রাজনীতি, আন্তর্জাতিক রাজনীতি এবং সমসাময়িক ঘটনাবলীর বিশ্লেষণ সংক্রান্ত অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর রেহমানের একটি ওয়েবসাইট। লেখকের অনুমতি বাদে এই সাইট থেকে কোনো লেখা অন্য কোথাও আপলোড, পাবলিশ কিংবা ছাপাবেন না। প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন লেখকের সাথে

অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বিদেশী হস্তক্ষেপ অসম্মানজনক

সরকার ভুল পথে হাঁটছে। ৫ মে ঢাকায় হেফাজতে ইসলামকে গণজমায়েত করার অনুমতি দেয়ার পরও রাতের বেলায় পুলিশ, র‌্যাব ও বিজিবিকে দিয়ে সরকার নিরীহ মুসল্লিদের ওপর যে বর্বরোচিত হামলা চালিয়েছে, তা গণতান্ত্রিক সমাজে বিরল। হেফাজতে ইসলামের নেতৃবৃন্দ বারবার বলে আসছেন তারা ক্ষমতার আদৌ প্রতিদ্বন্দ্বী নন এবং কোনো দল বা ব্যক্তিকে তারা ক্ষমতায় বসাতেও চান না। তাদের সুনির্দিষ্ট ১৩ দফা দাবি রয়েছে। ঈমান ও আক্বিদা নিয়েই তাদের কাজ। তারা চান তাদের ১৩ দফা মেনে নেয়া হোক। কিন্তু তাদের অবস্থান ধর্মঘটের ওপর রাতের বেলা গুলি চালিয়ে সাধারণ মানুষের হত্যার এ ঘটনা একটি সভ্য সমাজে চিন্তা করা যায় না। এর মধ্যে দিয়ে সরকার ইসলামপ্রিয় মানুষদের ‘শত্রু শিবিরে’ ঠেলে দিল। সরকারের এই ‘আগ্রাসী ভূমিকা’র কারণ কী? সরকার কী চায়? সরকারের মিত্র ও বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেছেন, সরকার জরুরি অবস্থা ঘোষণার পাঁয়তারা করছে (মানব কণ্ঠ, ৪ মে)। এটাও একটা ভুল পথ। এ পথ সমাধানের কোনো পথ নয়। সরকার ইতোমধ্যে অনেকগুলো ‘ফ্রন্ট’ ওপেন করে ফেলেছে। সাভার ট্রাজেডি, সেখানে প্রায় এখন পর্যন্ত সাড়ে ছয়শত শ্রমিকের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে, সেখানে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে যায়নি সরকার। এত লোকের মৃত্যুর পরও সরকার রানা প্লাজা’র মালিক ও ৫টি গার্মেন্টস ফ্যাক্টরির মালিকের বিরুদ্ধে ‘হত্যামামলা’ দায়ের করেনি। যে ধারায় রানা প্লাজার মালিকের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে, তার সর্বোচ্চ শাস্তি ৫ বছর কারাদণ্ড। যেখানে সারা দেশের মানুষ প্রত্যাশা করছে সরকার ও বিরোধী দলের মাঝে আগামী দশম সংসদ নির্বাচন আয়োজনের ব্যাপারে একটি ‘সমঝোতা’ হোক, সেখানে প্রকাশ্যে রাতের আঁধারে নিরীহ মুসল্লিদের ওপর হাজার হাজার রাউন্ড গুলি চালিয়ে এবং অগণিত মুসল্লিকে (?) হত্যা করে তারা একটাই ম্যাসেজ দিল আর তা হচ্ছে তারা আদৌ সংলাপে বিশ্বাসী নয়। প্রধানমন্ত্রী যে আহ্বান জানিয়েছিলেন, তা ছিল লোক দেখানো। আইওয়াশ। দিগন্ত টিভি ও ইসলামিক টিভির সম্প্রচার বন্ধ করে দিয়ে এবং মিডিয়ার ওপর পরোক্ষ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার ফলে মৃত্যুর সংখ্যা নিয়েও বিভ্রান্তি কাজ করছে। যেখানে বিএনপি নেতা এম কে আনোয়ার দাবি করেছেন ‘অসংখ্য’ মানুষ হত্যার, সেখানে রেডিও তেহরানে প্রচারিত এক বিবৃতিতে মৃত্যুর সংখ্যা ৩ হাজার বলে দাবি করেছে হেফাজতে ইসলাম। এই ঘটনার মধ্যদিয়ে বিরোধী দলের আন্দোলনে হেফাজতে ইসলাম নিজেদের সম্পর্কিত করলো। তারা একটি ‘শক্তি’ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। এখন সরকার কী তাদের সাথেও সংলাপ করবে? রাজনীতিতে মূল ‘স্টেক হোল্ডার’ মূলত সরকার ও বিরোধী দল। আর এজেন্ডা একটিই- সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের স্বার্থে এমন একটি পদ্ধতি বের করা, যাতে সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত হয়। সরকার বর্তমান প্রধানমন্ত্রীকে ‘অন্তর্বর্তীকালীন প্রধানমন্ত্রী’ হিসেবে রেখে আগামী নির্বাচনের কথা বলছে। যুক্তি হিসেবে এটা বিরোধী দলের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। সংবিধান সংশোধিত হয়েছে। এখন প্রধানমন্ত্রী যদি ‘অন্তর্বর্তীকালীন প্রধানমন্ত্রী’ হিসেবে থেকে যান তাতে করে আমাদের যে রাজনৈতিক সংস্কৃতি তাতে প্রশাসন প্রভাবান্বিত হয়ে যেতে পারে। গেল চার বছরে প্রশাসনে যেভাবে দলীয়করণ হয়েছে এবং শীর্ষ আমলারা যেভাবে ‘দলীয় আনুগত্য’ প্রদর্শন করেছেন, তাতে করে প্রশাসন পরিপূর্ণভাবে ‘অন্তর্বর্তীকালীন প্রধানমন্ত্রী’ নির্ভর হয়ে পড়বে। এমনকি নির্বাচনের সময় সেনাবাহিনীর উপস্থিতির যে ট্রেডিশন, তাতেও ব্যত্যয় ঘটেছে। আরপিওতে সেনাবাহিনী মোতায়েনের বিষয়টি থাকছে না। আরো একটি বিষয়, যা বেশ হাস্যকর। সংবিধান অনুযায়ী সংসদের মেয়াদকাল শেষ হবার আগেই (৩ মাস আগে) নির্বাচন হতে হবে। এর অর্থ কি নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের রেখেই নির্বাচন হবে? এই ধারায় যদি পরিবর্তন আনা না হয় তাহলে নির্বাচন নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। কেননা ক্ষমতাসীন এমপিরা নির্বাচনে প্রভাব খাটাবেন আর স্থানীয় প্রশাসন হয়ে পড়বে অকার্যকর। তাই ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকার’ এর ফর্মুলা কাজ করবে না। এখানে একটা ঐক্যমতে পৌঁছা দরকার। টিআইবি একটি ফর্মুলা দিয়েছে। যদিও টিআইবির ফর্মুলাতে বেশ ত্রুটি রয়েছে। টিআইবি অনেকটা দায়সারা গোছের একটি ফর্মুলা উপস্থাপন করেছে। এ ব্যাপারে তাদের আরো ‘কাজ’ করার সুযোগ ছিল। বিএনপি এখনও একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের তথা নির্দলীয় সরকারের পক্ষে যা এখন রাজনৈতিক বাস্তবতা। বিএনপি তথা ১৮ দল রাজনৈতিকভাবে এগুতে চাইলেও সরকারের কর্মকাণ্ড আদৌ প্রমাণ করে না তারা সংলাপে আদৌ আগ্রহী। সংলাপের কথা বলে তারা সময় ক্ষেপণ করছে। তাদের উদ্দেশ্য ভিন্ন। দেশের ভেতরে অস্থিরতা তৈরি করে ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করা। ক্ষমতায় থেকে যেতে যা যা করা দরকার, বর্তমান সরকার তা তা করবে। এ ক্ষেত্রে হেফাজতে ইসলামের শান্তিপ্রিয় অবস্থানের ওপর গুলিবর্ষণ করতে তাদের এতটুকু বাধেনি। ভবিষ্যতেও বাধবে না। এর চাইতেও আরো বড় ধরনের অঘটন ঘটতে পারে। তাই সংলাপের সম্ভাবনা ক্ষীণতর হয়ে পড়েছে। সরকার যদি তার একক সিদ্ধান্তে এককভাবে নির্বাচন করে, সেটাও তার জন্য সুখের হবে না। আমাদের দেশে এককভাবে নির্বাচন করার কোনো সুখকর অভিজ্ঞতা নেই। এরশাদীয় জমানায় ১৯৮৬ ও ১৯৮৮ সালে দুটো নির্বাচন হয়েছিল। ১৯৮৬ সালের তৃতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও জামায়াত অংশ নিলেও শুধু বিএনপির অংশ না নেয়ার কারণে সেই সংসদ পাঁচ বছর স্থায়ী হয়নি। একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটেছিল ১৯৮৮ ও ১৯৯৬ সালে। ১৯৮৮ সালে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি আর ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ অংশ না নেয়ায় চতুর্থ ও ষষ্ঠ সংসদের কোনো গ্রহণযোগ্যতা ছিল না। ২০১৩ সালে এসে বাংলাদেশ পুনরায় একই ঘটনা প্রত্যক্ষ করতে যাচ্ছি কী না, সেটাই দেখার বিষয় এখন। তবে বলতেই হবে সরকারের দায়-দায়িত্ব এখানে অনেক বেশি। শুধু সংবিধানের দোহাই দিয়ে সরকার যদি ‘গো’ ধরে থাকে, তাতে জনসমর্থন পাওয়া যাবে বলে মনে হয় না। তোফায়েল আহমদের মতো সিনিয়র রাজনীতিবিদরাও মনে করছেন আদৌ সংলাপ হবে না। কেননা কোনো পক্ষই তাদের অবস্থান পরিবর্তন করেনি। আপাতদৃষ্টিতে দেখলে তাই মনে হওয়া স্বাভাবিক এবং এটাই বাস্তবতা। কেননা সরকারের কর্মকাণ্ড প্রমাণ করে না তারা সংলাপের ব্যাপারে সত্যি সত্যিই আন্তরিক। একদিকে সংলাপের কথা বলে জনগণ তথা বিদেশী দাতাদের দেখালো যে তারা সংলাপ করতে চান, অন্যদিকে বিরোধী মিডিয়া বন্ধ করে দিয়ে সরকার ধীরে ধীরে দেশটিকে একদলীয় রাজনীতির দিকে নিয়ে যাচ্ছে। সরকারের ‘বন্ধুরা’ এখন মিডিয়া রাজ্যে বিচরণ করছেন। যাদেরকে টিভি চ্যানেল দেয়া হয়েছে, তাদের সবাই সরকারের সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত। তাই চ্যানেলগুলোতে সরকারের গুণগানই বেশি। এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম ছিল আমার দেশ, দিগন্ত টিভি ও ইসলামিক টিভি। এখন এগুলো বন্ধ করে দেয়া হলো। আমার দেশ’র ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমান জেলে জীবন কাটাচ্ছেন। বিদেশে মানবাধিকার সংস্থাগুলো এ ঘটনার নিন্দা জানালেও সরকারের আদৌ তাতে টনক নড়েনি।

এখানে একটা কথা বলা ভালো। আর তা হচ্ছে সংলাপের ব্যাপারে বিদেশী দাতাদের চাপ থাকার কারণে, সরকার লোক দেখানো ‘সংলাপ’ এর আহ্বান জানিয়েছিল। ইতোমধ্যে জাতিসংঘের মহাসচিবের একটি চিঠি ছাপা হয়েছে, যেখানে তিনি দুই নেত্রীকে নির্বাচন প্রশ্নে সমঝোতায় পৌঁছানোর তাগিদ দিয়েছেন (যুগান্তর, ৩ মে) বান কি মুন দুই নেত্রীকে একটি চিঠি দিয়েছিলেন। চিঠিতে তিনি লিখেছিলেন, বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিশেষ করে প্রধান দুই দলের মধ্যে সঙ্কট চলছে। তাই গ্রহণযোগ্য একটি উপায় খুঁজে বের করা প্রয়োজন। আর এ জন্য জাতিসংঘের উদ্বেগ জানিয়ে চিঠিতে বলা হয়, দু’পক্ষের মধ্যে আলোচনার জন্য শিগগিরই জাতিসংঘের বিশেষ দূতসহ একটি প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ যাচ্ছে। সম্ভবত জাতিসংঘের মহাসচিবের এই চিঠির পর প্রধানমন্ত্রী নড়েচড়ে বসেন। এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান, তিনি বিরোধী দলের নেতার সাথে ‘যেকোনো জায়গায়’ বসতে চান। তার আগ্রহ ছিল সংসদ। কিন্তু তার দলীয় এমপিরা যে ভাষায় সংসদে কথা বলেন, যে ভাষায় শহীদ জিয়াকে আক্রমণ করেন, তাতে করে কোনো ভদ্র মানুষের পক্ষে ওই সংসদে থাকা অসম্ভব। অনেকেরই স্মরণ থাকার কথা বর্তমান রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ যখন স্পিকার ছিলেন, তখন সংসদকে ‘মাছের বাজার’-এর সাথে তুলনা করেছিলেন। আসলে আওয়ামী লীগের চরিত্রে গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির কোনো লেশমাত্র নেই। তাদের মানসিকতায় রয়েছে একদলীয় শাসন। গণতন্ত্রের নামে একদলীয় শাসন এবং ব্যক্তির শাসন দীর্ঘস্থায়ী করাই হচ্ছে তাদের মানসিকতা। তাই প্রধানমন্ত্রী যখন ‘সংলাপের’ আহ্বান করেন, তখন তার উদ্দেশ্য ছিল ভিন্ন। একদিকে বিদেশী বিশেষ করে জাতিসংঘের ‘চাপ’ অন্যদিকে রানা প্লাজার ‘হত্যাকাণ্ড’ সেখানে মৃত্যুর সংখ্যা হাজারে উন্নীত হতে পারে। উপরন্তু ছিল হেফাজতে ইসলামের ঢাকা অবরোধের ঘোষণা। তাই সকলের দৃষ্টি অন্যদিকে আবদ্ধ করার জন্যই এই ‘নাটক নাটক খেলা’। বিএনপি নেত্রী এই ‘নাটক নাটক’ খেলায় পা দেননি।

৫ মের হেফাজতে ইসলামের গণজমায়েতে পুলিশ, র‌্যাব আর বিজিবি’র হামলায় প্রতিক্রিয়া হিসেবে ঢাকার কাঁচপুরে ও চট্টগ্রামের হাটহাজারীতেও সহিংস ঘটনায় মারা গেছে প্রায় ২১ জন মানুষ। স্পষ্টতই বাংলাদেশ এক ‘অনির্দিষ্ট পথে’ যাত্রা শুরু করেছে। যা খুব আশঙ্কার কারণ, তা হচ্ছে পবিত্র কুরআন শরিফ তথা ধর্মীয় পুস্তক পোড়ানোর কাহিনী প্রচার করা। অভিযোগ করা হয় যে ৫ তারিখ হেফাজতে ইসলামের কর্মীরা বায়তুল মোকাররম চত্বরে ফুটপাথে এসব বই পুড়িয়েছে। সরকার নিয়ন্ত্রিত মিডিয়ায় এসব সংবাদ পরিবেশন করে একটি হেফাজত বিরোধী ইমেজ তৈরি করার অপচেষ্টা চলছে। অথচ পবিত্র গ্রন্থ কুরআন শরিফ কখনই ফুটপাথের দোকানে বিক্রি হয় না। আর ফেসবুকে দেখলাম যে জায়গায় গ্রন্থ পোড়ানোর কথা বলা হয়েছে, সেখান থেকে হেফাজতের কর্মীদের অবস্থান ছিল অনেক দূরে। সুতরাং তারা বই পোড়াবে,এটা বিশ্বাসযোগ্য নয়। তাহলে পোড়ালো কারা? বিএনপি নেতা এম কে আনোয়ার আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের একজনের নাম উল্লেখ করেছেন। আমরা চাই এ ব্যাপারে একটি বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠিত হোক। যদি সত্যি সত্যিই কুরআন শরিফ পোড়ানো হয়ে থাকে, তাহলে এই ফুটপাথের দোকানে কীভাবে কুরআন শরিফ গেল, বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি এটা খতিয়ে দেখুক। একই সাথে ৫ তারিখ রাতে কত মানুষ মারা গেছে, এটা জানাও আমাদের জন্য জরুরি। এ কোন বাংলাদেশ আমরা দেখছি? পুলিশ, র‌্যাব প্রকাশ্য গুলি করে মানুষ মারবে, গুলি করার আগে সতর্কবাণী উচ্চারণ করবে না, তা তো হতে পারে না? এর আগেও পুলিশ বিএনপির জনসভায় গুলি করে শীর্ষস্থানীয় নেতাদের আহত করেছিল। এজন্য নিশ্চয়ই আমরা স্বাধীনতা যুদ্ধ করিনি। একটা বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠিত হোক। কমিটি তদন্ত করে দেখুক আইনÑশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ক্ষমতার অপব্যবহার করেছিল কী না।

গত ৮ ও ৯ মে ১৮ দল সকাল-সন্ধ্যা হরতাল পালন করেছে। আজ শুক্রবার ঢাকায় আসার কথা জাতিসংঘের মহাসচিবের বিশেষ দূত অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকো। এটা আমাদের জন্য দুঃখজনক যে সরকারের আগ্রাসী মনোভাবের কারণে এবং গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচনের স্বার্থে জাতিসংঘকে পর্যন্ত হস্তক্ষেপ করতে হচ্ছে। এটা আমাদের জন্য কোনো সু-সংবাদ বয়ে আনবে না। সরকারের দমননীতি আজ যে পর্যায়ে উন্নীত হয়েছে, তাতে করে সরকারের সাথে আদৌ সংলাপ করার কোনো সুযোগ আছে বলেও মনে হয় না। আমাদের নীতি নির্ধারকরা এটা বুঝতে পারছেন না যে, হেফাজতে ইসলামের ওপর নগ্ন হামলা একটি ভিন্ন ম্যাসেজ পশ্চিমা বিশ্বে পৌঁছে দিয়েছে। ইতোমধ্যেই একটি ‘গৃহযুদ্ধের’ আশঙ্কা করছেন মার্কিন কংগ্রেসের আইন প্রণেতারা। গত ৫ মে মার্কিন কংগ্রেসের হোমল্যান্ড সিকিউরিটি কমিটির অন্যতম সদস্য এবং কংগ্রেসের বাংলাদেশ ককাসের সদস্য কংগ্রেস ওম্যান ইভেট ডি কার্ক মার্কিনী বার্তা সংস্থা এনাকে বলেছেন, বাংলাদেশের পরিস্থিতি যাতে গৃহযুদ্ধের দিকে ধাবিত না হয়, সে জন্য স্টেট ডিপার্টমেন্ট ও কংগ্রেস একসাথে কাজ করছে (মানব জমিন, ৭ মে)। এটা নিঃসন্দেহে আমাদের জন্য একটি দুঃখজনক সংবাদ। এ ধরনের একটি পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে শুধু ক্ষমতাসীন দলের ক্ষমতা আঁকড়ে থাকার কারণে। এই সরকার যতদিন ক্ষমতায় থাকবে, ততদিন মানুষের দুর্ভোগ আরো বাড়বে। সরকার ভুল পথে হাঁটছে। সরকারের নীতিনির্ধারকরা সরকার প্রধানকে সঠিক উপদেশটি দিচ্ছেন না। পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ। এ পরিস্থিতি থেকে বের হয়ে আসার পথ একটাই হেফাজতে ইসলামের ১৩ দফা নিয়ে আলোচনা শুরু করা এবং একই সাথে বিরোধী দলের সাথে সুনির্দিষ্ট এজেন্ডা নিয়ে সংলাপ শুরু করা।

10.5.13

0 comments:

Post a Comment