রাজনীতি, আন্তর্জাতিক রাজনীতি এবং সমসাময়িক ঘটনাবলীর বিশ্লেষণ সংক্রান্ত অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর রেহমানের একটি ওয়েবসাইট। লেখকের অনুমতি বাদে এই সাইট থেকে কোনো লেখা অন্য কোথাও আপলোড, পাবলিশ কিংবা ছাপাবেন না। প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন লেখকের সাথে

এক নতুন যুগে প্রবেশ করছে যুক্তরাষ্ট্র


মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৪৫তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প, এ খবর এখন পুরনো। আগামী ২০ জানুয়ারি তিনি শপথ নেবেন। কিন্তু বিতর্ক যেন তার পিছু ছাড়ছে না। নির্বাচনের আগে তিনি বিতর্কিত ছিলেন নানা কারণে। নির্বাচনের ফলাফল নিয়েও কম বিতর্ক হয়নি। আর এখন ক্ষমতা নেয়ার আগেও তিনি বিতর্কের জন্ম দিয়ে চলছেন একের পর এক। প্রশাসনের দুটি গুরুত্বপূর্ণ পদে যাদের তিনি নিয়োগ দিয়েছেন, তাদের নিয়ে বিতর্ক বাড়ছে। রেইনস প্রিবাসকে তিনি নিয়োগ দিয়েছেন চিফ অব স্টাফ হিসেবে। আর ট্রাম্পের মুখ্য নীতিনির্ধারকের দায়িত্ব পালন করবেন স্টিফেন ব্যানন। প্র্রিবাস ট্রাম্পের অতীত অনেক অপকর্মকে সমর্থন করেছেন। এমনকি রিপাবলিকান পার্টির অনেক সিনিয়র নেতাকে তিনি ‘হুমকি’ দিয়েছিলেন ট্রাম্পকে সমর্থন দেয়ার জন্য। যে কারণে রিপাবলিকান পার্টির অনেকেই প্রিবাসকে সমর্থন করেন না। অন্যদিকে ব্যানন কট্টর দক্ষিণপন্থী হিসেবে পরিচিত। তিনি একজন গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব। তার ব্যক্তিগত ওয়েবসাইটটি সমকামীবিরোধী, নারীবিদ্বেষী ও উসকানিমূলক লেখায় পরিপূর্ণ। ট্রাম্পের এ সিদ্ধান্ত প্রমাণ করে, তিনি তার বিতর্কিত সিদ্ধান্তগুলো বাস্তবায়ন করতেই গুরুত্বপূর্ণ এ দুই পদে কট্টরপন্থীদের নিয়োগ দিলেন। দ্বিতীয়ত, ট্রাম্প যে ইতিমধ্যে অন্তর্বর্তীকালীন একটি প্রশাসন গড়ে তুলছেন, তাতে এক ধরনের ‘পারিবারিক কর্তৃত্ব’ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। মেয়ে ইভানকা ও তার স্বামী, যিনি ইহুদি বংশোদ্ভূত, জেয়ার্ড কুশনারের কর্তৃত্ব বাড়ছে। জেয়ার্ড বিভিন্ন নিয়োগে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন এবং ধারণা করা হয় ট্রাম্প প্রশাসনেও তিনি গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকবেন।

এখন যে প্রশ্নটি অনেকেই করছেন তা হচ্ছে, কেমন হবে ট্রাম্পের রাজনীতি? পররাষ্ট্রনীতিতে তিনি কী কী পরিবর্তন আনতে যাচ্ছেন? অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে তার টার্গেট দুটো সেক্টর। এক. অবৈধ অভিবাসী বিতাড়ন, দুই. ওবামাকেয়ার বাতিল করা। বৈধ কিংবা অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে তার বক্তব্য নানা বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। নির্বাচনের আগে দীর্ঘ সময় আমি যুক্তরাষ্ট্রে ছিলাম। বিভিন্ন শহরে গেছি। খুব কাছ থেকে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করেছি। নির্বাচনের দিনে আমি নিজে ব্যক্তিগতভাবে ভোট কেন্দ্রে গেছি। জানার চেষ্টা করেছি নির্বাচন নিয়ে তাদের ভাবনা কী। অনেক বাংলাদেশী-আমেরিকান নাগরিকের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। তাদের মনোভাব জেনেছি। একটা শংকা যে তাদের মাঝে ছিল এবং এখনও আছে, তা অস্বীকার করা যাবে না। অবৈধ বাংলাদেশীদের মাঝে আতংক থাকাটা স্বাভাবিক। তারা বৈধ হওয়ার যে স্বপ্ন দেখেছিলেন, তা এখন সদূরপরাহত। অন্যদিকে যারা যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব নিয়েছেন, তারাও আছেন বিপদে। কেননা ট্রাম্পের একজন উপদেষ্টার বক্তব্য এখন সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে গেছে, যেখানে তিনি বলেছেন, মার্কিন নাগরিকদের মাঝে যারা মুসলমান, তাদের পুনরায় যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের ব্যাপারে কড়াকড়ি আরোপ করা হবে। এ বক্তব্য বাংলাদেশী-আমেরিকানদের মাঝে আতংক সৃষ্টি করেছে। আমি আমার পরিবারের অনেক সদস্যকে জানি, যারা বাংলাদেশে আসা পিছিয়ে দিয়েছেন। এরা সবাই দেখতে চান ট্রাম্প ক্ষমতা নেয়ার পর কী পদক্ষেপ নেন। তবে অভিবাসীদের ব্যাপারে প্রচলিত নীতিমালায় পরিবর্তন আসবে। ট্রাম্প এ ব্যাপারে কঠোর আইন প্রণয়ন করবেন বলেই আমার ধারণা। কংগ্রেসের উভয় কক্ষে এখন রিপাবলিকান পার্টির সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে। উপরন্তু ট্রাম্প সুপ্রিমকোর্টে তিনজন কনজারভেটিভ বিচারককে নিয়োগ দেবেন। ফলে তার যে কোনো সিদ্ধান্ত এখন উচ্চ আদালত কর্তৃক অনুমোদিত হবে। ট্রাম্প এখন ৩০ লাখ অবৈধ অভিবাসীদের বের করে দেয়ার কথা বলছেন। এ ক্ষেত্রে একটি ‘নীতিমালা’ তিনি প্রণয়ন করবেন। যাদের বিরুদ্ধে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ আছে, তারা এ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হবে।

ট্রাম্পের প্রধান টার্গেট মেক্সিকানরা। প্রচুর মেক্সিকান নাগরিক যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধভাবে বসবাস করেন। আমি নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটস এলাকায় দেখেছি অবৈধ অভিবাসীরা, যাদের অধিকাংশই মেক্সিকান নাগরিক, তারা রাস্তার পাশে কাজের জন্য নিত্যদিন বসে থাকেন। মূলত এরা নির্মাণকাজের শ্রমিক। সস্তা শ্রমের কারণে কনট্রাক্টররা এদের নিয়োগ দেন। আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে এরা বছরের পর বছর যুক্তরাষ্ট্রে থাকছেন। প্রত্যক্ষভাবেই এরা যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে অবদান রাখছেন। অনেক কাজ আছে যা মেক্সিকানদের ছাড়া চলে না। যেমন- নিউইয়র্কের মতো বড় শহরে পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের কাজটি নিয়ন্ত্রণ করেন মেক্সিকানরা। বৈধ ও অবৈধ উভয় শ্রেণীর মেক্সিকানরাই এ কাজে নিয়োজিত। এ ক্ষেত্রে মেক্সিকানদের বের করে দেয়া হলে (?) পুরো নিউইয়র্ক শহরই অচল হয়ে যাবে। তাই আমার ধারণা, সিরিয়াস কোনো সিদ্ধান্ত নেবে না ট্রাম্প প্রশাসন। কিছু অবৈধ অভিবাসী, যাদের বিরুদ্ধে ক্রিমিনাল রেকর্ড আছে, তারা ডিপোর্টের সম্মুখীন হতে পারেন। তবে সব বিদেশী, যাদের স্থায়ী বসবাসের অধিকার রয়েছে, তারা এক ধরনের ‘স্ক্রিনিংয়ের’ সম্মুখীন হতে পারেন। তারা নানা প্রশাসনিক জটিলতায় পড়তে পারেন। মুসলমানরা এ ক্ষেত্রে বড় ঝামেলায় পড়বেন।

আমি অনেক বছর ধরে নিয়মিত যুক্তরাষ্ট্রে যাতায়াত করি। এখানে এক ধরনের বর্ণবাদ রয়েছে। ট্রাম্পের শাসনামলে এ বর্ণবাদ আরও শক্তিশালী হবে। ট্রাম্পের বিজয়ে বর্ণবাদীরা ও মুসলমানবিরোধীরা আরও উৎসাহিত হবে। ফলে বর্ণবাদী হামলা আরও বাড়বে। ইতিমধ্যেই সংখ্যালঘু অভিবাসীদের ওপর আক্রমণের খবর বেড়েছে বলে সংবাদপত্রে খবর প্রকাশিত হয়েছে। ২০১৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রে মুসলিম বিদ্বেষজনিত হামলা আগের তুলনায় ৬৭ শতাংশ বেড়েছে। ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বরের (নাইন-ইলেভেন) সন্ত্রাসী হামলার পর এটি সর্বাধিকসংখ্যক হেইট ক্রাইম। এই হেইট ক্রাইমের মধ্যে ধর্মীয় ও বর্ণবিদ্বেষমূলক হামলার ঘটনা সবচেয়ে বেশি। ট্রাম্পের বিজয় এ হেইট ক্রাইমকে এখন উসকে দেবে। ট্রাম্প উগ্র জাতীয়তাবাদকে উসকে দিয়েছেন। তিনি নিজে অভিবাসী পরিবারের সন্তান হয়েও (তার পূর্বপুরুষ জার্মানি থেকে এসেছিল ১৮৮৫ সালে) শুধু অপরাজনীতির স্বার্থে অভিবাসীদের বিষয়টিকে ইস্যু করেছেন। তিনি যদি তার নীতিতে অটল থাকেন, তাহলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে মেক্সিকোর তথা লাতিন আমেরিকার স্প্যানিশ ভাষাভাষী দেশগুলোর সম্পর্কের অবনতি ঘটবে।

যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্য খাতে সেবা প্রদান একটি বড় সমস্যা। ওবামাকেয়ার সবার জন্য স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করলেও সাম্প্রতিক সময়ে হেলথ ইন্স্যুরেন্সের প্রিমিয়াম কোনো কোনো রাজ্যে বেড়ে গিয়েছিল। নির্বাচনের আগে ট্রাম্প এটিকে পুঁজি করেছিলেন। এ ওবামাকেয়ার তথা হেলথ ইন্স্যুরেন্স ছিল সবার জন্য বাধ্যতামূলক। ট্রাম্প বলেছিলেন তিনি এটা বাতিল করবেন। এখন বলছেন তিনি এতে সংস্কার আনবেন। যদিও এটা এখন অবধি স্পষ্ট নয় সংস্কারটা তিনি কীভাবে আনবেন। এতে করে সাধারণ মানুষ কতটুকু উপকৃত হবে, তাও স্পষ্ট নয়।

পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে তার ভূমিকা কী হবে, এ বিষয়টি এখন বেশ গুরুত্বপূর্ণ। কেননা নির্বাচনের আগে রাশিয়ার সঙ্গে তার সম্পর্ক, পুতিনকে ওবামার চেয়ে ভালো নেতা হিসেবে আখ্যায়িত করা এবং ট্রাম্পকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে রাশিয়া দেখতে চায়- এ ধরনের সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর একটা প্রশ্ন এখন অনেকের মনে দেখা দিয়েছে- যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়া সম্পর্ক এখন কোন পর্যায়ে উন্নীত হবে? রাশিয়া কর্তৃক ইউক্রেনের ক্রিমিয়ার অন্তর্ভুক্তির পর যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার ওপর অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপ করে। রাশিয়াকে জি-৮ থেকেও বহিষ্কার করা হয়। এখন পরিস্থিতি কি বদলে যাবে? নির্বাচনের আগে ট্রাম্প বলেছিলেন, তিনি রাশিয়ার ওপর থেকে অর্থনৈতিক অবরোধ প্রত্যাহারের পক্ষে। নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার পর টেলিফোনে ট্রাম্পের সঙ্গে পুতিনের কথা হয়েছে। এ দু’জনের ফোনালাপকে ‘গভীর বন্ধুত্বের সুর’ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। ১৯৯১ সালের ডিসেম্বরে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর স্নায়ুযুদ্ধের অবসান হয়েছিল। কিন্তু বিশ্ব রাজনীতিতে যুক্তরাষ্ট্রের একক কর্তৃত্ব করার প্রবণতা এবং বিভিন্ন অঞ্চলে তার সামরিক আগ্রাসন নতুন করে স্নায়ুযুদ্ধের (স্নায়ুযুদ্ধ-২) জন্ম দিয়েছিল। এবং রাশিয়া যুক্তরাষ্ট্রের একক কর্তৃত্বের প্রবণতাকে চ্যালেঞ্জ করতে শুরু করেছিল। এখন কি যুক্তরাষ্ট্র এক্ষেত্রে ‘ইউটার্ন’ নেবে? এতে করে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় স্বার্থ কতটুকু রক্ষিত হবে? মার্কিন প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে, বিশেষ করে পেন্টাগনে যেসব কট্টপন্থী রয়েছেন, তারা কি রাশিয়ার প্রতি ঝুঁকে যাওয়ার এ প্রবণতাকে মেনে নেবেন? সিনিয়র জেনারেলদের ভূমিকাই বা কী হবে এখন? রাশিয়া-যুক্তরাষ্ট্র ‘মৈত্রী’ কি ইতিহাসকে আবার স্মরণ করিয়ে দেবে? দ্বিতীয় ইয়াল্টার কি জন্ম হচ্ছে? পাঠক স্মরণ করতে পারেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষ পর্যায়ে ইউরোপের ভূমিকা কী হবে তা নিয়ে আলোচনার জন্য ক্রিমিয়ার ইয়াল্টায় (১৯৪৫ সালের ফেব্র“য়ারি) চার্চিল (যুক্তরাষ্ট্র), রুজভেন্ট (যুক্তরাষ্ট্র) ও স্ট্যালিন (সোভিয়েত ইউনিয়ন) এক শীর্ষ বৈঠকে মিলিত হয়েছিলেন। সেই পরিস্থিতি কি তাহলে আবার ফিরে আসছে? সেক্ষেত্রে রুশ-মার্কিন ঐক্য সিরিয়া পরিস্থিতির ওপর কী প্রভাব ফেলবে? আসাদ ইতিমধ্যে এ ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। সম্ভাব্য এ ‘ঐক্য’ আসাদকে আরও কিছুদিন ক্ষমতায় থাকার সুযোগ করে দেবে মাত্র। কিন্তু তাতে করে যুদ্ধ সেখানে থামবে বলে মনে হয় না। যদিও ট্রাম্প বলেছেন, তিনি আসাদবিরোধী নুসরা ফ্রন্টকে (পরিবর্তিত নাম জাবহাত ফাতেহ আল শাম) অর্থ ও অস্ত্র দিয়ে সাহায্য করবেন না; কিন্তু তাতে করে কি আইএসকে ধ্বংস করা সম্ভব হবে? অনেকেই জানেন, আইএস পরোক্ষভাবে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ‘সহযোগিতা’ পেয়ে থাকে। ট্রাম্পের সময় আইএস কি তার অস্তিত্ব বজায় রাখতে পারবে? এক্ষেত্রে গোটা মধ্যপ্রাচ্যে এক ধরনের ‘গেরিলা যুদ্ধ’ দেখা দিতে পারে। ট্রাম্প যদি সত্যি সত্যি ইরানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক সমঝোতা চুক্তি সমর্থন করতে অস্বীকার করেন, তাহলে ইরান এই গেরিলা যুদ্ধ উসকে দেবে। আল কায়দা কিংবা আইএসের মতো সন্ত্রাসী সংগঠনগুলো সেই পুরনো ‘স্পাইডার ওয়েভ’ তত্ত্বে ফিরে যাবে। এরা ছোট ছোট গ্র“পে বিভক্ত হয়ে গুপ্তহামলা চালাবে। ফলে একটি স্থিতিশীল মধ্যপ্রাচ্য দেখার সম্ভাবনা ক্ষীণ।

চীনের সঙ্গে ট্রাম্প প্রশাসনের সম্পর্ক নিয়েও প্রশ্ন আছে। চীনের সঙ্গে এক ধরনের ‘ট্রেড ওয়ার’ শুরু হয়ে যেতে পারে। চীনা পণ্যের ওপর শতকরা ৪৫ ভাগ হারে শুল্ক আরোপ করলে (যা তিনি প্রস্তাব করেছেন) চীন বিষয়টি সহজভাবে নেবে বলে মনে হয় না। মেক্সিকোর সঙ্গে সীমান্তে উঁচু দেয়াল নির্মাণের বিষয়টিও অত সহজ হবে না। তবে একটা আশংকার জায়গা হচ্ছে নতুন প্রশাসনে জাতীয় নিরাপত্তা প্রধান হিসেবে অবসরপ্রাপ্ত জেনারেল মাইকেল ফ্লাইনের নিয়োগ। ফ্লাইন অত্যন্ত কট্টরপন্থী, ইসলামবিরোধী এবং পুতিনের মতো নেতৃত্বকে পছন্দ করেন। তিনি সম্প্রতি একটি বই লিখেছেন। তাতে তিনি যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য হেরে যাওয়ার পেছনে ‘সঠিক রাজনৈতিক লাইনের’ অভাবকে দায়ী করেছেন। এবং ইসলামবিদ্বেষকে তিনি যুক্তিযুক্ত বলে মনে করেন। ফলে ফ্লাইনের মতো কট্টরপন্থীদের নিয়োগ প্রমাণ করে ট্রাম্প তার আগের অবস্থান থেকে সরে আসছেন না। ট্রাম্প যদি তার আগের অবস্থানে দৃঢ় থাকেন এবং মুসলমানদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে বিধিনিষেধ আরোপ করার আইন প্রণয়ন করেন, তাহলে বিশ্বে যুক্তরাষ্ট্রের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হতে বাধ্য। কয়েকটি মুসলমানপ্রধান দেশে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড রয়েছে। এবং এর জন্য যুক্তরাষ্ট্রের নীতিকেই দায়ী করা হয়। এজন্য সব মুসলমানপ্রধান দেশকে দায়ী করা ঠিক হবে না।

ট্রাম্প একটি উগ্র জাতীয়তাবাদের জন্ম দিয়ে বিজয়ী হয়েছেন। এ উগ্র জাতীয়তাবাদ শুধু যুক্তরাষ্ট্রেই নয়, বরং সমগ্র ইউরোপে ছড়িয়ে যাবে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী বিশ্বে ‘লিবারেলিজমের’ যে ধারা বহমান ছিল, তা এখন ঝুঁকির মুখে পড়ল। প্রেসিডেন্ট ওবামা তার শেষ বিদেশ সফরে এ উগ্র জাতীয়তাবাদ সম্পর্কে সতর্কবাণী উচ্চারণ করেছেন। বর্ণ, ধর্ম বা নৃতাত্ত্বিক সীমারেখা টানার কারণে যে বিভাজন, সে বিপদ সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্র সজাগ বলেও তিনি জানান। ওবামার এ বক্তব্য অনেককে খুশি করে থাকবে। কিন্তু বাস্তবতা কী সেটাই দেখার বিষয়। ‘ট্রাম্প যুগ’ নতুন বিশ্ব ব্যবস্থায় কী পরিবর্তন আনে, সেটাই মুখ্য বিষয় এখন।
Daily Jugantor
19.11.2016

1 comments: