একজন শিরীন শারমিন চৌধুরীর স্পিকার হিসেবে নিযুক্তিকে নারীর ক্ষমতায়ন হিসেবে গণ্য করা যাবে না। বাংলাদেশের নারীবাদীরা এই নিযুক্তিতে উৎসাহিত হবেন, সন্দেহ নেই। নারীরা বাংলাদেশে এখনো অনেক পিছিয়ে আছেন। সংসদে নারীর প্রতিনিধিত্বের হার মাত্র ১৯.৭ শতাংশ। এ সংখ্যা আরো বাড়াতে হবে। নারীদের সংরক্ষিত আসনে নয়, বরং স্থানীয় পর্যায়ে মনোনয়ন দিয়ে তাঁদের নির্বাচন প্রক্রিয়ায় অংশ নেওয়ার সুযোগ দিতে হবে। আমরা যদি দক্ষিণ এশিয়ার সংসদে নারীদের প্রতিনিধিত্বের সঙ্গে বাংলাদেশের অবস্থানের তুলনা করি, তাহলে অবশ্যই দেখা যাবে, বাংলাদেশ খুব একটা পিছিয়ে নেই। আফগানিস্তানে যেখানে নারীরা এখন শৃঙ্খলিত ও তালেবান নিয়ন্ত্রিত, সেখানে পার্লামেন্টে নারী প্রতিনিধিত্বের হার ২৭.৭ শতাংশ। সবচেয়ে অবাক করার বিষয় শ্রীলঙ্কায়, যেখানে শিক্ষিতের হার দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে বেশি, সেখানে পার্লামেন্টে নারী প্রতিনিধিত্বের হার মাত্র ৫.৮ শতাংশ। ভারতে ১১ শতাংশ, মালদ্বীপে ৬.৫ শতাংশ, ভুটানে ৮.৫ শতাংশ, পাকিস্তানে একটি কনজারভেটিভ সমাজেও এই হার ২২.৫ শতাংশ। আর নেপালে এই হার সবচেয়ে বেশি ৩৩.২ শতাংশ। পাঠক, আসুন বিশ্বের পার্লামেন্টগুলোতে নারী প্রতিনিধিত্বের সঙ্গে আমাদের অবস্থানটা আমরা একটু তলিয়ে দেখি। নারী প্রতিনিধিত্বের হার সবচেয়ে বেশি আফ্রিকার একটি দেশ রুয়ান্ডায়, ৫৬.৩ শতাংশ । কিউবা ও সুইডেনে এই হার যথাক্রমে ৪৫.২ শতাংশ ও ৪৪.৭ শতাংশ। মিসরে এই হার মাত্র ২ শতাংশ আর ইয়েমেনে ০.৩ শতাংশ। 'আরব বসন্ত' আন্দোলনে নারীরা একটি বড় ভূমিকা পালন করলেও সংসদে তাঁদের প্রতিনিধিত্ব খুব বাড়বে বলে মনে হয় না। সবচেয়ে মজার কথা, দ্বীপরাষ্ট্র ভালুতো, বাউরু, পালাউ কিংবা কাতারের তথাকথিত সংসদে কোনো নারী প্রতনিধিত্ব নেই। অঞ্চল ভিত্তিতে দেখা যায়, প্যাসিফিক অঞ্চলে এই হার সবচেয়ে কম, মাত্র ১২.৭ শতাংশ (এক কক্ষবিশিষ্ট সংসদে)। সবচেয়ে বেশি নরডিকভুক্ত দেশগুলোতে ৪২ শতাংশ। ইউরোপীয় অঞ্চলে (নরডিক দেশগুলো বাদে) এই হার মাত্র ২১.৯ শতাংশ। সাব-সাহারা অঞ্চলে ২০.৯ শতাংশ, এশিয়ায় ১৮.৪ শতাংশ, আর আরব দেশগুলোতে মাত্র ১৫.৭ শতাংশ। ইন্টার পার্লামেন্টারি ইউনিয়নের সর্বশেষ হিসাব মতে, সারা বিশ্বে সংসদ সদস্য রয়েছেন ৪৬ হাজার ৩০০ জন। এর মধ্যে নারী এমপির সংখ্যা মাত্র ৯ হাজার ৪২৬ জন, অর্থাৎ মাত্র ২০.৪ শতাংশ। একুশ শতকে এসেও আইন প্রণয়ন প্রক্রিয়ায় নারীদের সম্পৃক্ত করা হচ্ছে না। আর নারী স্পিকার? নারীরা এ থেকেও অনেক পিছিয়ে আছেন। সমসাময়িক সংসদীয় রাজনীতির ইতিহাসে দেখা যায়, অস্ট্রিয়ায় ১৯২৭ সালে প্রথমবারের মতো একজন মহিলা পার্লামেন্টের স্পিকার (বুনডেসরাট) নির্বাচিত হয়েছিলেন। ১৯৪৫ থেকে ১৯৯৭ সালের মধ্যকার সময়সীমায় পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ৪২ জন নারী কোনো না কোনোভাবে স্পিকারের দায়িত্ব পালন করেছেন। ডেনমার্ক ১৯৫০ সালে, সুইডেন ১৯৯১ সালে, যুক্তরাজ্য (হাউস অব লর্ডস) ১৯৯২ সালে, যুক্তরাষ্ট্র ২০০৭ সালে, ভারত ২০০৯ সালে, সিঙ্গাপুর ২০১৩ সালে প্রথমবারের মতো একজন নারীকে পার্লামেন্টের স্পিকার হিসেবে পেয়েছে। বর্তমানে ১৯০টি পার্লামেন্টের পরিসংখ্যান অনুযায়ী দেখা যায়, ৩৯ জন মহিলা পার্লামেন্টের স্পিকার হিসেবে রয়েছেন। এ ক্ষেত্রে ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর স্পিকার হিসেবে নিযুক্তি নিঃসন্দেহে বড় অগ্রগতি। এটাকে নারীর ক্ষমতায়ন হিসেবে বিবেচনা করা না গেলেও নারীরা এতে উৎসাহ বোধ করবেন। এখন নারীকুলের অগ্রগতির জন্য তিনি কী করবেন, এটা বড় বিষয় নয়, বড় বিষয় হচ্ছে, সংসদের গ্রহণযোগ্যতা বাড়ানো, সংসদীয় কার্যক্রমে বিরোধী দলের অংশগ্রহণ বাড়ানো এবং দশম সংসদ নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার ব্যাপারে একটি কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা। এ কাজ যদি স্পিকার করতে পারেন, তাহলে নিঃসন্দেহে তিনি ইতিহাসে নাম রেখে যেতে পারবেন। আমরা তাঁর নিযুক্তিকে স্বাগত জানাই।Daily KALERKONTHO06.05.13
স্পিকার পদে নারী : নারীর ক্ষমতায়ন নয়
17:41
No comments
একজন শিরীন শারমিন চৌধুরীর স্পিকার হিসেবে নিযুক্তিকে নারীর ক্ষমতায়ন হিসেবে গণ্য করা যাবে না। বাংলাদেশের নারীবাদীরা এই নিযুক্তিতে উৎসাহিত হবেন, সন্দেহ নেই। নারীরা বাংলাদেশে এখনো অনেক পিছিয়ে আছেন। সংসদে নারীর প্রতিনিধিত্বের হার মাত্র ১৯.৭ শতাংশ। এ সংখ্যা আরো বাড়াতে হবে। নারীদের সংরক্ষিত আসনে নয়, বরং স্থানীয় পর্যায়ে মনোনয়ন দিয়ে তাঁদের নির্বাচন প্রক্রিয়ায় অংশ নেওয়ার সুযোগ দিতে হবে। আমরা যদি দক্ষিণ এশিয়ার সংসদে নারীদের প্রতিনিধিত্বের সঙ্গে বাংলাদেশের অবস্থানের তুলনা করি, তাহলে অবশ্যই দেখা যাবে, বাংলাদেশ খুব একটা পিছিয়ে নেই। আফগানিস্তানে যেখানে নারীরা এখন শৃঙ্খলিত ও তালেবান নিয়ন্ত্রিত, সেখানে পার্লামেন্টে নারী প্রতিনিধিত্বের হার ২৭.৭ শতাংশ। সবচেয়ে অবাক করার বিষয় শ্রীলঙ্কায়, যেখানে শিক্ষিতের হার দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে বেশি, সেখানে পার্লামেন্টে নারী প্রতিনিধিত্বের হার মাত্র ৫.৮ শতাংশ। ভারতে ১১ শতাংশ, মালদ্বীপে ৬.৫ শতাংশ, ভুটানে ৮.৫ শতাংশ, পাকিস্তানে একটি কনজারভেটিভ সমাজেও এই হার ২২.৫ শতাংশ। আর নেপালে এই হার সবচেয়ে বেশি ৩৩.২ শতাংশ। পাঠক, আসুন বিশ্বের পার্লামেন্টগুলোতে নারী প্রতিনিধিত্বের সঙ্গে আমাদের অবস্থানটা আমরা একটু তলিয়ে দেখি। নারী প্রতিনিধিত্বের হার সবচেয়ে বেশি আফ্রিকার একটি দেশ রুয়ান্ডায়, ৫৬.৩ শতাংশ । কিউবা ও সুইডেনে এই হার যথাক্রমে ৪৫.২ শতাংশ ও ৪৪.৭ শতাংশ। মিসরে এই হার মাত্র ২ শতাংশ আর ইয়েমেনে ০.৩ শতাংশ। 'আরব বসন্ত' আন্দোলনে নারীরা একটি বড় ভূমিকা পালন করলেও সংসদে তাঁদের প্রতিনিধিত্ব খুব বাড়বে বলে মনে হয় না। সবচেয়ে মজার কথা, দ্বীপরাষ্ট্র ভালুতো, বাউরু, পালাউ কিংবা কাতারের তথাকথিত সংসদে কোনো নারী প্রতনিধিত্ব নেই। অঞ্চল ভিত্তিতে দেখা যায়, প্যাসিফিক অঞ্চলে এই হার সবচেয়ে কম, মাত্র ১২.৭ শতাংশ (এক কক্ষবিশিষ্ট সংসদে)। সবচেয়ে বেশি নরডিকভুক্ত দেশগুলোতে ৪২ শতাংশ। ইউরোপীয় অঞ্চলে (নরডিক দেশগুলো বাদে) এই হার মাত্র ২১.৯ শতাংশ। সাব-সাহারা অঞ্চলে ২০.৯ শতাংশ, এশিয়ায় ১৮.৪ শতাংশ, আর আরব দেশগুলোতে মাত্র ১৫.৭ শতাংশ। ইন্টার পার্লামেন্টারি ইউনিয়নের সর্বশেষ হিসাব মতে, সারা বিশ্বে সংসদ সদস্য রয়েছেন ৪৬ হাজার ৩০০ জন। এর মধ্যে নারী এমপির সংখ্যা মাত্র ৯ হাজার ৪২৬ জন, অর্থাৎ মাত্র ২০.৪ শতাংশ। একুশ শতকে এসেও আইন প্রণয়ন প্রক্রিয়ায় নারীদের সম্পৃক্ত করা হচ্ছে না। আর নারী স্পিকার? নারীরা এ থেকেও অনেক পিছিয়ে আছেন। সমসাময়িক সংসদীয় রাজনীতির ইতিহাসে দেখা যায়, অস্ট্রিয়ায় ১৯২৭ সালে প্রথমবারের মতো একজন মহিলা পার্লামেন্টের স্পিকার (বুনডেসরাট) নির্বাচিত হয়েছিলেন। ১৯৪৫ থেকে ১৯৯৭ সালের মধ্যকার সময়সীমায় পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ৪২ জন নারী কোনো না কোনোভাবে স্পিকারের দায়িত্ব পালন করেছেন। ডেনমার্ক ১৯৫০ সালে, সুইডেন ১৯৯১ সালে, যুক্তরাজ্য (হাউস অব লর্ডস) ১৯৯২ সালে, যুক্তরাষ্ট্র ২০০৭ সালে, ভারত ২০০৯ সালে, সিঙ্গাপুর ২০১৩ সালে প্রথমবারের মতো একজন নারীকে পার্লামেন্টের স্পিকার হিসেবে পেয়েছে। বর্তমানে ১৯০টি পার্লামেন্টের পরিসংখ্যান অনুযায়ী দেখা যায়, ৩৯ জন মহিলা পার্লামেন্টের স্পিকার হিসেবে রয়েছেন। এ ক্ষেত্রে ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর স্পিকার হিসেবে নিযুক্তি নিঃসন্দেহে বড় অগ্রগতি। এটাকে নারীর ক্ষমতায়ন হিসেবে বিবেচনা করা না গেলেও নারীরা এতে উৎসাহ বোধ করবেন। এখন নারীকুলের অগ্রগতির জন্য তিনি কী করবেন, এটা বড় বিষয় নয়, বড় বিষয় হচ্ছে, সংসদের গ্রহণযোগ্যতা বাড়ানো, সংসদীয় কার্যক্রমে বিরোধী দলের অংশগ্রহণ বাড়ানো এবং দশম সংসদ নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার ব্যাপারে একটি কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা। এ কাজ যদি স্পিকার করতে পারেন, তাহলে নিঃসন্দেহে তিনি ইতিহাসে নাম রেখে যেতে পারবেন। আমরা তাঁর নিযুক্তিকে স্বাগত জানাই।Daily KALERKONTHO06.05.13
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
0 comments:
Post a Comment