রাজনীতি, আন্তর্জাতিক রাজনীতি এবং সমসাময়িক ঘটনাবলীর বিশ্লেষণ সংক্রান্ত অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর রেহমানের একটি ওয়েবসাইট। লেখকের অনুমতি বাদে এই সাইট থেকে কোনো লেখা অন্য কোথাও আপলোড, পাবলিশ কিংবা ছাপাবেন না। প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন লেখকের সাথে

রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান কোন পথে


হঠাৎ করেই মিয়ানমারের রোহিঙ্গা সমস্যাটি আবার আলোচনায় এসেছে। মিয়ানমারের আরাকান স্টেটে বসবাসরত রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর অত্যাচার আর নির্যাতনের মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় শত শত রোহিঙ্গা আবার বাংলাদেশে ঢোকার চেষ্টা করছে। কিছু কিছু লোক এরই মধ্যে ঢুকেও গেছে। নাফ নদীতে শত শত নৌকায় বেশকিছু মিয়ানমারের নাগরিক বাংলাদেশে ঢোকার চেষ্টা করছে, এমন খবরও সংবাদপত্রে ছাপা হয়েছে। যদিও বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী এ ব্যাপারে বেশ সতর্ক রয়েছে। কিন্তু যে বিষয়টি সবচেয়ে বড় বিতর্ক সৃষ্টি করেছে, তা হচ্ছে আন্তর্জাতিক অভিবাসী সংস্থা রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে আশ্রয় দেয়ার জন্য সীমান্ত খুলে দেয়ার আহ্বান জানিয়েছে। বাংলাদেশ এটি করতে পারে না। কেননা এরই মধ্যে বেশ কয়েক লাখ অবৈধ রোহিঙ্গা কক্সবাজারে বসবাস করছে, যাদের নিজ বাসভূমি ফিরিয়ে দেয়ার ব্যাপারে মিয়ানমার সরকার তেমন কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। মিয়ানমার মূলত রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারের নাগরিক হিসেবে মনে করে না।
রোহিঙ্গা নিয়ে যে সমস্যা, তার শুরু মূলত ১৯৭৮ সালের এপ্রিলে। ওই সময় মিয়ানমারের সেনাবাহিনী কর্তৃক পরিচালিত ‘Operation Dragon’ এর শিকার হয়ে আরাকানের মুসলমানরা (রোহিঙ্গা) দলে দলে সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গারা ছিলেন আকিয়াব (সিটওয়ে), পালেটবা, মিনবিয়া, মায়োহং, মাইবন, মংডু এবং রাথেডং অঞ্চলের অধিবাসী। ওই সময় রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে বাংলাদেশের ব্যাপক কূটনৈতিক তৎপরতার পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৭৮ সালের জুলাইয়ে মিয়ানমার তিনটি ক্যাটাগরিতে ভাগ করে সব রোহিঙ্গা শরণার্থীকে ফেরত নেয়ার ব্যাপারে বাংলাদেশের সঙ্গে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে এবং ১৯৭৮ সালের ৩১ আগস্ট থেকে ১৯৭৯ সালের ২৯ ডিসেম্বরের মধ্যে বাংলাদেশে আগত ১ লাখ ৮৭ হাজার ২৫০ রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সম্ভব হয়। এদের সবার কাছেই মিয়ানমার সরকার কর্তৃক ইস্যুকৃত National Registration Card (NRC) ছিল। এরপর ১৯৯১ সালের মাঝামাঝি মিয়ানমারের সেনাবাহিনী আবারও আরাকানে ‘অপারেশন পিয়েথায়া’ নামে আরেকটি অভিযান পরিচালনা করলে হাজার হাজার রোহিঙ্গা কক্সবাজার এলাকায় অবৈধভাবে প্রবেশ করে এবং আশ্রয় নেয়। এরপর থেকেই দুইপক্ষের মাঝে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে আলোচনা হলেও, কার্যত তা খুব একটা ফল দেয়নি। ধারণা করা হচ্ছে, প্রায় ৪ থেকে ৫ লাখ রোহিঙ্গা বর্তমানে বৃহত্তর কক্সবাজার এলাকায় অবৈধভাবে বসবাস করছে। জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, বাংলাদেশে নিবন্ধিত রোহিঙ্গা শরণার্থীর সংখ্যা ২৫ হাজার ৪৫ জন। এরা টেকনাফের কুতুপালং ও নোয়াপাড়া শরণার্থী শিবিরে বসবাস করছে। কিন্তু অনিবন্ধিত রোহিঙ্গাদের সংখ্যা বেশি। বাংলাদেশ সরকার অতি সম্প্রতি ‘বাংলাদেশে অবস্থানরত অনিবন্ধিত মিয়ানমারের নাগরিক শুমারি ২০১৫’ শীর্ষক একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এতে ব্যয় হবে ২২ কোটি টাকা। এ উদ্যোগটি ভালো। রোহিঙ্গাদের এ দুইটি ক্যাম্প থেকে নিঝুম দ্বীপে সরিয়ে নেয়ার চিন্তাও করছে সরকার। এ উদ্যোগটিও ভালো। বাংলাদেশ সরকারকে এখন রোহিঙ্গা সমস্যাটিকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নিতে হবে। দ্বিতীয়ত, মিয়ানমার থেকে বিপুল পরিমাণে ‘ইয়াবা’ আসছে। বাংলাদেশ ‘ইয়াবা’র চালানের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেয়ায় বিজেবির সদস্য রাজ্জাকের অপহরণের (জনু ২০১৫) ঘটনাটি ঘটেছিল। রোহিঙ্গা ইস্যুর সঙ্গে ইয়াবার প্রশ্নটিও তার অপহরণের সঙ্গে জড়িত। ৭ বছরে ইয়াবার চোরাচালান বেড়েছে ১৭৭ গুণ। এ হিসাব মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের। ঢাকায় ‘ইয়াবা’ বিক্রির রয়েছে ৫ শতাধিক স্পষ্ট (আমাদের সময়, ২৪ জুন)। আরেকটি পরিসংখ্যান দেখা গেছে, মিয়ানমারের বিভিন্ন এলাকায় অন্তত ৩৯টি ইয়াবা কারখানা রয়েছে, সেখান থেকে চোরাইপথে প্রতি মাসে সীমান্ত দিয়ে শতকোটি টাকার ইয়াবা চালান ঢুকছে বাংলাদেশে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের হিসাবে, বাংলাদেশে বছরে ৩ হাজার কোটি টাকার মাদকের বাজার রয়েছে। এর অর্ধেক দখল করে রেখেছে ইয়াবা (সকালের খবর, ২৪ জুন)। আর দুঃখজনক হলেও সত্য, ইয়াবা পাচারের সঙ্গে ঊর্ধ্বতন মিয়ানমারের সামরিক কর্মকর্তারা জড়িত। বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাও এ কাজে জড়িয়ে গেছেন। ফলে অং সান সু চি’র দল এখন রাষ্ট্রক্ষমতা পরিচালনা করলেও মিয়ানমারের সীমান্ত রক্ষাকারী বাহিনীর স্বার্থ যেখানে জড়িত, সে ব্যাপারে অগ্রগতি হবে এটা মনে করারও কোনো কারণ নেই। তবে বিগত নির্বাচন (২০১৫) প্রমাণ করেছিল, মানুষ সেখানে পরিবর্তন চায়। তাই পরিবর্তনটি এসেছে। ‘জনগণই সব ক্ষমতার উৎস’ রাষ্ট্রবিজ্ঞানের এ স্বতঃসিদ্ধ ‘সত্য বাক্যটি’ মিয়ানমারের ক্ষেত্রে আবারও প্রমাণিত হয়েছিল। সেনাবাহিনী ক্ষমতা ধরে রাখার চেষ্টা করলেও, জনগণের সম্মতি তাতে ছিল না। জনগণ চেয়েছিল, একটি সুষ্ঠু নির্বাচন। সেই নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছিল এবং অং সান সু চি সেখানে সরকার পরিচালনা করছেন বটে; কিন্তু নির্বাচিত সরকারের সময় আবারও রোহিঙ্গারা নির্যাতনের শিকার হবে তা কাম্য হতে পারে না। রোহিঙ্গারা আরাকানে তাদের বাসভবনে থাকবে। কিন্তু তারা থাকতে পারছে না। তাদের পরিকল্পিতভাবে দেশত্যাগে বাধ্য করা হচ্ছে। ১৯৭৮ ও ১৯৯১ সালেও এমনটি হয়েছিল। ২০১২ সালের পর আবার নতুন করে মিয়ানমারে রোহিঙ্গা খেদাও অভিযান শুরু হয়েছে। তাদের ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। বসতবাড়ি থেকে উৎখাত করা হচ্ছে। এটা সত্য, বাংলাদেশের ভেতরে বৃহত্তর কক্সবাজার এলাকায় রোহিঙ্গারা বসবাস করছে। কিন্তু এরই মাঝে তারা নানা কর্মকান্ডে জড়িয়ে গেছে। সর্বশেষ খবরে জানা যায়, মিয়ানমার সরকার নতুন করে আরাকানে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর নির্যাতনের মাত্রা বাড়ালে আবারও রোহিঙ্গা খেদাও অভিযান শুরু হয়। এক্ষেত্রে সেখানকার বৌদ্ধভিক্ষুরা সংগঠিত হয়ে রোহিঙ্গাদের বসতবাড়িতে আক্রমণ করছে এবং বসতবাড়িতে আগুন লাগিয়ে দিচ্ছে। ফলে আবারও শুরু হয়েছে রোহিঙ্গাদের দেশত্যাগ। এদের একবার (২০১২ সালে) সাগরপথে মালয়েশিয়া পাঠানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। একটি মানব পাচারকারী চক্র সেখানকার সরকারের পাশাপাশিও সক্রিয় ছিল। মে-জুনে (২০১২) সাগরভাসি মানুষকে নিয়ে আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় বড় ধরনের সংবাদের জন্ম হয়েছিল। বলাই ভালো, বাংলাদেশের একটা চক্রও এদের সঙ্গে যোগ হয়েছিল। বাংলাদেশীদেরও বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়ে এসব মানব পাচারকারী চক্র মালয়েশিয়ায় মানব পাচারের উদ্যোগ নেয়। ওই সময় বিশ্বের মিডিয়ায় ব্যাপারটি গুরুত্বের সঙ্গে স্থান পেয়েছিল। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ওই সময় ব্যাংককে আসিয়ানের উদ্যোগে একটি শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এতে ওই সময় মিয়ানমার সরকার একটি চাপে ছিল। এখন আবার রোহিঙ্গা ইস্যুটি নতুন করে দুই দেশের সম্পর্ককে নানা প্রশ্নের মাঝে ঠেলে দিয়েছে। বাংলাদেশের উচিত হবে না মিয়ানমারের ফাঁদে পা দেয়া। এক্ষেত্রে বাংলাদেশকে ‘স্মার্ট ডিপ্লোমেসি’ (Smart Diplomacy) প্রদর্শন করতে হবে। মিয়ানমারের সঙ্গে কোনো ধরনের সংঘর্ষে না গিয়ে বাংলাদেশের নিজস্ব স্বার্থ উদ্ধারে কাজ করে যেতে হবে। কেননা বাংলাদেশের কাছে মিয়ানমার নানাবিধ কারণেই গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমেই আসে এর ভৌগোলিক অবস্থানগত গুরুত্বের কথা। প্রায় ৩ লাখ ৭৭ হাজার বর্গকিলোমিটার ভূখ- নিয়ে দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় অঞ্চলে মিয়ানমার দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশ। মিয়ানমারের পশ্চিমে বাংলাদেশ, পশ্চিম ও উত্তরে ভারত, উত্তর ও উত্তর-পশ্চিমে চীন, পূর্বে থাইল্যান্ড ও লাওস। মিয়ানমারের এ ভৌগোলিক অবস্থানের সুযোগ নিতে পারে বাংলাদেশ। মিয়ানমারের সঙ্গে যে সড়ক যোগাযোগের উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল, যা কিনা চীনকেও সংযুক্ত করবে, এ অঞ্চলের অর্থনৈতিক দৃশ্যপটকে বদলে দেবে। একসময় ‘কুনমিং উদ্যোগ’ এখন বিসিআইএম জোটে পরিণত হয়েছে। সমস্যা ছিল ভারতকে নিয়ে। এখন ভারতের সম্মতির পরই এই বিসিআইএম জোটের ধারণা শক্তিশালী হয়। এ জোটটি কার্যকরী হলে কুনমিং (ইউনান প্রদেশের রাজধানী) থেকে সড়ক পথে বাংলাদেশে এবং ভারতেও আসা যাবে এবং পণ্য আনা-নেয়া যাবে। ফলে চীনা পণ্যের দামও কমে যাবে। উপরন্তু ২০২০ সালের মধ্যে আসিয়ানে মুক্তবাজার সৃষ্টি হচ্ছে, তাতে বাংলাদেশ ও ভারতের পণ্য প্রবেশাধিকারের পথ সহজ হবে। বিসিআইএমের আওতায় কুনমিং থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত সড়ক হবে। তিনটি রুটে ইউনান প্রদেশের সঙ্গে বাংলাদেশ ও ভারত সংযুক্ত হবে। নর্থ রুটে কুনমিং থেকে মিয়ানমারের Myitkyha হয়ে ভারতের Ledo পর্যন্ত সংযুক্ত হবে। এ রুটে বাংলাদেশ সংযুক্ত হবে না। এ রুটটি অনেক কঠিন। সাউথ রুটে ইউনান থেকে বাংলাদেশের প্রস্তাবিত গভীর সমুদ্রবন্দর সোনাদিয়া পর্যন্ত সংযুক্ত ছিল। কুনমিং মান্দালয় (মিয়ানমার) ও Gway (মিয়ানমার) হয়ে এ রুটটি চট্টগ্রামে প্রবেশ করবে। পরে ঢাকা হয়ে কলকাতা যাবে। এখন সোনাদিয়ায় গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মিত না হওয়ায় (ভারতের আপত্তির কারণে) এ প্রস্তাবিত রুটটির ভবিষ্যৎ এখন অনিশ্চিত। তৃতীয় প্রস্তাবিত রুটটি হচ্ছে মিডল রুট। এ রুটটি ভালো এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হচ্ছে। এটাই প্রাচীন সিল্ক রুট। কুনমিং Bhamo-Lashio-Tamu (মিয়ানমার) ইম্ফল (ভারত)-সিলেট-ঢাকা ও কলকাতা হচ্ছে এ রুট, যা কিনা K2K নামেও পরিচিত। অর্থাৎ কুনমিং থেকে কলকাতা। অনেকের স্মরণ থাকার কথা, এ রুটে (২ হাজার ৮০০ কিলোমিটার) একটি মোটর র‌্যালি (২০১৩) চালু হয়েছিল। এ জোটের সম্ভাবনা ছিল বিশাল। কেননা এ চারটি দেশের (বিসিআইএম) রয়েছে বিপুল তেল ও গ্যাসসম্পদ (মিয়ানমার), রয়েছে শক্তিশালী অর্থনীতি (চীন ও ভারত), রয়েছে শিল্প (চীন), শক্তিশালী সার্ভিস সেক্টর, রয়েছে বিশাল অব্যবহৃত জমি (মিয়ানমার) এবং সমুদ্রবন্দর (বাংলাদেশ, ভারত ও মিয়ানমার)। ফলে এ অঞ্চলের অর্থনৈতিক দৃশ্যপট বদলে যেতে পারে আগামীতে, যদি বিসিআইএম জোটকে কার্যকর করার উদ্যোগ নেয়া হয়। আঞ্চলিক অর্থনীতি তো বটেই, বিশ্ব অর্থনীতিকে অনেক অংশে প্রভাব বিস্তার করতে পারে এ জোট। এ চারটি দেশের সম্মিলিত জিডিপির পরিমাণ ৫ দশমিক ৭ ট্রিলিয়ন ডলার, যা কিনা বিশ্ব জিডিপির ১০ ভাগ। ভারত বড় অর্থনীতির দেশে পরিণত হয়েছে। জাপানকে টপকে এশিয়ায় দ্বিতীয় বড় অর্থনীতির দেশ ভারত। এ অঞ্চলের উন্নয়নে ভারত বড় অবদান রাখতে পারে। ফলে বিসিআইএম জোটে ভারতের সংযুক্তি এ অঞ্চলের অর্থনীতিকে পরিপূর্ণভাবে বদলে দিতে পারে। আমাদের পূর্বমুখী পররাষ্ট্রনীতি অর্থাৎ পূর্বের দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক বাড়ানো অনেক গুরুত্বপূর্ণ। আসিয়ানে আগামীতে একটি মুক্তবাজার প্রতিষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এখানে রয়েছে একটি বিশাল বাজার। এ বাজার আমাদের জন্য একটি বড় সম্ভাবনা সৃষ্টি করতে পারে। একই সঙ্গে প্রস্তাবিত আমেড-৮ এর মধ্য দিয়ে একদিকে যেমন মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম দেশগুলোর সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক আরও দৃঢ় হবে, অন্যদিকে তেমনি বিশ্বে বাংলাদেশকে একটি সহনীয় ইসলাম (মডারেট ইসলাম) ধারণ করে, এ ধারণাও আরও শক্তিশালী হবে। এক্ষেত্রে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে আমাদের সম্পর্কটা হবে গুরুত্বপূর্ণ একটি ফ্যাক্টর। উল্লেখ্য, সিঙ্গাপুর বাংলাদেশকে সঙ্গে নিয়ে ‘এশিয়া মিডিলইস্ট ডায়ালগ-৮’ (আমেড-৮) এর প্রস্তাব করেছিল। আমেড-৮ এর অন্য দেশগুলো হচ্ছে সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, মিসর, জর্ডান, কুয়েত ও বাহরাইন। আমেড-৮ এর কথা প্রথম শোনা গিয়েছিল ২০০৪ সালে সিঙ্গাপুরের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফরের সময়। এরপর আমেড-৮ নিয়ে তেমন কথাবার্তা শোনা যায় না।
আজ রোহিঙ্গা সমস্যাকে কেন্দ্র করে একটি বিশাল সম্ভাবনাকে আমরা জলাঞ্জলি দিতে পারি না। এটা সত্য, আরাকানে মানবিকতা আজ লুণ্ঠিত। বেঁচে থাকার ন্যূনতম অধিকার থেকে আজ রোহিঙ্গারা বঞ্চিত। শুধু ধর্মীয় পরিচয়ের কারণে তারা আজ দেশত্যাগ করতে বাধ্য হবে এটা গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। তাই একদিকে মিয়ানমারের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রেখে, অন্যদিকে আন্তর্জাতিক আসরে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর অত্যাচারের বর্ণনা তুলে ধরে মিয়ানমারের ওপর ‘চাপ’ অব্যাহত রাখতে হবে।
Daily Aklokito Bangladesh
27.11.2016

0 comments:

Post a Comment