রাজনীতি, আন্তর্জাতিক রাজনীতি এবং সমসাময়িক ঘটনাবলীর বিশ্লেষণ সংক্রান্ত অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর রেহমানের একটি ওয়েবসাইট। লেখকের অনুমতি বাদে এই সাইট থেকে কোনো লেখা অন্য কোথাও আপলোড, পাবলিশ কিংবা ছাপাবেন না। প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন লেখকের সাথে

ইসি পুনর্গঠনে রাষ্ট্রপতির অভিভাবকত্ব ফুটে উঠুক


নির্বাচন কমিশন গঠন প্রশ্নে আওয়ামী লীগের সঙ্গে রাষ্ট্রপতি সংলাপ করেছেন ১১ জানুয়ারি। গত ১৮ ডিসেম্বর রাষ্ট্রপতি সব নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সঙ্গে এ সংলাপ শুরু করেছিলেন। বিএনপিকে দিয়ে এ সংলাপ শুরু হয়েছিল। সংলাপ শেষ হবে আগামী সপ্তাহে। ইতিমধ্যে বিএনপি, জাতীয় পার্টিসহ বেশ কয়েকটি দল রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করে তাদের মতামত দিয়েছে। এখন আওয়ামী লীগও তাদের মতামত দিল। রাষ্ট্রপতির এ সংলাপে আমি আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির মতামতকে গুরুত্ব দিতে চাই। কারণ আওয়ামী লীগ এখন রাষ্ট্রক্ষমতায়। দলটি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় দল। একাধিকবার তারা ক্ষমতায় ছিল ও আছে। সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার কারণে প্রধানমন্ত্রীর ‘ভূমিকা’ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ কী মতামত দিয়েছে, তা আমাদের বিবেচনায় নিতে হবে। অন্যদিকে বিএনপিও বড় দল। তৃণমূল পর্যায়ে দলটির কর্মকাণ্ড বিস্তৃত। দলটি বর্তমানে সংসদে নেই বটে। কিন্তু নারায়ণগঞ্জের সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে প্রমাণিত হয়েছে, তাদের যে জনসমর্থন তাতে খুব একটা বড় পরিবর্তন আসেনি। শতকরা ৩৩ থেকে ৩৯ ভাগ মানুষের সমর্থন রয়েছে দলটির প্রতি। পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর থেকে (১৯৯১) যতগুলো গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হয়েছে, তার প্রতিটিতে বিএনপির সমর্থন এমনই ছিল। বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে বিএনপি যে একটি ‘ফ্যাক্টর’ তা অস্বীকার করা যাবে না। তাই বিএনপির মতামতকেও আমরা বিবেচনায় নিতে পারি। একই সঙ্গে জাতীয় পার্টি বর্তমানে সংসদে বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করছে। যদিও এটা নিয়ে একটা বিভ্রান্তি আছে- জাতীয় পার্টি সরকারি দলের ‘কোয়ালিশনভুক্ত’ নাকি বিরোধী দল? জাতীয় পার্টির প্রতিনিধিত্ব রয়েছে মন্ত্রিসভায়, আবার সংসদে বিরোধী দলের ভূমিকাও পালন করছে দলটি। কিন্তু তারপরও বাস্তবতা হচ্ছে, জাতীয় পার্টির বেশ কিছু নির্দিষ্ট সংসদীয় আসন রয়েছে। পঞ্চম জাতীয় সংসদ থেকে শুরু করে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টি ওইসব আসনে বিজয়ী হয়েছিল। সুতরাং জাতীয় পার্টির মতামতও আমরা বিবেচনায় নিতে পারি।

তবে বলার অপেক্ষা রাখে না, আওয়ামী লীগের মতামত আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ বেশি। নির্বাচন কমিশন গঠনে সম্ভব হলে এখনই আইন প্রণয়ন অথবা অধ্যাদেশ জারির প্রস্তাব করেছে আওয়ামী লীগ। তবে সময় স্বল্পতায় যদি এবার আইন করা বা অধ্যাদেশ জারি সম্ভব না হয়, তাহলে পরের বার সে উদ্যোগ গ্রহণের জন্য তারা রাষ্ট্রপতিকে অনুরোধ জানিয়েছেন। আগামী নির্বাচনে তারা ই-ভোটিংয়েরও প্রস্তাব দিয়েছেন। রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপে আওয়ামী লীগের সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবে রয়েছে : ১. সংবিধানের ১১৮ নম্বর অনুচ্ছেদের বিধান অনুযায়ী প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ অন্যান্য কমিশনারকে নিয়োগ দেবেন রাষ্ট্রপতি, ২. এসব নিয়োগের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতি যে প্রক্রিয়া উপযুক্ত বিবেচনা করবেন, তা-ই করবেন, ৩. একটি আইন প্রণয়ন করা, ৪. ই-ভোটিং ব্যবস্থা প্রবর্তন করা।

বিএনপি যেসব প্রস্তাব দিয়েছে তার মধ্যে রয়েছে- ঐকমত্যের ভিত্তিতে ইসি গঠন, ৫ সদস্যবিশিষ্ট একটি বাছাই কমিটি গঠন এবং বাছাই কমিটির আহ্বায়ক হবেন একজন সাবেক প্রধান বিচারপতি যিনি সরকারের কোনো লাভজনক পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন না, বাছাই কমিটির সদস্যরা হবেন আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি, সাবেক সচিব, বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক, একজন জ্যেষ্ঠ নারী। প্রতি পদের বিপরীতে ২ জনের নাম প্রস্তাব করা হবে এবং রাষ্ট্রপতি ৫ জনকে (সিইসিসহ) মনোনয়ন দেবেন। অন্যদিকে জাতীয় পর্টি ৫ সদস্যের একটি সার্চ কমিটির নাম প্রস্তাব করেছে। তারা একটি আইন গঠন করার কথা বলেছে। ইসি সচিবালয় গঠনের প্রস্তাবও আছে তাদের।

সুতরাং তিনটি বড় দলের মধ্যে তাদের স্ব স্ব প্রস্তাবের ব্যাপারে খুব যে একটা মিল আছে, তা বলা যাবে না। একটি আইন প্রণয়ন করার ব্যাপারে কিছুটা মিল আছে। নীতিগতভাবে বিএনপিও এটা সমর্থন করে। তবে এ ক্ষেত্রে প্রশ্ন আছে অনেক। এক. ৯ ফেব্রুয়ারিতে এ কমিশনের মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে। সুতরাং এত অল্প সময়ের ব্যবধানে আইন করে সিইসি ও কমিশনারদের নিয়োগ দেয়া সম্ভব হবে না। এ ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনারের পদগুলো ‘সীমিত সময়ের’ জন্য খালি রাখা যায় কিনা? তাহলে অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে সংসদে আইনটি পাস করানো সম্ভব। সাংবিধানিক পদগুলো খালি রাখা যায় কিনা এ ব্যাপারে সুপ্রিমকোর্টের একটি ‘রেফারেন্স’ চাওয়া যেতে পারে। দুই. আইনটি প্রণয়ন করার সময় সব রাজনৈতিক দলের মতামত নেয়া হবে কিনা? সিভিল সোসাইটির মতামত নেয়াও প্রয়োজন। তিন. সিইসি তথা কমিশনারদের ‘নিরপেক্ষতার’ কথা বলেছেন সবাই। কিন্তু এ নিরপেক্ষতার সংজ্ঞা কী কিংবা এ নিরপেক্ষতা নিশ্চিত হবে কীভাবে? কাজী রকিবউদ্দীনের কোনো রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা ছিল না। ‘জনতার মঞ্চে’ তিনি গিয়েছিলেন, এমন তথ্যও আমাদের জানা নেই। তাহলে তিনি বিতর্কিত হলেন কেন? আসলে একজন ‘আমলাকে’ বেছে নেয়ার সিদ্ধান্তটি ভুল। আমলাদের যে মানসিকতা, তা তারা ছাড়তে পারেন না। দীর্ঘ চাকরি জীবনে সরকারের প্রতি তাদের যে ‘দায়বদ্ধতা’ থাকে কিংবা চাকরি জীবনে তারা যা ধারণ করেন, পরবর্তী জীবনে নতুন করে চাকরিতে প্রবেশ করলে ওই মানসিকতা থেকে তারা বের হয়ে আসতে পারেন না। উপরন্তু সরকারও যে নির্বাচন কমিশনের ওপর প্রভাব খাটাতে চেষ্টা করে না, তা নয়।

সংবিধানের ১১৮(৪)-এর অধীনে নির্বাচন কমিশন স্বাধীন। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, এ ধারাটি সিইসি কিংবা কমিশনাররা প্রয়োগ করেন না। একজন দৃঢ়চেতা সিইসিকে আমরা কখনও পাইনি। ভারতের নির্বাচন কমিশনের দৃষ্টান্ত আমরা প্রায়ই দিই। মাত্র তিনজন কমিশনার নিয়ে ভারতের মতো দেশের পুরো নির্বাচনী কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয়। আমরা এখানে আইন করে ৫ জনের কমিশন করলাম। তাতে ফলটা কী হয়েছে? বর্তমান কমিশন নিয়ে আমাদের সুখকর কোনো অভিজ্ঞতা নেই।

আওয়ামী লীগ প্রস্তাবিত ৪ দফার মধ্যে ৩নং দফায় যে আইন প্রণয়ন করার কথা বলা হয়েছে, সেটাই হচ্ছে মুখ্য বিষয়। এটা জরুরি। কিন্তু আইন প্রণয়ন করার সময় সরকার যাতে বিতর্কিত না হয়ে যায়, সেদিকেও লক্ষ রাখা জরুরি। সরকারের পক্ষে যায় অথবা সরকার ভবিষ্যতে নির্বাচন কমিশনারের কর্মকাণ্ডে প্রভাব বিস্তার করতে পারে, এমন কোনো ধারা বা বিধান যদি আইনে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে অন্তর্ভুক্ত হয়, তাহলে মূল উদ্দেশ্যটি ব্যাহত হবে- অর্থাৎ একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন আমরা পাব না। দ্বন্দ্ব, বিভেদ, বিতৃষ্ণা থেকে যাবে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় অনুষ্ঠিত বেশ ক’টি নির্বাচন ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা পেলেও ওই সময় আমরা ‘সূক্ষ্ম কারচুপির’ অভিযোগ শুনেছি। নির্বাচনে হেরে গেলে রায় মেনে নেয়ার মানসিকতা আমাদের তৈরি হয়নি। আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে এটাই বড় সমস্যা।

আসলে মূল কথা একটিই- আস্থার সম্পর্ক গড়ে না উঠলে সার্চ কমিটি গঠন করেও কোনো লাভ হবে না। সংবিধানের ৪৮(৩) ধারা মতে রাষ্ট্রপতি ‘সম্ভাব্য সার্চ কমিটি গঠন’ কিংবা কমিশনারসহ সিইসিকে নিয়োগদানের প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ নিতে বাধ্য। এখানেই রয়েছে তার সাংবিধানিক সীমাবদ্ধতা। সুতরাং এ ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীই হচ্ছেন মুখ্য ব্যক্তি। যদিও প্রধানমন্ত্রী একাধিকবার বলেছেন, রাষ্ট্রপতি এ ব্যাপারে যে সিদ্ধান্ত নেবেন, তা তারা মেনে নেবেন। রাষ্ট্রপতির কাছে অনেক বিকল্প আছে। তিনি সার্চ কমিটির ব্যাপারে নাম চাইতে পারেন দলগুলোর কাছে। এককভাবে তিনি সার্চ কমিটি গঠন করতে পারেন। অথবা সরাসরি সিইসিসহ ৫ জনকে নিয়োগ দিতে পারেন। এটা নিয়ে কোনো প্রশ্ন করা যাবে না। তাই একটা সংলাপ হচ্ছে। ভালো হোক, মন্দ হোক, এ সংলাপ একটা আস্থার সম্পর্ক আদৌ তৈরি করতে পারবে কিনা, সেটি একটা বড় প্রশ্ন এখন।

স্বাধীনতার ৪৫ বছর আমরা পার করেছি। এ ৪৫ বছরে আমাদের অনেক অগ্রগতি হলেও বড় সমস্যা ঐকমত্যের অভাব। দুই বড় দলের মাঝে আস্থার সম্পর্কের অভাব এত বেশি যে, বিপুল সম্ভাবনায় এ দেশ রয়েছে বড় ধরনের ঝুঁকির মুখে। প্রতিটি ক্ষেত্রে আমরা পরস্পর পরস্পরের ওপর দোষারোপ করছি। দোষারোপ করতে গিয়ে আমরা অতীতকে বারবার টেনে আনছি। প্রয়োজন যেখানে বেশি, সেই প্রয়োজনকে আমরা গুরুত্ব দিচ্ছি না। অতীতমুখিতা, ব্যক্তি আক্রমণ আমাদের সব অর্জন ম্লান করেছে। স্বাধীনতার ৫০ বছর হতে আর আমাদের খুব বেশিদিন বাকি নেই। এখনও যখন কোনো সমঝোতার সম্ভাবনা দেখছি না, তাহলে কি এই পরস্পরের প্রতি অবিশ্বাস আর একে অন্যকে বিতর্কিত করার প্রবণতা চলতেই থাকবে? যেভাবে রাজনীতি বিকশিত হচ্ছে, তাতে যাদেরই নির্বাচন কমিশনে নিয়োগ দেয়া হোক না কেন, তারা অচিরেই বিতর্কিত হবেন। সমালোচিত হবেন। তাই শুভবুদ্ধির কোনো মানুষ সমালোচনার ভয়ে দায়িত্ব গ্রহণ করতেও রাজি হবেন না। এটা আমাদের জন্য যদি কোনো ‘শিক্ষা’ হয়, তা আমাদের জন্য মঙ্গল বয়ে আনবে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভবিষ্যতে কোনো বিতর্কিত নির্বাচন চান না বলে রাষ্ট্রপতিকে জানিয়েছেন। রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব জয়নাল আবেদিন সাংবাদিকদের এ তথ্যটি জানিয়েছেন। এ থেকে ধরে নেয়া স্বাভাবিক, প্রধানমন্ত্রী চান সব দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করুক। তাতে করে নির্বাচনটি প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক হবে। জনগণের অংশগ্রহণ বাড়বে। এবং যে কোনো ধরনের বিতর্কের ঊর্ধ্বে থাকবে নির্বাচন কমিশন। একটি ভালো নির্বাচনের অন্যতম পূর্বশর্ত হচ্ছে সরকারের নিরপেক্ষ অবস্থান। সরকার যদি চায়, তাহলে ভালো নির্বাচন সম্ভব। নারায়ণগঞ্জ এর সর্বশেষ দৃষ্টান্ত। একটি কঠিন সময় পার করছি আমরা। ৫ জানুয়ারি (২০১৪) নিয়ে অনেক কথাই বলা যায়। টিভি টকশোতে অনেকে অনেক কথাই বলেছেন। এটি নিয়ে যত কম বিতর্ক হবে, ততই মঙ্গল। তাকাতে হবে সামনের দিকে।

প্রধানমন্ত্রী ‘ভবিষতে আর কোনো বিতর্কিত নির্বাচন চান না’, তার এ উপলব্ধিকে আমি স্বাগত জানাই। গত ৩৫ বছর ধরে তিনি দলকে নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন। তার আর কীই বা চাওয়ার আছে? বরং ‘সব দলের অংশগ্রহণ’ যদি তিনি নিশ্চিত করতে পারেন, তা শুধু আমাদের স্বস্তিই এনে দেবে না, বরং ইতিহাসে তার নাম উজ্জ্বল হয়ে লেখা থাকবে। তিনি উন্নয়নকে গুরুত্ব দিচ্ছেন। মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বেড়েছে। দারিদ্র্য কমেছে। এখন যদি তিনি দুর্নীতি রোধ আর সর্বক্ষেত্রে সুশাসন প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে উদ্যোগী হন, তাহলে মানুষ এমনিতেই আওয়ামী লীগকে ভোট দেবে।

সময় খুব অল্প। ৯ ফেব্রুয়ারির মধ্যে নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য আইন প্রণয়ন করা সম্ভব হবে না। তবে প্রক্রিয়াটা এগিয়ে থাকুক। আর রাষ্ট্রপতি সবার মতামতের প্রতি সম্মান দেখিয়েই একটি সার্চ কমিটি গঠন করুন, যারা ন্যূনতম ১০ জনের নাম প্রস্তাব করবেন, যেখান থেকে ৫ জনকে (সিইসিসহ) নিয়োগ দেবেন রাষ্ট্রপতি।
Daily Jugantor
15.01.2017

2 comments:

  1. Hello sir, Its a amazing blog i ever read. you contain all the information about all the sector in this blog which will help everyone.I gain lots of knowledge through this blog. thank you so much.Also we have great Desmume emulator which you can use for NDS game on your PC. Just click and enjoy.

    ReplyDelete