এ
দুঃখ আমরা রাখব কোথায়? গত ১১ জানুয়ারি রংপুরের বেগম রোকেয়া
বিশ্ববিদ্যালয়ের যে সব সংবাদ পত্রপত্রিকায় ছাপা হয়েছে, তা পাঠ করে শিক্ষকতা
পেশার প্রতিই আমার হতাশা জšে§ গেছে। আমরা কোথায় নিয়ে যাচ্ছি দেশটাকে?
ছাত্রলীগ নামধারীদের এসিড নিক্ষেপে আহত হয়েছেন দুজন শিক্ষক, যারা এখন
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। ছাত্রলীগ আজ ফ্রাঙ্কেনস্টাইনের দানবে পরিণত হয়েছে।
ঢাকার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন ছাত্রলীগ নেতাকর্মী কর্তৃক সাধারণ
একজন দর্জি বিশ্বজিৎ দাসের হত্যাকাণ্ড সারাদেশে আলোড়ন তুলেছিল। প্রকাশ্যে
কুপিয়ে একজন মানুষকে হত্যায় মার্কিন রাষ্ট্রদূত পর্যন্ত বিস্ময় প্রকাশ
করেছিলেন। আমাদের ধারণা ছিল, সরকারের নীতিনির্ধারক মহল ছাত্রলীগকে
নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ নেবে। কিন্তু না। আমাদের ধারণা মিথ্যা হলো এবং রংপুরের
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে আমরা দেখলাম ছাত্রলীগের নামধারী ক্যাডাররা দুজন
শিক্ষককে এসিড মেরেছে। শিক্ষকের গায়ে এসিড? আমরা কাদের পড়াই? কাদের নিয়ে
গর্ব করতে চাই? এর আগে ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়েও এমনটি ঘটেছিল। সেখানেও
শিক্ষকরা প্রহৃত হয়েছিলেন ছাত্রলীগের ক্যাডারদের দ্বারা। আবার নতুন করে ঘটল
রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে। একটি নতুন বিশ্ববিদ্যালয়, যার বয়স মাত্র ৪ বছর, এ
ধরনের ঘটনা নতুন বিশ্ববিদ্যালয়টির জন্য কোনো ভালো খবর নয়।
নতুন বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছ থেকে আমাদের প্রত্যাশা ছিল অনেক বেশি। কিন্তু এ কী করলেন জলিল মিয়া? তিনি অধ্যাপক বটে এবং সেই সূত্রে উপাচার্যও। তার বিরুদ্ধে জোরদার অভিযোগ রয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়টিকে তিনি পারিবারিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেছেন। চোখের সম্মুখে গেল বছরগুলোতে তিনি নতুন এই বিশ্ববিদ্যালয়টিকে আত্মীয়করণ, দলীয়করণ, স্বজনপ্রীতিতে শীর্ষে নিয়ে গেছেন। সংবাদপত্রে তার অনিয়ম আর দুর্নীতির সংবাদ প্রকাশিত হলেও শিক্ষা মন্ত্রণালয় ছিল নির্বিকার। একপর্যায়ে তার দুর্নীতি ও দলীয়করণের প্রতিবাদে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা একত্রিত হয়ে আন্দোলন শুরু করেন। তাদের সেই আন্দোলন ন্যায়সংগত। মহাজোট সরকারের একটা বড় ব্যর্থতা, তারা উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে দলীয়করণ তথা আত্মীয়করণের হাত থেকে রক্ষা করতে পারেনি। প্রায় ক্ষেত্রে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এ দলীয়করণকে সমর্থন করেছে। এর সুযোগ নিয়েছে ছাত্রলীগ। প্রায় প্রতিটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ একটি আলাদা প্রশাসন পরিচালনা করেছে। তারা দুর্নীতিবাজ ভিসিদের ‘লাঠিয়াল’ হিসেবে কাজ করেছে। বুয়েট, রাজশাহী, ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয়-সব জায়গাতে ছাত্রলীগ অকর্মণ্য ভিসিদের পক্ষে কাজ করে আন্দোলনকারীদের ন্যায়সংগত আন্দোলন নস্যাৎ করে দিয়েছে। প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে দলীয়করণের বিরুদ্ধে যে আন্দোলন গড়ে উঠছে, তা ন্যায়সংগত, যৌক্তিক। এটা অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ। ইতিহাসে ভিন্ন আঙ্গিকে এ ধরনের প্রতিবাদ হতে আমরা দেখেছি।
যারা আন্তর্জাতিক রাজনীতির কিছুটা খোঁজখবর রাখেন, তারা নিশ্চয়ই নিউইয়র্কের ‘অকুপাই মুভমেন্ট’ সম্পর্কে ধারণা রাখেন। গত ৩১ ডিসেম্বর ২০১২, এ আন্দোলন তার ৪২২ দিন পার করেছে। আগের মতো এই ‘অকুপাই মুভমেন্ট’-এর খবর শীর্ষস্থানীয় মার্কিন সংবাদপত্রগুলোতে ছাপা হয় না সত্য, কিন্তু যারা অনলাইনে বিভিন্ন ব্লগে তথ্য অনুসন্ধান করেন, তারা ‘অকুপাই মুভমেন্ট’-এর খবর পাবেন। এ আন্দোলন এখনো চলছে এবং বিক্ষোভকারীদের প্রতিবাদ এখনো অব্যাহত রয়েছে। মূলত মার্কিন সমাজে বৈষম্য, অসমতা, দরিদ্রতা আর ধনী শ্রেণীভিত্তিক যে সমাজব্যবস্থা (প্লুটোনমি), তার প্রতিবাদেই নিউইয়র্কে এ ‘অকুপাই মুভমেন্ট’-এর জন্ম হয়েছিল। একসময় এই আন্দোলন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিটি বড় বড় শহরে ছড়িয়ে পড়েছিল এবং আটলান্টিক ও প্রশান্ত মহাসাগর অতিক্রম করে ইউরোপ ও প্যাসিফিকভুক্ত দেশগুলোতেও ছড়িয়ে গিয়েছিল। গত ১১ জানুয়ারি অনলাইনে যখন ‘অকুপাই ম্যুভমেন্ট’-এর সর্বশেষ সংবাদটি পাঠ করছিলাম, তখন মানবকণ্ঠ-এর প্রথম পাতায় ছাপা হয়েছে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থিতিশীল পরিস্থিতি নিয়ে একটি রিপোর্ট। নিউইয়র্কের ‘অকুপাই ম্যুভমেন্ট’-এর সঙ্গে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, শিক্ষক ও সাংস্কৃতিক কর্মীদের আন্দোলনের কোনো মিল নেই সত্য, কিন্তু এক জায়গায় আমি এক অদ্ভুত এক মিল খুঁজে পাই। আর তা হচ্ছে অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ।
‘অকুপাই ম্যুভমেন্ট’-এ নিজেদের শরিক করে যুক্তরাষ্ট্রের তরুণ প্রজন্ম এক ধরনের অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে আসছে। আর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে সচেতন শিক্ষক সমাজের ব্যানারে শিক্ষক, ছাত্র ও কর্মচারীরাই এ বিশ্ববিদ্যালয়ে সংঘটিত হওয়া ‘সব অন্যায়ের’ বিরুদ্ধে বেশ কিছুদিন ধরে প্রতিবাদ জানিয়ে আসছেন। মিলটা এখানেই। শিক্ষকরা হচ্ছেন সমাজের সচেতন শ্রেণী। তারাই তো প্রতিবাদ করবেন। প্রতিবাদের এই ধরন ন্যায়সংগত। সব অসমতা ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে এই যে প্রতিবাদ, এই প্রতিবাদ যুগে যুগে বিভিন্ন আঙ্গিকে প্রকাশ ঘটেছে। বিংশ শতাব্দীর ষাটের দশকে ইউরোপজুড়ে তরুণ প্রজন্ম প্রচলিত সমাজব্যবস্থার বিরুদ্ধে ‘বিদ্রোহ’ করেছিলেন। তারা সমাজব্যবস্থায় কোনো পরিবর্তন আনতে পারেননি সত্য, কিন্তু সমাজব্যবস্থাকে একটা ধাক্কা দিয়েছিলেন। আজ একুশ শতকের দ্বিতীয় দশকে এসে যুক্তরাষ্ট্রের মতো একটি পুঁজিবাদী সমাজে ‘অকুপাই মুভমেন্ট’ আমাদের দেখিয়ে দিল, এই ‘বিদ্রোহের’ সঙ্গে সমাজে অন্যায়ের বিরুদ্ধে যে ন্যায়সংগত প্রতিবাদ, তার সঙ্গে কোনো পার্থক্য নেই। আজ জাহাঙ্গীনগর, বুয়েটের পথ ধরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কর্মচারীরাও একটা দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন। আজ শিক্ষক সমাজ যখন সবাই একত্রিত হয়ে অন্যায়ের প্রতিবাদ করছেন, তখন আমার কাছে এর গুরুত্ব অনেক বেশি। এমনটা আমরা লক্ষ্য করেছিলাম জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়েও। অন্যায়ের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ যে ন্যায়সংগত, সেটা বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা আবারো প্রমাণ করলেন। যেমনটি করেছিলেন জাহাঙ্গীরনগরের শিক্ষকরা।
শিক্ষামন্ত্রী অত্যন্ত সজ্জ্বন ব্যক্তি। আমার ধারণা, এদেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা তাকে পছন্দ করেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পরিস্থিতি যে বোঝেন না, তা নয়। অনেক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়েই অস্থিরতা বিরাজ করছে। জাহাঙ্গীরনগর, পাবনা, রাজশাহী, ডুয়েট-সব জায়গাতেই ছিল অস্থিরতা। এ অস্থিরতার সমাধান করতে কখনো কখনো সরকারপ্রধানকে হস্তক্ষেপ করতে হয়েছে। জাহাঙ্গীরনগরে তিনি হস্তক্ষেপ করেছিলেন। একটা সমাধান দিয়েছিলেন। নয়া ভিসি সেখানে দায়িত্ব নিয়েছেন। কিন্তু সমস্যা যা ছিল, তা রয়েই গেছে। ঢাকার উপকণ্ঠে ডুয়েটে উপাচার্য ছিলেন না বেশ কয়েক দিন। সেখানে নতুন উপাচার্যও নিয়োগ দেয়া হয়েছে। সেখানকার শিক্ষকরা দাবি করেছিলেন, তাদের শিক্ষকদের মধ্য থেকেই উপাচার্য নিয়োগ দিতে হবে।
ঢাকার শেরেবাংলা নগর কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের দাবিও ছিল তেমনি। সেখানকার উপাচার্যের মেয়াদ শেষ হয়ে গিয়েছিল। রাজশাহী ও পাবনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ গুরুতর। দলীয় বিবেচনায় অতিরিক্ত শিক্ষক নিয়োগ। আর এই শিক্ষক নিয়োগে আত্মীয় কোটা ও জেলা কোটা প্রাধান্য পেয়েছে বেশি। মজার ব্যাপার, সব ক্ষেত্রেই ছাত্রলীগ প্রতিটি ক্যাম্পাসে একটি নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। তবে এটা কল্পনাও করা যায়নি যে, ছাত্র নামধারী গুণ্ডারা শিক্ষকদের লক্ষ্য করে এসিড ছুড়বে। এখন যদি দ্রুত এ ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হয়, তাহলে তা প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছড়িয়ে পড়তে পারে। অনতিবিলম্বে ছাত্রলীগের রাস টেনে ধরা প্রয়োজন। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের ক্যাডারদের বলা হয়েছিল এরা বহিরাগত। এখন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়েও আমরা একই কথা শুনছি-এসিড নিক্ষেপকারীরা বহিরাগত। এ ধরনের বক্তব্য দিয়ে পার পাওয়া যাবে না। দু’দিন আগে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ছাত্রলীগের কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করেছিলেন। রাজশাহীর চাঁদাবাজির ঘটনায় একজন ছাত্র যখন খুন হলো-শিক্ষামন্ত্রী বললেন ‘গুণ্ডামি’র কথা। আজ সময় এসেছে ছাত্রলীগের কর্মকাণ্ড পুনর্মূল্যায়ন করার। তাদের কর্মকাণ্ড সরকারের ভাবর্মূতি ক্রমেই বিনষ্ট করে দিচ্ছে। চলতি বছর নির্বাচনের বছর। এমনিতেই নানা কর্মকাণ্ডে সরকারের জনপ্রিয়তায় ধস নেমেছে; ছাত্রলীগ সরকারের জন্য আরেকটা ‘সমস্যা’ তৈরি করছে। সরকারের নীতিনির্ধারকরা যদি এটি উপলব্ধি করেন, তাহলে তারা ভালো করবেন। আমি বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ওপর এসিড নিক্ষেপের ঘটনায় মর্মাহত। প্রতিবাদ জানানোর ভাষা আমার জানা নেই। ভিসির সব অপকর্ম তদন্তের দাবি রাখে। তাকে ক্ষমতায় রেখে তদন্তকাজ করা যাবে না। অবিলম্বে সেখানে একজন নয়া উপাচার্য নিয়োগ করে দোষী-ক্রিমিনালদের শাস্তির ব্যবস্থা করে বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা ও সেই সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়টিকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করা প্রয়োজন। পুনশ্চ, ইতোমধ্যে এসিড নিক্ষেপের ঘটনায় তিনজন ছাত্রলীগ কর্মী গ্রেফতার হয়েছে। এ থেকেই প্রমাণিত হয় ছাত্রলীগ ওই ঘটনায় জড়িত ছিল। বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা কোনো সমাধান নয়। বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সব দুর্নীতির শ্বেতপত্র প্রকাশেরও দাবি করছি। এ দুঃখ আমরা রাখব কোথায়? গত ১১ জানুয়ারি রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের যে সব সংবাদ পত্রপত্রিকায় ছাপা হয়েছে, তা পাঠ করে শিক্ষকতা পেশার প্রতিই আমার হতাশা জšে§ গেছে। আমরা কোথায় নিয়ে যাচ্ছি দেশটাকে? ছাত্রলীগ নামধারীদের এসিড নিক্ষেপে আহত হয়েছেন দুজন শিক্ষক, যারা এখন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। ছাত্রলীগ আজ ফ্রাঙ্কেনস্টাইনের দানবে পরিণত হয়েছে। ঢাকার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন ছাত্রলীগ নেতাকর্মী কর্তৃক সাধারণ একজন দর্জি বিশ্বজিৎ দাসের হত্যাকাণ্ড সারাদেশে আলোড়ন তুলেছিল। প্রকাশ্যে কুপিয়ে একজন মানুষকে হত্যায় মার্কিন রাষ্ট্রদূত পর্যন্ত বিস্ময় প্রকাশ করেছিলেন। আমাদের ধারণা ছিল, সরকারের নীতিনির্ধারক মহল ছাত্রলীগকে নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ নেবে। কিন্তু না। আমাদের ধারণা মিথ্যা হলো এবং রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে আমরা দেখলাম ছাত্রলীগের নামধারী ক্যাডাররা দুজন শিক্ষককে এসিড মেরেছে। শিক্ষকের গায়ে এসিড? আমরা কাদের পড়াই? কাদের নিয়ে গর্ব করতে চাই? এর আগে ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়েও এমনটি ঘটেছিল। সেখানেও শিক্ষকরা প্রহৃত হয়েছিলেন ছাত্রলীগের ক্যাডারদের দ্বারা। আবার নতুন করে ঘটল রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে। একটি নতুন বিশ্ববিদ্যালয়, যার বয়স মাত্র ৪ বছর, এ ধরনের ঘটনা নতুন বিশ্ববিদ্যালয়টির জন্য কোনো ভালো খবর নয়।
নতুন বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছ থেকে আমাদের প্রত্যাশা ছিল অনেক বেশি। কিন্তু এ কী করলেন জলিল মিয়া? তিনি অধ্যাপক বটে এবং সেই সূত্রে উপাচার্যও। তার বিরুদ্ধে জোরদার অভিযোগ রয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়টিকে তিনি পারিবারিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেছেন। চোখের সম্মুখে গেল বছরগুলোতে তিনি নতুন এই বিশ্ববিদ্যালয়টিকে আত্মীয়করণ, দলীয়করণ, স্বজনপ্রীতিতে শীর্ষে নিয়ে গেছেন। সংবাদপত্রে তার অনিয়ম আর দুর্নীতির সংবাদ প্রকাশিত হলেও শিক্ষা মন্ত্রণালয় ছিল নির্বিকার। একপর্যায়ে তার দুর্নীতি ও দলীয়করণের প্রতিবাদে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা একত্রিত হয়ে আন্দোলন শুরু করেন। তাদের সেই আন্দোলন ন্যায়সংগত। মহাজোট সরকারের একটা বড় ব্যর্থতা, তারা উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে দলীয়করণ তথা আত্মীয়করণের হাত থেকে রক্ষা করতে পারেনি। প্রায় ক্ষেত্রে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এ দলীয়করণকে সমর্থন করেছে। এর সুযোগ নিয়েছে ছাত্রলীগ। প্রায় প্রতিটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ একটি আলাদা প্রশাসন পরিচালনা করেছে। তারা দুর্নীতিবাজ ভিসিদের ‘লাঠিয়াল’ হিসেবে কাজ করেছে। বুয়েট, রাজশাহী, ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয়-সব জায়গাতে ছাত্রলীগ অকর্মণ্য ভিসিদের পক্ষে কাজ করে আন্দোলনকারীদের ন্যায়সংগত আন্দোলন নস্যাৎ করে দিয়েছে। প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে দলীয়করণের বিরুদ্ধে যে আন্দোলন গড়ে উঠছে, তা ন্যায়সংগত, যৌক্তিক। এটা অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ। ইতিহাসে ভিন্ন আঙ্গিকে এ ধরনের প্রতিবাদ হতে আমরা দেখেছি।
যারা আন্তর্জাতিক রাজনীতির কিছুটা খোঁজখবর রাখেন, তারা নিশ্চয়ই নিউইয়র্কের ‘অকুপাই মুভমেন্ট’ সম্পর্কে ধারণা রাখেন। গত ৩১ ডিসেম্বর ২০১২, এ আন্দোলন তার ৪২২ দিন পার করেছে। আগের মতো এই ‘অকুপাই মুভমেন্ট’-এর খবর শীর্ষস্থানীয় মার্কিন সংবাদপত্রগুলোতে ছাপা হয় না সত্য, কিন্তু যারা অনলাইনে বিভিন্ন ব্লগে তথ্য অনুসন্ধান করেন, তারা ‘অকুপাই মুভমেন্ট’-এর খবর পাবেন। এ আন্দোলন এখনো চলছে এবং বিক্ষোভকারীদের প্রতিবাদ এখনো অব্যাহত রয়েছে। মূলত মার্কিন সমাজে বৈষম্য, অসমতা, দরিদ্রতা আর ধনী শ্রেণীভিত্তিক যে সমাজব্যবস্থা (প্লুটোনমি), তার প্রতিবাদেই নিউইয়র্কে এ ‘অকুপাই মুভমেন্ট’-এর জন্ম হয়েছিল। একসময় এই আন্দোলন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিটি বড় বড় শহরে ছড়িয়ে পড়েছিল এবং আটলান্টিক ও প্রশান্ত মহাসাগর অতিক্রম করে ইউরোপ ও প্যাসিফিকভুক্ত দেশগুলোতেও ছড়িয়ে গিয়েছিল। গত ১১ জানুয়ারি অনলাইনে যখন ‘অকুপাই ম্যুভমেন্ট’-এর সর্বশেষ সংবাদটি পাঠ করছিলাম, তখন মানবকণ্ঠ-এর প্রথম পাতায় ছাপা হয়েছে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থিতিশীল পরিস্থিতি নিয়ে একটি রিপোর্ট। নিউইয়র্কের ‘অকুপাই ম্যুভমেন্ট’-এর সঙ্গে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, শিক্ষক ও সাংস্কৃতিক কর্মীদের আন্দোলনের কোনো মিল নেই সত্য, কিন্তু এক জায়গায় আমি এক অদ্ভুত এক মিল খুঁজে পাই। আর তা হচ্ছে অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ।
‘অকুপাই ম্যুভমেন্ট’-এ নিজেদের শরিক করে যুক্তরাষ্ট্রের তরুণ প্রজন্ম এক ধরনের অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে আসছে। আর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে সচেতন শিক্ষক সমাজের ব্যানারে শিক্ষক, ছাত্র ও কর্মচারীরাই এ বিশ্ববিদ্যালয়ে সংঘটিত হওয়া ‘সব অন্যায়ের’ বিরুদ্ধে বেশ কিছুদিন ধরে প্রতিবাদ জানিয়ে আসছেন। মিলটা এখানেই। শিক্ষকরা হচ্ছেন সমাজের সচেতন শ্রেণী। তারাই তো প্রতিবাদ করবেন। প্রতিবাদের এই ধরন ন্যায়সংগত। সব অসমতা ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে এই যে প্রতিবাদ, এই প্রতিবাদ যুগে যুগে বিভিন্ন আঙ্গিকে প্রকাশ ঘটেছে। বিংশ শতাব্দীর ষাটের দশকে ইউরোপজুড়ে তরুণ প্রজন্ম প্রচলিত সমাজব্যবস্থার বিরুদ্ধে ‘বিদ্রোহ’ করেছিলেন। তারা সমাজব্যবস্থায় কোনো পরিবর্তন আনতে পারেননি সত্য, কিন্তু সমাজব্যবস্থাকে একটা ধাক্কা দিয়েছিলেন। আজ একুশ শতকের দ্বিতীয় দশকে এসে যুক্তরাষ্ট্রের মতো একটি পুঁজিবাদী সমাজে ‘অকুপাই মুভমেন্ট’ আমাদের দেখিয়ে দিল, এই ‘বিদ্রোহের’ সঙ্গে সমাজে অন্যায়ের বিরুদ্ধে যে ন্যায়সংগত প্রতিবাদ, তার সঙ্গে কোনো পার্থক্য নেই। আজ জাহাঙ্গীনগর, বুয়েটের পথ ধরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কর্মচারীরাও একটা দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন। আজ শিক্ষক সমাজ যখন সবাই একত্রিত হয়ে অন্যায়ের প্রতিবাদ করছেন, তখন আমার কাছে এর গুরুত্ব অনেক বেশি। এমনটা আমরা লক্ষ্য করেছিলাম জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়েও। অন্যায়ের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ যে ন্যায়সংগত, সেটা বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা আবারো প্রমাণ করলেন। যেমনটি করেছিলেন জাহাঙ্গীরনগরের শিক্ষকরা।
শিক্ষামন্ত্রী অত্যন্ত সজ্জ্বন ব্যক্তি। আমার ধারণা, এদেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা তাকে পছন্দ করেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পরিস্থিতি যে বোঝেন না, তা নয়। অনেক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়েই অস্থিরতা বিরাজ করছে। জাহাঙ্গীরনগর, পাবনা, রাজশাহী, ডুয়েট-সব জায়গাতেই ছিল অস্থিরতা। এ অস্থিরতার সমাধান করতে কখনো কখনো সরকারপ্রধানকে হস্তক্ষেপ করতে হয়েছে। জাহাঙ্গীরনগরে তিনি হস্তক্ষেপ করেছিলেন। একটা সমাধান দিয়েছিলেন। নয়া ভিসি সেখানে দায়িত্ব নিয়েছেন। কিন্তু সমস্যা যা ছিল, তা রয়েই গেছে। ঢাকার উপকণ্ঠে ডুয়েটে উপাচার্য ছিলেন না বেশ কয়েক দিন। সেখানে নতুন উপাচার্যও নিয়োগ দেয়া হয়েছে। সেখানকার শিক্ষকরা দাবি করেছিলেন, তাদের শিক্ষকদের মধ্য থেকেই উপাচার্য নিয়োগ দিতে হবে।
ঢাকার শেরেবাংলা নগর কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের দাবিও ছিল তেমনি। সেখানকার উপাচার্যের মেয়াদ শেষ হয়ে গিয়েছিল। রাজশাহী ও পাবনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ গুরুতর। দলীয় বিবেচনায় অতিরিক্ত শিক্ষক নিয়োগ। আর এই শিক্ষক নিয়োগে আত্মীয় কোটা ও জেলা কোটা প্রাধান্য পেয়েছে বেশি। মজার ব্যাপার, সব ক্ষেত্রেই ছাত্রলীগ প্রতিটি ক্যাম্পাসে একটি নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। তবে এটা কল্পনাও করা যায়নি যে, ছাত্র নামধারী গুণ্ডারা শিক্ষকদের লক্ষ্য করে এসিড ছুড়বে। এখন যদি দ্রুত এ ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হয়, তাহলে তা প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছড়িয়ে পড়তে পারে। অনতিবিলম্বে ছাত্রলীগের রাস টেনে ধরা প্রয়োজন। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের ক্যাডারদের বলা হয়েছিল এরা বহিরাগত। এখন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়েও আমরা একই কথা শুনছি-এসিড নিক্ষেপকারীরা বহিরাগত। এ ধরনের বক্তব্য দিয়ে পার পাওয়া যাবে না। দু’দিন আগে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ছাত্রলীগের কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করেছিলেন। রাজশাহীর চাঁদাবাজির ঘটনায় একজন ছাত্র যখন খুন হলো-শিক্ষামন্ত্রী বললেন ‘গুণ্ডামি’র কথা। আজ সময় এসেছে ছাত্রলীগের কর্মকাণ্ড পুনর্মূল্যায়ন করার। তাদের কর্মকাণ্ড সরকারের ভাবর্মূতি ক্রমেই বিনষ্ট করে দিচ্ছে। চলতি বছর নির্বাচনের বছর। এমনিতেই নানা কর্মকাণ্ডে সরকারের জনপ্রিয়তায় ধস নেমেছে; ছাত্রলীগ সরকারের জন্য আরেকটা ‘সমস্যা’ তৈরি করছে। সরকারের নীতিনির্ধারকরা যদি এটি উপলব্ধি করেন, তাহলে তারা ভালো করবেন। আমি বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ওপর এসিড নিক্ষেপের ঘটনায় মর্মাহত। প্রতিবাদ জানানোর ভাষা আমার জানা নেই। ভিসির সব অপকর্ম তদন্তের দাবি রাখে। তাকে ক্ষমতায় রেখে তদন্তকাজ করা যাবে না। অবিলম্বে সেখানে একজন নয়া উপাচার্য নিয়োগ করে দোষী-ক্রিমিনালদের শাস্তির ব্যবস্থা করে বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা ও সেই সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়টিকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করা প্রয়োজন। পুনশ্চ, ইতোমধ্যে এসিড নিক্ষেপের ঘটনায় তিনজন ছাত্রলীগ কর্মী গ্রেফতার হয়েছে। এ থেকেই প্রমাণিত হয় ছাত্রলীগ ওই ঘটনায় জড়িত ছিল। বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা কোনো সমাধান নয়। বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সব দুর্নীতির শ্বেতপত্র প্রকাশেরও দাবি করছি।
Daily Manobkontho
13.1.13
নতুন বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছ থেকে আমাদের প্রত্যাশা ছিল অনেক বেশি। কিন্তু এ কী করলেন জলিল মিয়া? তিনি অধ্যাপক বটে এবং সেই সূত্রে উপাচার্যও। তার বিরুদ্ধে জোরদার অভিযোগ রয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়টিকে তিনি পারিবারিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেছেন। চোখের সম্মুখে গেল বছরগুলোতে তিনি নতুন এই বিশ্ববিদ্যালয়টিকে আত্মীয়করণ, দলীয়করণ, স্বজনপ্রীতিতে শীর্ষে নিয়ে গেছেন। সংবাদপত্রে তার অনিয়ম আর দুর্নীতির সংবাদ প্রকাশিত হলেও শিক্ষা মন্ত্রণালয় ছিল নির্বিকার। একপর্যায়ে তার দুর্নীতি ও দলীয়করণের প্রতিবাদে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা একত্রিত হয়ে আন্দোলন শুরু করেন। তাদের সেই আন্দোলন ন্যায়সংগত। মহাজোট সরকারের একটা বড় ব্যর্থতা, তারা উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে দলীয়করণ তথা আত্মীয়করণের হাত থেকে রক্ষা করতে পারেনি। প্রায় ক্ষেত্রে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এ দলীয়করণকে সমর্থন করেছে। এর সুযোগ নিয়েছে ছাত্রলীগ। প্রায় প্রতিটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ একটি আলাদা প্রশাসন পরিচালনা করেছে। তারা দুর্নীতিবাজ ভিসিদের ‘লাঠিয়াল’ হিসেবে কাজ করেছে। বুয়েট, রাজশাহী, ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয়-সব জায়গাতে ছাত্রলীগ অকর্মণ্য ভিসিদের পক্ষে কাজ করে আন্দোলনকারীদের ন্যায়সংগত আন্দোলন নস্যাৎ করে দিয়েছে। প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে দলীয়করণের বিরুদ্ধে যে আন্দোলন গড়ে উঠছে, তা ন্যায়সংগত, যৌক্তিক। এটা অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ। ইতিহাসে ভিন্ন আঙ্গিকে এ ধরনের প্রতিবাদ হতে আমরা দেখেছি।
যারা আন্তর্জাতিক রাজনীতির কিছুটা খোঁজখবর রাখেন, তারা নিশ্চয়ই নিউইয়র্কের ‘অকুপাই মুভমেন্ট’ সম্পর্কে ধারণা রাখেন। গত ৩১ ডিসেম্বর ২০১২, এ আন্দোলন তার ৪২২ দিন পার করেছে। আগের মতো এই ‘অকুপাই মুভমেন্ট’-এর খবর শীর্ষস্থানীয় মার্কিন সংবাদপত্রগুলোতে ছাপা হয় না সত্য, কিন্তু যারা অনলাইনে বিভিন্ন ব্লগে তথ্য অনুসন্ধান করেন, তারা ‘অকুপাই মুভমেন্ট’-এর খবর পাবেন। এ আন্দোলন এখনো চলছে এবং বিক্ষোভকারীদের প্রতিবাদ এখনো অব্যাহত রয়েছে। মূলত মার্কিন সমাজে বৈষম্য, অসমতা, দরিদ্রতা আর ধনী শ্রেণীভিত্তিক যে সমাজব্যবস্থা (প্লুটোনমি), তার প্রতিবাদেই নিউইয়র্কে এ ‘অকুপাই মুভমেন্ট’-এর জন্ম হয়েছিল। একসময় এই আন্দোলন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিটি বড় বড় শহরে ছড়িয়ে পড়েছিল এবং আটলান্টিক ও প্রশান্ত মহাসাগর অতিক্রম করে ইউরোপ ও প্যাসিফিকভুক্ত দেশগুলোতেও ছড়িয়ে গিয়েছিল। গত ১১ জানুয়ারি অনলাইনে যখন ‘অকুপাই ম্যুভমেন্ট’-এর সর্বশেষ সংবাদটি পাঠ করছিলাম, তখন মানবকণ্ঠ-এর প্রথম পাতায় ছাপা হয়েছে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থিতিশীল পরিস্থিতি নিয়ে একটি রিপোর্ট। নিউইয়র্কের ‘অকুপাই ম্যুভমেন্ট’-এর সঙ্গে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, শিক্ষক ও সাংস্কৃতিক কর্মীদের আন্দোলনের কোনো মিল নেই সত্য, কিন্তু এক জায়গায় আমি এক অদ্ভুত এক মিল খুঁজে পাই। আর তা হচ্ছে অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ।
‘অকুপাই ম্যুভমেন্ট’-এ নিজেদের শরিক করে যুক্তরাষ্ট্রের তরুণ প্রজন্ম এক ধরনের অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে আসছে। আর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে সচেতন শিক্ষক সমাজের ব্যানারে শিক্ষক, ছাত্র ও কর্মচারীরাই এ বিশ্ববিদ্যালয়ে সংঘটিত হওয়া ‘সব অন্যায়ের’ বিরুদ্ধে বেশ কিছুদিন ধরে প্রতিবাদ জানিয়ে আসছেন। মিলটা এখানেই। শিক্ষকরা হচ্ছেন সমাজের সচেতন শ্রেণী। তারাই তো প্রতিবাদ করবেন। প্রতিবাদের এই ধরন ন্যায়সংগত। সব অসমতা ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে এই যে প্রতিবাদ, এই প্রতিবাদ যুগে যুগে বিভিন্ন আঙ্গিকে প্রকাশ ঘটেছে। বিংশ শতাব্দীর ষাটের দশকে ইউরোপজুড়ে তরুণ প্রজন্ম প্রচলিত সমাজব্যবস্থার বিরুদ্ধে ‘বিদ্রোহ’ করেছিলেন। তারা সমাজব্যবস্থায় কোনো পরিবর্তন আনতে পারেননি সত্য, কিন্তু সমাজব্যবস্থাকে একটা ধাক্কা দিয়েছিলেন। আজ একুশ শতকের দ্বিতীয় দশকে এসে যুক্তরাষ্ট্রের মতো একটি পুঁজিবাদী সমাজে ‘অকুপাই মুভমেন্ট’ আমাদের দেখিয়ে দিল, এই ‘বিদ্রোহের’ সঙ্গে সমাজে অন্যায়ের বিরুদ্ধে যে ন্যায়সংগত প্রতিবাদ, তার সঙ্গে কোনো পার্থক্য নেই। আজ জাহাঙ্গীনগর, বুয়েটের পথ ধরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কর্মচারীরাও একটা দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন। আজ শিক্ষক সমাজ যখন সবাই একত্রিত হয়ে অন্যায়ের প্রতিবাদ করছেন, তখন আমার কাছে এর গুরুত্ব অনেক বেশি। এমনটা আমরা লক্ষ্য করেছিলাম জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়েও। অন্যায়ের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ যে ন্যায়সংগত, সেটা বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা আবারো প্রমাণ করলেন। যেমনটি করেছিলেন জাহাঙ্গীরনগরের শিক্ষকরা।
শিক্ষামন্ত্রী অত্যন্ত সজ্জ্বন ব্যক্তি। আমার ধারণা, এদেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা তাকে পছন্দ করেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পরিস্থিতি যে বোঝেন না, তা নয়। অনেক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়েই অস্থিরতা বিরাজ করছে। জাহাঙ্গীরনগর, পাবনা, রাজশাহী, ডুয়েট-সব জায়গাতেই ছিল অস্থিরতা। এ অস্থিরতার সমাধান করতে কখনো কখনো সরকারপ্রধানকে হস্তক্ষেপ করতে হয়েছে। জাহাঙ্গীরনগরে তিনি হস্তক্ষেপ করেছিলেন। একটা সমাধান দিয়েছিলেন। নয়া ভিসি সেখানে দায়িত্ব নিয়েছেন। কিন্তু সমস্যা যা ছিল, তা রয়েই গেছে। ঢাকার উপকণ্ঠে ডুয়েটে উপাচার্য ছিলেন না বেশ কয়েক দিন। সেখানে নতুন উপাচার্যও নিয়োগ দেয়া হয়েছে। সেখানকার শিক্ষকরা দাবি করেছিলেন, তাদের শিক্ষকদের মধ্য থেকেই উপাচার্য নিয়োগ দিতে হবে।
ঢাকার শেরেবাংলা নগর কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের দাবিও ছিল তেমনি। সেখানকার উপাচার্যের মেয়াদ শেষ হয়ে গিয়েছিল। রাজশাহী ও পাবনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ গুরুতর। দলীয় বিবেচনায় অতিরিক্ত শিক্ষক নিয়োগ। আর এই শিক্ষক নিয়োগে আত্মীয় কোটা ও জেলা কোটা প্রাধান্য পেয়েছে বেশি। মজার ব্যাপার, সব ক্ষেত্রেই ছাত্রলীগ প্রতিটি ক্যাম্পাসে একটি নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। তবে এটা কল্পনাও করা যায়নি যে, ছাত্র নামধারী গুণ্ডারা শিক্ষকদের লক্ষ্য করে এসিড ছুড়বে। এখন যদি দ্রুত এ ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হয়, তাহলে তা প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছড়িয়ে পড়তে পারে। অনতিবিলম্বে ছাত্রলীগের রাস টেনে ধরা প্রয়োজন। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের ক্যাডারদের বলা হয়েছিল এরা বহিরাগত। এখন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়েও আমরা একই কথা শুনছি-এসিড নিক্ষেপকারীরা বহিরাগত। এ ধরনের বক্তব্য দিয়ে পার পাওয়া যাবে না। দু’দিন আগে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ছাত্রলীগের কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করেছিলেন। রাজশাহীর চাঁদাবাজির ঘটনায় একজন ছাত্র যখন খুন হলো-শিক্ষামন্ত্রী বললেন ‘গুণ্ডামি’র কথা। আজ সময় এসেছে ছাত্রলীগের কর্মকাণ্ড পুনর্মূল্যায়ন করার। তাদের কর্মকাণ্ড সরকারের ভাবর্মূতি ক্রমেই বিনষ্ট করে দিচ্ছে। চলতি বছর নির্বাচনের বছর। এমনিতেই নানা কর্মকাণ্ডে সরকারের জনপ্রিয়তায় ধস নেমেছে; ছাত্রলীগ সরকারের জন্য আরেকটা ‘সমস্যা’ তৈরি করছে। সরকারের নীতিনির্ধারকরা যদি এটি উপলব্ধি করেন, তাহলে তারা ভালো করবেন। আমি বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ওপর এসিড নিক্ষেপের ঘটনায় মর্মাহত। প্রতিবাদ জানানোর ভাষা আমার জানা নেই। ভিসির সব অপকর্ম তদন্তের দাবি রাখে। তাকে ক্ষমতায় রেখে তদন্তকাজ করা যাবে না। অবিলম্বে সেখানে একজন নয়া উপাচার্য নিয়োগ করে দোষী-ক্রিমিনালদের শাস্তির ব্যবস্থা করে বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা ও সেই সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়টিকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করা প্রয়োজন। পুনশ্চ, ইতোমধ্যে এসিড নিক্ষেপের ঘটনায় তিনজন ছাত্রলীগ কর্মী গ্রেফতার হয়েছে। এ থেকেই প্রমাণিত হয় ছাত্রলীগ ওই ঘটনায় জড়িত ছিল। বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা কোনো সমাধান নয়। বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সব দুর্নীতির শ্বেতপত্র প্রকাশেরও দাবি করছি। এ দুঃখ আমরা রাখব কোথায়? গত ১১ জানুয়ারি রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের যে সব সংবাদ পত্রপত্রিকায় ছাপা হয়েছে, তা পাঠ করে শিক্ষকতা পেশার প্রতিই আমার হতাশা জšে§ গেছে। আমরা কোথায় নিয়ে যাচ্ছি দেশটাকে? ছাত্রলীগ নামধারীদের এসিড নিক্ষেপে আহত হয়েছেন দুজন শিক্ষক, যারা এখন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। ছাত্রলীগ আজ ফ্রাঙ্কেনস্টাইনের দানবে পরিণত হয়েছে। ঢাকার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন ছাত্রলীগ নেতাকর্মী কর্তৃক সাধারণ একজন দর্জি বিশ্বজিৎ দাসের হত্যাকাণ্ড সারাদেশে আলোড়ন তুলেছিল। প্রকাশ্যে কুপিয়ে একজন মানুষকে হত্যায় মার্কিন রাষ্ট্রদূত পর্যন্ত বিস্ময় প্রকাশ করেছিলেন। আমাদের ধারণা ছিল, সরকারের নীতিনির্ধারক মহল ছাত্রলীগকে নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ নেবে। কিন্তু না। আমাদের ধারণা মিথ্যা হলো এবং রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে আমরা দেখলাম ছাত্রলীগের নামধারী ক্যাডাররা দুজন শিক্ষককে এসিড মেরেছে। শিক্ষকের গায়ে এসিড? আমরা কাদের পড়াই? কাদের নিয়ে গর্ব করতে চাই? এর আগে ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়েও এমনটি ঘটেছিল। সেখানেও শিক্ষকরা প্রহৃত হয়েছিলেন ছাত্রলীগের ক্যাডারদের দ্বারা। আবার নতুন করে ঘটল রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে। একটি নতুন বিশ্ববিদ্যালয়, যার বয়স মাত্র ৪ বছর, এ ধরনের ঘটনা নতুন বিশ্ববিদ্যালয়টির জন্য কোনো ভালো খবর নয়।
নতুন বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছ থেকে আমাদের প্রত্যাশা ছিল অনেক বেশি। কিন্তু এ কী করলেন জলিল মিয়া? তিনি অধ্যাপক বটে এবং সেই সূত্রে উপাচার্যও। তার বিরুদ্ধে জোরদার অভিযোগ রয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়টিকে তিনি পারিবারিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেছেন। চোখের সম্মুখে গেল বছরগুলোতে তিনি নতুন এই বিশ্ববিদ্যালয়টিকে আত্মীয়করণ, দলীয়করণ, স্বজনপ্রীতিতে শীর্ষে নিয়ে গেছেন। সংবাদপত্রে তার অনিয়ম আর দুর্নীতির সংবাদ প্রকাশিত হলেও শিক্ষা মন্ত্রণালয় ছিল নির্বিকার। একপর্যায়ে তার দুর্নীতি ও দলীয়করণের প্রতিবাদে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা একত্রিত হয়ে আন্দোলন শুরু করেন। তাদের সেই আন্দোলন ন্যায়সংগত। মহাজোট সরকারের একটা বড় ব্যর্থতা, তারা উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে দলীয়করণ তথা আত্মীয়করণের হাত থেকে রক্ষা করতে পারেনি। প্রায় ক্ষেত্রে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এ দলীয়করণকে সমর্থন করেছে। এর সুযোগ নিয়েছে ছাত্রলীগ। প্রায় প্রতিটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ একটি আলাদা প্রশাসন পরিচালনা করেছে। তারা দুর্নীতিবাজ ভিসিদের ‘লাঠিয়াল’ হিসেবে কাজ করেছে। বুয়েট, রাজশাহী, ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয়-সব জায়গাতে ছাত্রলীগ অকর্মণ্য ভিসিদের পক্ষে কাজ করে আন্দোলনকারীদের ন্যায়সংগত আন্দোলন নস্যাৎ করে দিয়েছে। প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে দলীয়করণের বিরুদ্ধে যে আন্দোলন গড়ে উঠছে, তা ন্যায়সংগত, যৌক্তিক। এটা অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ। ইতিহাসে ভিন্ন আঙ্গিকে এ ধরনের প্রতিবাদ হতে আমরা দেখেছি।
যারা আন্তর্জাতিক রাজনীতির কিছুটা খোঁজখবর রাখেন, তারা নিশ্চয়ই নিউইয়র্কের ‘অকুপাই মুভমেন্ট’ সম্পর্কে ধারণা রাখেন। গত ৩১ ডিসেম্বর ২০১২, এ আন্দোলন তার ৪২২ দিন পার করেছে। আগের মতো এই ‘অকুপাই মুভমেন্ট’-এর খবর শীর্ষস্থানীয় মার্কিন সংবাদপত্রগুলোতে ছাপা হয় না সত্য, কিন্তু যারা অনলাইনে বিভিন্ন ব্লগে তথ্য অনুসন্ধান করেন, তারা ‘অকুপাই মুভমেন্ট’-এর খবর পাবেন। এ আন্দোলন এখনো চলছে এবং বিক্ষোভকারীদের প্রতিবাদ এখনো অব্যাহত রয়েছে। মূলত মার্কিন সমাজে বৈষম্য, অসমতা, দরিদ্রতা আর ধনী শ্রেণীভিত্তিক যে সমাজব্যবস্থা (প্লুটোনমি), তার প্রতিবাদেই নিউইয়র্কে এ ‘অকুপাই মুভমেন্ট’-এর জন্ম হয়েছিল। একসময় এই আন্দোলন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিটি বড় বড় শহরে ছড়িয়ে পড়েছিল এবং আটলান্টিক ও প্রশান্ত মহাসাগর অতিক্রম করে ইউরোপ ও প্যাসিফিকভুক্ত দেশগুলোতেও ছড়িয়ে গিয়েছিল। গত ১১ জানুয়ারি অনলাইনে যখন ‘অকুপাই ম্যুভমেন্ট’-এর সর্বশেষ সংবাদটি পাঠ করছিলাম, তখন মানবকণ্ঠ-এর প্রথম পাতায় ছাপা হয়েছে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থিতিশীল পরিস্থিতি নিয়ে একটি রিপোর্ট। নিউইয়র্কের ‘অকুপাই ম্যুভমেন্ট’-এর সঙ্গে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, শিক্ষক ও সাংস্কৃতিক কর্মীদের আন্দোলনের কোনো মিল নেই সত্য, কিন্তু এক জায়গায় আমি এক অদ্ভুত এক মিল খুঁজে পাই। আর তা হচ্ছে অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ।
‘অকুপাই ম্যুভমেন্ট’-এ নিজেদের শরিক করে যুক্তরাষ্ট্রের তরুণ প্রজন্ম এক ধরনের অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে আসছে। আর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে সচেতন শিক্ষক সমাজের ব্যানারে শিক্ষক, ছাত্র ও কর্মচারীরাই এ বিশ্ববিদ্যালয়ে সংঘটিত হওয়া ‘সব অন্যায়ের’ বিরুদ্ধে বেশ কিছুদিন ধরে প্রতিবাদ জানিয়ে আসছেন। মিলটা এখানেই। শিক্ষকরা হচ্ছেন সমাজের সচেতন শ্রেণী। তারাই তো প্রতিবাদ করবেন। প্রতিবাদের এই ধরন ন্যায়সংগত। সব অসমতা ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে এই যে প্রতিবাদ, এই প্রতিবাদ যুগে যুগে বিভিন্ন আঙ্গিকে প্রকাশ ঘটেছে। বিংশ শতাব্দীর ষাটের দশকে ইউরোপজুড়ে তরুণ প্রজন্ম প্রচলিত সমাজব্যবস্থার বিরুদ্ধে ‘বিদ্রোহ’ করেছিলেন। তারা সমাজব্যবস্থায় কোনো পরিবর্তন আনতে পারেননি সত্য, কিন্তু সমাজব্যবস্থাকে একটা ধাক্কা দিয়েছিলেন। আজ একুশ শতকের দ্বিতীয় দশকে এসে যুক্তরাষ্ট্রের মতো একটি পুঁজিবাদী সমাজে ‘অকুপাই মুভমেন্ট’ আমাদের দেখিয়ে দিল, এই ‘বিদ্রোহের’ সঙ্গে সমাজে অন্যায়ের বিরুদ্ধে যে ন্যায়সংগত প্রতিবাদ, তার সঙ্গে কোনো পার্থক্য নেই। আজ জাহাঙ্গীনগর, বুয়েটের পথ ধরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কর্মচারীরাও একটা দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন। আজ শিক্ষক সমাজ যখন সবাই একত্রিত হয়ে অন্যায়ের প্রতিবাদ করছেন, তখন আমার কাছে এর গুরুত্ব অনেক বেশি। এমনটা আমরা লক্ষ্য করেছিলাম জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়েও। অন্যায়ের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ যে ন্যায়সংগত, সেটা বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা আবারো প্রমাণ করলেন। যেমনটি করেছিলেন জাহাঙ্গীরনগরের শিক্ষকরা।
শিক্ষামন্ত্রী অত্যন্ত সজ্জ্বন ব্যক্তি। আমার ধারণা, এদেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা তাকে পছন্দ করেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পরিস্থিতি যে বোঝেন না, তা নয়। অনেক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়েই অস্থিরতা বিরাজ করছে। জাহাঙ্গীরনগর, পাবনা, রাজশাহী, ডুয়েট-সব জায়গাতেই ছিল অস্থিরতা। এ অস্থিরতার সমাধান করতে কখনো কখনো সরকারপ্রধানকে হস্তক্ষেপ করতে হয়েছে। জাহাঙ্গীরনগরে তিনি হস্তক্ষেপ করেছিলেন। একটা সমাধান দিয়েছিলেন। নয়া ভিসি সেখানে দায়িত্ব নিয়েছেন। কিন্তু সমস্যা যা ছিল, তা রয়েই গেছে। ঢাকার উপকণ্ঠে ডুয়েটে উপাচার্য ছিলেন না বেশ কয়েক দিন। সেখানে নতুন উপাচার্যও নিয়োগ দেয়া হয়েছে। সেখানকার শিক্ষকরা দাবি করেছিলেন, তাদের শিক্ষকদের মধ্য থেকেই উপাচার্য নিয়োগ দিতে হবে।
ঢাকার শেরেবাংলা নগর কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের দাবিও ছিল তেমনি। সেখানকার উপাচার্যের মেয়াদ শেষ হয়ে গিয়েছিল। রাজশাহী ও পাবনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ গুরুতর। দলীয় বিবেচনায় অতিরিক্ত শিক্ষক নিয়োগ। আর এই শিক্ষক নিয়োগে আত্মীয় কোটা ও জেলা কোটা প্রাধান্য পেয়েছে বেশি। মজার ব্যাপার, সব ক্ষেত্রেই ছাত্রলীগ প্রতিটি ক্যাম্পাসে একটি নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। তবে এটা কল্পনাও করা যায়নি যে, ছাত্র নামধারী গুণ্ডারা শিক্ষকদের লক্ষ্য করে এসিড ছুড়বে। এখন যদি দ্রুত এ ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হয়, তাহলে তা প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছড়িয়ে পড়তে পারে। অনতিবিলম্বে ছাত্রলীগের রাস টেনে ধরা প্রয়োজন। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের ক্যাডারদের বলা হয়েছিল এরা বহিরাগত। এখন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়েও আমরা একই কথা শুনছি-এসিড নিক্ষেপকারীরা বহিরাগত। এ ধরনের বক্তব্য দিয়ে পার পাওয়া যাবে না। দু’দিন আগে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ছাত্রলীগের কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করেছিলেন। রাজশাহীর চাঁদাবাজির ঘটনায় একজন ছাত্র যখন খুন হলো-শিক্ষামন্ত্রী বললেন ‘গুণ্ডামি’র কথা। আজ সময় এসেছে ছাত্রলীগের কর্মকাণ্ড পুনর্মূল্যায়ন করার। তাদের কর্মকাণ্ড সরকারের ভাবর্মূতি ক্রমেই বিনষ্ট করে দিচ্ছে। চলতি বছর নির্বাচনের বছর। এমনিতেই নানা কর্মকাণ্ডে সরকারের জনপ্রিয়তায় ধস নেমেছে; ছাত্রলীগ সরকারের জন্য আরেকটা ‘সমস্যা’ তৈরি করছে। সরকারের নীতিনির্ধারকরা যদি এটি উপলব্ধি করেন, তাহলে তারা ভালো করবেন। আমি বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ওপর এসিড নিক্ষেপের ঘটনায় মর্মাহত। প্রতিবাদ জানানোর ভাষা আমার জানা নেই। ভিসির সব অপকর্ম তদন্তের দাবি রাখে। তাকে ক্ষমতায় রেখে তদন্তকাজ করা যাবে না। অবিলম্বে সেখানে একজন নয়া উপাচার্য নিয়োগ করে দোষী-ক্রিমিনালদের শাস্তির ব্যবস্থা করে বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা ও সেই সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়টিকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করা প্রয়োজন। পুনশ্চ, ইতোমধ্যে এসিড নিক্ষেপের ঘটনায় তিনজন ছাত্রলীগ কর্মী গ্রেফতার হয়েছে। এ থেকেই প্রমাণিত হয় ছাত্রলীগ ওই ঘটনায় জড়িত ছিল। বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা কোনো সমাধান নয়। বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সব দুর্নীতির শ্বেতপত্র প্রকাশেরও দাবি করছি।
Daily Manobkontho
13.1.13
0 comments:
Post a Comment