ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি বাংলাদেশ সফর করে গেলেন। নানা কারণে এই সফরের গুরুত্ব রয়েছে। ৩৯ বছর পর একজন ভারতীয় রাষ্ট্রপতি বাংলাদেশে এলেন এবং তিনি একজন বাঙালিÑ এটা নিঃসন্দেহে আমাদের জন্য আনন্দের বিষয়। কিন্তু তার চেয়েও আমার কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে তার কিছু কিছু বক্তব্য এবং সমস্যা সমাধানে তার আন্তরিকতা। বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের যেসব সমস্যা রয়েছে, সে ব্যাপারে প্রণব মুখার্জি পূর্ণ অবগত। মন্ত্রী হিসেবে তিনি এর আগেও বাংলাদেশে এসেছেন এবং সরকারের নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে রয়েছে তার ব্যক্তিগত সম্পর্ক। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় থেকে আজ অবধি বাংলাদেশের ব্যাপারে তার আন্তরিকতার অভাব আমরা এতটুকু দেখিনি। অনেকেরই স্মরণ থাকার কথা, ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালীন জুন মাসে প্রণব মুখার্জি যখন রাজ্যসভার তরুণ সদস্য, তখন তিনি রাজ্যসভায় বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিতে একটি প্রস্তাব উত্থাপন করেছিলেন। ইন্দিরা গান্ধী তখন ভারতের প্রধানমন্ত্রী। ইন্দিরা গান্ধী প্রণব মুখার্জির আগ্রহ উপলব্ধি করে বাংলাদেশের পক্ষে জনমত সৃষ্টির লক্ষ্যে তাকে বেশ ক’টি দেশে পাঠিয়েছিলেন। তিনি ছিলেন সরকারের অন্যতম নীতিনির্ধারক। সোনিয়া গান্ধীর সঙ্গে তার সম্পর্ক চমৎকার। যে কারণে নয়াদিল্লিতে তিনি ছিলেন অন্যতম পরামর্শদাতা। বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি রাজনৈতিক দলের নেতাদের কাছে তিনি ছিলেন সমান জনপ্রিয়। তাই কাদের সিদ্দিকী থেকে শুরু করে এইচএম এরশাদ কিংবা বেগম খালেদা জিয়া যারাই দিল্লি গেছেন, তারাই দেখা করেছেন প্রণব মুখার্জির সঙ্গে। তার দরজা বাংলাদেশীদের জন্য সব সময় খোলাই ছিল। একজন রাষ্ট্রপতি হিসেবে তিনি নীতিনির্ধারণে কোন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন না, এটা সত্য। কিন্তু সেই ব্যক্তিটি যখন হন প্রণব মুখার্জি এবং সমস্যাটি হয় বাংলাদেশকে নিয়ে, তখন তার মূল্যায়নকে অস্বীকার করতে পারেন না ভারতের নীতিনির্ধারকরা।
ঢাকায় আসার আগে তিনি একটি বাংলাদেশী সংবাদ সংস্থাকে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। তার সেই বক্তব্য, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলাপ-আলোচনায় তার মন্তব্য কিংবা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে তার দেয়া ভাষণে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উঠে এসেছে। এসব বিষয় বাংলাদেশ-ভারত দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক উন্নয়নের সঙ্গে সরাসরি জড়িত। যেমন তিনি বলেছেনÑ ১. তিস্তার পানিবণ্টনসহ সব দ্বিপক্ষীয় সমস্যার সমাধানে ভারত দৃঢ়প্রতিজ্ঞ; ২. নতুন নতুন ক্ষেত্রে, বিশেষ করে বাণিজ্য, বিদ্যুৎ, মানুষে মানুষে সংযোগ, নিরাপত্তা ইত্যাদি বিষয়ে দু’দেশের মধ্যে সহযোগিতার সম্পর্ক গড়ে উঠতে পারে; ৩. বাংলাদেশের মানুষের গণতন্ত্র ও অংশগ্রহণমূলক রাজনীতির প্রতি ভারতের আস্থা রয়েছে; ৪. গণতন্ত্র শক্তিশালীকরণ, শান্তি ও স্থিতিশীলতা রক্ষা ও আইনের শাসন এবং মানবাধিকার অক্ষুণœ রাখার ব্যাপারে বাংলাদেশের জনগণ সচেষ্ট থাকবেন; ৫. অভিন্ন জলবণ্টন ভারতের অগ্রাধিকার বিষয়; ৬. ভারত ও বাংলাদেশ একসঙ্গে বেড়ে উঠে সমৃদ্ধি লাভ করতে হবে; ৭. ভারত ও বাংলাদেশ ‘বিশেষ বন্ধনে’ আবদ্ধ। দু’দেশের মধ্যে সহযোগিতার কাঠামো তৈরি হচ্ছে ইত্যাদি।
ভারতের রাষ্ট্রপতির এ ধরনের মন্তব্য দু’দেশের মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়নের ক্ষেত্রে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। তিনি যখন বলেন, দু’দেশের মধ্যে বিরাজমান সমস্যার সমাধানে ভারত দৃঢ়প্রতিজ্ঞ, তখন আমরা এই মন্তব্যে আস্থা রাখতেই পারি। কিন্তু বাস্তবতা কী বলে? তিস্তা চুক্তি হবেÑ এমনটাই আশাবাদী ভারতের রাষ্ট্রপতি। তবে আমাদের অভিজ্ঞতা হল, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর বিরোধিতার কারণে এ চুক্তি হয়নি। বলা হয়েছিল, ভারতের প্রধানমন্ত্রীর ঢাকা সফরের সময় (২০১২) এই চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হবে। কিন্তু তা হয়নি। এরপর অনেক সময় পার হয়ে গেছে। কিন্তু মমতা তার অবস্থান থেকে সরে এসেছেন, এমন কোন তথ্য আমাদের কাছে নেই। তিস্তার পানিবণ্টনের প্রশ্নটি জটিল। এ ব্যাপারে শুধু যে ভারত (পশ্চিমবঙ্গ) আর বাংলাদেশই জড়িত, তা নয়। এ প্রশ্নে সিকিমের অংশগ্রহণও অনেকটা জরুরি। কারণ তিস্তার উৎপত্তি সিকিমে। সিকিম সরকার ইতিমধ্যে তিস্তার মূল প্রবাহ থেকে অনেক পানি প্রত্যাহার করে নিয়েছে। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী দেখা যায়, সিকিম সরকার তিস্তা নদীর মূল প্রবাহের উপর ২৭টি জলবিদ্যুৎ প্রকল্প তৈরি করে প্রচুর পানি প্রত্যাহার করার উদ্যোগ নিয়েছে। জলবিদ্যুৎ প্রকল্পগুলো দিয়ে সিকিম বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে। এমনকি ভারতের এনএইচপিসিও দুটো জলবিদ্যুৎ প্রকল্প তৈরি করেছে। পশ্চিমবঙ্গের ৬টি জেলার ৯ লাখ হেক্টর জমির চাষাবাদ তিস্তার পানির ওপর নির্ভরশীল।
মমতা পানি নিয়ে ‘রাজনীতি’ করেন। আন্তর্জাতিক আইন অমান্য করে পশ্চিমবঙ্গ তিস্তার পানি প্রত্যাহার করে নিয়েছে। ভোটের রাজনীতির কারণে তিনি পানিবণ্টনের ব্যাপারে রাজি হবেন না। ইতিমধ্যে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার থেকে বেরিয়ে গেছে মমতা ব্যানার্জির তৃণমূল কংগ্রেস। কেন্দ্রে তাদের কোন মন্ত্রীও নেই। ফলে তিস্তার পানিবণ্টনের ব্যাপারে নয়াদিল্লি রাজি হলেও মমতার আপত্তির কারণে যে জটিলতা ছিল, সে জটিলতা থেকে যেতে পারে। ২০১৪ সালে ভারতে নির্বাচন। আবারও তৃণমূল একটি ফ্যাক্টর হিসেবে আবির্ভূত হবে। সুতরাং পানিবণ্টনের প্রশ্নটি একটি প্রশ্নবোধক চিহ্ন হয়ে থেকে গেল। ইতিমধ্যে ৩ মার্চ ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস পত্রিকা ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সালমান খুরশিদের বক্তব্য উদ্ধৃত করে একটি সংবাদ প্রকাশ করেছে। ওই সংবাদে বলা হয়েছে, প্রয়োজনে তিস্তা চুক্তি স্বাক্ষরের ব্যাপারে নয়াদিল্লি সংবিধান সংশোধন করতেও রাজি। রাজ্যের মতামতের গুরুত্ব থাকায় কেন্দ্র কখনও এককভাবে কোন চুক্তি করতে পারে না। কিন্তু এই সংবিধান সংশোধন করাও সহজ হবে না। কেননা বিজেপির সমর্থন এতে পাওয়া যাবে না। এমনকি ভারতের রাষ্ট্রপতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে সীমান্ত সমস্যার সমাধান হবে বলে মন্তব্য করলেও বাস্তবক্ষেত্রে এটি নিয়েও সমস্যা রয়েছে। সীমান্ত সমস্যার সমাধানের ব্যাপারেও সংবিধান সংশোধন জরুরি। বাংলাদেশ-ভারত একটি সীমান্ত চুক্তি স্বাক্ষর করেছিল ১৯৭৪ সালে। বাংলাদেশ ওই চুক্তি বাস্তবায়ন করতে সংবিধানে সংশোধনী এনেছে (তৃতীয় সংশোধনী, ১৯৭৪)। কিন্তু দীর্ঘ ৩৯ বছরেও ভারত তাদের সংবিধানে সংশোধনী এনে চুক্তিটি র্যাটিফাই করেনি। ফলে ছিটমহলগুলো নিয়ে সমস্যা রয়েই গিয়েছিল। বর্তমানে বাংলাদেশের ভূখণ্ডে আছে ১৭ হাজার ১৪৯ একর ভারতীয় ভূমি। আর ভারতের ভূখণ্ডে আছে ৭ হাজার ১১১ একর বাংলাদেশী ভূমি। এসব অঞ্চলের মানুষ এক মানবেতর জীবনযাপন করছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে প্রণব মুখার্জি সীমান্ত সমস্যার সমাধানের কথা বললেও বাস্তবতা ভিন্ন। দীর্ঘদিন পর ভারতীয় মন্ত্রিসভায় ১৯৭৪ সালের মুজিব-ইন্দিরা চুক্তি অনুমোদিত হলেও সংবিধান সংশোধনের প্রশ্নটি এর সঙ্গে জড়িত। সংবিধান সংশোধনে কংগ্রেস সমর্থন পাবে না প্রধান বিরোধী দল বিজেপির। মন্ত্রিসভায় মুজিব-ইন্দিরা চুক্তি অনুমোদন এবং কংগ্রেস কর্তৃক সংবিধান সংশোধনের একটি উদ্যোগ নেয়া হলেও বিজেপি বলছে, তারা এই সংশোধনীর বিরোধিতা করবে। ফলে সমস্যা যা ছিল, তা রয়ে যাবে।
প্রণব মুখার্জির আন্তরিকতা নিয়ে আমাদের প্রশ্ন নেই। হয়তো তিনি সত্যি সত্যিই চান সমস্যাগুলোর সমাধান হোক। কিন্তু সমস্যা ভারতের আমলাতন্ত্র নিয়ে। সেই সঙ্গে রয়েছে ভারতের নীতিনির্ধারকদের ‘মাইন্ড সেট আপ’। তারা বাংলাদেশকে কখনও সমমর্যাদার দৃষ্টিতে দেখেছে, এটা আমি মনে করি না। ভারত বড় দেশ। আগামী ৩০ বছরের মধ্যে ভারতের অর্থনীতি হবে বিশ্বের দ্বিতীয় অর্থনীতি। ভারতে প্রচণ্ড দারিদ্র্য থাকলেও আগামী ৩০ বছরের মধ্যে মাথাপিছু আয় দাঁড়াবে ২২ হাজার ডলারে (বর্তমানে ৯৪০ ডলার)। ভারতের এই অর্থনীতি আমাদের অর্থনীতিকেও সমৃদ্ধ করবে। আমাদের উন্নয়নে ভারত একটি বড় ভূমিকা পালন করতে পারে। আমরা তেমনটিই চাই। কিন্তু দেখা গেছে, দ্বিপাক্ষিকতার বেড়াজালে ভারত এককভাবে সুবিধা নিচ্ছে। বিভিন্ন ইস্যুতে যে সমস্যা রয়েছে, তা সমাধানে ভারতের আগ্রহ কম। সীমান্ত হত্যা বন্ধ না হওয়ায় তা বাংলাদেশের মানুষদের ভারতবিদ্বেষী করে তুলেছে। ভারতীয় ঋণে ১৩টি প্রকল্প নির্ধারিত হলেও গত ২ বছরে মাত্র ২টি প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে। বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে বাংলাদেশী পণ্যের আমদানি বাড়ায়নি ভারত। বাংলাদেশী পণ্যের চাহিদা থাকা সত্ত্বেও নানা ধরনের শুল্ক ও অশুল্ক বাধার কারণে ভারতীয় বাজারে প্রবেশ করতে পারছে না। বন্দি প্রত্যার্পণ চুক্তি স্বাক্ষরিত হলেও তাতে ভারতের স্বার্থ বেশি। কানেকটিভিটির আড়ালে ভারতকে ট্রানজিট বা করিডোর দেয়া হলেও নেপাল ও ভুটানের জন্য তা সম্প্রসারিত হয়নি। পানি ব্যবস্থাপনার কথা প্রণব মুখার্জি বলেছেন বটে, কিন্তু এক্ষেত্রে ভারতের কোন উদ্যোগ কখনও পরিলক্ষিত হয়নি। ২০১১ সালে মালদ্বীপের আদ্দু সিটিতে ১৭তম সার্ক শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ওই সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভুটান, ভারত, নেপাল ও চীনকে নিয়ে ‘গঙ্গা নদী অববাহিকা সংস্থা’ ও ‘ব্রহ্মপুত্র নদ অববাহিকা সংস্থা’ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছিলেন। কিন্তু ভারত তাতে সাড়া দেয়নি। বাংলাদেশের প্রচণ্ড বিদ্যুৎ ঘাটতি কমাতে সিকিম থেকে বিদ্যুৎ আমদানির কথা বাংলাদেশ বললেও ভারত তাতে সম্মতি দেয়নি (ভারতীয় এলাকার উপর দিয়ে এই বিদ্যুৎ আনতে হবে)। ‘কুনমিং উদ্যোগে’র ব্যাপারেও ভারতের সম্মতি পাওয়া যায়নি। আন্তঃনদী সংযোগ প্রকল্প কিংবা টিপাইমুখ বাঁধ নিয়ে বাংলাদেশের মানুষের যে উদ্বেগ রয়েছে, তা দূর করতে কোন উদ্যোগ নেয়নি ভারত। বরং এ নিয়ে একটা ধূম্রজাল সৃষ্টি করা হয়েছে। সমুদ্রসীমা নিয়েও ভারতের সঙ্গে আমাদের বিবাদ আছে, যা এখন দ্য হেগের আন্তর্জাতিক আদালতে বিচারাধীন।
তাই প্রণব বাবুর ঢাকা সফরের পর যে প্রশ্নটি থেকেই গেল তা হচ্ছে, এ সফরের পর সম্পর্কের ক্ষেত্রে যেসব জটিলতা আছে, তা কি কাটবে? এখানেই এসে যায় মূল প্রশ্নটি। ভারতীয় ‘মাইন্ড সেট আপে’ যদি পরিবর্তন না আসে, তাহলে সম্পর্কের ক্ষেত্রে উন্নতি আসবে না। ভারতকে উদার মনোভাব নিয়ে আসতে হবে। আরও একটি কথা। প্রণব মুখার্জি এ সফরে তরুণ প্রজš§কে সমর্থন ও গণতন্ত্রকে আরও শক্তিশালীকরণের যে আহ্বান জানিয়েছেন, তা কোন কোন ভারতীয় গণমাধ্যমে শেখ হাসিনার সরকারের প্রতি এক ধরনের সমর্থন বলেই গণ্য করা হচ্ছে। এমনও কথা বলা হচ্ছে যে, ‘মৌলবাদ বিরোধিতার বার্তা দিলেন রাষ্ট্রপতি’ (সংবাদ প্রতিদিন, ৫ মার্চ)। ‘হাসিনার পাশে আছে ভারত, এ বার্তা প্রণবের’Ñ এমন মন্তব্যও করেছে কোন কোন গণমাধ্যম (বর্তমান, ৪ মার্চ)। কোন কোন গণমাধ্যমে জামায়াতে ইসলামীর আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে জামায়াতকে ইসলামিক ব্রাদারহুডের (মিসর) সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে এবং বলা হয়েছে, ‘জামায়াত ক্ষমতায় আসলে ভারত সমস্যায় পড়বে’ (সংবাদ প্রতিদিন)। বেগম খালেদা জিয়া নিরাপত্তার অভিযোগ তুলে প্রণব মুখার্জির সঙ্গে তার নির্ধারিত সাক্ষাৎকার বাতিল করেছেন। এ প্রসঙ্গে আনন্দবাজারের মন্তব্য ছিল অনেকটা এ রকম : ‘তার এই পদক্ষেপ ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক তো বটেই, অভ্যন্তরীণ রাজনীতির ক্ষেত্রেও সুদূরপ্রসারী বার্তা দিল।’
এ ধরনের মন্তব্যের পরও যেটা বলা যায় তা হচ্ছে, প্রণব বাবুর এ সফরের মধ্য দিয়ে ‘বড় কিছু’ হয়তো অর্জিত হবে না। কিন্তু বাংলাদেশ যে তার বন্ধুদের সম্মান দিতে জানে, তা প্রমাণিত হল। ভারতের নীতিনির্ধারকদের কাছে বাংলাদেশের সম্মান আরও বাড়ল। ‘বাংলাদেশে সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন চায় ভারত’Ñ সাবেক রাষ্ট্রপতি এইচএম এরশাদের সঙ্গে সাক্ষাতে প্রণব মুখার্জির এ ধরনের একটি মন্তব্যের খবর সংবাদপত্রে ছাপা হয়েছে। বাংলাদেশের চলমান রাজনীতির প্রেক্ষাপটে এ মন্তব্যটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভারত আগামী নির্বাচনে নিরপেক্ষ থাকবে এবং নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণের ব্যাপারে একটি দৃঢ় অবস্থান নেবেÑ এটাই বাংলাদেশের মানুষ চায়। প্রণব মুখার্জি নয়াদিল্লিতে ‘রাইসিনা হিলে’ রাষ্ট্রপতি ভবনে ফিরে গেছেন। বাংলাদেশের মানুষের যে ভালোবাসা তিনি নিয়ে গেলেন, তা যদি ভারতীয় নীতিনির্ধারকরা ইতিবাচক দৃষ্টিতে নেন, তাহলে তা দু’দেশের জন্যই মঙ্গলজনক হবে।
Daily JUGANTOR
06.03.2013
0 comments:
Post a Comment