রাজনীতি, আন্তর্জাতিক রাজনীতি এবং সমসাময়িক ঘটনাবলীর বিশ্লেষণ সংক্রান্ত অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর রেহমানের একটি ওয়েবসাইট। লেখকের অনুমতি বাদে এই সাইট থেকে কোনো লেখা অন্য কোথাও আপলোড, পাবলিশ কিংবা ছাপাবেন না। প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন লেখকের সাথে

কেমন হবে ২০১৭ সালের বিশ্বরাজনীতি





যুক্তরাষ্ট্রে ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিজয়, ইউরোপে ব্যাপক অভিবাসনকে কেন্দ্র করে সেখানে কট্টর দক্ষিণপন্থী রাজনীতির উত্থান এবং আইএস নির্মূলে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার ব্যর্থতার পর এখন যে প্রশ্নটি ব্যাপকভাবে আলোচিত হচ্ছে, তা হলো কেমন হবে ২০১৭ সালের বিশ্বরাজনীতি? গেল নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছিলেন ট্রাম্প। তিনি শপথ নেবেন ২০ জানুয়ারি।
এরই মধ্যে তাঁর নানা বক্তব্য বিশ্বব্যাপী একটি বড় বিতর্কের সৃষ্টি করেছে। এমনকি তিনি মন্ত্রিসভায় যাঁদের নাম প্রস্তাব করেছেন, তাঁরা সবাই ট্রাম্পের মতোই ইসলাম তথা ইমিগ্রেশনবিরোধী। সুতরাং ধারণা করা স্বাভাবিক যে তাঁরা সবাই যুক্তরাষ্ট্রের একটি কঠোর অভিবাসন তথা ইসলামবিরোধী নীতি গ্রহণে ট্রাম্পকে সাহায্য ও সহযোগিতা করবেন। এতে যুক্তরাষ্ট্রের ট্র্যাডিশনাল ইউরোপীয় মিত্ররাও অনুপ্রাণিত হয়েছেন। নির্বাচনের আগেই ট্রাম্পের কঠোর অভিবাসন ও ইসলামবিরোধী মনোভাব ইউরোপের রাজনীতিতে বড় প্রভাব ফেলেছিল। গেল বছর এ প্রশ্নে ব্রিটেনে গণভোট হয়েছিল। ওই গণভোটে ব্রিটেনের ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছিল, যা ব্রেক্সিট নামে এখন অভিহিত হচ্ছে। ট্রাম্পের বিজয়ের ফলে সারা ইউরোপে যে উগ্র জাতীয়তাবাদী রাজনীতির উত্থান ঘটেছে, তার প্রভাব পড়বে চলতি বছর অনুষ্ঠিত তিনটি দেশের নির্বাচনে। হল্যান্ডে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ১৫ মার্চ। এই নির্বাচনে কট্টরপন্থী নেতা গ্রেট উইলডার্সের বিজয়ের আশঙ্কা করছে অনেকে। উইলডার্স রাজনৈতিক দল ‘পার্টি ফর ফ্রিডম’ বা ‘পিভিভি’র নেতা। ট্রাম্পের মতোই তিনি ইসলাম ও অভিবাসনবিরোধী। ঘৃণা ছড়ানোর অভিযোগে তিনি অভিযুক্ত হয়েছিলেন। কিন্তু তাঁকে শাস্তি দেওয়া হয়নি। তিনি হল্যান্ডে ইসলামের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ কোরআন শরিফ নিষিদ্ধ করা, যাঁরা হিজাব পরিধান করবেন, তাঁদের ওপর ট্যাক্স আরোপ করা এবং কোনো মসজিদ তৈরিতে অনুমোদন না দেওয়ার জন্য আহ্বান জানিয়েছিলেন। তাঁর উগ্র মনোভাবের কারণেই তাঁর পক্ষে একটা জনমত গড়ে উঠেছে সেখানে এবং বলা হচ্ছে, ব্রিটেনের অনুসরণে হল্যান্ডও ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে যেতে পারে, যেটাকে তারা বলছে ‘নেক্সিট’। ইউরোপে ব্যাপক সিরীয় অভিবাসীর আগমনের কারণে ব্যক্তিগতভাবে ক্ষতি হলো ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট হল্যান্ডের। তাঁর জনপ্রিয়তা এখন মাত্র ৪ শতাংশে এসে দাঁড়িয়েছে। ২৩ এপ্রিল সেখানে প্রথম দফা এবং ৭ মে দ্বিতীয় দফা প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সোশ্যালিস্ট পার্টি এখন আর হল্যান্ডকে প্রার্থী করবে না। জনমত জরিপে এগিয়ে আছেন কট্টর দক্ষিণপন্থী নেতা মারিয়ানে লি পেন। তিনি উগ্রপন্থী ন্যাশনাল ফ্রন্টের নেতা। তবে তুলনামূলক বিচারে অপর দক্ষিণপন্থী নেতা ও ‘লেস রিপাবলিকানস’ পার্টির নেতা ফ্রাসোইস ফিলোনের অবস্থান ভালো। তিনি হচ্ছেন ফ্রান্সের ‘ডোনাল্ড ট্রাম্প’। পরিস্থিতি যেদিকে যাচ্ছে, তাতে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন দ্বিতীয় রাউন্ডে গড়াবে। এখানে বলা ভালো, হল্যান্ডের শাসনামলে তিনি সিরীয় অভিবাসীদের জন্য ‘ফ্রান্সের দরজা’ খুলে দিয়েছিলেন, যা কিনা কট্টরপন্থীদের উসকে দিয়েছিল এবং স্থানীয় পর্যায়ের নির্বাচনে বিষয়টা পুঁজি করে ন্যাশনাল ফ্রন্ট তাদের অবস্থান শক্তিশালী করেছে। নির্বাচনে মারিয়ানে লি পেন বিজয়ী না হলেও তিনি যে ফ্রান্সের জাতীয় রাজনীতিতে অন্যতম শক্তিতে পরিণত হয়েছেন, তা বলার আর অপেক্ষা রাখে না। নির্বাচন হবে জার্মানিতেও। ২২ অক্টোবর সেখানে নির্বাচন। চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মার্কেল চতুর্থবারের জন্য চ্যান্সেলর প্রার্থী হয়েছেন। তাঁর দল সিডিইউ তাঁকে মনোনয়ন দিয়েছে। একসময়ের বিরোধী দল এসপিডিকে নিয়ে তিনি জার্মানিতে একটি গ্রেটার কোয়ালিশন গড়ে তুলেছেন। নির্বাচনের পর এই কোয়ালিশন থাকবে কি না সেটা একটা প্রশ্ন। তাঁর জনপ্রিয়তা ৩৪ শতাংশ থেকে কমে এসে দাঁড়িয়েছে ২৪ শতাংশে। তবে ভয়টা হচ্ছে, নব্য নাজি পার্টি ‘অল্টারনেটিভ ফর জার্মানি পার্টি’কে নিয়ে। তারা প্রচণ্ড রকমের ইসলাম ও অভিবাসনবিরোধী। জার্মানি সংসদে তারা নেই। কিন্তু স্থানীয় পর্যায়ের নির্বাচনে তারা ভালো করেছে। ধারণা করা হচ্ছে, এবার সংসদ নির্বাচনে ৫ শতাংশ ভোট নিশ্চিত করে তারা সংসদে যাবে। তাই যদি হয়, তাহলে তা জার্মানির গণতন্ত্রের জন্য হবে এক ধরনের কলঙ্ক। বলতে দ্বিধা নেই, যুক্তরাষ্ট্রে ট্রাম্পের বিজয় ও তাঁর কিছু কিছু বক্তব্যে ইউরোপের দক্ষিণপন্থীরা উৎসাহিত হয়েছে। ব্রিটেনের জনমতে ইউরোপ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হলেও, ব্রিটেন দুই বছর সময় পাবে। এ জন্য চলতি বছর প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে লিসবন চুক্তির আর্টিক্যাল ৫০ (ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে যাওয়ার আইনগত ভিত্তি) কার্যকর করতে পারেন। বদলে যাচ্ছে ইউরোপ। সনাতন রাজনীতির দিন শেষ হয়ে আসছে। গণতন্ত্র এখানে এখন ঝুঁকির মুখে। ভিন্ন ফর্মে উগ্র জাতীয়তাবাদী রাজনীতি ফিরে আসছে। দুটি সম্ভাবনা এখন প্রবল। এক. ইউরোপের বিভিন্ন দেশে উগ্র জাতীয়তাবাদী দলের উত্থান ও বিজয় শেঙেন চুক্তিকে এখন অকার্যকর করে ফেলতে পারে। শেঙেন চুক্তি, অর্থাৎ অবাধ চলাচলের (ইউরোপীয় ইউনিয়নে) যে অধিকার, তাতে এখন বিধিনিষেধ আসতে পারে। দুই. এ মুহূর্তে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ভেঙে না গেলেও ‘ইউরো জোনে’ পরিবর্তন আসবে। সর্বশেষ ইতালির প্রধানমন্ত্রী মেটিও রেনজি গণভোটে (সংস্কারের পক্ষে) হেরে যাওয়ায় পদত্যাগ করেন। তাঁর এই পদত্যাগ ‘ফাইভ স্টার মুভমেন্ট’কে জাতীয় পর্যায়ে পরিচিত করেছে এবং তারা জাতীয় রাজনীতিতে অন্যতম শক্তিতে পরিণত হয়েছে। এই ‘ফাইভ স্টার মুভমেন্ট’ ইউরো জোনবিরোধী। চলতি বছর ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত ২৭ দেশের (১৫টি দেশ ইউরো জোনে অন্তর্ভুক্ত) মধ্যে কিছু পরিবর্তন আসবে এবং ইউরো জোন থেকে অনেক দেশ বেরিয়ে যাবে। মোদ্দাকথা, ইউরোপের ঐক্যে ফাটল দেখা দিয়েছে এবং আগামী দিনে তা আরো ‘বড়’ হবে। অর্থাৎ ইউরো জোনভুক্ত কিছু দেশ আলাদা অবস্থান নেবে।
চলতি বছর একদিকে চীন-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক, অন্যদিকে রাশিয়া-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক অনেকের কাছেই আলোচনার অন্যতম বিষয় হয়ে থাকবে। ক্ষমতা নেওয়ার আগেই ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের সনাতন ‘ওয়ান চায়না পলিসি’কে একটি প্রশ্নের মুখে ফেলে দিয়েছেন। ২ ডিসেম্বর (২০১৬) তিনি তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট সাই ইং-ওয়েনের (Tsai lng-wen) একটি ফোনকল রিসিভ করেন। ১৯৭৯ সালে যুক্তরাষ্ট্র তাইওয়ানের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করে। সেই থেকে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে তাইওয়ানের সঙ্গে কোনো রাজনৈতিক সম্পর্ক রাখে না যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্র ‘এক চীন’ নীতি অনুসরণ করে আসছে। এখন তাইওয়ানের প্রেসিডেন্টকে যুক্তরাষ্ট্রের হবু প্রেসিডেন্টের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ দিয়ে ট্রাম্প শুধু চীনের নেতাদেরই আক্রমণের শিকারে পরিণত হলেন না, বরং চীন-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ককে একটি প্রশ্নের মধ্যে ফেলে দিয়েছেন। চীন এর সমালোচনা করেছে। এর আগে দক্ষিণ চীন সাগরে চীনের কর্তৃত্ব নিয়েও ট্রাম্প প্রশ্ন তুলেছেন। নির্বাচনের আগে তিনি বলেছিলেন, চীনা পণ্যের ওপর ৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করবেন। ফলে চীন-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কটি একটি প্রশ্নের মুখে থাকল। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়া সম্পর্ক নিয়েও নতুন করে আগ্রহের সৃষ্টি হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময় হিলারি ক্লিনটনের ই-মেইল হ্যাক, ট্রাম্পের সঙ্গে পুতিনের ব্যক্তিগত সম্পর্ক, রাশিয়ায় ট্রাম্পের ব্যবসায়িক স্বার্থ এবং রাশিয়ার গোয়েন্দা সংস্থা কর্তৃক ট্রাম্পকে ক্ষমতায় বসানোর উদ্যোগ ইত্যাদি কারণে রাশিয়ার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক ভিন্ন প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। ট্রাম্প দায়িত্ব নেওয়ার পরই বোঝা যাবে ট্রাম্প এই সম্পর্ককে কোন পর্যায়ে নিয়ে যান। সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে রাশিয়ার সম্পর্ক খুব ভালো যাচ্ছে না। ইউক্রেন সংকট ও ক্রিমিয়ার রাশিয়ার অন্তর্ভুক্তি নিয়ে রাশিয়ার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের অবনতি ঘটে। জি-৮ থেকে রাশিয়াকে বহিষ্কার করা হয় এবং রাশিয়ার বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপ করা হয়। এখন ট্রাম্প বিষয়গুলোকে কিভাবে নেবেন সেটা দেখার বিষয়। তবে ন্যাটোর সম্প্রসারণের ব্যাপারে ট্রাম্পের অনাগ্রহ পুতিনকে খুশি করে থাকবে। পুতিনের প্লাস পয়েন্ট এটাই। এ ক্ষেত্রে পেন্টাগন বিষয়টিকে ভবিষ্যতে কিভাবে দেখবে সেদিকে লক্ষ থাকবে অনেকের।
ট্রাম্পের দায়িত্ব নেওয়ার পর মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে কি আদৌ কোনো পরিবর্তন আসবে? যুক্তরাষ্ট্র-ইরান পারমাণবিক সমঝোতা চুক্তিকে অস্বীকার করেছেন ট্রাম্প। তিনি জানিয়েছেন, এটা অনুমোদন করবেন না। তিনি যদি সত্যি সত্যি এটি করেন, তাহলে মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে উত্তেজনা বাড়বে। ইরান মধ্যপ্রাচ্যে একটি ‘ফ্রন্ট ওপেন’ করবে এবং মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে। ইরান সমঝোতা এ অঞ্চলে পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ প্রক্রিয়াকে শুধু এগিয়ে নিয়ে যাবে না, বরং এ অঞ্চলে স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করবে। ওবামা প্রশাসনের আমলে আইএসের উত্থান মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতির দৃশ্যপটকে পরিপূর্ণভাবে বদলে দেয়। ইরান ও সিরিয়ার একটা অংশ নিয়ে এরই মধ্যে আইএসের উদ্যোগে একটি ‘জিহাদি রাষ্ট্র’ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তারা ইসলামিক দেশগুলোকে নিয়ে ‘খিলাফত’ প্রতিষ্ঠার কথা ঘোষণা করেছে। দক্ষিণ তথা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় তারা ‘দূরবর্তী খিলাফত’ প্রতিষ্ঠার কথাও বলেছে। বাস্তবতা হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার অব্যাহত বিমান হামলার পরও আইএসকে উত্খাত করা সম্ভব হয়নি। রাশিয়ার বিমান হামলা (এমনকি চীনেরও সমর্থনসহ) সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট আসাদকে নতুন একটি জীবন দিয়েছে। ইরাকে সাদ্দাম হোসেন আর লিবিয়ায় গাদ্দাফির উত্খাতের পর টার্গেট ছিলেন আসাদ।
এখন মনে হচ্ছে আসাদ টিকে গেলেন। তবে প্রশ্ন হচ্ছে, ট্রাম্প-পুতিন সমঝোতা সিরিয়ায় কি প্রভাব ফেলবে? ধারণা করা স্বাভাবিক, যুক্তরাষ্ট্র সিরিয়া প্রশ্নে তাদের ‘ইনভলভমেন্ট’ অর্থাৎ জড়িত থাকার বিষয়টিতে কম গুরুত্ব দেবে। জানুয়ারিতে বিমান হামলাও কমে আসবে। সিরিয়ার বিষয়ে একটি ‘বড় ভূমিকা’ পালন করতে রাশিয়াকে ভবিষ্যতে দেখা যেতে পারে। মুসলিম বিশ্বের সঙ্গে সম্পর্কের প্রশ্নে কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হবে না ট্রাম্প প্রশাসনের আমলে। তবে দক্ষিণ এশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের নীতিতে তেমন কোনো পরিবর্তন লক্ষ করা যাবে না। এই অঞ্চলের রাজনীতিতে ভারতকে গুরুত্ব দেওয়া, চীনবিরোধী একটা অ্যালায়েন্স গড়ে তোলার ব্যাপারে ওবামা প্রশাসনের নীতিতে কোনো পরিবর্তন আসবে না। টিপিপি চুক্তিকে সমর্থন না দেওয়ায় ট্রাম্পকে সমালোচনা করেছিলেন ওবামা। তবে এই চুক্তি যদি বাতিল হয়, তাহলে বহির্বিশ্বে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা প্রশ্নের মুখে থাকবে। জঙ্গিবাদ সারা বিশ্বের একটি সমস্যা। ইউরোপসহ আফ্রিকায়ও জঙ্গিবাদের বিস্তার ঘটেছে। এখন ট্রাম্পের শাসনামলে এই জঙ্গিবাদের বিস্তার কতটুকু কমবে—সেটা একটা প্রশ্ন হয়েই থাকল।
বলার অপেক্ষা রাখে না, যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের এক নম্বর শক্তি। সামরিক ও আর্থিক দিক দিয়ে এখনো যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান শীর্ষে। সুতরাং যুক্তরাষ্ট্রের যেকোনো সিদ্ধান্ত বিশ্বে যেকোনো পরিবর্তন আনার জন্য যথেষ্ট। একজন নয়া প্রেসিডেন্ট পাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। তিনি পররাষ্ট্রনীতিতে পরিবর্তন আনবেন, এমন প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। সেই ‘পরিবর্তন’ বিশ্বরাজনীতিতে যে প্রভাব ফেলবে, তা বলাই বাহুল্য। সুতরাং ২০১৭ সালের বিশ্বরাজনীতিতে বেশ কিছু পরিবর্তন আসবে—সেটাই স্বাভাবিক।
Daily Kalerkontho
03.01.2017

0 comments:

Post a Comment