সার্চ কমিটি গঠিত হওয়ার পর যে
প্রশ্নটি এখন বড় হয়ে দেখা দিয়েছে, তা হচ্ছে ওই কমিটি সাধারণ মানুষের আস্থা
পূরণ করতে পারবে কি? একটি ‘নিরপেক্ষ’ নির্বাচন কমিশন গঠন করার জন্য এই
সার্চ কমিটি গঠন করা হয়েছে। ওই কমিটি গত শনিবার প্রথম বৈঠকে মিলিত হয়েছিল।
রাজনৈতিক দলগুলো মঙ্গলবার ৫ জন করে নামের তালিকা জমা দেবে। তাদের ভেতর থেকে
সার্চ কমিটি ৫টি নাম বেছে নেবে। আশার কথা, বিএনপিও একটি নামের তালিকা
দেবে। এর মধ্য দিয়ে বিএনপি নয়া নির্বাচন কমিশন গঠনের প্রক্রিয়ায় নিজেদের
জড়িত করল। এতে সার্চ কমিটির গ্রহণযোগ্যতা কতটুকু থাকবে, তা এক প্রশ্ন বটে।
ইতোমধ্যে সার্চ কমিটি কেন্দ্র করে বড় দুটি দল পরস্পর পরস্পরের বিরুদ্ধে
‘আক্রমণ’ শুরু করে দিয়েছে। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল আমাদের জানালেন,
সার্চ কমিটির ৫ সদস্যই বিতর্কিত। তিনি সার্চ কমিটির সদস্যদের নাম উল্লেখ
করে পর্যন্ত বলেছেন, তাদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সংশ্লিষ্টতা আছে।
একটি টিভি চ্যানেলের মাধ্যমে জানা গেল আরও একটি তথ্যÑ সার্চ কমিটির সদস্য ও
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য ড. শিরীন আখতার কক্সবাজার জেলা
মহিলা আওয়ামী লীগের কার্যকর পরিষদের সদস্য। টিভি চ্যানেলটি আরও জানায়,
বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে ড. শিরীন আখতারের পরিচয়ও দেওয়া আছে। ওই পরিচয়টি
সরকার সমর্থক সাংবাদিক ইউনিয়নের নেতা মনজুরুল আহসান বুলবুল ওই অনুষ্ঠানেই
পদত্যাগের আহ্বান জানিয়েছেন ড. শিরীন আখতারকে। ড. শিরীন আখতার আওয়ামী লীগের
রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। ২০১৪ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির
নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্যানেল থেকে কার্যনির্বাহী সদস্যপদে
বিজয়ী হয়েছিলেন। তার বাবা ছিলেন কক্সবাজার আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা
সভাপতি। আরেক শিক্ষকও আছেন ওই কমিটিতেÑ সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম। সদ্য অবসরে
গেছেন তিনি। তার সম্পর্কে মির্জা ফখরুল কোনো মন্তব্য করেননি। কিন্তু ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা জানেন, তিনি সজ্জন ও গুণী ব্যক্তি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রাজনীতিতে তিনি ‘সরাসরি’ জড়িত না থাকলেও পরোক্ষভাবে
আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। মির্জা ফখরুল এক বিচারপতির পারিবারিক
ইতিহাস নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। এখন অনেক প্রশ্ন, অনেক জিজ্ঞাসা ওই সার্চ
কমিটি নিয়ে। প্রথমত, বিএনপি সার্চ কমিটির ব্যাপারে তাদের অসন্তোষ প্রকাশ
করলে এবং আওয়ামী লীগের প্রতিক্রিয়া দেখে মনে হয়েছে, বাংলাদেশ এখনো ওই
‘দোষারোপের রাজনীতি’র বৃত্ত থেকে বের হয়ে আসতে পারছে না। বিএনপিকে
সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের আখ্যায়িত করেছেন, ‘বাংলাদেশ নালিশ পার্টি’
হিসেবে। তিনি কখনো ‘ফালতু’ কথা বলেন না। যুক্তিসঙ্গত কথা বলেন। তার ভাষা
থাকে সংযত ও মার্জিত। সেই ওবায়দুল কাদের যখন বিএনপিকে বাংলাদেশ নালিশ
পার্টি হিসেবে আখ্যায়িত করে বসলেন, তখন আস্থার জায়গাটা আর থাকে কোথায়?
দ্বিতীয়ত, সার্চ কমিটিতে থাকাটাই বড় কথা নয়। যেহেতু কথা উঠেছে, সেহেতু ড.
শিরীন আখতার এবং ওই বিচারপতি ‘বিব্রত’ হয়ে কমিটি থেকে নিজেদের নাম
প্রত্যাহার করে নিতে পারতেন। কিন্তু তারা তা করেননি। আমরা তো অনেক সময়
দেখি, উচ্চ আদালতে কোনো মামলা শুনানিতে কোনো কোনো বিচারপতি ‘বিব্রত’ হন।
তাই এ ধরনের দৃষ্টান্ত তো আছে। ড. শিরীন আখতার কমিটিতে থাকাটাই
গুরুত্বপূর্ণ মনে করলেন। তৃতীয়ত, উচ্চ আদালতে সার্চ কমিটির বৈধতা চ্যালেঞ্জ
করে একটি রিট করা হয়েছে। এর অর্থ পরিষ্কার, মানুষের মনে সন্দেহ আছে এর
আইনি ও সাংবিধানিক কাঠামো নিয়ে। আমরা এর আগে এবং আমি একটি টিভি চ্যানেলে
বলেছিলাম, সার্চ কমিটির কোনো সাংবিধানিক ভিত্তি নেই। তবে অতীতে ২০১২ সালে
রাষ্ট্রপতি একবার সার্চ কমিটি গঠন করেছিলেন। ২০১৭ সালে আরও একবার হলো।
‘ডকট্রিন অব নেসেসিটি’ নামে একটা ব্যাখ্যা আছে। বিচারপতিরা মাঝে মধ্যে এর
প্রয়োগ করে থাকেন। এখন বিচারপতিরা ওই রিটের মীমাংসা করবেন কীভাবে, তা জানি
না। তবে এটি তো সত্য, সাংবিধানিক কোনো ভিত্তি না থাকলে রিট করা যায় না।
চতুর্থত, পত্রপত্রিকায় বেশকিছু নাম এসেছেÑ যাদের বিবেচনা করা হচ্ছে প্রধান
নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) হিসেবে। তাদের মধ্যে দুইজন আবার বর্তমান
প্রধানমন্ত্রীর আমলে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব হিসেবে কাজ করেছেন। এখন
তাদের মধ্যে একজন যদি ঘটনাক্রমে সিইসি হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়ে যান, তাহলে
রাজনৈতিক বলটি ঠেলে দেওয়া হবে বিরোধী দলের দিকে। তারা এটিকে পুঁজি করবেন।
ফলে কোনো অবস্থাতেই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের
সিইসি অথবা নির্বাচন কমিশনার (ইসি) হিসেবে মনোনয়ন দেওয়া ঠিক হবে না। সার্চ
কমিটির সদস্যরা নিশ্চয়ই এটি বিবেচনা করবেন। আমরা চাই কম বিতর্ক। পঞ্চমত,
সার্চ কমিটি সুশীল সমাজের সঙ্গে কথা বলেছে রোববার। উদ্যোগটি ভালো। কিন্তু
প্রশ্ন হচ্ছে, সুশীল সমাজের ভূমিকা এ ক্ষেত্রে কতটুকু কার্যকর হবে? তারা
মূল ফ্যাক্টর নন। বরং রাজনৈতিক দলগুলোই মূল ফ্যাক্টর। তাদের মতামতকেই
গুরুত্ব দেওয়া উচিত। সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের মধ্যে এমন অনেক ব্যক্তি
রয়েছেনÑ যারা আদৌ নির্বাচনী ব্যবস্থা, নির্বাচন কমিশন, রাজনৈতিক সংস্কৃতি
ইত্যাদি সম্পর্কে ন্যূনতম ধারণা রাখেন না। একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপচার্য
হলেই তিনি সব জানবেন, তা তো নয়। তারা কী ভূমিকা রাখবেন, এ প্রশ্ন আমার
থাকলই। তবে সাবেক সিইসি, দুই কমিশনার, অপর দুই ব্যক্তিÑ যারা নির্বাচন
ব্যবস্থা নিয়ে কাজ করেন, তাদের সার্চ কমিটিতে অন্তর্ভুক্তির সিদ্ধান্তকে
স্বাগত জানাই। ষষ্ঠত, একটু ভিন্ন মেজাজের একটি নির্বাচন কমিশন এবার গঠিত
হোক। এ ক্ষেত্রে আমার বিবেচনায় এবং সুশীল সমাজের একজন প্রতিনিধি হিসেবে
আমার প্রস্তাব নিম্নরূপÑ
সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন এক অফিসারকে (মেজর জেনারেল পদমর্যাদার অধিকারী) সিইসি পদে প্রেষণে নিয়োগ দেওয়া হোক। সেনাবাহিনীর অফিসাররা বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানে প্রেষণে কাজ করেন। রাষ্ট্রদূত হিসেবে আছেন বেশ কয়েকজন। যুক্তিটা হচ্ছে, সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন অফিসাররা বিতর্কের ঊর্ধ্বে থাকেন। অনেক বড় রড় ‘কাজ’ তারা সাফল্যের সঙ্গে শেষ করেছেন। বিতর্ক তাদের স্পর্শ করতে পারেনি। এ ক্ষেত্রে একটা সমস্যা হতে পারে। সিইসি ৫ বছরের জন্য নিয়োগপ্রাপ্ত হবেন। তাকে শপথ নিতে হবে। চাকরিকালীন কোনো সেনা কর্মকর্তা এটি নাও করতে পারেন। এ অবস্থায় অবসরপ্রাপ্ত এক মেজর জেনারেলকেÑ যিনি রাজনীতিতে নিজেকে জড়িত করেননি, সার্চ কমিটি এ রকম এক সৎ, দক্ষ, নিরপেক্ষ ও ডেডিকেটেড সিনিয়র অফিসার খুঁজে বের করতে পারে। বাকি চার জনকে অবসরপ্রাপ্ত সরকারি এক আমলা, সুশীল সমাজের এক প্রতিনিধি, বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সিনিয়র অধ্যাপক, এক সিনিয়র আইনজীবী অথবা অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিদের মধ্যে থেকে বেছে নেওয়া যেতে পারে।
যে কমিশনটি হতে যাচ্ছে, এর গুরুত্ব অনেক। ওই কমিশনকেই ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আয়োজন করতে হবে। আমরা চাই, একটি নির্বাচন হোকÑ যাতে সব দল অংশ নেবে। কোনো একটি দল যেন নির্বাচন বয়কট করতে না পারে। এ জন্য নির্বাচন কমিশনের ওপর আস্থাটা রাখতে হবে। নির্বাচন কমিশনকে সংবিধান অনেক স্বাধীনতা দিয়েছে (সংবিধানের ১১৮-৪ ধারা)। সমস্যা হচ্ছে স্বাধীনতার ব্যবহার নিয়ে। রকীব কমিশন স্বাধীনভাবে নির্বাচন কমিশন পরিচালনা করতে পারেনি। তাই যারা আসবেন, তাদের নিয়েও প্রশ্ন থেকে যাবে। এখন দেখার পালা, সার্চ কমিটি কাদের নাম প্রস্তাব করে।
সার্চ কমিটিকে একটি সুযোগ দেওয়া উচিত। দেখা যাক, সার্চ কমিটি কাদের নাম সুপারিশ করে। সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা এটিইÑ সার্চ কমিটি কোনো বিতর্কিত ব্যক্তিকে সুপারিশ করবে না। যদিও ২০১২ সালে বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনকে দিয়েই প্রথম সার্চ কমিটি গঠিত হয়েছিল এবং তারা রকীব উদ্দিনকে সিইসি পদে সুপারিশ করেছিলেন। তাদের অভিজ্ঞতা খুব সুখের হয়নি। সমসাময়িককালে রকীব কমিশন বিতর্কিত হয়েছে সবচেয়ে বেশি। ফলে সাধারণ মানুষ চাইবে না দ্বিতীয় আরেকটি ‘রকীব কমিশন’ গঠিত হোক। ফলে সার্চ কমিটির কাছে প্রত্যাশা অনেক বেশি।
আমরা চাই, এ দেশে সুস্থ গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি বিকশিত হোক। বড় রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আস্থার সম্পর্ক গড়ে উঠুক। এই আস্থার সম্পর্ক গড়ে না উঠলে বারবার সংকটের জন্ম হবে। সরকারের যে কোনো সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করবে প্রধান বিরোধী দল। তখন প্রধান বিরোধী দলের নানা সমালোচনায় মুখর থাকবে সরকারি দল। আমরা গণতন্ত্র চাই বটে কিন্তু ভুলে যাই। পরস্পরের প্রতি বিশ্বাস আর আস্থা স্থাপনের নামই গণতন্ত্র। ওই গণতন্ত্র এখন বাংলাদেশে মুখ থুবড়ে পড়েছে। সার্চ কমিটি নিয়ে যে আস্থার সম্পর্ক গড়ে ওঠার সম্ভাবনা ছিল, তা যেন ভেস্তে না যায়। ২০১৯ সালে অনুষ্ঠেয় একাদশ সংসদ নির্বাচনও যেন না থাকে একটি প্রশ্নের মুখে। ইতোমধ্যে দাতাগোষ্ঠী আবার সক্রিয় হয়েছে। দাতাগোষ্ঠীর প্রতিনিধিরা রাষ্ট্রপতির সঙ্গে কথা বলতে চান। আগামী নির্বাচন নিয়েই তারা কথা বলতে চান। প্রশ্ন হচ্ছে, নির্বাচনের বিষয়টি একান্তভাবেই বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। বাংলাদেশের সংবিধানে এ ব্যাপারে স্পষ্ট দিকনির্দেশনা আছে। তাই ‘বাইরের কোনো শক্তি’র এ ব্যাপারে কথা বলার কোনো সুযোগ নেই। আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে আস্থার সম্পর্কে ঘাটতি থাকায় সুযোগ নিচ্ছেন দাতাগোষ্ঠীর প্রতিনিধিরা। এ ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনে যদি কোনো বিতর্কিত ব্যক্তি থাকেন ও বিএনপি তাদের প্রত্যাখ্যান করে, তাহলে জটিলতা বাড়বে এবং একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনও একটা অনিশ্চয়তার মধ্যে থাকবে। এ জন্য সার্চ কমিটির দিকে তাকিয়ে আছে জাতি। সার্চ কমিটিতে বেশ কয়েক ব্যক্তি আছেনÑ যাদের ওপর আস্থা রাখা যায়। তারা নিশ্চয়ই এমন কোনো নাম সুপারিশ করবেন নাÑ যাতে বিতর্কটা আরও বেড়ে যায়। জাতি এক কঠিন সময় পার করছে। ৫ জানুয়ারির (২০১৪) পুনরাবৃত্তি হোকÑ এটি কেউই আমরা চাই না।
Daily Amader Somoy
সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন এক অফিসারকে (মেজর জেনারেল পদমর্যাদার অধিকারী) সিইসি পদে প্রেষণে নিয়োগ দেওয়া হোক। সেনাবাহিনীর অফিসাররা বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানে প্রেষণে কাজ করেন। রাষ্ট্রদূত হিসেবে আছেন বেশ কয়েকজন। যুক্তিটা হচ্ছে, সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন অফিসাররা বিতর্কের ঊর্ধ্বে থাকেন। অনেক বড় রড় ‘কাজ’ তারা সাফল্যের সঙ্গে শেষ করেছেন। বিতর্ক তাদের স্পর্শ করতে পারেনি। এ ক্ষেত্রে একটা সমস্যা হতে পারে। সিইসি ৫ বছরের জন্য নিয়োগপ্রাপ্ত হবেন। তাকে শপথ নিতে হবে। চাকরিকালীন কোনো সেনা কর্মকর্তা এটি নাও করতে পারেন। এ অবস্থায় অবসরপ্রাপ্ত এক মেজর জেনারেলকেÑ যিনি রাজনীতিতে নিজেকে জড়িত করেননি, সার্চ কমিটি এ রকম এক সৎ, দক্ষ, নিরপেক্ষ ও ডেডিকেটেড সিনিয়র অফিসার খুঁজে বের করতে পারে। বাকি চার জনকে অবসরপ্রাপ্ত সরকারি এক আমলা, সুশীল সমাজের এক প্রতিনিধি, বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সিনিয়র অধ্যাপক, এক সিনিয়র আইনজীবী অথবা অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিদের মধ্যে থেকে বেছে নেওয়া যেতে পারে।
যে কমিশনটি হতে যাচ্ছে, এর গুরুত্ব অনেক। ওই কমিশনকেই ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আয়োজন করতে হবে। আমরা চাই, একটি নির্বাচন হোকÑ যাতে সব দল অংশ নেবে। কোনো একটি দল যেন নির্বাচন বয়কট করতে না পারে। এ জন্য নির্বাচন কমিশনের ওপর আস্থাটা রাখতে হবে। নির্বাচন কমিশনকে সংবিধান অনেক স্বাধীনতা দিয়েছে (সংবিধানের ১১৮-৪ ধারা)। সমস্যা হচ্ছে স্বাধীনতার ব্যবহার নিয়ে। রকীব কমিশন স্বাধীনভাবে নির্বাচন কমিশন পরিচালনা করতে পারেনি। তাই যারা আসবেন, তাদের নিয়েও প্রশ্ন থেকে যাবে। এখন দেখার পালা, সার্চ কমিটি কাদের নাম প্রস্তাব করে।
সার্চ কমিটিকে একটি সুযোগ দেওয়া উচিত। দেখা যাক, সার্চ কমিটি কাদের নাম সুপারিশ করে। সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা এটিইÑ সার্চ কমিটি কোনো বিতর্কিত ব্যক্তিকে সুপারিশ করবে না। যদিও ২০১২ সালে বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনকে দিয়েই প্রথম সার্চ কমিটি গঠিত হয়েছিল এবং তারা রকীব উদ্দিনকে সিইসি পদে সুপারিশ করেছিলেন। তাদের অভিজ্ঞতা খুব সুখের হয়নি। সমসাময়িককালে রকীব কমিশন বিতর্কিত হয়েছে সবচেয়ে বেশি। ফলে সাধারণ মানুষ চাইবে না দ্বিতীয় আরেকটি ‘রকীব কমিশন’ গঠিত হোক। ফলে সার্চ কমিটির কাছে প্রত্যাশা অনেক বেশি।
আমরা চাই, এ দেশে সুস্থ গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি বিকশিত হোক। বড় রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আস্থার সম্পর্ক গড়ে উঠুক। এই আস্থার সম্পর্ক গড়ে না উঠলে বারবার সংকটের জন্ম হবে। সরকারের যে কোনো সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করবে প্রধান বিরোধী দল। তখন প্রধান বিরোধী দলের নানা সমালোচনায় মুখর থাকবে সরকারি দল। আমরা গণতন্ত্র চাই বটে কিন্তু ভুলে যাই। পরস্পরের প্রতি বিশ্বাস আর আস্থা স্থাপনের নামই গণতন্ত্র। ওই গণতন্ত্র এখন বাংলাদেশে মুখ থুবড়ে পড়েছে। সার্চ কমিটি নিয়ে যে আস্থার সম্পর্ক গড়ে ওঠার সম্ভাবনা ছিল, তা যেন ভেস্তে না যায়। ২০১৯ সালে অনুষ্ঠেয় একাদশ সংসদ নির্বাচনও যেন না থাকে একটি প্রশ্নের মুখে। ইতোমধ্যে দাতাগোষ্ঠী আবার সক্রিয় হয়েছে। দাতাগোষ্ঠীর প্রতিনিধিরা রাষ্ট্রপতির সঙ্গে কথা বলতে চান। আগামী নির্বাচন নিয়েই তারা কথা বলতে চান। প্রশ্ন হচ্ছে, নির্বাচনের বিষয়টি একান্তভাবেই বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। বাংলাদেশের সংবিধানে এ ব্যাপারে স্পষ্ট দিকনির্দেশনা আছে। তাই ‘বাইরের কোনো শক্তি’র এ ব্যাপারে কথা বলার কোনো সুযোগ নেই। আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে আস্থার সম্পর্কে ঘাটতি থাকায় সুযোগ নিচ্ছেন দাতাগোষ্ঠীর প্রতিনিধিরা। এ ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনে যদি কোনো বিতর্কিত ব্যক্তি থাকেন ও বিএনপি তাদের প্রত্যাখ্যান করে, তাহলে জটিলতা বাড়বে এবং একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনও একটা অনিশ্চয়তার মধ্যে থাকবে। এ জন্য সার্চ কমিটির দিকে তাকিয়ে আছে জাতি। সার্চ কমিটিতে বেশ কয়েক ব্যক্তি আছেনÑ যাদের ওপর আস্থা রাখা যায়। তারা নিশ্চয়ই এমন কোনো নাম সুপারিশ করবেন নাÑ যাতে বিতর্কটা আরও বেড়ে যায়। জাতি এক কঠিন সময় পার করছে। ৫ জানুয়ারির (২০১৪) পুনরাবৃত্তি হোকÑ এটি কেউই আমরা চাই না।
Daily Amader Somoy
31.01.2017
0 comments:
Post a Comment