রাজনীতি, আন্তর্জাতিক রাজনীতি এবং সমসাময়িক ঘটনাবলীর বিশ্লেষণ সংক্রান্ত অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর রেহমানের একটি ওয়েবসাইট। লেখকের অনুমতি বাদে এই সাইট থেকে কোনো লেখা অন্য কোথাও আপলোড, পাবলিশ কিংবা ছাপাবেন না। প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন লেখকের সাথে

ঐতিহাসিক জয়ের পথে হিলারি

 
অনেক জল্পনা-কল্পনা আর উৎকণ্ঠার অবসান ঘটিয়ে আজ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের ৫৮তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। অনেক নাটকীয়তা আর বিতর্কের জন্ম দিয়েছিল এফবিআই পরিচালক জেমস কমের ২৮ অক্টোবর লেখা একটি চিঠি। আর ৬ নভেম্বর এফবিআই প্রধান জানালেন তারা হিলারি ক্লিনটনের ব্যক্তিগত ই-মেইল ব্যবহারের ঘটনা নিয়ে (যখন তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন) কোনো তদন্ত আর করবেন না। এতে করে হিলারি ক্লিনটনের শিবিরে স্বস্তির নিঃশ্বাস বয়ে আনলেও, এই ঘটনা রয়ে গেছে একটি বাজে দৃষ্টান্ত হিসেবে। জনমত জরিপে হিলারি বরাবরই এগিয়ে ছিলেন। শেষ দিনগুলোতে উভয় প্রার্থী ‘ব্যাটেলগ্রাউন্ড স্টেট’গুলোতে ব্যাপকভাবে তাদের নির্বাচনী প্রচারণা চালান। এসব স্টেটেও শেষ মুহূর্তে যে জনমত জরিপ চালানো হয়, তাতে হিলারি ৬টি স্টেটে আর ট্রাম্প ৭টি স্টেটে বিজয়ী হবেন বলে বলা হয়েছে। রিয়েল ক্লিয়ার পলিটিকস নামে একটি জনমত জরিপকারী সংস্থা ৫ নভেম্বর সর্বশেষ জরিপটি চালায়। এতে কলোরাডো, ফ্লোরিডা, মিশিগান, পেনসিলভানিয়া, ভার্জিনিয়া ও উইসকনসিনে হিলারি বিজয় হবেন বলে বলা হয়েছে। এসব স্টেটে নির্বাচকমণ্ডলীর সদস্য সংখ্যা সর্বমোট ৯৭। আর এর বাইরে আরিজোনা, জর্জিয়া, আইওয়া, নেভাদা, নিউ হ্যাম্পশায়ার, নর্থ ক্যারোলিনা এবং ওহাইও স্টেটে ট্রাম্প বিজয়ী হবেন বলে জনমত জরিপে জানা গেছে। এসব স্টেটে নির্বাচকমণ্ডলীর সংখ্যা ৭৬। এর অর্থ পরিষ্কার। অনিশ্চিত এসব স্টেটে হিলারি ক্লিনটন তার অবস্থান শক্তিশালী করতে পেরেছেন। মোট ৫৩৮টি নির্বাচকমণ্ডলীর ভোট নিয়ে ওই প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। যিনি ২৭০টি ভোট নিশ্চিত করতে পারবেন, তিনিই প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হবেন।

অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে এক ঐতিহাসিক জয়ের পথে এখন হিলারি ক্লিনটন। আগাম ভোট নেয়া এরই মধ্যে শেষ হয়েছে। টিভি মিডিয়াগুলো বলছে, ব্যাপকভাবে এবার স্প্যানিশ ভাষাভাষী মানুষ আগাম ভোটে অংশ নিয়েছেন। জনমত জরিপকারীদের মতে মহিলা, সংখ্যালঘু সম্প্রদায় হিলারিকে ভোট দেবেন। আর ট্রাম্পকে ভোট দেবেন শ্বেতাঙ্গ তথা বয়স্করা। কৃষ্ণাঙ্গদের ভোট বরাবরই ডেমোক্রেটরা পায়। এবারও পাবেন হিলারি। একসময় হিলারি ক্লিনটন জনমত জরিপে শীর্ষে ছিলেন। তিন-তিনটি প্রেসিডেন্সিয়াল বিতর্কে তিনি ডোনাল্ড ট্রাম্পের চেয়ে এগিয়ে ছিলেন অনেক পয়েন্টের ব্যবধানে। তার বাচনভঙ্গি, নির্বাচনী বিতর্কে অশালীন কোনো শব্দ ব্যবহার না করা, নিজেকে শান্ত রাখা ইত্যাদি নানা কারণে তার জনপ্রিয়তা সব সময় ছিল তুঙ্গে। কিন্তু তার ই-মেইল বিতর্ক, এফবিআই কর্তৃক ওই ই-মেইল তদন্ত করার ঘোষণা, ক্লিনটন ফাউন্ডেশনের নামে বিদেশ থেকে অর্থ গ্রহণের বিষয়টি ট্রাম্পের পক্ষ থেকে বারবার বলা হলে তাতে একটি নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। একপর্যায়ে ক্লিনটন ও ট্রাম্পের মধ্যে ব্যবধান কমে আসতে থাকে এবং নির্বাচনের তিন-চার দিন আগে তা সমান সমান পর্যায়ে এসে দাঁড়ায়। কিন্তু হিলারি কখনও হাল ছাড়েননি। তিনি তরুণ সম্প্রদায়ের মধ্যে ব্যাপক প্রচারণা চালান।

বিখ্যাত সব সঙ্গীতশিল্পীকে দিয়ে কনসার্ট করান এবং তাদের সমর্থন আদায় করেন। অন্যদিকে ডোনাল্ড ট্রাম্প বরাবরই বিতর্কিত ছিলেন। প্রায় ১১ নারীর সঙ্গে যৌন সম্পর্ক স্থাপন বা স্থাপনের চেষ্টা, তার দীর্ঘ ১৮ বছর কোনো ট্যাক্স না দেয়ার কাহিনী, নারীদের সম্পর্কে অশালীন উক্তি, মহিলাদের সঙ্গে সম্পর্ক, হিলারিকে জেলে পাঠানোর হুমকি ইত্যাদি একের পর এক প্রকাশিত হলে তার জনপ্রিয়তায় ধস নামে। উপরন্তু রিপাবলিকান শিবিরে কোনো সিনিয়র নেতা, সাবেক কোনো প্রেসিডেন্ট প্রচারণায় অংশ না নেয়ায় এটা স্পষ্ট হয়ে যায় তার প্রার্থিতা নিয়ে খোদ রিপাবলিকান শিবিরে বিভক্তি আছে। এটা অনেকটা কাল হয়ে দাঁড়ায় তার জন্য। শেষ পর্যন্ত হিলারি যদি বিজয়ী হন, তিনি হবেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট। দেশের ৪৫তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে তিনি শপথ নেবেন ২০১৭ সালের ২০ জানুয়ারি। যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম প্রেসিডেন্ট জর্জ ওয়াশিংটনের কোনো দল ছিল না। এন্ড্র– জ্যাকসন (১৮২৮-১৮৩২) ছিলেন প্রথম ডেমোক্রেট প্রেসিডেন্ট। আর আব্রাহাম লিংকন ছিলেন প্রথম রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট (১৮৫০)। মোট ১৫ জন প্রেসিডেন্ট ডেমোক্রেটদলীয় প্রার্থী হিসেবে প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করে গেছেন। আর রিপাবলিকান শিবিরে এর সংখ্যা ১৬ জন।
Daily Jugantor
08.11.2016

0 comments:

Post a Comment