রাজনীতি, আন্তর্জাতিক রাজনীতি এবং সমসাময়িক ঘটনাবলীর বিশ্লেষণ সংক্রান্ত অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর রেহমানের একটি ওয়েবসাইট। লেখকের অনুমতি বাদে এই সাইট থেকে কোনো লেখা অন্য কোথাও আপলোড, পাবলিশ কিংবা ছাপাবেন না। প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন লেখকের সাথে

>কার হার, কার জিত: এ প্রশ্নের উত্তর অন্তহীন নয়

তিনটি সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে কার হার হলো? কারইবা জিত হলো? আপাত দৃষ্টিতে ভোটের যে ফলাফল ঘোষিত হয়েছে, তাতে দেখা যায় মেয়র পদসহ কাউন্সিলর পদে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীদের বড় ‘বিজয়’ হয়েছে। অন্যদিকে নির্বাচনের মাঝপথে নির্বাচন বয়কট করায় প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন এই নির্বাচনে বিএনপির ‘পরাজয়’ হয়েছে! ইতোমধ্যে রাজনীতিতে হিসাব-নিকাশের পালা শুরু হয়ে গেছে। আর বিএনপির স্থায়ী পরিষদের সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার তো বলেই ফেলেছেন, ‘আমরা আপাতত ২০ বছরের জন্য আওয়ামী লীগকে দেশ লিজ দিয়ে দেব!’ তিনটি সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে যা হয়েছে, এর সাক্ষী প্রিন্ট এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়া। ২৯ এপ্রিলের সংবাদপত্র আমাদের সাক্ষী দেয় নির্বাচনটি সুষ্ঠু হয়নি। ‘ভোট জালিয়াতি’, ‘সিল মারার সংস্কৃতি’র যে চিত্র আমরা দেখেছি গত ২৮ এপ্রিলের নির্বাচনে, তা প্রতিধ্বনিত হয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল আর ইলেকশন ওয়ার্কিং গ্রুপের পর্যবেক্ষণে। এমনকি মার্কিন দূতাবাসও তাদের পর্যবেক্ষণে বলেছে, ‘ভোট কেন্দ্রগুলো পরিদর্শনের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা এবং বিশ্বাসযোগ্য রিপোর্টের মাধ্যমে আমরা আজ ভোট কারচুপি, ভয়-ভীতি প্রদর্শন এবং সহিংসতার কথা জেনে অসন্তুষ্ট হয়েছি।’ আর হংকংভিত্তিক এশিয়ান হিউম্যান রাইটস কমিশন বলছে, ‘সিটি নির্বাচন ছিল জালিয়াতিপূর্ণ।’ তাহলে হারল কে? বিএনপি? বিএনপি কি জেতেনি এসব মন্তব্যের কারণে? বিএনপি জানত সিটি নির্বাচনে কারচুপি হবে এবং এ কারণে বারবার তারা সেনা মোতায়েনের দাবি জানিয়ে আসছিল। এখন তাদের প্রতিনিধিরা নগর পিতা হতে পারলেন না বটে, কিন্তু মিডিয়ার কল্যাণে তাদের যে পর্যবেক্ষণ ছিল (দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন সুষ্ঠু হয় না), সেই পর্যবেক্ষণের ‘জয়’ হয়েছে। তাদের অবস্থান শক্তিশালী হয়েছে। বিএনপির নির্বাচনে যাওয়ার সিদ্ধান্তটিও সঠিক ছিল। তারা দ্বিতীয়বার প্রমাণ করার সুযোগ পেল যে, দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন করলে সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করা যায় না। আওয়ামী লীগ ‘বিজয়ী’ হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘গণতন্ত্রের বিজয় হয়েছে।’ এখন ভবিষ্যৎই বলবে এই ‘বিজয়’ আগামীতে বাংলাদেশকে কোথায় নিয়ে যায়। তবে এটা বলতেই হবে, ‘সমঝোতার’ যে সম্ভাবনা ছিল তা এখন পিছিয়ে গেল অনির্দিষ্টকালের জন্য। সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন করার ব্যর্থতার দায়ভার নির্বাচন কমিশনকেই বইতে হবে। আমার স্মরণ আছে বিবিসির বাংলার এক সংলাপে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী মন্তব্য করেছিলেন যে, ‘নির্বাচন কমিশনের দায়-দায়িত্ব সরকার নেবে না।’ এমনকি বেগম জিয়ার গাড়িবহরের ওপর যখন হামলা হয়, তখন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন, ‘খালেদা জিয়ার ওপর হামলার দায়-দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের।’ নির্বাচন সম্পন্ন হলো। সংবাদ সম্মেলনে সিইসি হাসলেন। আর ‘বিজয়ী’ ঢাকা উত্তরের নয়া নগর পিতা আনিসুল হক বললেন, ‘খেলতে গেলে ফাউল হয়’! এই ‘ফাউল’ তার ব্যক্তিগত ইমেজকে কতটুকু ক্ষতিগ্রস্ত করল, তা হয়তো ভবিষ্যতে বলা যাবে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে আমরা নির্বাচন সংস্কৃতিতে নতুন একটি মাত্রা পেলাম। যেভাবে প্রকাশ্যে যুবলীগের দুই নেতা সিল মারলেন (যুগান্তর), যেভাবে জাল ভোট দিলেন একজন কর্মকর্তা (যায়যায়দিন) কিংবা যত্রতত্র পড়ে থাকল সিল মারা ব্যালট (সকালের খবর), তাতে করে আর যাই হোক এটাকে কোনো অবস্থাতেই সুষ্ঠু নির্বাচন বলা যাবে না। আওয়ামী লীগকে এই দায়ভার বহন করতেই হবে। আমাদের একটা ধারণা ছিল বিএনপির জন্য যে ‘এক্সিট রুট’ তৈরি হয়েছিল এবং তা কাজে লাগিয়ে বিএনপিকে মূল ধারায় ফিরিয়ে নিয়ে আসা হবে ও বিএনপির নির্বাচনে যাওয়ার সিদ্ধান্তটি ছিল সঠিক এবং তা প্রশংসিতও হয়েছিল। কিন্তু এখন আবার উল্টো স্রোত বইল। নির্বাচন কমিশনের ব্যর্থতার সুযোগ নিয়ে সরকারি দলের সুবিধাভোগীরা ‘সিল মারার সংস্কৃতি’ আবার ফিরিয়ে নিয়ে আসলেন। এর মধ্য দিয়েই বিএনপির অভিযোগ আবারো সত্যতায় পরিণত হলো। বিএনপি বারবার বলে আসছিল এই নির্বাচন কমিশনের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। সেটাই কি এখন প্রমাণিত হলো না? নির্বাচন কমিশন পরোক্ষভাবে বিএনপির অভিযোগই সত্য প্রমাণ করল। বারবার ব্যর্থতার কারণে গ্রহণযোগ্যতার তলানিতে গিয়ে পৌঁছেছে এই নির্বাচন কমিশন। আইন ও সংবিধান বলে নির্বাচন কমিশনকে যতটুকু ক্ষমতা দেয়া হয়েছিল, ওই ক্ষমতা প্রয়োগ করার ব্যর্থতা (বাকি অনীহা!) আবারো প্রমাণ করল সিইসি ও কমিশনের সদস্যরা নিজেদের এক একজন ‘সরকারি কর্মচারী’ হিসেবেই ভাবতে ভালোবাসেন। সংবিধান তাদের যে ‘দায়িত্ব’ নির্ধারণ করেছে [১১৮(৪)] তা পালনে ও ক্ষমতা প্রয়োগে তারা ব্যর্থ হলেন। তাদের এই ব্যর্থতার কারণে ‘গণতন্ত্রের হার হলো।’ ‘শঙ্কা সত্যি হলো।’ কিন্তু রকিবউদ্দীন কমিশন একটি বড় ‘ক্ষত’ সৃষ্টি করে গেল আমাদের গণতান্ত্রিক সংস্কৃতিতে। এই ‘ক্ষত’ সহজে সারার নয়। এ দেশে গণতন্ত্র চর্চা পুনর্বার প্রশ্নের মুখে পড়ল। ‘সব দলের অংশগ্রহণে’ একটি নির্বাচনের কথা দাতাগোষ্ঠী বারবার বলে আসছিল, সেই নির্বাচন হলো বটে, কিন্তু তা কোনো ‘ফল’ বয়ে আনল না। প্রমাণিত হলো ‘সব দলের’ অংশগ্রহণ থাকলেও ক্ষমতাসীন দলের মনোভাবের যদি পরিবর্তন না হয়, তাহলে ফলাফলে তেমন কোনো আমূল পরিবর্তন আসে না। নিঃসন্দেহে বিদেশি দাতাগোষ্ঠী এটা মূল্যায়ন করবে এবং তাদের মূল্যায়নে বিএনপির অবস্থানকেই শক্তিশালী করবে মাত্র। কিন্তু বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান বলেছেন, ‘নির্বাচন বয়কট করলেও তারা হারেননি। এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নৈতিক পরাজয় ঘটেছে।’ কিন্তু প্রশ্ন অনেক। বিএনপি এখন কী করবে? কীভাবে জনমতকে সংগঠিত করবে? একটা হতাশাজনক পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে সিটি নির্বাচন সম্পন্ন হলো। এখন সরকারি দল বিজয় উৎসব করতেই পারে। কিন্তু আগামীর রাজনীতির জন্য তা আদৌ কি কোনো সুবাতাস বয়ে নিয়ে আসবে? সম্ভবত এর জবাব হচ্ছে না। একটা আস্থা ও বিশ্বাসের জায়গা তৈরি হোক এটা আমরা চেয়েছিলাম। এমন একটা ক্ষেত্রও তৈরি হয়েছিল। কিন্তু এই নির্বাচন সব সম্ভাবনাকে নস্যাৎ করে দিল! এই সিটি নির্বাচন প্রমাণ করল সরকার একতরফাভাবে নির্বাচনে বিশ্বাসী। সিটি নির্বাচনে ব্যাপক অনিয়মের মধ্য দিয়ে এই সত্যটাই প্রমাণিত হলো সরকার চায়, তার একক কর্তৃত্ব বজায় থাকুক! মধ্যবর্তী একটি নির্বাচনের কথা বিএনপি তথা অন্য দলগুলো বলে এলেও এটা এখন দিব্যি দিয়ে বলা যায় ২০১৯ সালের জানুয়ারির তিন মাস আগেই নির্বাচন হবে। এর আগে নয়। বিএনপিকে ততদিন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। বিএনপির আগামী কর্মসূচি কী হবে, সেটা নিয়েও প্রশ্ন ও জিজ্ঞাসা অনেক। বিএনপি কি এখন নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন করবে, নাকি আবারো ‘হরতাল-অবরোধের’ ডাক দেবে সেটাও একটা প্রশ্ন বটে। কেননা এটা সত্য, বিগত ৯২ দিনের হরতাল-অবরোধের রাজনীতি ব্যাপক জনসমর্থন তৈরি করতে পারেনি। সরকারের কর্মকাণ্ডের প্রতি অনেক দলের বিরোধিতা থাকলেও বিএনপি এদের সবার সঙ্গে ‘ঐক্য’ করতে পারেনি। ফলে সুবিধা নিয়েছে সরকার। তাদের অবস্থান শক্তিশালী হয়েছে। সুশীল সমাজের মাঝে সরকার তার সমর্থকদের সংখ্যা বাড়াতে পেরেছে এটাও সরকারের একটা প্লাস পয়েন্ট। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনের পর বিদেশি দাতাগোষ্ঠী বারবার বলে আসছে ‘সব দলের অংশগ্রহণে একটা নির্বাচন হোক।’ এখন সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে ‘সব দলের অংশগ্রহণে’ থাকলেও দেখা গেল নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি। জাল ভোট ও নির্বাচনে কারচুপি ঠেকাতে ইসির ব্যর্থতা একটা শঙ্কা তৈরি করল যে, আগামীতে যে কোনো নির্বাচনে এই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটতে পারে। ফলে যুক্তরাষ্ট্র যতই বলুক ‘ভোট কারচুপির বিশ্বাসযোগ্য প্রতিবেদন রয়েছে’ কিংবা যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার গিবসন যতই বলেন, ‘ভোট অনিয়মের নিরপেক্ষ তদন্ত চান’ তখন বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে। এই ঘটনার মধ্য দিয়ে ভবিষ্যতে সরকারের ওপর বিদেশি চাপ আরো বাড়বে, এটা দিব্যি দিয়ে বলা যায়। কিন্তু সরকার ‘শক্ত’ অবস্থানে রয়েছে, এটাও বাস্তব। নিঃসন্দেহে সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন নিয়ে যা ঘটল, তা বাংলাদেশের রাজনীতিকে আবারো এক মহাঅনিশ্চয়তার মধ্যে ফেলে দিল। সুস্থ ও পারস্পরিক বিশ্বাসের রাজনীতি বিকশিত হওয়ার যে সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল তা আর থাকল না। ১৯৯২ সালে জাতীয় সংসদে সংবিধানের দ্বাদশ সংশোধনী পাস করে আমরা গণতান্ত্রিক সংস্কৃতিতে ফিরে এসেছিলাম, সংসদীয় রাজনীতি দেশে প্রবর্তিত হয়েছিল, ‘নিজের ভোট নিজে দেবো’ এই সংস্কৃতি চালু হয়েছিল। আজ ২৩ বছর পর মনে হলো আমরা পেছনের দিকে হাঁটছি আবার! তরুণ প্রজšে§র জন্য আমরা কী রেখে যাচ্ছি এ প্রশ্নটাই এখন বড় হয়ে দেখা দেবে। একটা নির্বাচন হলো বটে, কিন্তু তাতে ‘সব প্রশ্নের’ জবাব মিলল না। তবুও একটি প্রত্যাশা থাকলই। সরকারি দল ‘জিতেছে’, কিন্তু এখন তাকে জিততে হবে সাধারণ মানুষের মন। তাদের সমর্থন নিশ্চিত করতে হবে। কেননা সাধারণ মানুষকে নিয়েই রাজনীতি। জনকল্যাণমূলক কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে। তিনজন সিটি মেয়রের দায়িত্ব অনেক বেশি। তারা এখন তাদের প্রতিশ্রুতি রক্ষায় আন্তরিক হবেন এ প্রত্যাশা অনেকের। তাদের সুবিধা একটাই তারা সরকারি দলের নেতা ও সমর্থক। সরকারও তাদের সাহায্য করবে। কেননা দুটি বড় শহরে (ঢাকা ও চট্টগ্রাম) ভোটাররা যদি পূর্ণ নাগরিক সেবা পায়, তাহলে তারা সব কিছু ‘ভুলে’ যাবে। প্রধানমন্ত্রী এসব ব্যাপারে যথেষ্ট আন্তরিক। চট্টগ্রামের সমস্যা মূলত একটাই জলাবদ্ধতা। আর বৃহত্তর ঢাকার সমস্যা একাধিক। ঢাকা উত্তর ও ঢাকা দক্ষিণের সমস্যা ভিন্ন ভিন্ন। উভয় ‘সিটি’র মুখ্য ও অভিন্ন সমস্যা কয়েকটি যানজট, জলাবদ্ধতা (ঢাকা দক্ষিণ), মাদক, মশকের বিস্তার এবং দুর্নীতি। এসব ক্ষেত্রে নবনির্বাচিত ‘নগর পিতাদের’ বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করতে হবে। যানজট ঢাকা শহরের প্রধান সমস্যা। এটা সিটি মেয়রদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে না। কিন্তু মেয়ররা ‘নাগরিকদের সেবা’ দেয়ার স্বার্থে ডিএমপির সঙ্গে মিলে ‘কর্মসূচি’ নিতে পারেন। যানজটের প্রধান সমস্যা ঢাকা শহরে অতিরিক্ত যানবাহন, রিকশার আধিপত্য, পরিবহন শ্রমিকদের, বিশেষ করে ড্রাইভারদের বেপরোয়াভাব ও আইন মানতে অনীহা, রাস্তার মাঝখান থেকে যাত্রী ওঠানো, যেখানে-সেখানে পার্কিং করা ইত্যাদি। সিটি মেয়ররা এই মুহূর্তে দুটি কাজ করতে পারেন দায়িত্ব নেয়ার পর পরই। এক. আউট সোর্সিংয়ের মাধ্যমে যানবাহন নিয়ন্ত্রণে কর্মী নিয়োগ। এরা ট্রাফিক পুলিশের পাশাপাশি যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করবেন। কেননা ট্রাফিক পুলিশের যানবাহন নিয়ন্ত্রণে ‘ব্যর্থতা’ চরম পর্যায়ে উন্নীত হয়েছে। তাদের অনেকেই মূল কাজ বাদ দিয়ে ব্যস্ত থাকেন ‘উপরি’ আদায়ে! ফলে দেখা যায়, ভিআইপি সড়কেও রিকশা চলছে। ট্রাফিক পুলিশ নির্বিকার। একই সঙ্গে রাস্তার দু’পাশে গাড়ি পার্ক করা থাকে, যা মূল রাস্তাকে সংকুচিত করে দেয়। ‘অদৃশ্য এক কারণে’ ট্রাফিক পুলিশ কোনো কথা বলে না! দ্বিতীয়ত, খুব দ্রুত মহানগরীতে যানবাহন নিয়ন্ত্রণের জন্য ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করে দ্রুত জরিমানার বিধান কার্যকর করা। যারা আইন ভঙ্গ করবে, দ্রুত তাদের জরিমানা করতে হবে। কোনো মামলা-মোকদ্দমা নয়। কেননা এতে দীর্ঘসূত্রতার সৃষ্টি হয়। আমাদের সামনে দৃষ্টান্ত আছে সেনানিবাসের ভেতরে, বিশেষ করে জাহাঙ্গীর গেট গিয়ে যানবাহন কীভাবে চলাচল করে তা প্রত্যক্ষ করার। এক শহরে দুই আইন! সেনানিবাসের ভেতরে যানবাহনগুলো যদি শৃঙ্খলার মধ্য দিয়ে চলাফেরা করে, তাহলে ঢাকা শহরের অন্যত্র তা হবে না কেন? নবনির্বাচিত দুই মেয়রের কাছে এই আর্তি রাখলাম। মনে রাখতে হবে নগরবাসীকে সেবা দেয়া তাদের মূল কাজ। তাদের ডাইনামিক হতে হবে। ‘রাজনৈতিক চাপ’ থাকতে পারে। বিশেষ করে একজন মন্ত্রী, যিনি আবার একই সঙ্গে পরিবহন শ্রমিকদের নেতাও বটে, তার ‘চাপ’ থাকতে পারে। তাদের উদ্যোগটাই আসল। আমার ধারণা তাদের এ ধরনের যে কোনো উদ্যোগ তাদের নিজেদের জনপ্রিয়তা বাড়াতে সাহায্য করবে। সিটি নির্বাচনে ‘যা কিছুই ঘটে থাকুক না কেন’ নতুন মেয়ররা যদি জনসেবামূলক কাজে নিজেদের সম্পৃক্ত করেন, তাহলে মানুষ সব কিছু ভুলে যাবে। মার্কিন রাষ্ট্রদূত বার্নিকাটের একটি মন্তব্য দিয়ে আমি লেখাটা শেষ করতে চাই। বার্নিকাট বলেছিলেন ‘Wining at any cost, is no victory at all’ অর্থাৎ যে কোনো উপায়ে জেতা, জেতা না।’ এই মন্তব্যটি নিঃসন্দেহে অনাকাক্সিক্ষত। কিন্তু আমরা সব কিছু ভুলে সামনে তাকাতে চাই। Daily Manobkontho 04.05.15

0 comments:

Post a Comment