শাভেজের একটা বড় অবদান হচ্ছে দারিদ্র্যের দুষ্টচক্র থেকে তিনি ভেনিজুয়েলার নাগরিকদের বের করে আনতে পেরেছিলেন। শাভেজ ক্ষমতাসীন হওয়ার আগে ভেনিজুয়েলার জনগোষ্ঠীর একটি বড় অংশ, যারা negroe indio (Black and indian) হিসেবে পরিচিত (জনগোষ্ঠীর ৮০ শতাংশ), তাঁরা থাকতেন অনেকটা বস্তিঘরে। তাঁদের জন্য কোনো রাষ্ট্রীয় শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবার সুযোগ ছিল না। আজ প্রতিটি নাগরিকের স্বাস্থ্যসেবা, ওষুধ, সব ধরনের স্বাস্থ্য পরীক্ষা, শিক্ষা শাভেজ নিশ্চিত করেছেন। দারিদ্র্য কমিয়ে এনেছেন। ১৯৯৮ সালে দারিদ্র্যের হার যেখানে ছিল ৪৯.৪ ভাগ, সেখানে ২০১১ সালে তা কমে এসে দাঁড়ায় ২৯ দশমিক ৫ ভাগে। এ পরিসংখ্যান জাতিসংঘের। ১৮টি লাতিন আমেরিকাভুক্ত দেশের মধ্যে ভেনিজুয়েলার আর্থসামাজিক অবস্থা সবচেয়ে ভালো। রাষ্ট্রীয় সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহারের দিক ও আয়-বণ্টনের দিক দিয়ে ভেনিজুয়েলার অবস্থান তৃতীয়। বিশ্বব্যাংকের রিপোর্ট অনুযায়ী ভেনিজুয়েলায় বর্তমানে ৫০ মিলিয়ন মধ্যবিত্ত রয়েছে, যাঁরা এক নতুন গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির জন্ম দিয়েছেন সেখানে। তাঁকে বলা হয় এ যুগের 'সিমন বলিভার'। সিমন বলিভার স্পেনের বিরুদ্ধে স্বাধীনতাযুদ্ধ করেছিলেন। আর শাভেজ যুদ্ধ করে গেছেন বিশ্বব্যাপী মার্কিনি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে। এটা করতে গিয়ে কিংবা বলা যেতে পারে, তাঁর সাম্রাজ্যবাদবিরোধী ভূমিকার কারণে বলিভিয়ার মোরালেস, ইকুয়েডরের রাফায়েল কারিয়া কিংবা নিকারাগুয়ার ওর্তেগার সঙ্গে তাঁর রাজনৈতিক সখ্য তৈরি হলেও, সম্পূর্ণ বিপরীত রাজনীতির অধিকারী ইরানের প্রেসিডেন্ট আহমেদিনেজাদের সঙ্গেও তাঁর সম্পর্ক ছিল চমৎকার। জীবিতকালীন সময়ে তিনি লিবিয়ার প্রয়াত নেতা গাদ্দাফির পাশে এসে দাঁড়িয়েছিলেন। একই সঙ্গে শেষ দিন পর্যন্ত সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট আসাদকেও সমর্থন করে গেছেন তিনি। এর পেছনে কাজ করেছিল তাঁর সাম্রাজ্যবাদবিরোধী ভূমিকা। লাতিন আমেরিকা, ক্যারিবিয়ান ও দক্ষিণ আমেরিকার রাষ্ট্রগুলোকে নিয়ে তিনি গঠন করেছিলেন ALBA বা The Bolivarian Alliance for the Peoples of our America নামক সংগঠনটি, যার সদস্য রাষ্ট্রের সংখ্যা ১০। সিমন বলিভার সমগ্র লাতিন আমেরিকার জনগণকে American হিসেবে আখ্যায়িত করেছিলেন। শাভেজও বলতেন সে কথা। একই সঙ্গে CELAC বা The Community of Latin America and caribbeam state গঠনের উদ্যোক্তাও তিনি। দরিদ্র, বস্তিবাসী সাধারণ মানুষকে নিয়ে তিনি কাজ করেছেন। তাঁর দর্শন ছিল সামাজিক ন্যায়পরায়ণতা প্রতিষ্ঠা করা। আর এটা করতে গিয়ে তিনি সিমন বলিভারের মতো বিপ্লবীকে বেছে নিয়েছেন আদর্শ হিসেবে। বলতেন, Bolivar is the fight that does not end, he is born every day in aurselves in his people, in the children, in the fight for life and social Justice। কেউ কেউ তাঁর এই আন্দোলনকে চিহ্নিত করেছেন Chavismo হিসেবে। কিন্তু একটি অভিযোগও আছে। Mestizo বা দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে নিয়ে যে রাজনীতি, সেই রাজনীতি নতুন এক শ্রেণীর জন্ম দিয়েছে ভেনিজুয়েলায় boli bourgeoisic. একটা ভয় ভেনিজুয়েলাকে নিয়ে রয়েই গেছে। লাতিন আমেরিকার ইতিহাস বলে, একটি বিপ্লব সম্পন্ন হওয়ার পর প্রতিবিপ্লবের জন্ম হয় সংঘাত আর বিশৃঙ্খলার মধ্য দিয়ে। গুয়েতেমালা (১৯৫৪), চিলি (১৯৭৩), আর্জেন্টিনা (১৯৭৬), নিকারাগুয়া (১৯৯০) কিংবা কলম্বিয়া (১৯৪৮) এর বড় প্রমাণ। হুগো শাভেজ একটি 'বিপ্লব' সম্পন্ন করেছেন। ভেনিজুয়েলার mestizo শ্রেণী এই 'বিপ্লবকে' এখন সামনে নিয়ে যেতে পারবে কি না সেটা একটা বড় প্রশ্ন। হুগো শাভেজ ইতিহাসে একজন 'বিপ্লবী' হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেলেন। চে গুয়েভারা, ফিদেল কাস্ত্রো, হুগো শাভেজ- এই নামগুলো এখন উচ্চারিত হবে একসঙ্গে। বারবার।Daily Kalerkontho11.3.13
একুশ শতকে একজন সমাজতন্ত্রীর বিদায়
17:21
No comments
শাভেজের একটা বড় অবদান হচ্ছে দারিদ্র্যের দুষ্টচক্র থেকে তিনি ভেনিজুয়েলার নাগরিকদের বের করে আনতে পেরেছিলেন। শাভেজ ক্ষমতাসীন হওয়ার আগে ভেনিজুয়েলার জনগোষ্ঠীর একটি বড় অংশ, যারা negroe indio (Black and indian) হিসেবে পরিচিত (জনগোষ্ঠীর ৮০ শতাংশ), তাঁরা থাকতেন অনেকটা বস্তিঘরে। তাঁদের জন্য কোনো রাষ্ট্রীয় শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবার সুযোগ ছিল না। আজ প্রতিটি নাগরিকের স্বাস্থ্যসেবা, ওষুধ, সব ধরনের স্বাস্থ্য পরীক্ষা, শিক্ষা শাভেজ নিশ্চিত করেছেন। দারিদ্র্য কমিয়ে এনেছেন। ১৯৯৮ সালে দারিদ্র্যের হার যেখানে ছিল ৪৯.৪ ভাগ, সেখানে ২০১১ সালে তা কমে এসে দাঁড়ায় ২৯ দশমিক ৫ ভাগে। এ পরিসংখ্যান জাতিসংঘের। ১৮টি লাতিন আমেরিকাভুক্ত দেশের মধ্যে ভেনিজুয়েলার আর্থসামাজিক অবস্থা সবচেয়ে ভালো। রাষ্ট্রীয় সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহারের দিক ও আয়-বণ্টনের দিক দিয়ে ভেনিজুয়েলার অবস্থান তৃতীয়। বিশ্বব্যাংকের রিপোর্ট অনুযায়ী ভেনিজুয়েলায় বর্তমানে ৫০ মিলিয়ন মধ্যবিত্ত রয়েছে, যাঁরা এক নতুন গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির জন্ম দিয়েছেন সেখানে। তাঁকে বলা হয় এ যুগের 'সিমন বলিভার'। সিমন বলিভার স্পেনের বিরুদ্ধে স্বাধীনতাযুদ্ধ করেছিলেন। আর শাভেজ যুদ্ধ করে গেছেন বিশ্বব্যাপী মার্কিনি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে। এটা করতে গিয়ে কিংবা বলা যেতে পারে, তাঁর সাম্রাজ্যবাদবিরোধী ভূমিকার কারণে বলিভিয়ার মোরালেস, ইকুয়েডরের রাফায়েল কারিয়া কিংবা নিকারাগুয়ার ওর্তেগার সঙ্গে তাঁর রাজনৈতিক সখ্য তৈরি হলেও, সম্পূর্ণ বিপরীত রাজনীতির অধিকারী ইরানের প্রেসিডেন্ট আহমেদিনেজাদের সঙ্গেও তাঁর সম্পর্ক ছিল চমৎকার। জীবিতকালীন সময়ে তিনি লিবিয়ার প্রয়াত নেতা গাদ্দাফির পাশে এসে দাঁড়িয়েছিলেন। একই সঙ্গে শেষ দিন পর্যন্ত সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট আসাদকেও সমর্থন করে গেছেন তিনি। এর পেছনে কাজ করেছিল তাঁর সাম্রাজ্যবাদবিরোধী ভূমিকা। লাতিন আমেরিকা, ক্যারিবিয়ান ও দক্ষিণ আমেরিকার রাষ্ট্রগুলোকে নিয়ে তিনি গঠন করেছিলেন ALBA বা The Bolivarian Alliance for the Peoples of our America নামক সংগঠনটি, যার সদস্য রাষ্ট্রের সংখ্যা ১০। সিমন বলিভার সমগ্র লাতিন আমেরিকার জনগণকে American হিসেবে আখ্যায়িত করেছিলেন। শাভেজও বলতেন সে কথা। একই সঙ্গে CELAC বা The Community of Latin America and caribbeam state গঠনের উদ্যোক্তাও তিনি। দরিদ্র, বস্তিবাসী সাধারণ মানুষকে নিয়ে তিনি কাজ করেছেন। তাঁর দর্শন ছিল সামাজিক ন্যায়পরায়ণতা প্রতিষ্ঠা করা। আর এটা করতে গিয়ে তিনি সিমন বলিভারের মতো বিপ্লবীকে বেছে নিয়েছেন আদর্শ হিসেবে। বলতেন, Bolivar is the fight that does not end, he is born every day in aurselves in his people, in the children, in the fight for life and social Justice। কেউ কেউ তাঁর এই আন্দোলনকে চিহ্নিত করেছেন Chavismo হিসেবে। কিন্তু একটি অভিযোগও আছে। Mestizo বা দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে নিয়ে যে রাজনীতি, সেই রাজনীতি নতুন এক শ্রেণীর জন্ম দিয়েছে ভেনিজুয়েলায় boli bourgeoisic. একটা ভয় ভেনিজুয়েলাকে নিয়ে রয়েই গেছে। লাতিন আমেরিকার ইতিহাস বলে, একটি বিপ্লব সম্পন্ন হওয়ার পর প্রতিবিপ্লবের জন্ম হয় সংঘাত আর বিশৃঙ্খলার মধ্য দিয়ে। গুয়েতেমালা (১৯৫৪), চিলি (১৯৭৩), আর্জেন্টিনা (১৯৭৬), নিকারাগুয়া (১৯৯০) কিংবা কলম্বিয়া (১৯৪৮) এর বড় প্রমাণ। হুগো শাভেজ একটি 'বিপ্লব' সম্পন্ন করেছেন। ভেনিজুয়েলার mestizo শ্রেণী এই 'বিপ্লবকে' এখন সামনে নিয়ে যেতে পারবে কি না সেটা একটা বড় প্রশ্ন। হুগো শাভেজ ইতিহাসে একজন 'বিপ্লবী' হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেলেন। চে গুয়েভারা, ফিদেল কাস্ত্রো, হুগো শাভেজ- এই নামগুলো এখন উচ্চারিত হবে একসঙ্গে। বারবার।Daily Kalerkontho11.3.13
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
0 comments:
Post a Comment