তিন
বাঙালি কন্যার ব্রিটেন ‘জয়’ এখন খোদ লন্ডন এবং বাংলাদেশেও আলোচনার অন্যতম
বিষয়। তিন বাঙালি কন্যা- রুশনারা আলী, রেজোয়ানা সিদ্দিক টিউলিপ আর ড. রূপা
হক- ব্রিটেনে বসবাসকারী বাংলাদেশীদের দ্বিতীয় প্রজন্ম। যদিও কবে থেকে
বাঙালিরা ব্রিটেনে বাস করতে শুরু করে, তার কোনো সঠিক পরিসংখ্যান আমাদের
কাছে জানা না থাকলেও বিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকে বাঙালিরা বিশেষ করে সিলেটের
বাঙালিরা জাহাজ থেকে নেমে প্রথমে লন্ডনে পা রাখেন। তবে এ তিন বাঙালি তাদের
প্রতিনিধিত্ব করেন না। এরা দ্বিতীয় প্রজন্মের বাঙালি, যারা সবাই স্বাধীন
বাংলাদেশ-পরবর্তী সময় ব্রিটেনে বাস করতে শুরু করেন। শিক্ষাদীক্ষায় তারা
ব্রিটেনকেই তাদের দেশ হিসেবে মেনে নিয়েছেন। যদিও তারা বাঙালি সংস্কৃতি ধারণ
করেন। ব্রিটেনের পার্লামেন্টে তিন বাঙালি নারীর বিজয় প্রমাণ করল বাঙালিরা
আজ বিশ্ব আসরে প্রতিষ্ঠিত। আমি যখন রেজোয়ানা সিদ্দিকের বাংলায় দেয়া বক্তব্য
টিভিতে শুনছিলাম, তখন আমার বারবার মনে হয়েছিল সেদিন হয়তো খুব বেশি দূরে
নয়, যেদিন বাংলা ভাষাও জাতিসংঘের দাফতরিক ভাষা হবে এবং বাংলা ভাষা অন্যতম
একটি আন্তর্জাতিক ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি পাবে। যুক্তরাষ্ট্র একদিন
অভিবাসীদের নিয়েই গড়ে উঠেছিল। যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ব আসরে অর্থনৈতিক
ক্ষেত্রে কর্তৃত্ব করার পেছনে এ অভিবাসীদের অবদান ছিল সবচেয়ে বেশি। আজ
যুক্তরাজ্যও ধীরে ধীরে সেই পথে যাচ্ছে। শুধু তিন বাঙালি নারী বলি কেন,
ব্রিটিশ পার্লামেন্টে এবার মোট ২২ জন দক্ষিণ এশীয় বংশোদ্ভূত এমপি নির্বাচিত
হয়েছেন। তার মধ্যে ভারতের ১০, পাকিস্তানের আট ও শ্রীলঙ্কার একজন দক্ষিণ
এশীয় বংশোদ্ভূত রয়েছেন। ২০ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে কোনো দক্ষিণ এশীয় বংশোদ্ভূত
এমপি যদি যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী হন আমি তাতে অবাক হব না। আমি তিনজন
বাঙালি নারীর ব্যাপারেও যথেষ্ট আস্থাশীল। এরা তিনজনই যথেষ্ট শিক্ষিত।
রেজোয়ানা সিদ্দিক মাস্টার্স ডিগ্রিধারী, আর রূপা হক একটি কলেজের শিক্ষক ও
পিএইচডি ডিগ্রিধারী। এরা আগামী দিনগুলোয় লেবার পার্টির মূলধারার রাজনীতিতে
যে বড় অবদান রাখবেন, তা বলাই বাহুল্য। রুশনারা দ্বিতীয়বারের মতো এমপি হলেন।
তিনি শ্যাডো বা ছায়া মন্ত্রীও ছিলেন। এখন রেজোয়ানা সিদ্দিক কিংবা রূপা
হকের জুনিয়র ছায়া মন্ত্রী হওয়া সময়ের ব্যাপার মাত্র। আমাদের জন্য এটা আরও
বড় পাওয়া এ কারণে যে, এদের দুজনের (রুশনারা ও রেজোয়ানা) বাংলাদেশের
ব্যাপারে বড় আগ্রহ রয়েছে। নিশ্চয়ই আমরা আশা করতে পারি, বাংলাদেশ যুক্তরাজ্য
সম্পর্কের ক্ষেত্রে এরা বড় অবদান রাখতে পারবেন। বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক
সংস্কৃতি, মানবাধিকার নিশ্চিত করা, বিনিয়োগ বাড়ানো, ব্রিটেনে বাংলাদেশের
পণ্যের ব্যাপক সম্প্রসারণের ক্ষেত্রেও বড় অবদান রাখবেন- এ প্রত্যাশা এখন
অনেকেই করবেন।
এ নির্বাচনে যুক্তরাজ্যের ভোটাররা ডেভিড
ক্যামেরনের তথা কনজারভেটিভ পার্টির প্রতি আবারও আস্থা রাখলেন। ইউরোপের
সর্বত্র অর্থনীতিতে ব্যাপক মন্দাভাব দেখা দিলেও যুক্তরাজ্যের অর্থনীতিতে তা
তেমন একটা প্রভাব ফেলেনি। ডেভিড ক্যামেরনের সরকার বেশ কিছু মানুষের জন্য
চাকরির ব্যবস্থা করেছিল। এটা ছিল তার জন্য প্লাস পয়েন্ট। জিডিপি প্রবৃদ্ধির
ধারাও তিনি ধরে রাখতে পেরেছিলেন। এতেও মানুষ তার ওপর আস্থা রেখেছে। তিনি
যুক্তরাজ্যের মানুষের জন্য একটা পরিবর্তন আনতে চান- ভোটাররা তা বিশ্বাস
করেছে। ফলে তিনি আরও ৫ বছরের জন্য ১০নং ডাউনিং স্ট্রিটে রয়ে গেলেন। কিন্তু
সমস্যা যে নেই, তা নয়। আগামী দিনগুলো তার জন্য সুখের নাও হতে পারে। ২০১৭
সালে ইইউ প্রশ্নে গণভোটের কথা বলছেন তিনি। এখন তিনি যদি সত্যি সত্যিই
গণভোটের আয়োজন করেন এবং গণভোটে যদি মানুষ ইইউ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পক্ষে মত
দেয়, তখন কী হবে? ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের বাইরে থেকে যুক্তরাজ্য একাকী কি
ইউরোপে থাকতে পারবে, কিংবা একাকী থেকে তার অর্থনৈতিক শক্তি কতটুকু
শক্তিশালী হবে, সেটা একটা প্রশ্ন বটে। দ্বিতীয়ত, স্বাস্থ্যসেবা খাতে
কাটছাঁটের প্রস্তাব করেছেন ক্যামেরন। ভোটাররা তা সমর্থন করেছে। লেবাররা এর
বিরোধিতা করেও জনসমর্থন পায়নি। এখন সত্যি সত্যিই এ খাতে যদি বাজেট বরাদ্দ
কমানো হয়, যদি এ খাতে আরও বেসরকারিকরণ হয়, তাহলে তা নিম্ন আয়ের মানুষের বড়
ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াবে। এরা স্বাস্থ্যসেবা পাবে না। আর্থিক সংস্থান না
থাকায় চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হবে তারা। একটা বড় ধরনের শঙ্কা রয়ে গেছে দক্ষিণ
এশীয় তথা ক্যারিবীয় অঞ্চলের অভিবাসীদের নিয়ে। এদের অনেকেরই ভালো চাকরি নেই।
আর্থিক সঙ্গতিও ভালো না। এরা বিপদে পড়তে পারেন আগামী দিনে। পূর্ব ইউরোপীয়
দেশগুলো থেকে আসা শ্বেতাঙ্গ জনগোষ্ঠী নিয়েও সমস্যা আছে। ভাষাগত সমস্যার
পাশাপাশি এরা নানা ধরনের অসামাজিক কর্মকান্ডে লিপ্ত। আইন না মানার প্রবণতা
এদের মধ্যে বেশি।
যুক্তরাজ্যের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি কিংবা তার
পররাষ্ট্রনীতিতে পরিবর্তন আসার সম্ভাবনা ক্ষীণ। এ নির্বাচন যুক্তরাজ্যের
৭৫০ বছরের গণতন্ত্রের ইতিহাসের ধারাবাহিকতাই মাত্র। অনেক পর্যবেক্ষক ধারণা
করেছিলেন একটা পরিবর্তন আসবে। কিন্তু সেই পরিবর্তন এলো না। এখন টিউলিপ আর
রুশনারারা ব্রিটেনের চলমান রাজনীতিতে কতটুকু অবদান রাখতে পারবেন, আমাদের
কাছে তা যতটুকু না বিবেচ্য, তার চেয়ে বেশি বিবেচ্য বাংলাদেশ-যুক্তরাজ্য
সম্পর্ক উন্নয়নে এরা কতটুকু অবদান রাখবেন। তবে বেশ কিছু বিষয় রয়েছে, সে
দিকে দৃষ্টি দেয়া প্রয়োজন। এক. যে তিনটি এলাকা থেকে এরা নির্বাচিত হয়েছেন,
সেখানে বাঙালিরা সংখ্যাগরিষ্ঠ। কিন্তু সেখানে ব্যাপকসংখ্যক বাংলাদেশী
বেকার। নারীরা সেখানে নিগৃহীত। উচ্চশিক্ষায় তাদের আগ্রহ কম। এ বিষয়গুলোর
দিকে তাদের নজর দিতে হবে। টিউলিপ সিদ্দিক নিজে দীর্ঘদিন এ বাঙালি
কমিউনিটিতে কাজ করেছেন। তিনি ভালো করে জানেন সমস্যাটি। এখন তিনি তার এলাকার
উন্নয়নে যদি কাজ করেন, আমার ধারণা তিনি এ আসনটি স্থায়ীভাবে ধরে রাখতে
পারবেন। তিনিও পারবেন একটি মডেল হতে। আমার জানা মতে, আরও বেশ কিছু বাঙালি
রয়েছেন, যারা শিক্ষিত এবং ব্রিটেনের সমাজ উন্নয়নে তারা অবদান রাখছেন। তারাও
ধীরে ধীরে যদি রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় নিজেদের শরিক করেন, আমার ধারণা আগামীতে
আমরা আরও বাঙালি এমপি পাব ব্রিটিশ পার্লামেন্টে। ১০ থেকে ১২ লাখ বাঙালি
ব্রিটেনে বাস করেন। এদের জন্য তিনজন এমপি যথেষ্ট নয়। এ সংখ্যা আরও বাড়বে।
দুই. বাঙালিদের বিরুদ্ধে একটা বড় অভিযোগ এরা সামাজিক ভাতা গ্রহণ করেন, আবার
অবৈধ চাকরিও করেন। এটি একটি স্পর্শকাতর বিষয়। এটি গুরুতর আইন লঙ্ঘনের
শামিল। বিষয়টি খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। তবে সব বাঙালি এটি করেন না। এটি
কমিউনিটির বদনাম। তিন. একটি অভিযোগ উঠেছে যে, একটি ‘চক্র’ লন্ডনে টিউলিপ
সিদ্দিকের নির্বাচনী এলাকায় তার বিরুদ্ধে মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর প্রচারপত্র
বিলি করে। এর সঙ্গে বাংলাদেশের দুইটি দলের স্থানীয় নেতাকর্মীর যোগসাজশ
রয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে। এটি নিন্দনীয় এবং শাস্তিযোগ্য একটি অপরাধ।
বাংলাদেশে আমরা হরহামেশা এ ধরনের কর্মকান্ড দেখতে পাই। তাই বলে ব্রিটেনের
মতো সমাজেও এ ধরনের কর্মকান্ড হবে? এতে করে প্রবাসে বাঙালি হিসেবে আমাদের
মর্যাদা বাড়ে না, বরং কমে। যেটা দুঃখজনক, তা হচ্ছে বাঙালিরা ব্রিটেনের
নাগরিকত্ব গ্রহণ করার পরও এদের অনেকে স্থানীয় রাজনৈতিক সংগঠনের সঙ্গে জড়িত
না হয়ে এদের অনেকে বাংলাদেশী রাজনৈতিক দলগুলোর কর্মকান্ডে এবং সংগঠনে
নিজেদের জড়িত করেন। তারা থাকেন লন্ডনে। অথচ রাজনীতি করেন বাংলাদেশের। ফলে
স্থানীয় কমিউনিটি লিডারশিপ তৈরি হচ্ছে না। চার. বাংলাদেশী রেস্টুরেন্ট
ব্যবসায়ীদের একটা বড় অভিযোগ, এরা দক্ষ শেফ ও রেস্টুরেন্ট কর্মী পাচ্ছেন না।
স্থানীয় শ্বেতাঙ্গ কমিউনিটি এ পেশায় আসতে আগ্রহী নয়। ফলে বাংলাদেশের ওপর
তাদের নির্ভর করতে হয়। কিন্তু ভিসা সমস্যার কারণে তারা বাংলাদেশ থেকে কর্মী
আনতে পারছেন না। কর্মী সমস্যার কারণে ঝুঁকির মুখে আছে এ রেস্টুরেন্ট
ব্যবসা। নির্বাচনের আগেই ডেভিড ক্যামেরন তার নির্বাচনী প্রচারণায়
অভিবাসীদের সংখ্যা বছরে ৬০ হাজারে নামিয়ে আনার কথা বলেছিলেন। তার ওপর চাপ
বাড়ছে। তিনি যদি এটি কার্যকর করেন, তাহলে ক্ষতিগ্রস্ত হবে বাংলাদেশী
অভিবাসীরা। এ তিন বাঙালি নারীকে এখন পার্লামেন্টে এ ব্যাপারে সোচ্চার হতে
হবে। পাঁচ. বাংলাদেশী পণ্যের আরও বাজার সম্প্রসারণের একটা সম্ভাবনা রয়েছে
যুক্তরাজ্যে। এ বাজার সম্প্রসারণে এরা কাজ করতে পারেন। দুই দেশের ব্যবসায়ী
সম্প্রদায় তথা নেতাদের মধ্যে যোগাযোগ রয়েছে। এ যোগাযোগ আরও শক্তিশালী করতে
পারেন এরা। রুশনারা ও টিউলিপ সিদ্দিক মোটামুটি পরিচিত বাংলাদেশে। তবে
টিউলিপকে মানুষ চেনে বঙ্গবন্ধুর নাতনি ও প্রধানমন্ত্রীর ভাগ্নি হিসেবে।
আওয়ামী লীগের বলয়ে তার পরিচিতি রয়েছে। এখন সব দলের সঙ্গে তার ‘সম্পর্ক’
তৈরি করতে হবে, যাতে করে তার গ্রহণযোগ্যতা বাড়ে। কেননা লেবার পার্টি
বাংলাদেশে কোনো একটি দলের সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষা করে না। যেটা আমরা দেখেছি,
রুশনারার ঢাকা সফরের সময়। তিনি যখনই ঢাকায় এসেছেন, সরকার ও বিরোধী দল সবার
সঙ্গেই কথা বলেছেন। পাবনার মেয়ে রূপা হক। বাংলাদেশে তেমন পরিচিতি তার নেই।
বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে শিক্ষকদের সঙ্গেও তার সম্পর্ক নেই। তিনি বাংলাদেশে
একটা ‘বন্ধুগোষ্ঠী’ তৈরি করতে পারেন। এতে করে তিনি তার নির্বাচনী এলাকায়
তেমন উন্নতি করতে পারবেন না বটে; কিন্তু বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের
প্রত্যাশা তিনি বাড়াতে পারবেন।
ছয়. এ তিন লেবার পার্টির এমপি
নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে প্রমাণ করেছেন অন্য রাজনৈতিক দলে বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত
নারীরা যদি সক্রিয় হন, তাহলে তারাও তাদের অবস্থান শক্তিশালী করতে পারবেন।
বিশেষ করে কনজারভেটিভ পার্টির ক্ষেত্রে একথা প্রযোজ্য। মাত্র একজন প্রার্থী
কনজারভেটিভ পার্টির পক্ষ থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। লিন ডেমের পক্ষ
থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন তিনজন। সংখ্যাটা খুব বেশি নয়। তাই মূল
ধারার রাজনৈতিক দলগুলোর কর্মকান্ডে আরও বেশি করে বাঙালিদের অংশগ্রহণ থাকা
উচিত।
এ তিন বাঙালি নারীই যে প্রথমবারের মতো ব্রিটেনের
পার্লামেন্টে নির্বাচিত হলেন, তা নয়। ২০১০ সালে রুশনারা প্রথম পথ
দেখিয়েছিলেন। তবে আশার কথা একটাই- এদের সবারই বয়স ৪০-এর ঘরে। টিউলিপের আরও
কম, মাত্র ৩৩। এর অর্থ এরা আরও অনেক দিন রাজনীতিতে থাকবেন। বঙ্গবন্ধুর
রক্তের প্রতিনিধিত্ব করছেন এমন দুজন এখন দুই পার্লামেন্টের সদস্য- একজন
বাংলাদেশের, একজন ব্রিটেনের। এটা একটা বিরল ঘটনা। কোনো একদিন এ বাঙালি
কন্যারা যদি ব্রিটেনের শীর্ষ পদে অধিষ্ঠিত হন, আমি অবাক হবো না। এদের মেধা
আছে। যোগ্যতা আছে এবং বয়স কম। আরও অনেক দিন ধরে রাজনীতিতে থাকার ইচ্ছা ও
আগ্রহ তাদের আছে। এ তিন বাঙালি কন্যা পথ দেখিয়ে গেলেন। এ পথ ধরে আগামীতে
আরও বাঙালি কন্যা আসবেন, এটা শুধু প্রত্যাশাই নয় বরং বাস্তব।
Daily Alokito Bangladesh
17,05.15
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
0 comments:
Post a Comment