনাদিয়ায় একটি গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছিল। পাঠক স্মরণ করতে পারেন, ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চীন সফর করেছিলেন। তখন বিষয়টি আলোচনার টেবিলে ছিল। যদিও প্রধানমন্ত্রীর চীন সফর ভারতীয় গণমাধ্যম খুব ভালো চোখে দেখেনি। ভারতের প্রভাবশালী দৈনিক 'দি হিন্দু' এক প্রতিবেদনে তখন জানিয়েছিল শেখ হাসিনা চীনা প্রধানমন্ত্রী লি চেখিয়াংয়ের সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠকে 'চীনা নেতৃত্বাধীন' শতাব্দীতে বাংলাদেশের সক্রিয় অংশীদার হওয়ার প্রস্তাব নিয়ে ভারতের নীতি-নির্ধারকরা সতর্ক দৃষ্টি রাখছেন। যদিও সরাসরি কোনো ভারতীয় নেতারা ওই সফরের সমালোচনা করেননি। ইতোমধ্যে ভারতের প্রধানমন্ত্রী তার সার্ক সফরের অংশ হিসেবে বাংলাদেশ সফর করে গেছেন। ওই সফরে নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের ঐতিহাসিক সম্পর্কের বন্ধনের কথাও উল্লেখ করে গেছেন। বাংলাদেশ ভারতের সঙ্গে সম্পর্ককে যেভাবে গুরুত্ব দেয়, ঠিক একইভাবে গুরুত্ব দেয় চীনের সঙ্গে সম্পর্ককেও। তবে প্রধানমন্ত্রীর চীন সফরের সময় গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণে চুক্তি হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তা হয়নি। প্রকৃতপক্ষে গভীর সমুদ্রবন্দর (নির্মিতব্য) পরিচালনার ভার বাংলাদেশ কোনো বিদেশি কোম্পানির হাতে ছেড়ে দিতে চায় না। চীনা সরকার এটি পেতে চেয়েছিল।
উল্লেখ্য, চায়না হারবার ইঞ্জিনিয়ার কোম্পানির পাশাপাশি ইউএই, নেদারল্যান্ডস ও ডেনমার্ক সোনাদিয়ায় গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণে আগ্রহ প্রকাশ করেছিল। কিন্তু একটি বাছাই কমিটি প্রথমে চায়না হারবারকে যোগ্য বলে অভিমত দিয়েছিল। চায়না হারবারের প্রস্তাব অনুযায়ী তিন ধাপে ১০ বছরের মধ্যে এই নির্মাণ সম্পন্ন হবে। ব্যয় হবে ৩ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার। তবে প্রথম পর্যায়ে ব্যয় ধরা হয়েছিল ১ দশমিক ২৮ বিলিয়ন ডলার। তিন বছরে প্রাথমিক পর্যায়ের কাজ শেষ হবে। বড় জাহাজগুলো তখন এখানে নোঙর করতে পারবে (এখন চট্টগ্রাম বন্দরে বড় জাহাজ ঢুকতে পারে না। সিঙ্গাপুর থেকে ছোট জাহাজে পণ্য আনতে হয়। এতে সময় নষ্ট হয় প্রচুর)। প্রথম পর্যায়ে বন্দরে ২০ লাখ টিইউইউস (কন্টেইনার টার্মিনাল) কন্টেইনার ধারণ করতে পারবে। আর সাধারণ কার্গোর (খোলা পণ্য) ধারণ ক্ষমতা হবে ৪৬ লাখ ৫০ হাজার টন। এখানে এখন অনেক কিছু দেখার বিষয় রয়েছে। আমার বিবেচনায় বাছাই কমিটির চায়না হারবারকে বেছে নেয়ার সিদ্ধান্তটি ছিল সঠিক। কেননা চীনারা এ বিষয়ে যথেষ্ট দক্ষতা অর্জন করেছে। এ অঞ্চলে অন্তত তিনটি গভীর সমুদ্রবন্দরের খবর জানা যায়, যা চীনা অর্থে ও চীনা বিশেষজ্ঞদের দ্বারা নির্মিত হয়েছে ও পরিচালিত হচ্ছে। শ্রীলংকায় দুটো গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ করে দিয়েছে চীন। একটি হামবানতোতায়, অন্যটি কলম্বোতে। কিছুদিন আগ পর্যন্ত হামবানতোতায় ছিল গভীর জঙ্গল। ছোট্ট একটা শহর, যেখানে কোনো ভালো হোটেল ছিল না। সাবেক প্রেসিডেন্ট রাজাপাকসের জন্মস্থান এখানে। চীন এখানে ৪৫০ মিলিয়ন ডলার ব্যয়ে একটি গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ করেছে। এর ফলে পুরো হামবানতোতার দৃশ্যপট বদলে গেছে। হামবানতোতা আজ একটি আন্তর্জাতিক নগরীর মর্যাদা পেয়েছে। নামকরা ক্রিকেট স্টেডিয়াম রয়েছে এখানে। আগামী ২০১৮ সালে এখানে কমওয়েলথ গেমস অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। কলম্বোয় যে বন্দরটি নির্মিত হয়েছে তাতে বছরে ৮ লাখ কন্টেইনার হ্যান্ডলিং করা সম্ভব হবে। গভীর সমুদ্রবন্দরের সুবিধা একটাই এখানে 'মেগা শিপ' অর্থাৎ বড় জাহাজগুলো ভিড়তে পারে এবং পণ্য খালাস করতে পারে। বলা হচ্ছে বন্দর পরিচালনা কার হাতে থাকবে_ এটা নিয়ে একটা জটিলতা তৈরি হয়েছিল। যদি সর্বশেষ কলম্বোর সিআইসিটি অর্থাৎ কলম্বো ইন্টারন্যাশনাল কন্টেইনার টার্মিনালের ব্যবস্থাপনা দেখি তাহলে দেখতে পাবো শতকরা ৮৫ ভাগ মালিকানা চীনের হাতে। ১৫ ভাগের মালিকানা শ্রীলংকা সরকারের হাতে। যদি পাকিস্তানের গাওদার গভীর সমুদ্রবন্দরের কথা বলি, তাহলে শতকরা একশভাগ মালিকানাই চীনাদের হাতে। একসময় সিঙ্গাপুরের হাতে দায়িত্ব ছিল এর পরিচালনার। এখন চীনাদের হাতে রয়েছে পরিচালনার ভার। যেখানে তাদের বিশাল বিনিয়োগ রয়েছে, তাদের অভিজ্ঞতা রয়েছে, সেখানে পরিচালনার ভার থাকলে আপত্তি কোথায়? সোনাদিয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের নিরাপত্তা যদি বিঘি্নত না হয় তাহলে চীনাদের হাতে বন্দর পরিচালনার ভার দেয়া যেতে পারত। সবচেয়ে বড় কথা, এ ধরনের বন্দর পরিচালনায় যে অভিজ্ঞ জনশক্তি প্রয়োজন তা আমাদের নেই। বরং চীনাদের সঙ্গে থেকে আমরা আমাদের অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারতাম। ডিজাইন তৈরিতেও অভিজ্ঞ চীনারা। সুতরাং তাদের ওপর আস্থা রাখা যেত। কিন্তু এখন তা আর হচ্ছে না।
সোনাদিয়ায় গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণসংক্রান্ত চুক্তি না হওয়া ছিল নিঃসন্দেহে দুঃখজনক। তবে যত দ্রুত আমরা সোনাদিয়ায় একটা গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ করতে পারব ততই আমাদের জন্য তা মঙ্গল। কেননা দেরি হলে প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে যাবে। শুধু তাই নয়, এ অঞ্চলের উন্নয়নও বাধাগ্রস্ত হবে। আমরা আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা, বিসিআইএসের কর্মকা-কে স্বাগত জানিয়েছি। বাংলাদেশ, চীন (ইউনান প্রদেশ), ভারত (উত্তর পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য) ও মিয়ানমারের সমন্বয়ে যে অর্থনৈতিক করিডোর গড়ে উঠছে তার উন্নয়ন ও বিকাশের স্বার্থেই এই সোনাদিয়া গভীর সমুদ্রবন্দরের গুরুত্ব অনেক বেশি। ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলো এই বন্দর দিয়েই তাদের পণ্য আমদানি-রপ্তানি করতে পারবে। সোনাদিয়া গভীর সমুদ্রবন্দরের গুরুত্ব থাকলেও তাহলে চুক্তিটি হলো না কেন? একটা ধারণা দেয়া হয়েছে যে, চীনা ঋণের ধরন নিয়ে চূড়ান্ত সমঝোতা হয়নি। বলা হচ্ছে বাংলাদেশ সহজ শর্তে ঋণ চেয়েছিল। এতদিন একটা ধারণা ছিল, এ প্রকল্পে প্রথমে চীন নমনীয় ঋণের শর্ত দিয়েছিল। এই ঋণের সুদের হার কম, মাত্র ২ শতাংশ। কিন্তু পরে জানা গেল চীন এই ঋণকে বাণিজ্যিক ঋণে পরিণত করতে চায়, যেখানে সুদের হার ৩ দশমিক ৫ থেকে ৪ দশমিক ৫ শতাংশ। এখানে একটি বিভ্রান্তি রয়ে গেছে। প্রথমত, বাংলাদেশ অতীতে বিভিন্ন চীনা প্রকল্পে যে ঋণ নিয়েছে, তার ধরন কী? তা কি বাণিজ্যিক ঋণ? দ্বিতীয়ত, এই প্রকল্প নিয়ে চীনের সঙ্গে দীর্ঘদিন আলোচনা চলে আসছিল। ওই আলোচনায় কি বাণিজ্যিক ঋণের প্রশ্নটি এসেছিল? তৃতীয়ত, কোনো সমঝোতা ছাড়াই কেন বলা হয়েছিল প্রধানমন্ত্রীর চীন সফরে এই চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হবে? চতুর্থত, বাংলাদেশের আলোচনাকারীরা কি চীনা অর্থে নির্মিত ও পরিচালিত গাওদার, হামবানতোতা ও কলম্বো গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ ও পরিচালনায় কী ধরনের চুক্তি হয়েছিল তা পর্যালোচনা করেছিলেন? এমন কথাও বলা হয়েছিল যে, বাংলাদেশ মূলত গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণে চীনা অর্থায়নের বিষয়টি ভারত কিভাবে দেখছে, এটা বিবেচনায় নিতে চায়।
যাই হোক সোনাদিয়ায় আর গভীর সমুদ্রবন্দরটি আপাতত নির্মিত হচ্ছে না। এখন গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মিত হচ্ছে পটুয়াখালীর পায়রা বন্দরে। এ ক্ষেত্রে সোনাদিয়ায় সমুদ্রবন্দরের পরিকল্পনাটি পরিত্যক্ত হয়েছে কিনা, সে ব্যাপারেও একটা ধোঁয়াশা রয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে তা স্পষ্ট করা হয়নি। ব্যবসায়ীদের একটা বড় অংশ এখনো চাচ্ছেন সোনাদিয়ায় আরেকটি সমুদ্রবন্দর নির্মিত হোক। আমাদের অর্থনীতির জন্য এটা গুরুত্বপূর্ণ। এই প্রস্তাবিত গভীর সমুদ্রবন্দরটির ব্যাপারে চীনাদের স্বার্থ আছে, সন্দেহ নেই তাতে। কিন্তু আমাদেরও স্বার্থ রয়েছে। বাংলাদেশ-চীন বাণিজ্যিক স্বার্থে এই বন্দর, এমনকি কুনমিং-কক্সবাজার মহাসড়কের গুরুত্ব অনেক।
চীন বাংলাদেশের অন্যতম উন্নয়ন অংশীদার। বাংলাদেশের বেশ কটি বড় প্রজেক্টে চীন অর্থায়ন করেছে। বেশ কটি ব্রিজও চীন তৈরি করে দিয়েছে, যা চীন-বাংলাদেশ মৈত্রী সেতু নামে পরিচিত। প্রধানমন্ত্রীর চীন সফরের সময় চীনের কাছ থেকে ঋণ পরিশোধের মেয়াদ বাড়ানো ও বিশেষ ছাড়ের দাবি বাংলাদেশ উত্থাপন করেছিল বলে জানা গেছে। বর্তমানে চীনের ঋণের ক্ষেত্রে পরিশোধের মেয়াদ ১০ থেকে ১৩ বছর, এ ছাড়া আরো ৩ বছর গ্রেস পিরিয়ড দেয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী এ ঋণ পরিশোধের মেয়াদ ২০ বছরের পাশাপাশি গ্রেস পিরিয়ড আরো ৫ বছর বৃদ্ধি করার অনুরোধ করেছিলেন। বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যকার বাণিজ্যিক সম্পর্ক পর্যালোচনা করে দেখা যায় বাণিজ্য চীনের অনুকূলে। বাংলাদেশ যে পরিমাণ পণ্য চীনে রপ্তানি করে তার চেয়ে প্রায় ১৩ দশমিক ৮ গুণ পণ্য বেশি আমদানি করে। ১৯৯৭-৯৮ সালে বাংলাদেশ রপ্তানি করেছিল ৪৮.৫১ মিলিয়ন ডলারের পণ্য। আর আমদানি করেছিল ৫৯২.৬৪ মিলিয়ন ডলারের পণ্য। ২০০১-২০০২ সময়সীমার প্রায় ৬০ গুণ বেশি মূল্যের পণ্য আমদানি করতে হয়েছিল (১১.৬৭ মিলিয়নের বিপরীতে ৭০৮.৯৪ মিলিয়ন)। ২০১২-১৩ সালে এটা বেড়ে দাঁড়ায় ৪৫৮.১২ মিলিয়ন (রপ্তানি) ও ৬৩২৪ মিলিয়ন (আমদানি)। অন্যদিকে চীনের কাছ থেকে আর্থিক সাহায্যের পরিমাণ তেমন বেশি নয়। ২০০৫ সাল পর্যন্ত চীন ঋণ দিয়েছিল ১৮১ মিলিয়ন ডলার, যা ছিল সুদমুক্ত। একই সঙ্গে ৭৫ মিলিয়ন কম সুদে, ৭৬৪ মিলিয়ন সাপ্লাইয়ার্স ক্রেডিট, ও ৩২.৯৪ মিলিয়ন অনুদান দিয়েছিল। ২০১৩ সালে চীন তার নিজ দেশে ৫০০০ আইটেমের বাংলাদেশি পণ্যের শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকারের সুযোগ করে দিয়েছিল। বাংলাদেশ মূলত ফ্রজেন ফুড, পাটজাত দ্রব্য, চা, চামড়া, তৈরি পোশাক চীনে রপ্তানি করে। চীনা বিনিয়োগের যে পরিসংখ্যান আমরা পাই, তাতে দেখা যায় ২০০৯ সালে চীন বাংলাদেশে বিনিয়োগ করেছে ৮৮ মিলিয়ন ডলার। আর ২০১৩ সালে এসে ১৮৬ জন উদ্যোক্তা বাংলাদেশে বিনিয়োগ করেছে ৩২০ মিলিয়ন ডলার। একই সঙ্গে প্রতিরক্ষা সেক্টরের কথা বলা যায়। বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা বাহিনীর জন্য ব্যবহৃত সমরাস্ত্রের শতকরা ৭৫ ভাগের উৎস হচ্ছে চীন। চীন থেকে ট্যাংক, সাজোয়া যান, আর বিমান বাহিনীর জন্য ফাইটার প্লেন চীন থেকে ক্রয় করা হয়েছে। বলতে দ্বিধা নেই শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের উদ্যোগেই বাংলাদেশ-চীন সামরিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে। জীবদ্দশায় জিয়া একাধিকবার চীন সফর করেছেন। ২০০৯ সাল পর্যন্ত চীনের ঊর্ধ্বতন জেনারেলদের বাংলাদেশ সফর ছিল নিয়মিত। এখন এই প্রবণতা কিছু কম। ২০০২ সালে বেগম জিয়ার সময়সীমায় বাংলাদেশ ও চীন একটি সামরিক সহযোগিতামূলক চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছিল।
তবে এটা স্বীকার করতেই হবে যে চীনের সঙ্গে সোনাদিয়ায় গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণসংক্রান্ত চুক্তি না হওয়ায়, আমাদের পূর্বমুখী পররাষ্ট্রনীতির জন্য তা ছিল একটি দুঃখজনক সংবাদ। যদিও উভয়পক্ষই বলেছে তারা এ ব্যাপারে আলাপ-আলোচনা আরো চালিয়ে যাবে। এই চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হলে এ অঞ্চলের অর্থনীতিতে একটি বড় পরিবর্তন আসবে। চীন ও ভারত এই সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করতে পারবে। গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণে চীনের অভিজ্ঞতা রয়েছে প্রচুর। পাকিস্তানের বেলুচিস্তানের গাওদারে, শ্রীলংকার হামবানতোতা ও কলম্বোতে চীন গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ করেছে। এই অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে আমরা যত দ্রুত সোনাদিয়ায় গভীর সমুদ্রবন্দরটি নির্মাণ করতে পারব, ততই আমাদের মঙ্গল।
বাংলাদেশ অতি সম্প্রতি মিয়ানমার ও ভারতের সঙ্গে তার সমুদ্র সীমানাসংক্রান্ত বিবাদ মীমাংসা করেছে। এখন সীমানা নির্ধারিত হওয়ায় কত দ্রুত এই সীমানা আমরা ব্যবহার করে তেল, গ্যাস ও অন্যান্য মিনারেল আহরণ করতে পারব, আমাদের সাফল্য সেখানেই নিহিত। সুতরাং আজ ঢাকায় চীনা রাষ্ট্রদূত গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের ব্যাপারে যে আগ্রহ দেখিয়েছেন, তা গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নেয়া প্রয়োজন। পায়রা বন্দর নির্মাণে ভারত আগ্রহ দেখিয়েছে। যদিও গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণে ভারতের কোনো অভিজ্ঞতা নেই। এখন আমরা ভারত ও চীনের যৌথ সহযোগিতা নিয়ে সোনাদিয়া ও পায়রাতে দুটি গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের উদ্যোগ নিতে পারি। এতে বাংলাদেশের পাশাপাশি ভারত এবং চীনেরও লাভ। চীন ও ভারত তাদের আমদানি-রপ্তানিতে এই সমুদ্রবন্দর দুটি ব্যবহার করতে পারবে। তাই চীনা রাষ্ট্রদূতের বক্তব্যকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নেয়া প্রয়োজন।
Daily Jai Jai Din24.03.16

1 comments:

  1. Sir, as usual it is another deeply analytical and practical writing.
    😊

    ReplyDelete