ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ১৪ মে তিন দিনের সফরে চীন গেছেন। যে কোনো বিবেচনায় এই সফরকে হালকাভাবে দেখার সুযোগ নেই। প্রথমত, অতি সাম্প্রতিককালে ভারত মহাসাগরের কর্তৃত্ব নিয়ে এই দুই দেশ এক ধরনের ‘প্রতিদ্বন্দ্বিতায়’ লিপ্ত হয়েছে। ভারতের বেশ কিছু কর্মকাণ্ড চীনে এক ধরনের অবিশ্বাসের জš§ হয়েছে। এই সফর সেই অবিশ্বাসকে কতটুকু ভাঙতে পারবে, সেটা একটা বড় প্রশ্ন। দ্বিতীয়ত, ভারতের নীতি দক্ষিণ এশিয়ায় এক ধরনের ‘ভারতীয় মডেলের মনরো ডকট্রিন’-এর জš§ দিয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ায় ভারত অন্য কারো ‘কর্তৃত্ব’ সহ্য করবে না। শ্রীলঙ্কায় চীনের খুব কাছের বন্ধু প্রেসিডেন্ট রাজাপাকসেকে নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত, ভুটানে চীনা দূতাবাস খোলার ব্যাপারে আপত্তি এবং নেপালে ক্রমবর্ধমান চীনা প্রভাবে ভারতের অসন্তুষ্টি প্রমাণ করে ভারত চীনকে পুরোপুরি আস্থায় নিতে পারছে না। তৃতীয়ত, পুরো দক্ষিণ এশিয়ায় চীনা পণ্যের বিশাল এক ‘বাজার’ সৃষ্টি হয়েছে। এর ফলে ভারতীয় পণ্য জায়গা করে নিতে পারছে না। ‘বাজার’ ধরে রাখার ব্যাপারে চীন ও ভারতের মধ্যকার দ্বন্দ্ব এখন আগের চেয়েও স্পষ্ট। তবে এটাও সত্য, চীনের ব্যাপারে ব্যক্তিগতভাবে মোদির একটি আগ্রহ রয়েছে। যখন তিনি গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন, তখন একাধিকবার তিনি বেইজিং সফর করেছেন এবং চীনা মডেলে আগ্রহান্বিত হয়েছিলেন। গুজরাটে বড় চীনা বিনিয়োগ রয়েছে। উপরন্তু গেল বছরের সেপ্টেম্বরে চীনা প্রেসিডেন্ট তার ভারত সফরে নয়াদিল্লি না নেমে সরাসরি আহমেদাবাদ বিমানবন্দরে নেমেছিলেন এবং সব প্রটোকল ভেঙে নরেন্দ্র মোদি তাকে বিমানবন্দরে সংবর্ধনা জানিয়েছিলেন। তাই চীন-ভারত সম্পর্ক নিয়ে প্রশ্ন থাকবেই। ব্রিকস ব্যাংক গঠনের উদ্যোক্তা এই দুটি দেশ। দু’দেশের মধ্যে বাণিজ্যের পরিমাণ প্রায় সাত হাজার কোটি মার্কিন ডলার, যা কিনা চলতি বছর ১০ হাজার কোটি ডলারে নিয়ে যেতে চান উভয় দেশের নেতারা। যদিও এটা সত্য, বাণিজ্য ঘাটতি ২০০১-০২ সালে যেখানে ছিল মাত্র ১০০ কোটি ডলার, এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে চার হাজার কোটি মার্কিন ডলার
এখন এই বাণিজ্য ব্যবধান কীভাবে কমিয়ে আনা যায়, চীনের উদ্বেগকে কীভাবে প্রশমিত করা যায় সেই চেষ্টাই নরেন্দ্র মোদি করবেন, তার বেইজিং সফরের সময়। তবে কতটুকু তিনি সফল হবেন, এ প্রশ্ন থাকবেই। কেননা ভারতের অনেক কর্মকাণ্ড নিয়ে প্রকাশ্যেই চীনা নেতারা তাদের অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন। অনেকেই স্মরণ করতে পারেন ভারত মহাসাগরভুক্ত দেশগুলোকে নিয়ে গঠিত ‘ইন্ডিয়ান ওসেন রীম’ বা আইওআর-এর একটি শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়ে গেল ভারতের উড়িষ্যা রাজ্যের রাজধানী ভুবনেশ্বরে গত ২০-২২ মার্চ। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এই সম্মেলনে যোগ দিয়েছিলেন। ভারত মহাসাগরভুক্ত বাংলাদেশ, ভারত, মিয়ানমার, মালদ্বীপ, শ্রীলঙ্কা, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, ইন্দোনেশিয়া আইওআরের সদস্য। এই সম্মেলনটি অনুষ্ঠিত হয়ে গেল এমন একটি সময়, যখন ভারতের নয়া প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ভারতের পররাষ্ট্রনীতিকে নতুন করে সাজাচ্ছেন। তার পররাষ্ট্রনীতির অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের একক কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করা এবং সেই সঙ্গে এশিয়ায় ভারতকে অন্যতম শক্তিশালী রাষ্ট্রে পরিণত করা। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ ও পাকিস্তান বাদে তিনি দক্ষিণ এশিয়ার প্রায় প্রতিটি দেশ সফর করেছেন। তার পররাষ্ট্র সচিবও ‘সার্ক যাত্রার’ অংশ হিসেবে সার্কভুক্ত প্রতিটি দেশ সফর করেছেন।
ভুবনেশ্বর শীর্ষ সম্মেলনের আগে নরেন্দ্র মোদি মরিশাস, সিসিলি ও শ্রীলঙ্কা সফর করেছেন। মরিশাস সফরের সময় মরিশাসের সঙ্গে সেখানে একটি ভারতীয় নৌঘাঁটি স্থাপনের ব্যাপারে চুক্তি হয়েছে। এর অর্থ পরিষ্কারÑভারত ভারতীয় মহাসাগরে তার আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করতে চায়। এ ব্যাপারে মালদ্বীপ ও শ্রীলঙ্কার সঙ্গে একটি মৈত্রী জোট গড়ার উদ্যোগ নিয়েছিল ভারত এবং ওই জোটে মরিশাস ও সিসিলিকে পর্যবেক্ষক হিসেবে থাকার আমন্ত্রণও জানানো হয়েছিল। অস্ট্রেলিয়ার পশ্চিম উপকূল থেকে শ্রীলঙ্কা, দক্ষিণ মধ্যাঞ্চলের সিসিলি, মরিশাস কিংবা সুদূরের ওমান-মোজাম্বিকও এই প্রক্রিয়ায় একীভূত হয়ে উঠেছে। অর্থনৈতিকভাবে এ অঞ্চলের যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে। ভারত তাই এ অঞ্চলের অর্থনৈতিক শক্তিকে ব্যবহার করে অন্যতম শক্তি হিসেবে বিশ্বরাজনীতিতে আবির্ভূত হতে চায়। এ ক্ষেত্রে তার অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী হচ্ছে চীন। চীন যে তার ‘মেরিটাইম সিল্করুট’-এর কথা বলছে, সেই ‘সিল্করুট’-এর সঙ্গে ভারতের এই অর্থনৈতিক স্বার্থ সাংঘর্ষিক। চীন ও ভারতের স্বার্থ মূলত এক ও অভিন্নÑভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে নিজ নিজ কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করা। ফলে চীনের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক উন্নয়নের যে সম্ভাবনার সৃষ্টি হয়েছিল, তা এখন রীতিমতো প্রশ্নের মুখে। এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন, গেল সেপ্টেম্বরে চীনা প্রেসিডেন্টের ভারত সফর এবং আহমেদাবাদ বিমানবন্দরে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি কর্তৃক তাকে অভ্যর্থনা জানানো আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ছাত্রদের সেই পঞ্চাশের দশকের দু’দেশের মাঝে সম্পর্কের কথা মনে করিয়ে দিলেও অরুণাচল প্রদেশ নিয়ে অতি সম্প্রতি দু’দেশের মাঝে আস্থার সম্পর্কে কিছুটা ঘাটতি দেখা দিয়েছে। গত ২০ ফেব্রুয়ারি (২০১৫) প্রধানমন্ত্রী মোদি অরুণাচল সফর করেন। সেখানে তিনি রেলপথ ও বিদ্যুৎকেন্দ্র উদ্বোধন করেন। এর প্রতিবাদ জানিয়েছে চীন। টাইমস অব ইন্ডিয়ার খবরে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী মোদির অরুণাচল সফরকে সমালোচনা করে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একটি বিবৃতি প্রকাশ করে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে দেয়া ওই বিবৃতিতে বলা হয়, চীনা সরকার কখনোই ‘অরুণাচল প্রদেশ’কে স্বীকৃতি দেয়নি। বেইজিংয়ের মতে, চীনের অন্তর্গত তিব্বতের মনিয়ুল, লোয়ুল ও নিম্মসায়ুল এলাকা নিয়ে ‘তথাকথিত অরুণাচল’ গড়েছে নয়াদিল্লি। এই এলাকাগুলো এখনো ভারতের ‘বেআইনি দখলদারির কবলে রয়েছে।’ চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এই অভিমত সঙ্গত কারণেই দু’দেশের সম্পর্কের ওপর প্রভাব ফেলবে।
অনেকেই স্মরণ করতে পারেন কিছুদিন আগে জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফুমিও কিসিদা ভারতে এসেছিলেন। সেখানে তিনি অরুণাচল প্রদেশ যে ভারতের, সে ব্যাপারে বক্তব্য দিয়েছিলেন। কিসিদার ওই বক্তব্যে চীন ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিল। চীন মনে করে ভারত জাপানকে চীনের বিরুদ্ধে ব্যবহার করছে। আগামী জুন মাসে প্রধানমন্ত্রী মোদি বাংলাদেশ সফরেও আসছেন। সাম্প্রতিক সময়ে দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের প্রভাব ও কর্তৃত্ব বাড়ছে। মোদি তার পররাষ্ট্রনীতিতে দক্ষিণ এশিয়াকে অগ্রাধিকার তালিকায় রেখেছেন। দায়িত্ব নেয়ার পর তিনি প্রথম সফরে ভুটান গিয়েছিলেন। ওই সময় সেখানে চীনবিরোধী বক্তব্যও তিনি দিয়েছিলেন। চীন এখন অবধি ভুটানে তাদের দূতাবাস খোলার অনুমতি পায়নি শুধু ভারতের আপত্তির কারণে। নয়া পররাষ্ট্র সচিব জয়শংকর তার দক্ষিণ এশিয়া সফরের অংশ হিসেবে ভুটান হয়ে ২ মার্চ ঢাকা সফর করেন। এরপর যান পাকিস্তান ও আফগানিস্তানে। ইতোমধ্যে ভারত-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক এ অঞ্চলে নতুন এক মেরুকরণের জš§ দিয়েছে। ওবামার ভারত (২৫ জানুয়ারি ২০১৫) সফর এই নয়া মেরুকরণের জš§ দিয়েছে। ভারতের নয়া পররাষ্ট্রনীতিতে এই মেরুকরণের কিছুটা হলেও প্রভাব ফেলবে।
আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ছাত্ররা লক্ষ্য করেছেন যে, একুশ শতকে ভারত মহাসাগর প্রত্যক্ষ করবে ত্রিদেশীয় একটি প্রতিযোগিতা। যুক্তরাষ্ট্র তার এশীয়-প্যাসিফিক ফ্লিট থেকে ৬টি জাহাজ ভারত মহাসাগরে মোতায়েন করবে। এটি সম্পন্ন হবে ২০১৯ সালের মধ্যে। ভারত তার প্রাচীন ‘কটন রুট’কে আবার নতুন করে সাজাচ্ছে। এই ‘কটন রুট’ ধরে ভারতীয় পণ্য, বিশেষ করে তার সুতি কাপড় পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে যেত। এমনকি এই ‘কটন রুট’ ধরে ভারতীয় ব্রাহ্মণরা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায়, বিশেষ করে ইন্দোনেশিয়া (বালি) ও কম্বোডিয়ায় হিন্দু ধর্মের সম্প্রসারণ ঘটিয়েছিলেন। এ অঞ্চলে বৌদ্ধ ধর্মের বিকশিত ঘটেছিল এই ‘কটন রুট’ ধরে। এর আগে চীনা নেতা শি জিন পিং একটি ‘মেরিটাইম সিল্ক রুট’-এর কথা বলেছিলেন। এই ‘মেরিটাইম সিল্ক রুট’কে সামনে রেখে চীন বেশ কিছুদিন আগে তার বিখ্যাত ‘মুক্তার মালা’ নীতি গ্রহণ করেছিল। চীন যে ‘মুক্তার মালা’ নীতি গ্রহণ করেছে তার মাধ্যমে এ অঞ্চলের সামুদ্রিক বন্দরগুলোকে একত্রিত করতে চায়। এতে আরব সাগর থেকে শুরু করে ভারত মহাসাগরে চীনা নৌবাহিনীর কর্তৃত্ব বেড়েছে। চীনের এই ‘মুক্তার মালা’ নীতির কারণে দক্ষিণ চীন সাগর থেকে মাল্লাকা প্রণালি, ইন্দোনেশিয়ার বালি হয়ে ভারত মহাসাগর অতিক্রম করে এরাবিয়ান গালফ পর্যন্ত যে সমুদ্রপথ, এই সমুদ্রপথ থাকছে চীনের নিয়ন্ত্রণে। কেননা এ পথ তার জ্বালানি সরবরাহের পথ। গাওদার (বেলুচিস্তান, পাকিস্তান) ও চীনা নৌবাহিনীর একটি ছোট ইউনিটও রয়েছে, যেখান থেকে চীন ভারত মহাসাগরের সব ধরনের নৌ-মুভমেন্ট লক্ষ্য করবে।
গাওদারের ঠিক উল্টো দিকে ভারত মহাসাগরের এক পাশে রয়েছে শ্রীলঙ্কার হামবানতোতা গভীর সামুদ্রিক বন্দর। এই সামুদ্রিক বন্দরটি চীন নির্মাণ করে দিয়েছে। এখানে চীনা নৌবাহিনীর সাবমেরিনের উপস্থিতি ভারতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দাদের চিন্তায় ফেলে দিয়েছিল। ভারতের স্ট্র্যাটেজিস্টরা ‘এ ধরনের কর্মকাণ্ড’ তাদের নিরাপত্তার জন্য হুমকি বলে মনে করেছিল। এ জন্য রাজাপাকসেকে ক্ষমতা পর্যন্ত হারাতে হয়েছিল। রাজাপাকসে অতিমাত্রায় চীনানির্ভর ছিলেন। এই চীনানির্ভরতা ভারতীয় নীতি-নির্ধারকরা খুব সহজভাবে নিতে পারেননি। সেখানে সরকার পরিবর্তন হয়েছে। নয়া প্রেসিডেন্ট গিরিসেনা দায়িত্ব নিয়েছেন এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদি শ্রীলঙ্কাও ঘুরে এসেছেন অতি সম্প্রতি। স্পষ্টতই মোদি সরকার ভারত মহাসাগরভুক্ত অঞ্চলগুলো নিয়ে যে নীতি প্রণয়ন করেছে তা চীনা স্বার্থকে আঘাত করবে। সুতরাং মোদির বেইজিং সফরে এই আস্থার সম্পর্ক কতটুকু ফিরে আসবে তা এক প্রশ্ন বটে। তবে চীনের বৈদেশিক নীতি সম্পর্কে যারা ধারণা রাখেন, তারা জানেন চীনের বৈদেশিক নীতি এখন বিনিয়োগ ও ব্যবসানির্ভর। চীনারা কোনো দেশে তাদের রাজনৈতিক প্রভাবের চেয়ে ব্যবসায়িক সম্পর্ক বাড়াতে আগ্রহী। চীনারা ব্যবসা বোঝে। ব্যবসা চায়। মোদি সরকার একটি ‘ব্যবসা ও বিনিয়োগনির্ভর’ নীতি গ্রহণ করেছে। ভারতে যথেষ্ট চীনা বিনিয়োগ রয়েছে। ফলে হঠাৎ করেই সম্পর্ক খারাপ হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। দুই দেশই চাইবে তার নিজ নিজ স্বার্থ আদায় করে নিতে। আগামী শতাব্দী হবে চীন ও ভারতের। চীন বিশ্বের দ্বিতীয় অর্থনীতি আর ভারত তৃতীয় কিংবা চতুর্থ অর্থনীতি। ফলে এই দুটি বড় দেশের মধ্যে সম্পর্ক যদি ভালো থাকে, তাহলে তা বিশ্বের স্থিতিশীলতার জন্য মঙ্গল। বর্তমান অস্থিতিশীল বিশ্বে শান্তি ক্রমেই অধরা হয়ে যাচ্ছে অথচ শান্তির জন্য মানুষের আর্তনাদ রয়েছে সর্বত্র।
Daily Manobkontho
15.05.15
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
0 comments:
Post a Comment