রাজনীতি, আন্তর্জাতিক রাজনীতি এবং সমসাময়িক ঘটনাবলীর বিশ্লেষণ সংক্রান্ত অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর রেহমানের একটি ওয়েবসাইট। লেখকের অনুমতি বাদে এই সাইট থেকে কোনো লেখা অন্য কোথাও আপলোড, পাবলিশ কিংবা ছাপাবেন না। প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন লেখকের সাথে

একটি ম্যাজিক ফিগার ও জনমত জরিপ


ম্যাজিক ফিগারটা হচ্ছে ২৭০-এর। ৫৩৮টি নির্বাচকমণ্ডলীর ভোটের মধ্যে প্রার্থীকে পেতে হবে ২৭০টি। তাতেই হোয়াইট হাউসে যাওয়ার রাস্তাটা ক্লিয়ার। ইতিমধ্যে এই ম্যাজিক ফিগারের জন্য লড়াইটা বেশ জমে উঠেছে। বাকি আছে মাত্র ৪৮ ঘণ্টা। সর্বশেষ জনমত জরিপে এগিয়ে আছেন হিলারি। নিউইয়র্ক টাইমস ৪ নভেম্বর আমাদের জানিয়েছে, হিলারি পাবেন ৪৫ ভাগ ভোট আর ট্রাম্প ৪২ ভাগ। ‘রিয়েল ক্লিয়ার পলিটিকসের (Real clear politics) মতে, হিলারির পক্ষে ভোট ৪৬ দশমিক ৭ ভাগ আর ট্রাম্পের ৪৫ ভাগ। এবিসি’র জনমত জরিপও হিলারির পক্ষে, ৪৭ ভাগ; যেখানে ট্রাম্প মাত্র ৪৪ ভাগ। শনিবার ও রোববার সাধারণত কোনো জনমত জরিপ হয় না। এর অর্থ নির্বাচনের দিন মঙ্গলবার সর্বশেষ জরিপ হয়তো আমরা পেতে পারি। আরও দুটি জনমত জরিপকারী সংস্থার মতামতও হিলারির পক্ষে। ‘ফাইভ থার্টি এইট (Five Thirty Eight) বলছে, শতকরা ৬৬ দশমিক ৫ ভাগ সম্ভাবনা রয়েছে হিলারি ক্লিনটনের বিজয়ী হওয়ার। আর ‘দ্য আপশট’ (The Upshot) বলছে, হিলারির বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনা শতকরা ৮৪ ভাগ।
নির্বাচন অনেকটাই এখন কয়েকটি ‘ব্যাটেলগ্রাউন্ড স্টেট’-এর দিকে ঝুঁকে গেছে। ফ্লোরিডা আর নিউ হ্যাম্পশায়ারের দিকে এখন টিভির চোখ বারবার আটকে যাচ্ছে। মোট ১১টি স্টেটকে ‘ব্যাটেলগ্রাউন্ড স্টেট’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল। এর মাঝে অনেকগুলোতেই হিলারি তার অবস্থান শক্তিশালী করতে পেরেছেন। প্রেসিডেন্ট নির্বাচন যেহেতু নির্বাচকমণ্ডলীর ভোটে হয়, সেহেতু এটা অনেকটাই অংকের হিসাব। ডেমোক্রেটদের ১৭টি স্টেটের ২০০ নির্বাচকমণ্ডলীর ভোট কনফার্ম। অর্থাৎ এই স্টেটগুলোর ভোটাররা (ক্যালির্ফোনিয়া, নিউইয়র্ক, নিউ জার্সি ইত্যাদি) বরাবরই ডেমোক্রেট পার্টির নির্বাচকমণ্ডলীর পক্ষেই ভোট দেয়। মোট সংখ্যা এখানে ২০০। এর বাইরে আরও ৫টি স্টেট ঝুঁকে আছে ডেমোক্রেটদের দিকে। অর্থাৎ ভোটাররা এসব স্টেটে ডেমোক্রেট পার্টির নির্বাচকমণ্ডলীকেই ভোট দেবে। এই ৫টি স্টেটে (কলোরাডো, মিসিগান, পেনসেলভেনিয়া ইত্যাদি) নির্বাচকমণ্ডলীর সংখ্যা ৬৮। অর্থাৎ ম্যাজিক ফিগারের কাছাকাছি ২৬৮ নির্বাচকমণ্ডলীর ভোট নিয়ে অবস্থান করছেন হিলারি ক্লিনটন। অন্যদিকে রিপাবলিকান পার্টির কনফার্ম নির্বাচকমণ্ডলীর ভোট ১৫৭টি (টেক্সাস, আলাবামা, আরাকানসাস, মিসৌরি ইত্যাদি)। ঝুঁকে আছে আরও ৫টি স্টেট (জর্জিয়া, ওহিও, উতাহ)। এখানে নির্বাচকমণ্ডলীর ভোট ৪৭। সব মিলিয়ে ট্রাম্পের ঝুড়িতে আছে ২০৪টি নির্বাচকমণ্ডলীর ভোট। বাকি রইল ৬টি ‘ব্যাটেলগ্রাউন্ড স্টেট’ এর নির্বাচকমণ্ডলীর ভোট (আরিজোনা, ফ্লোরিডা, নর্থ ক্যারোলিনা ইত্যাদি)। এখানে মোট ভোট ৬৬। ইতিমধ্যে এসব ‘ব্যাটেলগ্রাউন্ড স্টেট’-এর কোনো কোনোটি ট্রাম্পের দিকে ঝুঁকে পড়েছে। সবার দৃষ্টি এখন নিউ হ্যাম্পশায়ারের ৪টি গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচকমণ্ডলীর ভোটের দিকে।
শেষ মুহূর্তে এসেও কিছু কিছু জটিলতা বাড়ছে। ওহিও ও নর্থ ক্যারোলিনা স্টেটে কোথাও কোথাও যারা আগাম ভোট দিতে যাচ্ছেন, তাদের বাধা দেয়া হচ্ছে। দুটো মামলাও হয়েছে। এখানে বিচারক ভোটারদের ভোট নিশ্চিত করার নির্দেশ দিয়েছেন। ট্রাম্পের জন্য দুঃসংবাদ আছে দুটি। এক. নিউইয়র্কের ম্যানহাটনের জেলা জজ আদালতে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়ন ও ধর্ষণের একটি মামলা হয়েছে। যিনি মামলা করেছেন তিনি ১৩ বছরের এক কিশোরী। বিচারপতি ১৬ ডিসেম্বর (২০১৬) ওই মামলার শুনানির দিন ধার্য করেছেন। দুই. মেক্সিকোর তিজুআনায় (Tijuwana) ৩২ মিলিয়ন ডলার ট্যাক্স ফাঁকি ও জালিয়াতির অভিযোগে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে। এখানে ডোনাল্ড ট্রাম্পের হোটেল তথা ‘রিয়েল এস্টেট’ ব্যবসা রয়েছে। এ ধরনের মামলা ট্রাম্পের বিরুদ্ধে এই প্রথম নয়। বরং এর আগেও এ ধরনের মামলা হয়েছে।
এক ঐতিহাসিক বিজয়ের দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে আছেন হিলারি ক্লিনটন। একসময় জয় যেখানে একরকম নিশ্চিত ছিল, সেখানে এফবিআই’র ই-মেইল তদন্ত করার নির্দেশ কিছুটা হলেও হিলারি ক্লিনটনকে বিপদে ফেলেছিল। সেই বিপদ তিনি অনেকটাই কাটিয়ে উঠতে পেরেছেন বলে মনে হয়। ইকোনমিস্ট কিংবা নিউজউইকের মতো জনপ্রিয় সংবাদ সাময়িকীও হিলারিকে সমর্থন করছে। ফলে হিলারির জয়টা এখন অনেকটাই হাতের মুঠোয়।
Daily Jugantor
06.11.2016

0 comments:

Post a Comment