যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনটা এবারও হাতি ও গাধা প্রতীকের। হাতি প্রতীক হচ্ছে রিপাবলিকান পার্টির। আর গাধা প্রতীক হচ্ছে ডেমোক্রেট পার্টির। হাতি আর গাধা প্রতীক নিয়ে লড়ছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প ও হিলারি ক্লিনটন। এর বাইরে আরও দু’জন প্রার্থী রয়েছেন নির্বাচনে। লিবারটারিয়ান পার্টির পক্ষ হয়ে গ্যারি জনসন ও গ্রিন পার্টির পক্ষ হয়ে জিল স্ট্রেইন। কিন্তু মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এরা নেই। অতীতেও কোনো তৃতীয় প্রার্থী নির্বাচনে তেমন প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলতে পারেননি। এটাই যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্রের বৈশিষ্ট্য। এখানে বিভিন্ন পর্যায়ে যে নির্বাচন হয় (প্রেসিডেন্ট, সিনেট, প্রতিনিধি পরিষদ, রাজ্য গভর্নর), তাতে তৃতীয় পার্টির প্রার্থীরা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় মাঝে মধ্যে থাকলেও মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা সীমাবদ্ধ থাকে দুটি বড় দল রিপাবলিকান ও ডেমোক্রেট পার্টির মাঝেই। যুক্তরাষ্ট্রের ২৪০ বছরের গণতন্ত্রের ইতিহাসে বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের অস্তিত্বের খবর পাওয়া যায়। কিন্তু কোনো রাজনৈতিক দলই মূল ধারার দুটি রাজনৈতিক দলের বাইরে গিয়ে নিজেদের অস্তিত্ব নিয়ে টিকে থাকতে পারেনি। যেমন ফেডারেলিস্ট, ডেমোক্রেটিক-রিপাবলিকান, ন্যাশনাল রিপাবলিকান, উইগ পার্টি, আমেরিকান ইন্ডিপেনডেন্ট পার্টি, রিফর্ম পার্টি, লিবারটারিয়ান ও গ্রিন পার্টির কথা বলা যেতে পারে। তবে উইগ পার্টি থেকে অতীতে একাধিক প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছিলেন। ১৯৯৬ সাল থেকে গ্রিন পার্টি তাদের কার্যক্রম চালিয়ে এলেও অনেক স্টেটে এই পার্টির কোনো অস্তিত্বই নেই। ১৯৬৮ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে আমেরিকান ইন্ডিপেনডেন্ট পার্টির জজ ওয়ালাক দুটি স্টেটে বিজয়ী হয়েছিলেন। কিন্তু অন্য স্টেটের নির্বাচকমণ্ডলীর ভোট তিনি পাননি। ১৯৯০ সাল থেকে এখন অবধি ৩০২টি গভর্নর পদের নির্বাচনে ৬ জন প্রার্থী তৃতীয় পার্টির পক্ষ থেকে বিজয়ী হয়েছিলেন। অতি সম্প্রতি ২০১৪ সালে আলাস্কার গভর্নর বিল ওয়ালকার নিরপেক্ষ প্রার্থী হিসেবে বিজয়ী হয়েছেন। এর আগে তিনি রিপাবলিকান পার্টির সদস্য ছিলেন। অন্যদিকে ১৯৯০ সালের পর থেকে ৩৮০ সিনেট নির্বাচনে নিরপেক্ষ অথবা তৃতীয় দলের প্রার্থী হিসেবে কেউ কেউ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলেও জিততে পারেননি কেউই। ব্যতিক্রম ছিলেন সিনেট নির্বাচনে দু’জন ২০১২ সালের নির্বাচনে। এরা দু’জন হচ্ছেন বার্নি স্যান্ডার্স ও আনগুস কিং। এরা দু’জনই সিনেটে ডেমোক্রেট ককাসের সঙ্গে একসঙ্গে কাজ করেন। নির্বাচনের সময় ডেমোক্রেট পার্টি তাদের সমর্থন করেছিল। বর্তমানে বার্নি স্যান্ডার্স ডেমোক্রেট পার্টির কর্মকাণ্ডে নিজেকে জড়িত করেছেন। স্যান্ডার্স হিলারি ক্লিনটনের সঙ্গে ডেমোক্রেট পার্টির প্রার্থী মনোনয়নে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। কিন্তু চূড়ান্ত মনোনয়নে তিনি হেরে গিয়েছিলেন। তৃতীয় পার্টির বিকাশ না হওয়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে অর্থ। নির্বাচনে প্রচুর অর্থ ব্যয় হয়। প্রার্থীরা দলীয় সমর্থকদের কাছ থেকে নির্বাচনের জন্য চাঁদা নেন। ব্যবসায়ীরাও চাঁদা দেন। এটা নিয়মসিদ্ধ। রিপাবলিকান পার্টির ৩ কোটি রেজিস্টার্ড ভোটার রয়েছে। অন্যদিকে ডেমোক্রেট পার্টির রেজিস্টার্ড ভোটারের সংখ্যা ৪ কোটি। এরা চাঁদা দেন। বিজ্ঞাপন, প্রার্থীদের নির্বাচনী প্রচারণা ইত্যাদির জন্য প্রচুর অর্থের প্রয়োজন হয়। বড় দলগুলোকে প্রফেশনাল পিআর ব্যক্তিদের নিয়োগ দিতে হয়। এসব পিআর বিশেষজ্ঞরা নির্বাচনী প্রচারণার জন্য স্ট্র্যাটেজি প্রণয়ন করেন। সুতরাং অর্থ একটি ফ্যাক্টর।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ইতিহাস দীর্ঘদিনের। ১৭৮৯ সাল থেকে শুরু করে ১৮০০ সাল পর্যন্ত নির্বাচন হয়েছে চারবার। ১৭৮৯ সালে প্রথম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছিলেন জর্জ ওয়াশিংটন। তার কোনো দল ছিল না। ১৭৯৭ পর্যন্ত তিনি ক্ষমতায় ছিলেন। দ্বিতীয় প্রেসিডেন্ট ছিলেন জন এডামস (১৭৯৭-১৮০১)। ফেডারেলিস্ট দলের প্রার্থী ছিলেন তিনি। অন্যদিকে তৃতীয় প্রেসিডেন্ট থমাস জেফারসনের সময় (১৮০১-১৮০৯) ডেমোক্রেটিক-রিপাবলিকান পার্টির আত্মপ্রকাশ ঘটে। ডেমোক্রেট-রিপাবলিকান পার্টির ধারা অব্যাহত থাকে ১৮২৯ সাল পর্যন্ত। এরপর এন্ড্র– জ্যাকসন (১৮২৯-১৮৩৭), যিনি ছিলেন ৭ম প্রেসিডেন্ট, তার আমলে ডেমোক্রেট পার্টির আলাদাভাবে আত্মপ্রকাশ ঘটে। কিন্তু রিপাবলিকান পার্টির আত্মপ্রকাশ ঘটে আব্রাহাম লিংকনের (১৬তম প্রেসিডেন্ট) শাসনামলে (১৮৬১-১৮৬৫)। এই দুুটো বড় দলের পাশাপাশি ‘উইগ’ পার্টির আত্মপ্রকাশ ঘটেছিল। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে ৪ জন ‘উইগ’ পার্টির পক্ষ থেকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছিলেন। ১৮৪১ সালে উইলিয়াম হ্যারিসন ‘উইগ’ পার্টির পক্ষ হয়ে প্রথম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছিলেন। এখন আর এই পার্টির অস্তিত্ব নেই। উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্র গত ২৪০ বছরের ইতিহাসে (১৭৮৯ থেকে) ৪৪ জন প্রেসিডেন্ট পেয়েছে। অর্থাৎ বারাক ওবামা হচ্ছেন ৪৪তম প্রেসিডেন্ট। তবে একই ব্যক্তি গ্রোভার ক্লেভেল্যান্ড প্রথম দু’দুবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছিলেন। ডেমোক্রেট গ্রোভার ক্লেভেল্যান্ড (২২তম) ১৮৮৫-১৮৮৯ সালে প্রথমবার এবং ১৮৯৩-১৮৯৭ (২৪তম) দ্বিতীয়বার প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করেন। এই দীর্ঘ সময়ে রিপাবলিকান পার্টির পক্ষ হয়ে ১৮ জন, ডেমোক্রেট পার্টির পক্ষ হয়ে ১৫ জন, উইগ পার্টির পক্ষ হয়ে ৪ জন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছিলেন। ঐতিহাসিকরা বলেন প্রথম প্রেসিডেন্ট জর্জ ওয়াশিংটনের কোনো দল ছিল না। তবে দ্বিতীয় প্রেসিডেন্ট জন এডামস (১৭৯৭-১৮০১) ফেডারেলিস্ট পার্টির হয়ে নির্বাচিত হয়েছিলেন। সাধারণত একজন প্রেসিডেন্ট ৪ বছরের জন্য নির্বাচিত হন। কিন্তু ৩২তম প্রেসিডেন্ট ফ্রাংকলিন রুজভেল্ট দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণে (১৯৩৩-১৯৪৫) ১২ বছর ক্ষমতায় ছিলেন।
Dainik Jugantor 05/11/2016
0 comments:
Post a Comment