এই ভুখা বাংলাদেশ কারো কাম্য নয় |
বাংলাদেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রশ্নে সরকার ও বিরোধী দল যখন পরস্পরবিরোধী একটি অবস্থান গ্রহণ করেছে এবং দেশটিকে বড় ধরনের রাজনৈতিক সংকটের দিকে ঠেলে দিয়েছে, তখন যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত ফরেন পলিসি ম্যাগাজিন ব্যর্থ রাষ্ট্রগুলোর একটি তালিকা প্রণয়ন করেছে। ওই তালিকায় ১৭৭টি রাষ্ট্রের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ২৫তম। অর্থাৎ ব্যর্থ রাষ্ট্রের তালিকায় শীর্ষে যে দেশটি রয়েছে সোমালিয়া, সেই তালিকা ধরে বাংলাদেশ আছে ২৫ নম্বরে। তবে একটি আশার কথা_বাংলাদেশের অবস্থান পাকিস্তানের চেয়ে অনেক ভালো। পাকিস্তান রয়েছে ওপরের দিকে, ১২তম স্থানে। পাঠক, এখানে ভারতের অবস্থান ৭৬, আর আফ্রিকার সেনেগালের ৮৫। যার অবস্থান যত নিচে, তার অবস্থান তত ভালো। তালিকায় স্থান পাওয়া প্রথম ২০টি দেশের মধ্যে ১৪টিই আফ্রিকার। সোমালিয়া, সাদ, সুদান, কঙ্গো কিংবা জিম্বাবুয়ের সঙ্গে সেনেগালকে মেলানো যাবে না। তার কারণ একটাই, সেনেগালে এক ধরনের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা রয়েছে। অর্থনৈতিক অবস্থাও দেশটির ভালো। বড় ধরনের কোনো জাতিগত দ্বন্দ্বেরও খবর পাওয়া যায় না দেশটি থেকে। অন্যদিকে দক্ষিণ এশিয়ায় যে অস্থিতিশীলতা, যুদ্ধ, অর্থনৈতিক অব্যবস্থা বিরাজ করছে (পাকিস্তান, বাংলাদেশ কিংবা শ্রীলঙ্কা), তার সঙ্গে ভারতকে মেলানো যাবে না। ভারতে অর্থনৈতিক তথা রাজনৈতিক ক্ষেত্রে এক ধরনের স্থিতিশীলতা বিরাজ করছে। যে কারণে ঠিক ব্যর্থ রাষ্ট্রের ধারণার সঙ্গে ভারতকে মেলানো যাবে না।
ব্যর্থ রাষ্ট্রের তালিকায় বাংলাদেশের স্থান প্রথমদিকে থাকা নিঃসন্দেহে একটি দুঃখজনক সংবাদ। আমাদের রাজনীতিবিদরা এটা নিয়ে ভাবেন কি না জানি না, কিন্তু রাষ্ট্র হিসেবে এই ব্যর্থ রাষ্ট্রের 'বদনাম' নিয়ে আমরা গৌরব বোধ করতে পারি না। আমাদের অনেক কিছু আছে গৌরব করার মতো। আমাদের সেনাবাহিনী আজ বিদেশে শান্তি মিশনে কাজ করছে। তারা দক্ষ। আমরা তৈরি পোশাকে বিশ্বে নেতৃত্ব দিচ্ছি। এক ধরনের দক্ষতা ও নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষমতা আমরা অর্জন করেছি এই ক্ষেত্রে। বাংলাদেশের ওষুধ আজ যাচ্ছে প্রায় ৬০টি দেশে। যদি দক্ষ জনশক্তি তৈরি করতে পারি, তাহলে এই ক্ষেত্রেও আমরা বিশ্বে নেতৃত্ব দিতে পারব। কিন্তু রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব, ক্ষমতা ধরে রাখার প্রবণতা, অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা ও দুর্বৃত্তায়ন ইত্যাদি কারণে আমাদের অর্জন ম্লান হতে বসেছে। আর এসব কারণেই আমরা ব্যর্থ রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিতি পেতে যাচ্ছি।
ফরেন পলিসি ম্যাগাজিন মোট ১২টি ক্ষেত্র বা বিষয় সামনে রেখে রাষ্ট্রটি কতটুকু 'ব্যর্থ', তা নির্ণয় করে। এই বিষয়গুলোর মধ্যে রয়েছে ওই রাষ্ট্রের মানবাধিকার পরিস্থিতি, অর্থনীতির নিম্নগতি, অসম উন্নয়ন, রাষ্ট্রের নিরাপত্তা পরিস্থিতি, বহিঃশক্তির হস্তক্ষেপের আশঙ্কা, জনসংখ্যার চাপ, উদ্বাস্তু, গোষ্ঠী দ্বন্দ্ব, জনগোষ্ঠীর স্থানচ্যুতি, সুশীল সমাজের মধ্যে দ্বন্দ্ব ইত্যাদি। এই বিষয়গুলো পর্যালোচনা করে ব্যর্থ রাষ্ট্রের তালিকা তৈরি করা হয়। এলিজাবেথ ডিকিসন (Elizabeth Dickison) ব্যর্থ রাষ্ট্র নিয়ে ফরেন পলিসি ম্যাগাজিনে যে প্রবন্ধটি লেখেন (Failed States, 20, June), তাতে বাংলাদেশের কথাও উল্লেখ করা হয়েছে। তিনি বাংলাদেশের পুঁজিবাজারের বিপর্যয়, দারিদ্র্য, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে যে ক্ষতির সম্মুখীন বাংলাদেশ হবে, সে কথাও উল্লেখ করেছেন। তিনি উল্লেখ করেছেন যে বাংলাদেশে প্রতি পাঁচজন নাগরিকের মধ্যে দুজনই দরিদ্র। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা যদি শুধু এক মিটার বাড়ে, তাহলে দেশটির ১৭ শতাংশ এলাকাই পানির নিচে চলে যাবে। ভাবতে কষ্ট লাগে, যখন দেখি বাংলাদেশের আগে অবস্থান করছে ক্যামেরুন, আর পরে লাইবেরিয়া। লাইবেরিয়াতে শান্তি প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশের সেনাবাহিনী সেখানে গিয়েছিল। সেখানে গোষ্ঠী দ্বন্দ্ব, দারিদ্র্য, নিরাপত্তাহীনতা কিংবা উদ্বাস্তু পরিস্থিতি বাংলাদেশের চেয়ে খারাপ। এর পরও সেখানে বর্তমানে এক ধরনের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রয়েছে, যা বাংলাদেশে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে হুমকির মুখে। এ কারণেই তুলনামূলক বিচারে ব্যর্থ রাষ্ট্রের তালিকায় বাংলাদেশের চেয়ে কিছুটা ভালো অবস্থানে রয়েছে লাইবেরিয়া।
বাংলাদেশে জনসংখ্যার চাপ অনেক বেশি। প্রতিবছর জনসংখ্যা বাড়ছে ২৫ লাখ। আগামী ১০ বছরে এই ছোট্ট দেশে জনসংখ্যা হবে ২১ কোটি। এই জনসংখ্যাকে আমরা শক্তিতে পরিণত করতে পারিনি। অনেক আগেই শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারির তদন্ত রিপোর্ট জমা হয়েছে। মাত্র ২০ দিনের ব্যবধানে এক লাখ কোটি টাকার ওপরে লুট হয়ে দেশের বাইরে পাচার হয়ে গেছে। সংগত কারণেই শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িত দুষ্কৃতকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না দেওয়ায় আন্তর্জাতিক আসরে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়েছে। ব্যর্থ রাষ্ট্রের তালিকা প্রণয়নে তাই এই বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। সবচেয়ে আশঙ্কার কারণ যা, তা হচ্ছে, ব্যর্থ রাষ্ট্রে সন্ত্রাসবাদী কর্মকাণ্ড বৃদ্ধি পাওয়া। আফগানিস্তান, পাকিস্তান কিংবা সোমালিয়া এর বড় প্রমাণ। জেমস ট্রাউব (James Traub) তাঁর একটি প্রবন্ধে (প্রকাশিতব্য July-August, Foreign Policy, Failed States) স্টুয়ার্ট পেট্রিকের (Stewart Patrick) গ্রন্থ Weaklines: The Brutal Truth-এর উদ্ধৃতি দিয়েছেন। স্টুয়ার্ট পেট্রিক লিখেছেন, 'A middle ranking group of weak, but not yet failing states may offer more long term advantages to terrorists than either anarchic zone of strong states'। স্টুয়ার্ট পেট্রিকের মন্তব্য নিয়ে বিতর্ক করার কিছু নেই। দরিদ্র জনগোষ্ঠীই ইসলামী জঙ্গিদের টার্গেট। তথাকথিত জিহাদের নামে এরা দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে রিক্রুট করে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এই মন্তব্যটি গুরুত্বের দাবি রাখে। বাংলাদেশে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর সংখ্যা বাড়ছে। এরা বেকার। এমনকি গ্র্যাজুয়েশন করেও এরা দলীয় সম্পৃক্ততা না থাকার কারণে কোনো চাকরি পাচ্ছে না। জঙ্গিরা এদেরই টার্গেট করে। ইসলামী জঙ্গি আন্দোলনে অর্থ একটা ফ্যাক্টর। আল-কায়েদা নেটওয়ার্ক পরিচালনার জন্য ওসামা বিন লাদেন প্রচুর অর্থ ব্যয় করতেন।
ব্যর্থ রাষ্ট্রের ধারণা এবং বাংলাদেশের তালিকাভুক্তি নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তুলতে পারেন। কিন্তু ভুলে গেলে চলবে না, ফরেন পলিসির গবেষকরা ১৭৭টি দেশের এক লাখ ৩০ হাজার সূত্র ঘেটে, তথ্য বিশ্লেষণ করে ব্যর্থ রাষ্ট্রের তালিকাভুক্তি করেছেন। বাংলাদেশ নিয়ে যে মন্তব্য করা হয়েছে, তার পেছনে কিছুটা হলেও যুক্তি আছে। গেল বার বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ২৪। অর্থাৎ পরিস্থিতির খুব একটা উন্নতি হচ্ছে না। বাংলাদেশের পরিস্থিতির উন্নতি করতে হলে সরকার ও বিরোধী দলের মধ্যে নূন্যতম প্রশ্নে ঐকমত্য প্রয়োজন। কিন্তু বর্তমান যে পরিস্থিতি, তা তো শুধু অবনতির কথাই বলে। সংবিধান সংশোধন, বিশেষ করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল একটা দলের এজেন্ডা হতে পারে না। এর সঙ্গে পুরো জাতির স্বার্থ জড়িত। এখন বিরোধী দলের কোনো মতামত ছাড়াই সংবিধান যদি সংশোধন করা হয় ও তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করা হয় (মন্ত্রিসভা তা অনুমোদন করেছে), তা সংকটকে আরো গভীরতর করবে। বিএনপি ৪৮ ঘণ্টা হরতালের কথা বলেছে। এই যে পরিস্থিতি, এই পরিস্থিতি গোষ্ঠী দ্বন্দ্ব কিংবা সুশীল সমাজের সঙ্গে বিভক্তির কথাই বলছে। আর এসবই ব্যর্থ রাষ্ট্রের অন্যতম উপাদান। তাই ব্যর্থ রাষ্ট্র নিয়ে কোনো বিতর্ক নয়। বরং চাই যৌথ উদ্যোগ, যা ব্যর্থ রাষ্ট্রের তালিকা থেকে বাংলাদেশকে বের করে আনতে পারবে।
ড. তারেক শামসুর রেহমান
ব্যর্থ রাষ্ট্রের তালিকায় বাংলাদেশের স্থান প্রথমদিকে থাকা নিঃসন্দেহে একটি দুঃখজনক সংবাদ। আমাদের রাজনীতিবিদরা এটা নিয়ে ভাবেন কি না জানি না, কিন্তু রাষ্ট্র হিসেবে এই ব্যর্থ রাষ্ট্রের 'বদনাম' নিয়ে আমরা গৌরব বোধ করতে পারি না। আমাদের অনেক কিছু আছে গৌরব করার মতো। আমাদের সেনাবাহিনী আজ বিদেশে শান্তি মিশনে কাজ করছে। তারা দক্ষ। আমরা তৈরি পোশাকে বিশ্বে নেতৃত্ব দিচ্ছি। এক ধরনের দক্ষতা ও নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষমতা আমরা অর্জন করেছি এই ক্ষেত্রে। বাংলাদেশের ওষুধ আজ যাচ্ছে প্রায় ৬০টি দেশে। যদি দক্ষ জনশক্তি তৈরি করতে পারি, তাহলে এই ক্ষেত্রেও আমরা বিশ্বে নেতৃত্ব দিতে পারব। কিন্তু রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব, ক্ষমতা ধরে রাখার প্রবণতা, অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা ও দুর্বৃত্তায়ন ইত্যাদি কারণে আমাদের অর্জন ম্লান হতে বসেছে। আর এসব কারণেই আমরা ব্যর্থ রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিতি পেতে যাচ্ছি।
ফরেন পলিসি ম্যাগাজিন মোট ১২টি ক্ষেত্র বা বিষয় সামনে রেখে রাষ্ট্রটি কতটুকু 'ব্যর্থ', তা নির্ণয় করে। এই বিষয়গুলোর মধ্যে রয়েছে ওই রাষ্ট্রের মানবাধিকার পরিস্থিতি, অর্থনীতির নিম্নগতি, অসম উন্নয়ন, রাষ্ট্রের নিরাপত্তা পরিস্থিতি, বহিঃশক্তির হস্তক্ষেপের আশঙ্কা, জনসংখ্যার চাপ, উদ্বাস্তু, গোষ্ঠী দ্বন্দ্ব, জনগোষ্ঠীর স্থানচ্যুতি, সুশীল সমাজের মধ্যে দ্বন্দ্ব ইত্যাদি। এই বিষয়গুলো পর্যালোচনা করে ব্যর্থ রাষ্ট্রের তালিকা তৈরি করা হয়। এলিজাবেথ ডিকিসন (Elizabeth Dickison) ব্যর্থ রাষ্ট্র নিয়ে ফরেন পলিসি ম্যাগাজিনে যে প্রবন্ধটি লেখেন (Failed States, 20, June), তাতে বাংলাদেশের কথাও উল্লেখ করা হয়েছে। তিনি বাংলাদেশের পুঁজিবাজারের বিপর্যয়, দারিদ্র্য, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে যে ক্ষতির সম্মুখীন বাংলাদেশ হবে, সে কথাও উল্লেখ করেছেন। তিনি উল্লেখ করেছেন যে বাংলাদেশে প্রতি পাঁচজন নাগরিকের মধ্যে দুজনই দরিদ্র। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা যদি শুধু এক মিটার বাড়ে, তাহলে দেশটির ১৭ শতাংশ এলাকাই পানির নিচে চলে যাবে। ভাবতে কষ্ট লাগে, যখন দেখি বাংলাদেশের আগে অবস্থান করছে ক্যামেরুন, আর পরে লাইবেরিয়া। লাইবেরিয়াতে শান্তি প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশের সেনাবাহিনী সেখানে গিয়েছিল। সেখানে গোষ্ঠী দ্বন্দ্ব, দারিদ্র্য, নিরাপত্তাহীনতা কিংবা উদ্বাস্তু পরিস্থিতি বাংলাদেশের চেয়ে খারাপ। এর পরও সেখানে বর্তমানে এক ধরনের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রয়েছে, যা বাংলাদেশে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে হুমকির মুখে। এ কারণেই তুলনামূলক বিচারে ব্যর্থ রাষ্ট্রের তালিকায় বাংলাদেশের চেয়ে কিছুটা ভালো অবস্থানে রয়েছে লাইবেরিয়া।
বাংলাদেশে জনসংখ্যার চাপ অনেক বেশি। প্রতিবছর জনসংখ্যা বাড়ছে ২৫ লাখ। আগামী ১০ বছরে এই ছোট্ট দেশে জনসংখ্যা হবে ২১ কোটি। এই জনসংখ্যাকে আমরা শক্তিতে পরিণত করতে পারিনি। অনেক আগেই শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারির তদন্ত রিপোর্ট জমা হয়েছে। মাত্র ২০ দিনের ব্যবধানে এক লাখ কোটি টাকার ওপরে লুট হয়ে দেশের বাইরে পাচার হয়ে গেছে। সংগত কারণেই শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িত দুষ্কৃতকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না দেওয়ায় আন্তর্জাতিক আসরে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়েছে। ব্যর্থ রাষ্ট্রের তালিকা প্রণয়নে তাই এই বিষয়টি বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। সবচেয়ে আশঙ্কার কারণ যা, তা হচ্ছে, ব্যর্থ রাষ্ট্রে সন্ত্রাসবাদী কর্মকাণ্ড বৃদ্ধি পাওয়া। আফগানিস্তান, পাকিস্তান কিংবা সোমালিয়া এর বড় প্রমাণ। জেমস ট্রাউব (James Traub) তাঁর একটি প্রবন্ধে (প্রকাশিতব্য July-August, Foreign Policy, Failed States) স্টুয়ার্ট পেট্রিকের (Stewart Patrick) গ্রন্থ Weaklines: The Brutal Truth-এর উদ্ধৃতি দিয়েছেন। স্টুয়ার্ট পেট্রিক লিখেছেন, 'A middle ranking group of weak, but not yet failing states may offer more long term advantages to terrorists than either anarchic zone of strong states'। স্টুয়ার্ট পেট্রিকের মন্তব্য নিয়ে বিতর্ক করার কিছু নেই। দরিদ্র জনগোষ্ঠীই ইসলামী জঙ্গিদের টার্গেট। তথাকথিত জিহাদের নামে এরা দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে রিক্রুট করে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এই মন্তব্যটি গুরুত্বের দাবি রাখে। বাংলাদেশে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর সংখ্যা বাড়ছে। এরা বেকার। এমনকি গ্র্যাজুয়েশন করেও এরা দলীয় সম্পৃক্ততা না থাকার কারণে কোনো চাকরি পাচ্ছে না। জঙ্গিরা এদেরই টার্গেট করে। ইসলামী জঙ্গি আন্দোলনে অর্থ একটা ফ্যাক্টর। আল-কায়েদা নেটওয়ার্ক পরিচালনার জন্য ওসামা বিন লাদেন প্রচুর অর্থ ব্যয় করতেন।
ব্যর্থ রাষ্ট্রের ধারণা এবং বাংলাদেশের তালিকাভুক্তি নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তুলতে পারেন। কিন্তু ভুলে গেলে চলবে না, ফরেন পলিসির গবেষকরা ১৭৭টি দেশের এক লাখ ৩০ হাজার সূত্র ঘেটে, তথ্য বিশ্লেষণ করে ব্যর্থ রাষ্ট্রের তালিকাভুক্তি করেছেন। বাংলাদেশ নিয়ে যে মন্তব্য করা হয়েছে, তার পেছনে কিছুটা হলেও যুক্তি আছে। গেল বার বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ২৪। অর্থাৎ পরিস্থিতির খুব একটা উন্নতি হচ্ছে না। বাংলাদেশের পরিস্থিতির উন্নতি করতে হলে সরকার ও বিরোধী দলের মধ্যে নূন্যতম প্রশ্নে ঐকমত্য প্রয়োজন। কিন্তু বর্তমান যে পরিস্থিতি, তা তো শুধু অবনতির কথাই বলে। সংবিধান সংশোধন, বিশেষ করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল একটা দলের এজেন্ডা হতে পারে না। এর সঙ্গে পুরো জাতির স্বার্থ জড়িত। এখন বিরোধী দলের কোনো মতামত ছাড়াই সংবিধান যদি সংশোধন করা হয় ও তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করা হয় (মন্ত্রিসভা তা অনুমোদন করেছে), তা সংকটকে আরো গভীরতর করবে। বিএনপি ৪৮ ঘণ্টা হরতালের কথা বলেছে। এই যে পরিস্থিতি, এই পরিস্থিতি গোষ্ঠী দ্বন্দ্ব কিংবা সুশীল সমাজের সঙ্গে বিভক্তির কথাই বলছে। আর এসবই ব্যর্থ রাষ্ট্রের অন্যতম উপাদান। তাই ব্যর্থ রাষ্ট্র নিয়ে কোনো বিতর্ক নয়। বরং চাই যৌথ উদ্যোগ, যা ব্যর্থ রাষ্ট্রের তালিকা থেকে বাংলাদেশকে বের করে আনতে পারবে।
ড. তারেক শামসুর রেহমান
অধ্যাপক, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ,
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
www.tsrahmanbd.blogspot.com
সূত্রঃ কালের কণ্ঠ, ৩০/০৬/১১]
0 comments:
Post a Comment