বড় ধরনের বিতর্কের মধ্য দিয়ে মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। অতীতে কোনো নির্বাচন এত বেশি বিতর্কের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত হয়নি। নির্বাচনে মূল দুই প্রার্থী হিলারি ক্লিনটন ও ডোনাল্ড ট্রাম্প দু’জনই নানা বিতর্কের মাঝে নিজেদের জড়িয়ে ফেলেছেন। ডোনাল্ড ট্রাম্পের নারী কেলেংকারি ও ট্যাক্স ফাঁকির ঘটনায় তার জনপ্রিয়তায় যখন ধস নেমেছিল এবং মিডিয়া যখন সম্ভাব্য প্রেসিডেন্ট হিসেবে হিলারি ক্লিনটনকে চিহ্নিত করেছিল, ঠিক তখনই প্রকাশিত হল ‘ই-মেইলগেট’ (Emailgate) কেলেংকারির খবর। এফবিআই হিলারি ক্লিনটনের ই-মেইল তদন্ত করবে বলে ঘোষণা করেছে। অনেকদিন থেকেই হিলারি ক্লিনটন ই-মেইল বিতর্কে জড়িয়ে আছেন। তিনি যখন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন, তখন তার জন্য যে সরকারি ই-মেইল বরাদ্দ ছিল তা তিনি মাঝে মধ্যে ব্যবহার না করে নিজের ব্যক্তিগত ই-মেইল ব্যবহার করে অনেকের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিযোগ ছিল তিনি এসব ই-মেইলের মাধ্যম যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তাসংক্রান্ত তথ্য ফাঁস করেছেন। যদিও এ অভিযোগের কোনো সত্যতা খুঁজে পায়নি এফবিআই। গত গ্রীষ্মে এফবিআই হিলারি ক্লিনটনকে এক ধরনের ‘ক্লিয়ারেন্স’ দিয়েছিল। কিন্তু হঠাৎ করেই নির্বাচনের এক সপ্তাহ আগে এফবিআই (FBI) প্রধান জেমস বি কোমেয় কংগ্রেসের রিপাবলিকান পার্টির সদস্যদের কাছে একটি চিঠি লিখে জানান, এফবিআই এ ই-মেইলগুলোর তদন্ত করবে। এ চিঠির বিষয়বস্তু প্রকাশিত হলে তা বড় বিতর্কের জন্ম দেয়। সত্তর দশকের ‘ওয়াটারগেট’ কেলেংকারির সঙ্গে মিলিয়ে হিলারি ক্লিনটনের এ ই-মেইল বিতর্ককে বলা হচ্ছে ‘ই-মেইলগেট’। পাঠকদের স্মরণ করিয়ে দেই, যুক্তরাষ্ট্রের এ ওয়াটারগেট কেলেংকারির কারণে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন ১৯৪৭ সালে পদত্যাগ করেছিলেন। নিক্সন ছিলেন রিপাবলিকান পার্টির প্রেসিডেন্ট। অথচ তিনি ১৯৭২ সালে ডেমোক্রেট পার্টির ওয়াশিংটনের ওয়াটারগেটের সদর দফতরে পার্টির নেতাদের কথাবার্তা টেপ করার জন্য ফাঁদ পেতেছিলেন। এ অভিযোগের তদন্ত ও এর সত্যতা খুঁজে পেয়েছিলেন সুপ্রিমকোর্ট। পরে যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস তাকে ‘ইমপিচ’ করার উদ্যোগ নিলে নিক্সন পদত্যাগ করেছিলেন। এখন হিলারির এই ই-মেইল বিতর্ককে ওই ওয়াটারগেট কেলেংকারির সঙ্গে মেলানো হচ্ছে। তবে নির্বাচনের মাত্র কয়েকদিন আগে এফবিআই এ ধরনের কোনো তদন্তের নির্দেশ দিতে পারে কিনা, তা বড় বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।
মিনোসোটা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের শিক্ষক অধ্যাপক রিচার্ড ডব্লিউ পেইনটার নিউইয়র্ক টাইমস পত্রিকায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে বলেছেন, এফবিআই পরিচালক ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন। তিনি ঐধঃপয অপঃ ভঙ্গ করেছেন বলেও অধ্যাপক পেইনটার মনে করেন। ঐধঃপয অপঃ অনুযায়ী কোনো সরকারি কর্মকর্তা তার সরকারি পদবি ব্যবহার করে নির্বাচনে প্রভাবিত হয় এমন কোনো কাজ করতে পারেন না। তিনি (কোমেয়, এফবিআই পরিচালক) তদন্ত চালাতেই পারেন। তবে এটা গোপনে করা উচিত ছিল এবং নির্বাচনের পর তা প্রকাশ করা উচিত ছিল বলে পেইনটার মনে করেন। তবে নিঃসন্দেহে হিলারি ক্লিনটনের এ ই-মেইল বিতর্ক তার জনপ্রিয়তায় ধস নামিয়েছে। গত সপ্তাহে ন্যূনতম ৬টি জনমত জরিপ প্রকাশিত হয়েছে। তাতে কোনোটাতে ক্লিনটন, কোনোটাতে ট্রাম্পকে সম্ভাব্য ‘বিজয়ী’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। জবধষ পষবধৎ চড়ষরঃরপং নামে একটি নির্বাচন পর্যবেক্ষণ সংস্থা ২২ অক্টোবর এ ৬টি জনমত জরিপ প্রকাশ করে। এতে শুধু লসএঞ্জেলস টাইমসের জরিপে ট্রাম্প শতকরা ৪৭ ভাগ আর হিলারি শতকরা ৪৩ ভাগ ভোট পাবেন বলে মন্তব্য করা হয়েছে। অন্যদিকে এবিসি নিউজ (ট্রাম্প ৪৭, হিলারি ৪৮ ভাগ), আইবিডি (ট্রাম্প ৪৪, হিলারি ৪৫ ভাগ), এনবিসি নিউজ (ট্রাম্প ৪৪, হিলারি ৫১ ভাগ), ইকোনমিস্ট (ট্রাম্প ৪৬, হিলারি ৪৯ ভাগ), আর ফক্স নিউজে (ট্রাম্প ৪৪, হিলারি ৪৯ ভাগ) হিলারি বিজয়ী হবেন বলে মন্তব্য করা হয়েছে। তবে নির্বাচনের দৃশ্যপট দ্রুত বদলে যাচ্ছে ‘এফবিআই হিলারি ক্লিনটনের ই-মেইল তদন্ত করবে’ এ ঘোষণার পর। ৩০ অক্টোবর এবিসি ও ওয়াশিংটন পোস্টের যৌথ জরিপে ট্রাম্পকে মাত্র ১ পয়েন্টের ব্যবধানে এগিয়ে রাখা হয়েছে। যেখানে হিলারি ক্লিনটনের পক্ষে জনমত ৪৫ ভাগ, সেখানে ডেনাল্ড ট্রাম্পের পক্ষে জনমত ৪৬ ভাগ।
নির্বাচনের দিন যত ঘনিয়ে আসছে, ততই একের পর এক বিতর্ক উঠছে। রাশিয়ার সরকারের সঙ্গে ট্রাম্পের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির যোগাযোগ ছিল- এমন সংবাদ ছাপা হয়েছে একটি অনলাইন সংবাদপত্রে (Slate)। আর এনবিসি জানাচ্ছে, ট্রাম্পের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সাবেক চেয়ারম্যান পল ম্যানাটোরসকে এফবিআই রাশিয়া ও ইউক্রেনের সঙ্গে যোগসাজশের অভিযোগে জিজ্ঞাসাবাদ করবে। ইতিমধ্যে ওহিও, অ্যারিজোনা, নেভাদা ও পেনসেলভেনিয়া স্টেটে হিলারি সমর্থক
ডেমোক্রেটিক পার্টি ট্রাম্পের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির বিরুদ্ধে ৪টি মামলা করছে। ১৮৭১ সালের কঁ কষীঁ কষধহ অপঃ অনুযায়ী এ মামলাগুলো করা হয়। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সদস্যদের ভোট দিতে বাধা দান, জোরজবরদস্তি, হুমকি দেয়া এ আইন বলে অপরাধ হিসেবে গণ্য।
বেশ ক’দিন থেকেই আগাম ভোট নেয়া শুরু হয়েছে। মানুষের দৃষ্টি এখন ১১টি ব্যাটেল গ্রাউন্ড স্টেটের দিকে (কলোরাডো, ফ্লোরিডা, আইওয়া, মিসিগান, নেভাদা, নিউ হ্যাম্পশায়ার, নর্থ ক্যারোলিনা, ওহিও, পেনসেলভেনিয়া, ভার্জিনিয়া, উইসকনসিন)। এসব স্টেটের ভোটাররা এখনও দ্বিধাবিভক্ত। এসব স্টেটের ভোটের ফলাফলেই নির্ধারিত হবে, কে যাবেন হোয়াইট হাউসে। ফলে নির্বাচনের শেষ মুহূর্তে এসে হিলারি ও ট্রাম্প দু’জনই ব্যস্ত এসব রাজ্যে নির্বাচনী প্রচারণায়।
Daily Jugantor
04.11.2016
0 comments:
Post a Comment