রাজনীতি, আন্তর্জাতিক রাজনীতি এবং সমসাময়িক ঘটনাবলীর বিশ্লেষণ সংক্রান্ত অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর রেহমানের একটি ওয়েবসাইট। লেখকের অনুমতি বাদে এই সাইট থেকে কোনো লেখা অন্য কোথাও আপলোড, পাবলিশ কিংবা ছাপাবেন না। প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন লেখকের সাথে

ডোনাল্ড ট্রাম্প ও নয়া বিশ্বব্যবস্থা

যুক্তরাষ্ট্রের নবনিযুক্ত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শাসনামলে কেমন হবে নয়া বিশ্বব্যবস্থা? যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে কী পরিবর্তন আনবেন তিনি? ২০ জানুয়ারি দায়িত্ব নেওয়ার পর এমন প্রশ্ন এখন সর্বমহলে আলোচিত হচ্ছে। একটা শঙ্কা আছে সর্বমহলে।
আটলান্টিক মহাসাগরের ওপারে জার্মানির ফ্রাংকফুর্ট থেকে শুরু করে খোদ তাঁর নিজ শহর আটলান্টিকের এপারে নিউ ইয়র্কে তাঁর শপথগ্রহণের দিন ও পরের দিন ব্যাপক বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়েছে। নারীদের নিয়ে ট্রাম্পের বিরূপ মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে গত ২১ জানুয়ারি ওয়াশিংটন ডিসিতে প্রায় ১০ লাখ মানুষের প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এ প্রতিবাদ সভার আয়োজন করেছিল উইমেন মার্চ, প্রায় ৮০টির মতো সংগঠনের একটি মোর্চা। এরই মধ্যে তিনি শুধু বিতর্কেরই জন্ম দেননি, বরং সাংবাদিকদের সঙ্গে হোয়াইট হাউসের একটি ব্যবধানও তিনি তৈরি করে ফেলেছেন। সাংবাদিকদের তিনি চিহ্নিত করেছেন পৃথিবীর সবচেয়ে অসৎ ব্যক্তি হিসেবে। সমসাময়িক মার্কিন প্রেসিডেন্টদের মধ্যে তিনি সবচেয়ে কম গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে হোয়াইট হাউসে প্রবেশ করেছেন। তাঁর গ্রহণযোগ্যতা মাত্র ৪০ শতাংশ। অথচ ওবামা যখন দায়িত্ব নেন (২০০৯) তখন তাঁর গ্রহণযোগ্যতা ছিল ৭৯ শতাংশ। বুশের (২০০১) ছিল ৬২ শতাংশ, ক্লিনটনের (১৯৯৩) ৬৮ শতাংশ (ওয়াশিংটন পোস্ট ও এবিসি পোল, জানুয়ারি ১২-১৫, ২০১৭)। এটা যুক্তরাষ্ট্রের ৪৫তম প্রেসিডেন্টের জন্য কোনো ভালো খবর নয়। শুধু তা-ই নয়, ক্যাবিনেটকে তিনি ধনীদের ক্লাবে পরিণত করেছেন। মন্ত্রিসভায় যাঁদের নাম তিনি প্রস্তাব করেছেন, তাঁদের মধ্যে ১৪ শতাংশ হচ্ছে বিলিয়নেয়ার। অর্থাৎ ১০০ কোটি ডলার সম্পদ রয়েছে এ সংখ্যা একাধিক। অথচ পরিসংখ্যান বলছে, ওবামা ও বুশের আমলে কোনো বিলিয়নেয়ার মন্ত্রী ছিলেন না। শপথ নেওয়ার পর তিনি যে ভাষণ দেন, তা নীতিনির্ধারণী ভাষণ না হলেও, তাতে তাঁর পররাষ্ট্রনীতির কিছুটা দিকনির্দেশনা আছে। যেমন—ইসলামী মৌলবাদের বিরুদ্ধে তাঁর কট্টর অবস্থান কিংবা ‘স্বপ্নের যুক্তরাষ্ট্র গড়ার’ তাঁর প্রত্যয়ের কথা প্রমাণ করে তিনি সম্ভবত ওবামা প্রশাসনের আমলে গৃহীত নীতি থেকে সরে আসছেন। ফলে তাঁর পররাষ্ট্রনীতিতে কিছুটা নতুনত্ব থাকবে, এমনটাই আশা করা হচ্ছে। আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিশেষজ্ঞরা ৯টি ক্ষেত্র চিহ্নিত করেছেন, যেখানে ট্রাম্প পরিবর্তন আনবেন। এই ৯টি জায়গা বা ক্ষেত্র হচ্ছে—১. ইসলামিক স্টেটের ক্ষেত্রে, ২. আফগানিস্তানের ক্ষেত্রে, ৩. উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক কর্মসূচি, ৪. ইউক্রেনে সংকট ও রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক, ৫. চীনের সঙ্গে সম্পর্ক ও সম্ভাব্য একটি বাণিজ্য যুদ্ধ, ৬. ইউরোপীয় ঐক্যের প্রশ্নে তাঁর অবস্থান, ৭. ইরানের সঙ্গে পারমাণবিক সমঝোতার ভবিষ্যৎ, ৮. ইসরায়েল ও ফিলিস্তিন প্রশ্নে তাঁর ভূমিকা এবং ৯. মেক্সিকোর সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক। তিনি ‘মেইক আমেরিকা গ্রেট’—এই স্লোগান তুলে বিজয়ী হয়েছিলেন। বলেছিলেন, ২৪ মিলিয়ন চাকরির ব্যবস্থা করবেন। জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৪-এ নিয়ে যাবেন। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, ‘অটোমেশনের’ কারণে শিল্পপ্রতিষ্ঠানে এখন ১৮ শতাংশ লোক কম লাগে। ‘আউটসোর্সিং’-এর মাধ্যমে উৎপাদিত পণ্য বাইরে থেকে এনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানে ব্যবহার করা হয়। ফলে চাকরির ব্যবস্থা করার কথা বলা যত সহজ, বাস্তব ক্ষেত্রে অত সহজ নয়। তিনি শপথ নেওয়ার পর উদ্বোধনী ভাষণে এ বিষয়ে তেমন নতুন কিছু শোনাননি। তিনি বারাক ওবামা ও তাঁর স্ত্রীর প্রশংসা করেছেন। এটা তাঁর বদান্যতা। তাঁর উদ্বোধনী বক্তব্যে শঙ্কা আছে, আশার কথাও আছে। তিনি আবারও আশার কথা শুনিয়েছেন। স্বপ্নের যুক্তরাষ্ট্র গড়ার প্রতিজ্ঞা করেছেন। বলেছেন, তাঁর কাজ হবে সবার ওপরে যুক্তরাষ্ট্রের স্থান দেওয়া। কিন্তু বাস্তবতা বলে ভিন্ন কথা।
বিশ্বায়নের এই যুগে তিনি বিশ্বায়নের বিরোধিতা করেছেন। বিশ্বায়ন হচ্ছে বর্তমান যুগের বাস্তবতা। এ বাস্তবতাকে অস্বীকার করে ‘সবার ওপরে যুক্তরাষ্ট্রের স্থান’ দেবেন কিভাবে? বিশ্বায়নের এই যুগে তিনি যদি একলা চলতে চান, তাহলে তিনি পিছিয়ে যাবেন। তাঁর যেকোনো সংরক্ষণবাদী নীতি তাঁকে সামনে নয়, বরং পেছনের দিকে ঠেলে দেবে। চীন তার নিজস্ব আঙ্গিকে ‘চীনা মডেলের বিশ্বায়ন’ শুরু করেছে। চীন আফ্রিকা ও লাতিন আমেরিকায় তার বিনিয়োগ বাড়াচ্ছে। ‘ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড’ কর্মসূচির আওতায় মধ্য এশিয়ার তেল ও জ্বালানি সম্পদসমৃদ্ধ দেশগুলোকে এক পতাকাতলে নিয়ে আসছে। চীনা প্রেসিডেন্টের বাংলাদেশ সফরের সময় বাংলাদেশও ওই কর্মসূচিকে সমর্থন করেছে। ফলে ‘চীনা বিশ্বায়ন’ নতুন একটি মাত্রা নিয়ে এসেছে একুশ শতকে। এখন যুক্তরাষ্ট্র যদি এই ‘চীনা বিশ্বায়নে’ নিজেকে সম্পৃক্ত না করে, তাহলে খোদ যুক্তরাষ্ট্রই পিছিয়ে পড়বে। সম্প্রতি ডাভোসে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের সম্মেলনে যোগ দিয়েছিলেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি চিনপিং। সেখানে একটি অনুষ্ঠানে তিনি জানিয়েছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে নতুন মডেলের একটি সম্পর্ক শুরু করতে চায় পেইচিং; যদিও এই নয়া সম্পর্ক নিয়ে তিনি বিস্তারিত কিছু বলেননি। তবে চীন-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক যে আগামী দিনে অন্যতম আলোচিত বিষয় হয়ে থাকবে সে ব্যাপারে দ্বিমত করার কোনো সুযোগ নেই। এরই মধ্যে ইউরোপ, এমনকি জার্মানি সম্পর্কে তিনি যে মন্তব্য করেছেন, তা তাঁকে আরো বিতর্কিত করেছে। জার্মানিতে ১০ লাখ সিরীয় অভিবাসীকে সে দেশে আশ্রয় দেওয়ার ঘটনাকে ট্রাম্প আখ্যায়িত করেছিলেন ‘সর্বনাশা ভুল’ হিসেবে। জার্মানরা এটা পছন্দ করেনি। জার্মান চ্যান্সেলর মার্কেল এর প্রতি উত্তরে বলেছিলেন তাঁদের ভাগ্য তাঁদের হাতে ছেড়ে দেওয়ার জন্য। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ওলাঁদ এক ধাপ এগিয়ে গিয়ে বলেছিলেন, তাঁদের বাইরের কোনো লোকের উপদেশের প্রয়োজন নেই। ট্রাম্প ন্যাটোকে আখ্যায়িত করেছিলেন ‘সেকেলে’ হিসেবে। এটা নিয়ে ন্যাটোভুক্ত দেশগুলোয় এক ধরনের শঙ্কা তৈরি হয়েছে। ট্রাম্প ব্রেক্সিটকে সমর্থন করেছিলেন। ব্রিটেন এখন ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে আলাদা হয়ে যাচ্ছে।   ইউরোপীয় অন্যান্য রাষ্ট্র ব্রিটেনকে অনুসরণ করুক—এটাও ট্রাম্প চান। ফলে ইইউয়ের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের যে ট্র্যাডিশনাল সম্পর্ক, তাতে এখন একটি অবিশ্বাসের জন্ম হয়েছে।
নির্বাচনে বিজয়ের পর তাইওয়ানের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তাঁর ‘ফোনালাপ’ একটি সম্ভাবনার জন্ম হয়েছে যে যুক্তরাষ্ট্র ‘এক চীনা নীতি’ পরিত্যাগ করতে পারে! চীন বিষয়টাকে খুব সহজভাবে নেয়নি। চীন তার ‘টুইটার কূটনীতি’ বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে। তবে একটা বিতর্কিত মন্তব্য করেছেন রেস্কু টিলারসন, যিনি হতে যাচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী পররাষ্ট্রমন্ত্রী। টিলারসন বলেছেন, দক্ষিণ চীন সাগরে চীন যে কৃত্রিম দ্বীপ বানাচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রের উচিত সেখানে চীনাদের যাওয়ার পথ বন্ধ করে দেওয়া। এর প্রতিবাদে চীন বলছে, যুক্তরাষ্ট্র যদি তা করে, তাহলে তা এক ‘ভয়ংকর সংঘাতে’ রূপ নেবে। তবে রাশিয়া সম্পর্কে তিনি বরাবরই নরম মনোভাব দেখিয়ে আসছেন। যুক্তরাষ্ট্র ওবামার শাসনামলে রাশিয়ার বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপ করে। এমনকি রাশিয়াকে জি-৮ থেকে বহিষ্কার করা হয়। এখন পরিস্থিতি কি বদলে যাবে? নির্বাচনের আগে ট্রাম্প বলেছিলেন, তিনি রাশিয়ার ওপর থেকে অর্থনৈতিক অবরোধ প্রত্যাহারের পক্ষে। ৮ নভেম্বরের নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার পর টেলিফোনে ট্রাম্পের সঙ্গে পুতিনের কথা হয়েছিল। এ দুজনের ফোনালাপকে তখন ‘গভীর বন্ধুত্বের সুর’ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছিল। ১৯৯১ সালের ডিসেম্বরে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর স্নায়ুযুদ্ধের অবসান হয়েছিল। কিন্তু বিশ্বরাজনীতিতে যুক্তরাষ্ট্রের একক কর্তৃত্ব করার প্রবণতা ও বিভিন্ন অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক আগ্রাসন নতুন করে স্নায়ুযুদ্ধের (স্নায়ুযুদ্ধ-২) জন্ম হয়েছিল। আর রাশিয়া যুক্তরাষ্ট্রের একক কর্তৃত্ব করার প্রবণতাকে চ্যালেঞ্জ করতে শুরু করেছিল।
এখন কি যুক্তরাষ্ট্র তার এই অবস্থানে পরিবর্তন আনবে? এতে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় স্বার্থ কতটুকু রক্ষিত হবে? যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে, বিশেষ করে পেন্টাগনে যেসব কট্টরপন্থী রয়েছেন, তাঁরা কি ‘রাশিয়ার প্রতি ঝুঁকে যাওয়ার’ এ প্রবণতাকে মেনে নেবেন? সিনিয়র জেনারেলদের ভূমিকাই বা কী হবে এখন? রাশিয়া-যুক্তরাষ্ট্র ‘মৈত্রী’ কি ইতিহাসকে আবার স্মরণ করিয়ে দেবে? দ্বিতীয় ইয়াল্টার কি জন্ম হচ্ছে? পাঠক স্মরণ করতে পারেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষ পর্যায়ে ইউরোপের ভূমিকা কী হবে—এটা নিয়ে আলোচনার জন্য ইয়াল্টায় (১৯৪৫ সালের ফেব্রুয়ারি) চার্চিল (যুক্তরাজ্য), রুজভেল্ট (যুক্তরাষ্ট্র) ও স্তালিন (সোভিয়েত ইউনিয়ন) এক শীর্ষ বৈঠকে মিলিত হয়েছিলেন। সেই পরিস্থিতি কি তাহলে আবার ফিরে আসছে? এ ক্ষেত্রে যেকোনো রুশ-মার্কিন ‘ঐক্য’ সিরিয়ার পরিস্থিতির ওপর প্রভাব ফেলবে? আসাদ এরই মধ্যে এই আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। সম্ভাব্য এই ‘ঐক্য’ আসাদকে আরো কিছুদিন ক্ষমতায় থাকার সুযোগ করে দেবে মাত্র। কিন্তু তাতে যুদ্ধ সেখানে থামবে বলে মনে হয় না; যদিও ট্রাম্প বলেছেন, তিনি আসাদবিরোধী নুসরা ফ্রন্টকে (পরিবর্তিত নাম জাবহাত ফাতেহ আল শাম) অর্থ ও অস্ত্র দিয়ে সাহায্য করবেন না। কিন্তু তাতে  কি আইএসকে ধ্বংস করা সম্ভব হবে? অনেকেই জানেন, আইএস পরোক্ষভাবে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ‘সহযোগিতা’ পেয়ে থাকে। ট্রাম্পের সময় আইএস কি তার অস্তিত্ব বজায় রাখতে পারবে? এ ক্ষেত্রে গোটা মধ্যপ্রাচ্যে এক ধরনের ‘স্নায়ুযুদ্ধ’-এর জন্ম হবে! ট্রাম্প যদি সত্যি সত্যি ইরানের সঙ্গে পারমাণবিক সমঝোতা চুক্তি সমর্থন করতে অস্বীকার করেন, তাহলে ইরান এই ‘স্নায়ুযুদ্ধের’ আশঙ্কাকে উসকে দেবে। আল-কায়েদা কিংবা আইএসের মতো সন্ত্রাসী সংগঠনগুলো এতে  সুবিধা নেবে মাত্র। তিনি শপথ নেওয়ার পর প্রথম ভাষণে ‘ইসলামী সন্ত্রাসবাদের’ বিরুদ্ধে পুরনো জোটকে শক্তিশালী করা, প্রয়োজনে নতুন জোট গঠন করার কথাও বলেছেন। এর অর্থ আমার কাছে পরিষ্কার। আইএসবিরোধী অভিযান অব্যাহত থাকবে। তবে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে মধ্যপ্রাচ্যে, বিশেষ করে সিরিয়া প্রশ্নে যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়া ঐক্য হতে পারে। কাজাখস্তানে গত ২৩ জানুয়ারি সিরিয়াসংক্রান্ত একটি শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়ে গেছে। রাশিয়ার ভূমিকা এখানে মুখ্য।
আমরা ধারণা করছি, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ট ট্রাম্প ১০০ দিনের একটি পরিকল্পনার কথা জানাবেন। কিন্তু আন্তর্জাতিক সম্পর্কে তাঁর নিজের অজ্ঞতা এবং তাঁর প্রশাসনে যথেষ্ট যোগ্য লোকের অভাব থাকায় আগামী দিনের যুক্তরাষ্ট্রের একটা ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাবে। উপরন্তু জলবায়ু পরিবর্তনসংক্রান্ত কপ-২১ চুক্তি (যা প্যারিসে ও জাতিসংঘে স্বাক্ষরিত হয়েছে) সমর্থন না করা, কিউবার সঙ্গে ‘সমঝোতা’কে অস্বীকার করা, চীনের সঙ্গে এক ধরনের ‘বাণিজ্য যুদ্ধ’, ন্যাটোতে যুক্তরাষ্ট্রের অংশগ্রহণ কমিয়ে আনা, ইরানের সঙ্গে পারমাণবিক সমাঝোতাকে অস্বীকার, মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি বাতিল ইত্যাদি আগামী দিনে বিশ্বে ট্রাম্পের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করবে না। তাঁর গ্রহণযোগ্যতা হ্রাস পাবে। এখন আমাদের দেখতে হবে তাঁর এই ‘রাজনীতি’ একুশ শতকের তৃতীয় দশকে যুক্তরাষ্ট্রকে কোথায় নিয়ে যায়। ভুলে গেলে চলবে না, যুক্তরাষ্ট্রের যেকোনো সিদ্ধান্ত বিশ্বে বড় পরিবর্তন ডেকে আনার জন্য যথেষ্ট। দায়িত্ব নেওয়ার এক সপ্তাহের মাথায় ট্রাম্প তাঁর প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করে চলেছেন। ওবামাকেয়ার ও টিপিপি চুক্তি তিনি এরই মধ্যে বাতিল করেছেন। এর অর্থ হচ্ছে, বাকি প্রতিশ্রুতিগুলোও তিনি এক এক করে বাস্তবায়ন করবেন। ফলে বিশ্বরাজনীতিতে তিনি যে একটি বড় পরিবর্তন আনতে যাচ্ছেন, তা বলাই যায়।
Daily Kalerkontho
30.01.2017

0 comments:

Post a Comment