রাজনীতি, আন্তর্জাতিক রাজনীতি এবং সমসাময়িক ঘটনাবলীর বিশ্লেষণ সংক্রান্ত অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর রেহমানের একটি ওয়েবসাইট। লেখকের অনুমতি বাদে এই সাইট থেকে কোনো লেখা অন্য কোথাও আপলোড, পাবলিশ কিংবা ছাপাবেন না। প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন লেখকের সাথে

নির্বাচনী প্রতিশ্র“তির অধিকাংশই অপূর্ণ

নতুন বছরে এসে ফেলে যাওয়া বছরের দিকে তাকিয়ে দুটি বিষয় আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়েছে। এক. বছরজুড়ে ছিল রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা এবং সরকার ও বিরোধী দলের মাঝে আস্থা ও বিশ্বাসের অভাব। দুই. পদ্মা সেতু, হলমার্ক, ডেসটিনি কেলেংকারি, শেয়ারবাজার কেলেংকারি, তাজরিন গার্মেন্টে অগ্নিকাণ্ডে ১১১ জন শ্রমিকের মৃত্যুতে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট। সামগ্রিকভাবে পুরো বছরেই সুশাসনের অভাব অনুভূত হয়েছে। সংবিধান থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে পঞ্চদশ সংশোধনী পাস হওয়ার পর সরকার ও বিরোধী দলের মাঝে যে আস্থা ও বিশ্বাসের সংকট সৃষ্টি হয়েছিল, তা বছরের পুরোটা সময় রাজনীতিকে উত্তপ্ত করে রাখে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছিল ইলিয়াস আলীর অন্তর্ধানের বিষয়টি। বিরোধী দল এ নিয়ে হরতালও পালন করেছে। কিন্তু বছরের শেষদিন পর্যন্ত ইলিয়াস আলীর অন্তর্ধানের বিষয়টি অনুদ্ঘাটিতই থেকে যায়।
যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিষয়টি বছরের শেষ দিকে এসে যথেষ্ট বিতর্ক সৃষ্টি করে। মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের রায় যখন চূড়ান্ত পর্যায়ে ছিল, তখন ঘটে দুটি অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা। একজন বিচারপতির সঙ্গে বিদেশে অবস্থানকারী একজন আইন বিশেষজ্ঞের স্কাইপি আলোচনা একটি বিদেশী সাময়িকী ও বাংলাদেশী দৈনিক ফাঁস করে দেয়। ওই ঘটনায় বিদেশী সাময়িকীর বিরুদ্ধে রুল ইস্যু ও এক পর্যায়ে বিচারপতির পদত্যাগ পুরো বিচার প্রক্রিয়ার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। দ্বিতীয় ক্ষেত্রে তুরস্কের প্রেসিডেন্টের একটি চিঠি ও তুরস্কের একটি প্রতিনিধি দলের যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের আদালত পরিদর্শন বড় ধরনের বিতর্কের সৃষ্টি করে। সরকার আদালত পরিদর্শনের এ ঘটনার সমালোচনা করে। তুরস্কের প্রেসিডেন্টের চিঠিকে সরকারের পক্ষ থেকে ‘রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। ধারণা করছি, চলতি বছর এ ঘটনায় বাংলাদেশ-তুরস্ক সম্পর্কের অবনতি ঘটতে পারে।
তবে বহির্বিশ্বে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হওয়ার মতো বেশ কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে। পদ্মা সেতুর ঘটনায় সরকারের সব অর্জন নষ্ট হয়ে গেছে। পদ্মা সেতুতে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় দুদকের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণের জন্য বিশ্বব্যাংক একটি আন্তর্জাতিক তদন্ত দল গঠন করেছিল। ওই তদন্ত দল দু’-দুবার বাংলাদেশে এসে দুদকের সঙ্গে মতবিনিময় করেও দুদকের কার্যক্রমে খুশি হতে পারেনি। স্পষ্টতই তারা বিশ্বব্যাংকের সদর দফতরে যে রিপোর্ট পাঠাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে, তাতে দুদকের খুশি না হওয়ারই কথা। ফলে ধারণা করছি, পদ্মা সেতুতে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন আটকে গেল। দুদক পদ্মা সেতুতে ‘ষড়যন্ত্রের অভিযোগে’ যে মামলা করেছে, তাতে সেতু বিভাগের সাবেক সচিবকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাকে রিমান্ডেও নেয়া হয়েছে। রিমান্ডে তিনি যে বক্তব্য দেন, যার অংশবিশেষ পত্রপত্রিকায় ছাপা হয়েছে, তাতে সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনের নাম এসেছে। বিশ্বব্যাংকের তদন্ত টিমেরও দাবি ছিল, যেহেতু বিভিন্ন সূত্রে আবুল হোসেনের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে, সেহেতু তাকেও আসামি করা হোক। দুদক সে কাজটি করেনি। এতে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়েছে।
টিআই’র রিপোর্টেও বাংলাদেশের দুর্নীতির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। শুধু পদ্মা সেতুতে দুর্নীতির বিষয়টিই একমাত্র অভিযোগ নয়। হলমার্ক ও ডেসটিনির কেলেংকারির ঘটনায় হাজার হাজার কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। প্রতিটি ক্ষেত্রে সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ তথা সরকারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের জড়িত থাকার অভিযোগ মিডিয়ায় প্রকাশিত হলেও দোষী ব্যক্তিদের শাস্তি নিশ্চিত করা হয়নি। হলমার্ক ও ডেসটিনির এমডি গ্রেফতার হলেও টাকা উদ্ধার করা হয়নি। হাজার হাজার কোটি টাকা আদৌ উদ্ধার করা সম্ভব হবে বলে মনে হয় না। এ ঘটনা বিদেশে ব্যাপক প্রচার পেয়েছে। এমনকি তাজরিন গার্মেন্টের মৃত্যুর ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। এ ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রফতানি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, টেন্ডারবাজি বছরজুড়েই সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়েছে। চাঁদাবাজি করতে গিয়ে নিজেদের মধ্যে অসন্তোষের কারণে যেমন খুনের ঘটনা ঘটেছে, ঠিক তেমনি ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে সাধারণ একজন দর্জি বিশ্বজিৎ দাসের খুনের ঘটনাও ঘটেছে। বিশ্বজিৎ দাসের খুনের ঘটনায় অভিযুক্তরা শেষ পর্যন্ত গ্রেফতার হলেও সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনী হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত খুনিদের গ্রেফতার করা যায়নি। সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে খুনিদের গ্রেফতার করা হবে বলে ঘোষণা দিয়েছিলেন। কিন্তু ‘অদৃশ্য কারণে’ প্রকৃত খুনিরা গ্রেফতার হয়নি। এতে বিভক্ত সাংবাদিক সমাজ একত্রিত হয়েছে। তারা পহেলা জানুয়ারি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঘেরাও করে এটা জানিয়ে দিতে ভোলেননি যে, তারা এ প্রশ্নে রাজপথ ছাড়েননি এবং আগামীতেও ছাড়বেন না।
মন্ত্রীদের দুর্নীতি ও অদক্ষতা একাধিকবার আলোচনার ঝড় তুলেছে। প্রথমবারের মতো মন্ত্রী হয়ে সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত রেলওয়ের নিয়োগ বাণিজ্যে নিজেকে জড়িয়ে ফেলেন। রেলের দুর্নীতি (কালো বিড়াল) উচ্ছেদের ঘোষণা দিয়ে নিজেই কালো বিড়াল বনে যান। দুর্নীতির সঙ্গে কয়েক লাখ টাকাসহ ধৃত মন্ত্রীর এপিএসের শেষ পর্যন্ত জেলহাজতে ঠাঁই হলেও মন্ত্রী দুর্নীতির সঙ্গে তার সংশ্লিষ্টতা বারবার অস্বীকার করে এসেছেন। কিন্তু জনমত তার পক্ষে ছিল না। তিনি ‘ইমেজ সংকটে’ ভুগছিলেন। মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ এবং আবার দফতরবিহীন মন্ত্রী হিসেবে মন্ত্রিসভায় ঠাঁই পেলেও প্রধানমন্ত্রীর আস্থা তিনি নিশ্চিত করতে পারেননি। নয়া মন্ত্রিসভা নিয়েও জল্পনা-কল্পনার শেষ ছিল না। তোফায়েল আহমেদ ও রাশেদ খান মেননের মন্ত্রিসভায় যোগ না দেয়ার সিদ্ধান্ত প্রশংসিত হলেও হাসানুল হক ইনুর মন্ত্রিসভায় যোগদান ছিল অবাক করার মতো একটি ঘটনা। কেননা আওয়ামীবিরোধী রাজনীতি দিয়েই ইনুর জš§। গণবাহিনীর সঙ্গে তিনি প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে। স্বাধীনতা-পরবর্তী আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে যে আন্দোলন পরিচালিত হয়েছিল, সেই আন্দোলনের নেতৃত্বদানকারীদের একজন ছিলেন ইনু। যুগের পরিক্রমায় ২০০৮ সালের নির্বাচনে জাসদের মশাল প্রতীক বাদ দিয়ে নৌকা প্রতীক নিয়ে কুষ্টিয়ার একটি আসন থেকে তিনি বিজয়ী হয়েছিলেন। এছাড়া মন্ত্রিসভার অনেক সদস্যই কোন দক্ষতা দেখাতে পারেননি। পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি তার বিদেশ সফর নিয়ে মিডিয়ার প্রশ্নের সম্মুখীন হন। পররাষ্ট্রনীতিতে তার সফলতার কোন নজির নেই। অর্থমন্ত্রী বেশি কথা বলে খোদ নিজ দলের সংসদ সদস্যদের দ্বারাই সমালোচিত হয়েছেন। দু’-চারজন মন্ত্রীর দুর্নীতির খবরও পত্রপত্রিকায় ছাপা হয়েছে। মন্ত্রিসভায় পরিবর্তন এনেও প্রধানমন্ত্রী চমক দেখাতে পারেননি। বছরের শেষ দিকে দলের কাউন্সিল হলেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম যথাক্রমে দলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক থেকে গেলেন। নেতৃত্বে কোন পরিবর্তন এলো না। পর পর সাতবার সভাপতি নির্বাচিত হলেন শেখ হাসিনা। এটা তার জন্য একটা রেকর্ড।
সরকারের জন্য একটা খারাপ খবর ছিল, সেপ্টেম্বরে কক্সবাজারের রামুতে বৌদ্ধ মন্দিরে আগুন দিয়ে তা ধ্বংস করে দেয়া। বৌদ্ধপ্রধান দেশগুলোতে এর একটি প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা গেছে। যদিও খুব দ্রুতই সরকার মন্দিরটি নির্মাণ করে দিয়েছে, তবে অভিযুক্তদের কেউ কেউ, যারা সরকারি দলের সঙ্গে জড়িত, তাদের গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। যে বিষয়গুলো দেশে সুশাসন নিশ্চিত করতে পারেনি তা হচ্ছে, গত চার বছরে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, গুমের ঘটনা স্বাভাবিক বিষয়ে পরিণত হওয়া, ক্যাম্পাসগুলো সন্ত্রাসীদের অভয়ারণ্যে পরিণত হওয়া, ভিসি মহোদয়দের ব্যাপক দুর্নীতি, আইন-শৃংখলা পরিস্থিতির ব্যাপক অবনতি ইত্যাদি। একটি ক্ষেত্রেও সরকারের কোন সাফল্য নেই। সরকার যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ব্যাপারে যত শ্রম, শক্তি, অর্থ ও সময় ব্যয় করেছে, উপরে উল্লিখিত একটি ক্ষেত্রেও তা ব্যয় করেনি। যদি ব্যয় করত তাহলে আইন-শৃংখলা পরিস্থিতির আরও উন্নতি হতো। গুমের মতো ঘটনা আমরা রোধ করতে পারতাম। অর্থনৈতিক অব্যবস্থাপনা দূর করতে পারতাম। দেশে সুশাসনের পরিস্থিতি আরও উন্নত করতে পারতাম। কিন্তু সরকারের ব্যর্থতা ছিল চোখে লাগার মতো।
সরকারের নীরব সমর্থন পেয়ে সন্ত্রাসীরা আরও শক্তিশালী হয়েছে, ‘অর্থনৈতিক সন্ত্রাসীরা’ একের পর এক সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করে সরকারকে বিতর্কিত করেছে, অর্থনীতিকে ঝুঁকির মুখে ঠেলে দিয়েছে। দুঃখজনক হচ্ছেÑ অর্থনীতি যখন ঝুঁকির মুখে, তখন বৃদ্ধ অর্থমন্ত্রী একের পর এক বেফাঁস মন্তব্য করে ‘নিরোর মতো বাঁশি বাজিয়ে গেছেন’। অর্থনীতিকে বাগে আনতে অর্থনৈতিক দুর্বৃত্তদের নিয়ন্ত্রণ করতে তিনি কোন বড় ধরনের উদ্যোগ নেননি। বাংলাদেশ ব্যাংকের সুপারিশকেও তিনি গুরুত্বের সঙ্গে নেননি। প্রধানমন্ত্রী তাকে মন্ত্রিসভা থেকে সরিয়ে দিতে পারতেন। তাতে বিতর্কের মাত্রা আরও বাড়ত। সম্ভবত অর্থমন্ত্রীর সম্মানের কথা ভেবে তিনি তাকে মন্ত্রিসভায় রেখে দিয়েছেন। দু’জন বিতর্কিত ব্যক্তিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দিয়েও তিনি এই সেক্টরে কোন ইতিবাচক ফলাফল জাতিকে উপহার দিতে পারেননি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রস্তাবিত একটি বেসরকারি ব্যাংকের চেয়ারম্যান হিসেবে থেকে যাওয়ায় তার বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে। আইন অনুযায়ী তিনি চেয়ারম্যান হতে পারেন না। সরকারের কাছ থেকে তিনি একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ও পেয়েছেন।
এ ধরনের ঘটনায় সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়েছে। আসলে পুরো বিষয়গুলোর সঙ্গে সরকারের সুশাসনের বিষয়টি ওতপ্রোতভাবে জড়িত। আর যেহেতু সুশাসন নিশ্চিত করা যাচ্ছে না, সেহেতু বিদেশী গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলো মন্তব্য করেছে, বাংলাদেশ ধীরে ধীরে একটি ব্যর্থ রাষ্ট্রের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনভিত্তিক ন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্স কাউন্সিল (এনআইসি) ২০১২ সালের যে গ্লোবাল ট্রেন্ডস রিপোর্ট প্রকাশ করেছে, তাতে ২০৩০ সালের মধ্যে যে ১৫টি রাষ্ট্র ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে, তার মধ্যে বাংলাদেশের নামও রয়েছে। এশিয়ায় মাত্র তিনটি রাষ্ট্র ব্যর্থ রাষ্ট্রর ঝুঁকিতে রয়েছে। বাংলাদেশের পাশাপাশি অপর দুটি দেশ হচ্ছে আফগানিস্তান ও পাকিস্তান। যুক্তি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে ‘চড়ঃবহঃরধষ ভড়ৎ পড়হভষরপঃ ধহফ বহারৎড়হসবহঃধষ রষষং.’ অর্থাৎ বলা হয়েছে যুদ্ধময় পরিস্থিতি ও পরিবেশ বিপর্যয়ের কথা। গবেষণায় যে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব প্রাধান্য পাবে, তা তো এখনই স্পষ্ট। এনআইসি ২০০৫ সালের রিপোর্টে উল্লেখ করেছিল, ২০১৫ সালের মধ্যে পাকিস্তান একটি ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হবে। পাকিস্তানের বর্তমান যে পরিস্থিতি, তাতে এনআইসি’র রিপোর্টটি সত্য বলে প্রমাণিত হতে যাচ্ছে। আরও একটি প্রতিবেদনের কথা উল্লেখ করতে চাই। সেটি হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের ফান্ড ফর পিস এবং ফরেন পলিসি ম্যাগাজিন প্রতিবছর যে ব্যর্থ রাষ্ট্রের তালিকা প্রকাশ করে, সেখানে বাংলাদেশের অবস্থান দেখানো হয়েছে ২৯। অর্থাৎ পাকিস্তানের চেয়ে পরিস্থিতি কিছুটা ভালো। সংস্থাটি মোট ১২টি প্যারামিটারকে সামনে রেখে ব্যর্থ রাষ্ট্রের তালিকা প্রকাশ করে। আমাদের নীতিনির্ধারকরা এ ধরনের প্রতিবেদনগুলো আদৌ পড়েন কিনা, আমার তাতে সন্দেহ রয়েছে।
তবে সরকারের গত চার বছরের মূল্যায়নে যে সত্যটি বেরিয়ে এসেছে তা হচ্ছে, সরকার তার নির্বাচনী প্রতিশ্র“তি সব পূরণ করতে পারেনি। চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের জেল থেকে মুক্তি, গুম, অপহরণ ও হত্যা, অর্থনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন, ১১১ জন শ্রমিকের মৃত্যুর জন্য দায়ী গার্মেন্ট মালিককে গ্রেফতার না করা, চট্টগ্রামে ফ্লাইওভার ধসের ঘটনায় জড়িত ঠিকাদারকে গ্রেফতার না করা, প্রকাশ্যে ঘরে ঢুকে একাধিক মানুষ হত্যা, দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত সন্ত্রাসীদের আইনের আওতায় না আনাÑ ইত্যাদি ঘটনা প্রমাণ করে, বাংলাদেশে আইনের শাসন তথা সুশাসনের বড় অভাব রয়েছে। তাই সরকারের ব্যর্থতা চোখে লাগার মতো।
চলতি বছর নির্বাচনের বছর। সরকার যদি সমস্যা সমাধানে ও নির্বাচনের প্রশ্নে বিরোধী দলের সঙ্গে কোন সমঝোতায় না পৌঁছে, তাহলে সংঘাত অনিবার্য। আর এভাবে রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব যদি বৃদ্ধি পায়, তাহলে তা অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব ফেলবে এবং রাষ্ট্রটি ধীরে ধীরে ব্যর্থ রাষ্ট্রের দিকে এগিয়ে যাবে, আমরা কেউই যা চাই না।
Daily JUGANTOR
04,01.13

0 comments:

Post a Comment