প্রধানমন্ত্রীর রাশিয়া সফরে যে আট হাজার কোটি টাকার অস্ত্র ক্রয় চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে, তা নিয়ে নানা মহলে নানা কথাবার্তা হচ্ছে। বিএনপি অস্ত্র ক্রয়ের সমালোচনা করলেও, একই সঙ্গে ক্রয় প্রক্রিয়ায় 'কমিশন'-এর অভিযোগ তুলেছে। সেনাবাহিনীর স্বার্থেই অস্ত্র ক্রয় করা হয়েছে। তবে যে প্রশ্নটি সহজেই করা যায়, তা হচ্ছে বিশ্ব মন্দার এই যুগে রাশিয়ার সঙ্গে এই মুহূর্তে অস্ত্র কেনার প্রয়োজন ছিল না। সামাজিক খাতকে অগ্রাধিকার তালিকা থেকে বাদ দিয়ে সরকার যখন বিদেশি ঋণে অস্ত্র ক্রয় করে, তখন বিতর্কের মাত্রাটা বাড়ে বৈকি! আরো একটা কথা। অতীতেও প্রতিরক্ষা বাহিনীর জন্য অস্ত্র ক্রয় করা হয়েছে। কিন্তু তখন প্রশ্ন ওঠেনি এবং সেনাবাহিনীকে সংবাদ সম্মেলন করে এর ব্যাখ্যাও দিতে হয়নি। আজ কেন দিতে হলো, এটাও ভেবে দেখা প্রয়োজন। অঙ্কের হিসাবে এটা অনেক টাকা। সুদ দিতে হবে ৪ শতাংশ, যার পরিমাণ একটু বেশিই। এই ঋণ ব্যবহার করা হবে ২০১৩-১৭ সালের মধ্যে। আর ২০১৮ সালের ১৫ এপ্রিল থেকে ২০ কিস্তিতে ১০ বছর ধরে বৈদেশিক মুদ্রায় এই ঋণ পরিশোধ করতে হবে। যে পরিমাণ টাকা আমাদের সুদসহ পরিশোধ করতে হবে, তা একেবারে কম নয়। এই মুহূর্তে আমাদের প্রায়োরিটি অবশ্যই অস্ত্রশস্ত্র নয়, বরং দারিদ্র্য দূরীকরণ তথা সামাজিক খাতের উন্নয়ন। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর সম্প্রতি একটি অনুষ্ঠানে বলেছেন বাংলাদেশের একচতুর্থাংশ মানুষ গরিব। তাদের দিকে নজর দেয়া প্রয়োজন। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বাংলাদেশ বড় ধরনের ঝুঁকির মুখে। শত শত মানুষ জলবায়ু শরণার্থী হিসেবে ঢাকাসহ বড় বড় শহরে আশ্রয় নিয়েছে। তাদের পেশার পরিবর্তন হয়েছে। তাদের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা জরুরি। আইলা ও সিডরের কারণে দক্ষিণাঞ্চলে যে ক্ষতি হয়েছিল, তা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়নি। জোয়ারে পানি ঠেকাতে উঁচু বাঁধ নির্মাণ করা যায়নি। সুপেয় পানির অভাব ওই সব অঞ্চলে। নূ্যনতম এই নাগরিক অধিকার আমরা নিশ্চিত করতে পারিনি। আমরা বৈদেশিক সহায়তার ওপর গুরুত্ব দিয়েছি। কিন্তু এই সহায়তাও আমরা নিশ্চিত করতে পারিনি। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে আমাদের যে ক্ষতি হয়েছে, তাতে আমরা গরষষবহরঁস উবাবষড়ঢ়সবহঃ এড়ধষং (গউএ)- এর লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারব না। জাতিসংঘ কর্তৃক নির্ধারিত বেশ কিছু ক্ষেত্রে ২০১৫ সালের মধ্যে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হবে। যেমন, প্রাথমিক শিক্ষায় লৈঙ্গিক সমতা, সার্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষা, শিশু মৃত্যু হার কমানো, মাতৃ স্বাস্থ্যের উন্নয়ন, এইচআইভি/এইডস, ম্যালেরিয়া, অন্যান্য সংক্রামক রোগের বিস্তার কমানো, পরিবেশগত স্থিতিশীলতা ইত্যাদি। যেখানে আইলা ও সিডর আক্রান্ত এলাকায় শত শত পরিবার নিজেদের গৃহে ফিরে যেতে পারেনি এবং এখনো বেড়িবাঁধের ওপর তাদের বসবাস, সেখানে বাচ্চাদের স্কুলে যাওয়ার সুযোগ কোথায়? ওই এলাকায় স্বাস্থ্যসেবা চরমে উঠেছে। মাতৃস্বাস্থ্যেরও যথেষ্ট অবনতি ঘটেছে। তাই বাংলাদেশ যে ২০১৫ সালের মধ্যে এমডিজির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারবে না, তা একরকম নিশ্চিত। 'সিডর' ও 'আইলা' আক্রান্ত এলাকায় সরকারের নীরবতা ইতোমধ্যে নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। সরকার নিজ উদ্যোগে কোনো বড় কর্মসূচি নেয়নি। সরকার গুরুত্ব দিয়েছে বৈদেশিক অর্থ প্রাপ্তির। যে কারণে সেখানকার মানুষ এক মানবেতর জীবনযাপন করছে। এই যখন পরিস্থিতি তখন হাজার হাজার কোটি টাকা দিয়ে সরকার রাশিয়া থেকে অস্ত্র কিনছে। এই অস্ত্র দিয়ে সাধারণ মানুষের কোনো উপকার হবে না। এমনিতেই জনজীবন নানা সমস্যায় আক্রান্ত। এই শীতেও লোডশেডিং হচ্ছে। নিজস্ব অর্থায়নে বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করার কোনো উদ্যোগ নেই। বরং দলীয় লোকদের রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রতিষ্ঠার সুযোগ করে দিয়ে আমরা হাজার হাজার কোটি টাকা 'লুটপাটের' সুযোগ করে দিয়েছি। কোনোরকম নিয়ম নীতি ছাড়াই জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হয়েছে। এর ফলে জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাবে। কেননা পরিবহন খরচ অনেকগুণ বেড়ে যাবে। বর্তমান সরকারের আমলে ২০০৯ সালে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির হার যেখানে ছিল ৭.৪১ ভাগ, সেখানে ২০১২ সালে তা দাঁড়িয়েছে ১৩ ভাগে। আর চলতি ২০১৩ সালে তা যদি ১৫ ভাগকে অতিক্রম করে আমি অবাক হবো না। একই সময় ২০০৯ সালে জীবন যাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির হার ছিল ৬ দশমিক ১৯ ভাগ। আর ২০১২ সালে এ হার ছিল ৬ দশমিক ৪২। আর ২০১৩ সালে এই হার যে বাড়বে, তা তো কাউকে বলে দিতে হবে না। সরকারের এই সিদ্ধান্তে, ডিজেলের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে কৃষকদের। লিটার প্রতি ৭ টাকা দাম বাড়ায়, প্রতি কেজি ধান উৎপাদনে গত বছরের চেয়ে প্রায় ১ টাকা বেশি হবে। বোরো উৎপাদনে প্রায় ৪১ শতাংশ খরচ হয় সেচকাজে। ডিজেলের দাম বাড়ায় এ ব্যয় বেড়ে ৪৫ শতাংশ ছাড়িয়ে যেতে পারে। ফলে কৃষকের পকেট কাঁটা যাবে। জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির ফলে জনগণকে বাড়তি ভাড়া গুনতে হবে অন্তত ৯০০ কোটি টাকা। এই তথ্য বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের মতে। কপোরেশনের মতে কৃষি ক্ষেত্রে উৎপাদন ব্যয় বাড়তি ৩৫০ কোটি টাকা, আর কেরোসিনের মূল্যবৃদ্ধিতে বিদ্যুৎবিহীন অঞ্চলে জনগণকে বাড়তি গুনতে হবে অন্তত ৩১৬ কোটি টাকা। অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন অর্থের পরিমাণ আরো বাড়তে পারে। এই বাড়তি অর্থ যে মূল্যস্ফীতিকে আরো উসকে দেবে, তা কাউকে বলে দিতে হয় না। তাহলে সরকারের দায়িত্বটি কী? শুধু ক্ষমতায় থাকা সাধারণ মানুষের স্বার্থ বিরোধী এসব কর্মসচি গ্রহণ করা? সরকার তো জনস্বার্থে কর্মসূচি গ্রহণ করে ও তা বাস্তবায়ন করে। কিন্তু যেসব কর্মসূচি জনগণের স্বার্থের বিরুদ্ধে যায়, তা তো কোনো অবস্থাতেই নেয়া উচিত নয়। সরকারের শেষ সময়ে এসে এমন সব কর্মসূচি নিচ্ছে, যা কোনো অবস্থাতেই সরকারের পক্ষে যাবে না। জনস্বার্থের সঙ্গে যেসব বিষয় জিড়ত, সেই সব বিষয়ে সরকারের ভর্তুকি দেয়া উচিত। সরকার কোন কোন খাতে ভর্তুকি দিচ্ছে, এটা সত্য। কিন্তু তা জনগণের উপকারে আসছে না। যেমন বলা যেতে রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের কথা। দেশে বিদ্যুৎ চাহিদা অনেক বেড়েছে। নিঃসন্দেহে এটা সরকারের জন্য একটা বড় চ্যালেঞ্জ। সরকার বিদ্যুতের বিপুল চাহিদা মেটাতে কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু করেছে। উদ্দেশ্য সেখান থেকে বিদ্যুৎ কিনে চাহিদা পূরণ করা। এটি ছিল একটি ভুল সিদ্ধান্ত। সরকারকে এখানে ভর্তুকি দিয়ে জ্বালানি সরবরাহ করতে হচ্ছে। কিন্তু তাতে করে কী সরকারের উদ্দেশ্য সফল হয়েছে? না, সফল হয়নি। কেননা এই শীতেও লোডশেডিং হচ্ছে। এটা অতীতে কখনো হয়েছে বলে মনে হয় না। এই শীতেও যখন লোডশেডিং হচ্ছে, এখন গ্রীষ্ম আমাদের কীভাবে কাটবে, ভাবতেই কষ্ট হচ্ছে। স্পষ্টতই এবারের গ্রীষ্মটা আমাদের ভালো যাবে না। অথচ শত শত কোটি টাকা আমরা কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রে ভর্তুকি দিচ্ছি। এখন এলো অস্ত্র কেনার বিষয়টি। অতীতে ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় এসেছিল, তখন রাশিয়া থেকে ৮টি মিগ বিমান কেনা হয়েছিল। কিন্তু মাত্র কয়েক বছরের ব্যবধানে ওই মিগ বিমানগুলো গ্রাউনডেড হয়েছে। উড়তে পারছে না সবকটি। দু'একটিকে সচল রাখা হয় বটে, কিন্তু বাকিগুলো উড়বার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে। এখন আবার অস্ত্র কিনলাম। বলা হচ্ছে এ অস্ত্র জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে ব্যবহৃত হবে। কিন্তু জাতিসংঘের কাজে ব্যবহারের জন্য (?) জনগণের ট্যাক্সের টাকায় কেন ৮ হাজার কোটি টাকার অস্ত্র কেনা হবে? আমরা শক্তিশালী সেনাবাহিনী চাই। সেনাবাহিনী আমাদের গৌরবের। আমাদের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতীক। কিন্তু রাশিয়ার অস্ত্র দিয়ে আমাদের সেনাবাহিনী কতটুকু শক্তিশালী হবে, সে ব্যাপারে আমি নিশ্চিত হতে পারছি না। আমি চাই 'সিডর' ও 'আইলা' আক্রান্ত মানুষের পুনর্বাসন। আমার কাছে এটা প্রথম প্রায়োরিটি। সেই সঙ্গে দারিদ্র্য দূরীকরণ, হাজার হাজার তরুণের জন্য চাকরির সংস্থান করা, সরকারের দায়িত্ব । নির্বাচনের আগে সরকার এদিকে দৃষ্টি দিলে ভালো করবে।Daily JAI JAI DIN29.01.13
অস্ত্র ক্রয় ও দেশের আর্থসামাজিক অবস্থা
18:06
No comments
প্রধানমন্ত্রীর রাশিয়া সফরে যে আট হাজার কোটি টাকার অস্ত্র ক্রয় চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে, তা নিয়ে নানা মহলে নানা কথাবার্তা হচ্ছে। বিএনপি অস্ত্র ক্রয়ের সমালোচনা করলেও, একই সঙ্গে ক্রয় প্রক্রিয়ায় 'কমিশন'-এর অভিযোগ তুলেছে। সেনাবাহিনীর স্বার্থেই অস্ত্র ক্রয় করা হয়েছে। তবে যে প্রশ্নটি সহজেই করা যায়, তা হচ্ছে বিশ্ব মন্দার এই যুগে রাশিয়ার সঙ্গে এই মুহূর্তে অস্ত্র কেনার প্রয়োজন ছিল না। সামাজিক খাতকে অগ্রাধিকার তালিকা থেকে বাদ দিয়ে সরকার যখন বিদেশি ঋণে অস্ত্র ক্রয় করে, তখন বিতর্কের মাত্রাটা বাড়ে বৈকি! আরো একটা কথা। অতীতেও প্রতিরক্ষা বাহিনীর জন্য অস্ত্র ক্রয় করা হয়েছে। কিন্তু তখন প্রশ্ন ওঠেনি এবং সেনাবাহিনীকে সংবাদ সম্মেলন করে এর ব্যাখ্যাও দিতে হয়নি। আজ কেন দিতে হলো, এটাও ভেবে দেখা প্রয়োজন। অঙ্কের হিসাবে এটা অনেক টাকা। সুদ দিতে হবে ৪ শতাংশ, যার পরিমাণ একটু বেশিই। এই ঋণ ব্যবহার করা হবে ২০১৩-১৭ সালের মধ্যে। আর ২০১৮ সালের ১৫ এপ্রিল থেকে ২০ কিস্তিতে ১০ বছর ধরে বৈদেশিক মুদ্রায় এই ঋণ পরিশোধ করতে হবে। যে পরিমাণ টাকা আমাদের সুদসহ পরিশোধ করতে হবে, তা একেবারে কম নয়। এই মুহূর্তে আমাদের প্রায়োরিটি অবশ্যই অস্ত্রশস্ত্র নয়, বরং দারিদ্র্য দূরীকরণ তথা সামাজিক খাতের উন্নয়ন। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর সম্প্রতি একটি অনুষ্ঠানে বলেছেন বাংলাদেশের একচতুর্থাংশ মানুষ গরিব। তাদের দিকে নজর দেয়া প্রয়োজন। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বাংলাদেশ বড় ধরনের ঝুঁকির মুখে। শত শত মানুষ জলবায়ু শরণার্থী হিসেবে ঢাকাসহ বড় বড় শহরে আশ্রয় নিয়েছে। তাদের পেশার পরিবর্তন হয়েছে। তাদের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা জরুরি। আইলা ও সিডরের কারণে দক্ষিণাঞ্চলে যে ক্ষতি হয়েছিল, তা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়নি। জোয়ারে পানি ঠেকাতে উঁচু বাঁধ নির্মাণ করা যায়নি। সুপেয় পানির অভাব ওই সব অঞ্চলে। নূ্যনতম এই নাগরিক অধিকার আমরা নিশ্চিত করতে পারিনি। আমরা বৈদেশিক সহায়তার ওপর গুরুত্ব দিয়েছি। কিন্তু এই সহায়তাও আমরা নিশ্চিত করতে পারিনি। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে আমাদের যে ক্ষতি হয়েছে, তাতে আমরা গরষষবহরঁস উবাবষড়ঢ়সবহঃ এড়ধষং (গউএ)- এর লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারব না। জাতিসংঘ কর্তৃক নির্ধারিত বেশ কিছু ক্ষেত্রে ২০১৫ সালের মধ্যে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হবে। যেমন, প্রাথমিক শিক্ষায় লৈঙ্গিক সমতা, সার্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষা, শিশু মৃত্যু হার কমানো, মাতৃ স্বাস্থ্যের উন্নয়ন, এইচআইভি/এইডস, ম্যালেরিয়া, অন্যান্য সংক্রামক রোগের বিস্তার কমানো, পরিবেশগত স্থিতিশীলতা ইত্যাদি। যেখানে আইলা ও সিডর আক্রান্ত এলাকায় শত শত পরিবার নিজেদের গৃহে ফিরে যেতে পারেনি এবং এখনো বেড়িবাঁধের ওপর তাদের বসবাস, সেখানে বাচ্চাদের স্কুলে যাওয়ার সুযোগ কোথায়? ওই এলাকায় স্বাস্থ্যসেবা চরমে উঠেছে। মাতৃস্বাস্থ্যেরও যথেষ্ট অবনতি ঘটেছে। তাই বাংলাদেশ যে ২০১৫ সালের মধ্যে এমডিজির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারবে না, তা একরকম নিশ্চিত। 'সিডর' ও 'আইলা' আক্রান্ত এলাকায় সরকারের নীরবতা ইতোমধ্যে নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। সরকার নিজ উদ্যোগে কোনো বড় কর্মসূচি নেয়নি। সরকার গুরুত্ব দিয়েছে বৈদেশিক অর্থ প্রাপ্তির। যে কারণে সেখানকার মানুষ এক মানবেতর জীবনযাপন করছে। এই যখন পরিস্থিতি তখন হাজার হাজার কোটি টাকা দিয়ে সরকার রাশিয়া থেকে অস্ত্র কিনছে। এই অস্ত্র দিয়ে সাধারণ মানুষের কোনো উপকার হবে না। এমনিতেই জনজীবন নানা সমস্যায় আক্রান্ত। এই শীতেও লোডশেডিং হচ্ছে। নিজস্ব অর্থায়নে বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করার কোনো উদ্যোগ নেই। বরং দলীয় লোকদের রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রতিষ্ঠার সুযোগ করে দিয়ে আমরা হাজার হাজার কোটি টাকা 'লুটপাটের' সুযোগ করে দিয়েছি। কোনোরকম নিয়ম নীতি ছাড়াই জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হয়েছে। এর ফলে জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাবে। কেননা পরিবহন খরচ অনেকগুণ বেড়ে যাবে। বর্তমান সরকারের আমলে ২০০৯ সালে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির হার যেখানে ছিল ৭.৪১ ভাগ, সেখানে ২০১২ সালে তা দাঁড়িয়েছে ১৩ ভাগে। আর চলতি ২০১৩ সালে তা যদি ১৫ ভাগকে অতিক্রম করে আমি অবাক হবো না। একই সময় ২০০৯ সালে জীবন যাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির হার ছিল ৬ দশমিক ১৯ ভাগ। আর ২০১২ সালে এ হার ছিল ৬ দশমিক ৪২। আর ২০১৩ সালে এই হার যে বাড়বে, তা তো কাউকে বলে দিতে হবে না। সরকারের এই সিদ্ধান্তে, ডিজেলের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে কৃষকদের। লিটার প্রতি ৭ টাকা দাম বাড়ায়, প্রতি কেজি ধান উৎপাদনে গত বছরের চেয়ে প্রায় ১ টাকা বেশি হবে। বোরো উৎপাদনে প্রায় ৪১ শতাংশ খরচ হয় সেচকাজে। ডিজেলের দাম বাড়ায় এ ব্যয় বেড়ে ৪৫ শতাংশ ছাড়িয়ে যেতে পারে। ফলে কৃষকের পকেট কাঁটা যাবে। জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির ফলে জনগণকে বাড়তি ভাড়া গুনতে হবে অন্তত ৯০০ কোটি টাকা। এই তথ্য বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের মতে। কপোরেশনের মতে কৃষি ক্ষেত্রে উৎপাদন ব্যয় বাড়তি ৩৫০ কোটি টাকা, আর কেরোসিনের মূল্যবৃদ্ধিতে বিদ্যুৎবিহীন অঞ্চলে জনগণকে বাড়তি গুনতে হবে অন্তত ৩১৬ কোটি টাকা। অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন অর্থের পরিমাণ আরো বাড়তে পারে। এই বাড়তি অর্থ যে মূল্যস্ফীতিকে আরো উসকে দেবে, তা কাউকে বলে দিতে হয় না। তাহলে সরকারের দায়িত্বটি কী? শুধু ক্ষমতায় থাকা সাধারণ মানুষের স্বার্থ বিরোধী এসব কর্মসচি গ্রহণ করা? সরকার তো জনস্বার্থে কর্মসূচি গ্রহণ করে ও তা বাস্তবায়ন করে। কিন্তু যেসব কর্মসূচি জনগণের স্বার্থের বিরুদ্ধে যায়, তা তো কোনো অবস্থাতেই নেয়া উচিত নয়। সরকারের শেষ সময়ে এসে এমন সব কর্মসূচি নিচ্ছে, যা কোনো অবস্থাতেই সরকারের পক্ষে যাবে না। জনস্বার্থের সঙ্গে যেসব বিষয় জিড়ত, সেই সব বিষয়ে সরকারের ভর্তুকি দেয়া উচিত। সরকার কোন কোন খাতে ভর্তুকি দিচ্ছে, এটা সত্য। কিন্তু তা জনগণের উপকারে আসছে না। যেমন বলা যেতে রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের কথা। দেশে বিদ্যুৎ চাহিদা অনেক বেড়েছে। নিঃসন্দেহে এটা সরকারের জন্য একটা বড় চ্যালেঞ্জ। সরকার বিদ্যুতের বিপুল চাহিদা মেটাতে কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু করেছে। উদ্দেশ্য সেখান থেকে বিদ্যুৎ কিনে চাহিদা পূরণ করা। এটি ছিল একটি ভুল সিদ্ধান্ত। সরকারকে এখানে ভর্তুকি দিয়ে জ্বালানি সরবরাহ করতে হচ্ছে। কিন্তু তাতে করে কী সরকারের উদ্দেশ্য সফল হয়েছে? না, সফল হয়নি। কেননা এই শীতেও লোডশেডিং হচ্ছে। এটা অতীতে কখনো হয়েছে বলে মনে হয় না। এই শীতেও যখন লোডশেডিং হচ্ছে, এখন গ্রীষ্ম আমাদের কীভাবে কাটবে, ভাবতেই কষ্ট হচ্ছে। স্পষ্টতই এবারের গ্রীষ্মটা আমাদের ভালো যাবে না। অথচ শত শত কোটি টাকা আমরা কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রে ভর্তুকি দিচ্ছি। এখন এলো অস্ত্র কেনার বিষয়টি। অতীতে ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় এসেছিল, তখন রাশিয়া থেকে ৮টি মিগ বিমান কেনা হয়েছিল। কিন্তু মাত্র কয়েক বছরের ব্যবধানে ওই মিগ বিমানগুলো গ্রাউনডেড হয়েছে। উড়তে পারছে না সবকটি। দু'একটিকে সচল রাখা হয় বটে, কিন্তু বাকিগুলো উড়বার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে। এখন আবার অস্ত্র কিনলাম। বলা হচ্ছে এ অস্ত্র জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে ব্যবহৃত হবে। কিন্তু জাতিসংঘের কাজে ব্যবহারের জন্য (?) জনগণের ট্যাক্সের টাকায় কেন ৮ হাজার কোটি টাকার অস্ত্র কেনা হবে? আমরা শক্তিশালী সেনাবাহিনী চাই। সেনাবাহিনী আমাদের গৌরবের। আমাদের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতীক। কিন্তু রাশিয়ার অস্ত্র দিয়ে আমাদের সেনাবাহিনী কতটুকু শক্তিশালী হবে, সে ব্যাপারে আমি নিশ্চিত হতে পারছি না। আমি চাই 'সিডর' ও 'আইলা' আক্রান্ত মানুষের পুনর্বাসন। আমার কাছে এটা প্রথম প্রায়োরিটি। সেই সঙ্গে দারিদ্র্য দূরীকরণ, হাজার হাজার তরুণের জন্য চাকরির সংস্থান করা, সরকারের দায়িত্ব । নির্বাচনের আগে সরকার এদিকে দৃষ্টি দিলে ভালো করবে।Daily JAI JAI DIN29.01.13
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
0 comments:
Post a Comment