ট্রাম্প অত্যন্ত উচ্চাকাক্সক্ষী। তিনি ২০০০ সালে চেষ্টা করেছিলেন রিফর্ম পার্টির হয়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে। এখন তিনিই কিনা রিপাবলিকান পার্টির প্রেসিডেন্ট হিসেবে হোয়াইট হাউসে যাচ্ছেন! এ অসম্ভবকে সম্ভব করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। কোনো দিক থেকেই ট্রাম্পের সঙ্গে হিলারি ক্লিনটনের তুলনা করা যাবে না। হিলারির গ্রহণযোগ্যতা, শিক্ষাগত যোগ্যতা, দীর্ঘদিন প্রশাসনে কাজ করার অভিজ্ঞতা, সফল কূটনৈতিক ও বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবন- কোনো দিক থেকেই কমতি ছিল না। তার পরও তিনি হেরে গেলেন। ইতিহাস অস্বীকার করল একজন নারীকে প্রথমবারের মতো প্রেসিডেন্ট হতে। বেশিদিন আগে নয়, ১৯২০ সালে নারীরা যুক্তরাষ্ট্রে ভোটের অধিকার পেয়েছে। আর এর ৯৬ বছর পর সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল একজন নারীর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হওয়ার। এখন সেই সম্ভাবনাও পিছিয়ে গেল আরও কতদিনের জন্য কে জানে!
কেন এমনটি হল? কেন মানুষ এমন একজন বিতর্কিত মানুষকেই হোয়াইট হাউসে পাঠাল? আগামীতে এ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হবে, সন্দেহ নেই তাতে। কিন্তু সাদা চোখে এ মুহূর্তে যে কারণগুলো পাওয়া যায়, তা হচ্ছে- ১. মানুষ একটি পরিবর্তন চেয়েছে। সাধারণ মানুষ মনে করেছে, একজন ডেমোক্রেটের চেয়ে একজন রিপাবলিকান প্রার্থী তাদের স্বার্থরক্ষা করবে বেশি, ২. যুক্তরাষ্ট্রের মানুষ এখনও একজন নারী প্রেসিডেন্টকে গ্রহণ করার ব্যাপারে অতটা উদার নন, ৩. বর্ণবাদ এখানে অনেক শক্তিশালী। সংবিধানে অনেক সুন্দর সুন্দর কথা লেখা আছে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে- বর্ণবিদ্বেষ, ধর্মবিদ্বেষ এ সমাজে অত্যন্ত শক্তিশালী, ৪. হিলারি ক্লিনটনের ই-মেইল কেলেংকারিকে সাধারণ মানুষ তার নেতৃত্বের অদক্ষতা হিসেবেই দেখেছে। এটাই তার জন্য কাল হয়ে দাঁড়ায়। ৫. নারী ও তরুণ সমাজের সমর্থন হিলারি পেলেও বয়স্ক শ্বেতাঙ্গ আর গ্রামীণ মানুষের সমর্থন ট্রাম্প পেয়েছেন। সেই সঙ্গে শ্বেতাঙ্গ কর্মজীবী, যারা গ্রাজুয়েট নন তাদের সমর্থনও নিশ্চিত করতে পেরেছিলেন ট্রাম্প; ৬. ট্রাম্পের ট্যাক্স রিফর্মকে সাধারণ মানুষ সমর্থন করেছে। তার চাকরির ক্ষেত্র তৈরি করার প্রস্তাব সমর্থন পেয়েছিল। অন্যদিকে এসব ক্ষেত্রে হিলারির প্রস্তাব ভোটারদের মধ্যে আদৌ কোনো আবেদন তৈরি করতে পারেনি, ৭. ট্রাম্পের প্রচণ্ড অভিবাসীবিরোধী ভূমিকা ব্যাপক সমর্থন পেয়েছে। এ ক্ষেত্রে হিলারি ক্লিনটনের অভিবাসীদের ব্যাপারে একটি ‘সমন্বিত কর্মসূচির’ প্রতিশ্রুতি জনগণ সমর্থন করেনি। ট্রাম্পের মুসলমানবিরোধী ভূমিকাও সমর্থন পেয়েছে ব্যাপক জনগোষ্ঠীর, ৮. ট্রাম্পের ‘ট্রেড পলিসি’কে মানুষ সমর্থন করেছে। বিশেষ করে তার চীনা ও মেক্সিকান পণ্যের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের প্রস্তাব ভোটাররা সমর্থন করেছে। টিপিপি চুক্তির কারণে যুক্তরাষ্ট্রে মানুষ চাকরি হারাবে, ফ্যাক্টরি বন্ধ হয়ে যাবে- ট্রাম্পের এ বক্তব্য মানুষ গ্রহণ করেছে। হিলারির বক্তব্য এ ক্ষেত্রে ছিল অস্পষ্ট, ৯. স্বাস্থ্যসেবার ব্যাপারে হিলারি ক্লিনটনের ‘ওবামা কেয়ার’ অব্যাহত রাখার প্রস্তাব ব্যাপক জনসমর্থন পায়নি। এ ক্ষেত্রে ট্রাম্পের বক্তব্য ছিল স্পষ্ট, ১০. ট্রাম্পের মেক্সিকানবিরোধী ভূমিকা স্প্যানিশ ভাষাভাষীদের ওপর আদৌ কোনো প্রভাব ফেলেনি। ফ্লোরিডার কিউবান-আমেরিকানরা প্রকারান্তরে ট্রাম্পকেই সমর্থন করেছে। হিলারি এ সমর্থন নিশ্চিত করতে পারেননি।
নব্বইয়ের দশক থেকে একটি ধারা লক্ষ করা যায়। দুই টার্মের (৮ বছর) পরই রাজনীতিতে পরিবর্তন আসে। ক্লিনটন, বুশ ও ওবামা। ডেমোক্রেট, রিপাবলিকান, ডেমোক্রেট। সেই ধারাবাহিকতায় এখন আসছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।
নিউইয়র্ক, যুক্তরাষ্ট্র
Daily Jugantor
11.11.2016
0 comments:
Post a Comment