রাজনীতি, আন্তর্জাতিক রাজনীতি এবং সমসাময়িক ঘটনাবলীর বিশ্লেষণ সংক্রান্ত অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর রেহমানের একটি ওয়েবসাইট। লেখকের অনুমতি বাদে এই সাইট থেকে কোনো লেখা অন্য কোথাও আপলোড, পাবলিশ কিংবা ছাপাবেন না। প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন লেখকের সাথে

পাকিস্তান : নির্বাচন যেসব প্রশ্নের জবাব দেয় না


পাকিস্তানে বহুল আলোচিত জাতীয় সংসদ নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। একই সঙ্গে সম্পন্ন হয়েছে চারটি প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচনও। ৩৪২ আসনবিশিষ্ট জাতীয় সংসদের ২৭২টি আসনের (একটি বাদে) নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। নারীদের জন্য রয়েছে ৬০টি আসন, সেই সঙ্গে অমুসলিমদের জন্যও রয়েছে ১০টি আসন। রোববার পর্যন্ত এই নির্বাচনের ফলাফলে দেখা গেছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তান মুসলিম লীগ (পিএমএল-এন) পেয়েছে ১১৯টি আসন। অন্যদিকে পিপলস পার্টির ভরাডুবি ঘটেছে। ফলে আলোচিত ক্রিকেটার ইমরান খানের নেতৃত্বাধীন তেহরিক-ই-ইনসাফের প্রাপ্তি ৩৪ আসন। আর দৃশ্যপটে ছিলেন না সাবেক প্রেসিডেন্ট পারভেজ মোশাররফ ও তার দল পাকিস্তান মুসলিম লীগ (কিউ)। তারা নির্বাচন বয়কট করেছেন। ইতিমধ্যে নওয়াজ শরিফ লাহোরে তার বিজয় স্বীকার করে নিয়েছেন। স্পষ্টতই তিনিই হতে যাচ্ছেন পাকিস্তানের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী। এর আগে দু’দুবার তিনি প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৯৯০ সালের ২৪ অক্টোবর প্রথমবারের মতো নওয়াজ শরিফের নেতৃত্বাধীন নয় দলীয় ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন করেছিল। কিন্তু ১৯৯৩ সালের ১৮ এপ্রিল দুর্নীতির অভিযোগে প্রেসিডেন্ট ইসহাক খান নওয়াজ শরিফের সরকারকে বরখাস্ত করেছিলেন। তবে সুপ্রিমকোর্টের একটি সিদ্ধান্তে ১৯৯৩ সালের ২৬ মে নওয়াজ শরিফ সরকার পুনর্বহাল হয়েছিল। মাত্র দুই মাসের মধ্যে ১৯৯৩ সালের ১৮ জুলাই সেনাবাহিনীর চাপে নওয়াজ শরিফ ও প্রেসিডেন্ট গোলাম ইসহাক খান দু’জনই পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছিলেন। পরবর্তী ১৯৯৭ সালের ১৭ ফেব্র“য়ারির নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে নওয়াজ শরিফ আবার প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছিলেন। ওই নির্বাচনে পিপলস পার্টির ভরাডুবি ঘটেছিল, পেয়েছিল মাত্র ১৭টি সিট। কিন্তু এবারও ভাগ্য প্রসন্ন ছিল না নওয়াজ শরিফের। ১৯৯৯ সালের ১২ অক্টোবর এক সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে নওয়াজ শরিফ ক্ষমতাচ্যুত হন। দীর্ঘদিন পর তিনি আবার ক্ষমতায় ফিরে এলেন। তিনি এককভাবে সরকার গঠন করবেন, নাকি কোয়ালিশন সরকারের নেতৃত্ব দেবেন, বিষয়টি এখনও স্পষ্ট নয়। তবে ইমরান খান জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি কোন কোয়ালিশন সরকারে যোগ দেবেন না। এই নির্বাচন প্রমাণ করল পাকিস্তানের রাজনীতি পারিবারিক গণ্ডি ও পাঞ্জাবের আধিপত্য থেকে বেরিয়ে আসতে পারল না। অনেকটা নেতৃত্বহীন পিপিপির মন্ত্রীদের দুর্নীতি, যোগ্য নেতৃত্ব না থাকা, উপরন্তু প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারির দুর্নীতি পিপিপিকে রাজনীতির ময়দানে অনেক দূরে ঠেলে দেয়। তবে দ্বিতীয় শক্তি হিসেবে ইমরান খানের আবির্ভাব পাকিস্তানের রাজনীতিতে একটি গুণগত পরিবর্তন এনেছে।
এই নির্বাচন পাকিস্তানের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কেননা পাকিস্তানের ইতিহাসে এই প্রথমবারের মতো একটি সরকার তার টার্ম শেষ হওয়ার পরই নির্বাচনের আয়োজন করা হয়েছিল। দ্বিতীয় যে বিষয়টি আরও গুরুত্বপূর্ণ, তা হচ্ছে একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে এই নির্বাচন সম্পন্ন হল। পাকিস্তানে ২০১২ সালের ফেব্র“য়ারি মাসে সংবিধানের ২০তম সংশোধনী এনে সেখানে পরবর্তী নির্বাচন পরিচালনার জন্য একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হয়েছিল। সাবেক বিচারপতি মির হাজার খান খোসো এই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নেতৃত্ব দেন। তারা সাফল্যের সঙ্গে এই সংসদ নির্বাচন (১৪তম) পরিচালনা করলেও পাকিস্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে রেখে গেছেন নানা প্রশ্ন। প্রথমত, যে জঙ্গিবাদ পাকিস্তানের অস্তিত্বকে এখন প্রশ্নের মুখে ঠেলে দিয়েছে, নয়া সরকার এই জঙ্গিবাদের উত্থান ঠেকাতে কী পদক্ষেপ নেবে? তিনটি প্রধান জঙ্গি সংগঠনের কথা বলা যায়, যাদের কর্মকাণ্ড আজ আন্তর্জাতিক পরিসরেও ব্যাপক সমালোচিত। তেহরিকে তালেবান, লস্কর-ই-তৈয়্যবা ও জয়শ-ই মোহম্মদ। এর মাঝে লস্কর-ই-তৈয়্যবা ও জয়শ-ই মোহম্মদ পাকিস্তানের বাইরে ভারতে জঙ্গি তৎপরতার সঙ্গে জড়িত। ২০০১ সালের ডিসেম্বরে ভারতের পার্লামেন্ট ভবনে হামলার জন্য এই দুই জঙ্গি সংগঠনকে দায়ী করা হয়। এ দুটো সংগঠনের তৎপরতার কারণে ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক উন্নত হয়নি। অন্যদিকে তেহরিকে তালেবান বেশি মাত্রায় আফগানিস্তানের তালেবানদের দ্বারা প্রভাবিত। এরা পাকিস্তানের ভেতরেই সন্ত্রাসী তৎপরতা অব্যাহত রেখেছে। ইসলামবিরোধী রাজনীতিকদের হত্যা, জনসভায় আÍঘাতী বোমা হামলা এদের অন্যতম কর্মকাণ্ড। নির্বাচনের আগে নওয়াজ শরিফ ও ইমরান খান এদের সঙ্গে সংলাপের প্রস্তাব করেছেন। এই সংলাপ আদৌ অনুষ্ঠিত হয় কিনা, সেটা বড় প্রশ্ন এখন। দ্বিতীয়ত, পাকিস্তানের অত্যন্ত ক্ষমতাধর বিচার বিভাগ, বিশেষ করে প্রধান বিচারপতি ইফতেখার মোহম্মদ চৌধুরীর ভূমিকা এখন লক্ষ্য রাখার বিষয়। সাম্প্রতিক সময়ে তার ভূমিকা, বিশেষ করে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইউসুফ রাজা গিলানির ক্ষমতা হারানো, মকদুম শাহাবুদ্দীনকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মনোনয়ন অযোগ্য ঘোষণা ইত্যাদি ঘটনায় প্রধান বিচারপতি তথা বিচার বিভাগের ভূমিকা এখন প্রশ্নের মুখে। এই বিচার বিভাগের কারণেই সাবেক প্রেসিডেন্ট পারভেজ মোশাররফ এখন গৃহবন্দি। নির্বাচনে তার প্রার্থিতা অযোগ্য ঘোষিত হয়েছিল। ফরেন পলিসি ম্যাগাজিনে প্রকাশিত একটি প্রবন্ধে তাই বিচার বিভাগকে অপঃরারংঃ ঔঁফমবং হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
এখন দেখার বিষয়, নয়া সরকারের সঙ্গে বিচার বিভাগের সম্পর্ক কোন পর্যায়ে উন্নীত হয়। পশ্চিমা পর্যবেক্ষকরা অনেকেই মন্তব্য করেছেন, বিচারপতি ইফতেখার চৌধুরী অবসর নিলেও উচ্চ আদালতে যেসব সিনিয়র বিচারপতি রয়েছেন, তারা বিচারপতি চৌধুরীর পদাঙ্ক অনুসরণ করতে পারেন। সে ক্ষেত্রে নয়া সরকার তথা নয়া প্রধানমন্ত্রী দুর্নীতিসহ নানা জটিলতার মধ্যে জড়িয়ে যেতে পারেন। তৃতীয়ত, অত্যন্ত ক্ষমতাধর সেনাবাহিনীর সিনিয়র জেনারেলদের সঙ্গে নয়া সরকারের সম্পর্ক কোন পর্যায়ে উন্নীত হয়, সেটাও দেখার বিষয়। নয়া প্রধানমন্ত্রীকে ডিসেম্বরে একজন সেনাপ্রধান নিয়োগ করতে হবে। জেনারেল কিয়ানির মেয়াদ শেষ হবে ডিসেম্বরে। তিনি ইতিমধ্যে এক দফা মেয়াদ বাড়ানোর সুযোগ নিয়েছেন। দ্বিতীয় দফায় তার মেয়াদ আর বাড়বে না। যিনি নয়া সেনাপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব নেবেন, তার সঙ্গে নয়া সরকারের সম্পর্কের ওপর অনেক কিছুই নির্ভর করছে। সেনাবাহিনী পাকিস্তানে একটি ‘শক্তি’। তাদেরকে কোন সরকারের পক্ষেই ‘আন্ডারমাইন্ড’ করা সম্ভব নয়। বর্তমানে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে দু’জন পূর্ণ জেনারেল, ২১ জন লে. জেনারেল, ১৫০ জন মেজর জেনারেল রয়েছেন। নৌবাহিনী ও বিমান বাহিনীর সিনিয়র অফিসারদের হিসাব না হয় নাই বা দিলাম। যুক্তরাষ্ট্র এই বাহিনীকে দীর্ঘদিন সহায়তা দিয়ে আসছে। যুক্তরাষ্ট্র থেকে যে ২ হাজার ৪০০ কোটি ডলার সহায়তা দেয়া হয়, তার একটা বড় অংশ যায় সেনাবাহিনীর কাছে। যদিও পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে দেখা যায়, সেনাবাহিনী সংবিধান ও গণতন্ত্রের প্রতি ‘কমিটেড’। তারা অনেকটা ‘তুরস্ক মডেল’ অনুসরণ করছে, যেখানে সেনাবাহিনী এখন পরিপূর্ণভাবে রাজনৈতিক নেতৃত্বের ওপর আস্থাশীল। ধারণা করা হচ্ছে, জেনারেল কিয়ানি সেনাবাহিনীকে যে অবস্থায় নিয়ে গেছেন, সেখান থেকে সেনাবাহিনীর বেরিয়ে আসার সম্ভাবনা ক্ষীণ। সেনাবাহিনী একটি ‘ঘুমন্ত বাঘ’, তাকে রাজনৈতিক নেতৃত্ব খোঁচাবে না, এটা সবাই প্রত্যাশা করে। চতুর্থত, নয়া সরকারকে একটা বড় ধরনের অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলা করতে হবে। পাকিস্তান অনেক দিন ধরেই আইএমএফের সঙ্গে ৭ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার ঋণ নিয়ে আলোচনা করছে। আইএমএফ বেশ কিছু শর্ত আরোপ করলে আলোচনা খুব একটা এগিয়ে যায়নি। এখন নয়া সরকারের জন্য এটা হবে একটা কঠিন কাজ। উপরন্তু পাকিস্তানে বিদ্যুৎ পরিস্থিতি খুব নাজুক পর্যায়ে রয়েছে। বিদ্যুতের লোডশেডিং এখন খুব স্বাভাবিক ব্যাপার পাকিস্তানে। দিনের বেশির ভাগ সময়ই বিদ্যুৎ থাকে না। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, বেকারত্ব, অসমতা ইত্যাদি নানা সমস্যা পাকিস্তানের অর্থনৈতিক অবস্থাকে অত্যন্ত নাজুক অবস্থায় নিয়ে গেছে। পঞ্চমত, বৈদেশিক সম্পর্কের ক্ষেত্রেও নয়া সরকারকে নানা ধরনের প্রতিকূলতার মুখোমুখি হতে হবে। পাকিস্তান-ইরান গ্যাস পাইপ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রচণ্ড আপত্তি রয়েছে। পাকিস্তান তার জ্বালানি সংকট মেটাতে ইরান থেকে গ্যাস আমদানি করা সংক্রান্ত একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের তাতে আপত্তি রয়েছে। এমনিতেই পাকিস্তান-আফগান সীমান্তে অব্যাহত ড্রোন বিমান হামলা এই সম্পর্কের ক্ষেত্রে নানা জটিলতা তৈরি করেছে। বিগত সরকার এই ড্রোন বিমান হামলা বন্ধের ব্যাপারে কোন কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারেনি। নয়া সরকারের জন্য বিষয়টি হবে বেশ স্পর্শকাতর। কেননা এই ড্রোন হামলা পাকিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী একটি জনমত তৈরি করেছে। নির্বাচনের আগে নির্বাচনী প্রচারণায় ইমরান খান ড্রোন বিমান গুলি করে ফেলে দেয়ার প্রতিশ্র“তি দিয়েছিলেন। ভারতের সঙ্গেও সম্পর্কের তেমন উন্নতি হয়নি। সম্প্রতি পাকিস্তানের কারাগারে একজন ভারতীয় বন্দির মৃত্যুকে (যিনি ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’-এর এজেন্ট ছিলেন) কেন্দ্র করে এই সম্পর্কের আরও অবনতি ঘটেছে।
ষষ্ঠত, বেলুচিস্তানের বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন এখন পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকারের জন্য চিন্তার অন্যতম কারণ। বেলুচিস্তানের প্রাকৃতিক গ্যাস দিয়ে পাকিস্তানের অন্যান্য প্রদেশে উন্নয়ন ঘটলেও খোদ বেলুচিস্তানে এর ছোঁয়া লাগেনি। বরং বেলুচিদের অভিযোগ রয়েছে, সেনাবাহিনী দিয়ে তাদের জাতীয় নেতাদের হত্যা করা হচ্ছে। বেলুচিস্তানে একাধিক সশস্ত্র গ্র“পের জš§ হয়েছে, যারা ‘স্বাধীন বেলুচ রাষ্ট্রের’ জন্য সশস্ত্র যুদ্ধ পরিচালনা করছে। এই বেলুচিস্তানের ভবিষ্যৎ এখন নানা প্রশ্নের মুখে। সাম্প্রতিক সময়গুলোতে বেলুচিস্তানের ভূ-রাজনৈতিক গুরুত্ব অনেক বেড়েছে। বেলুচিস্তানের সঙ্গে সীমান্ত রয়েছে ইরানি প্রদেশ সিসতান বেলুচিস্তানের। অন্যদিকে বেলুচিস্তানের গাওদারে রয়েছে একটি গভীর সমুদ্র বন্দর। চীন এই বন্দরটি নির্মাণ করে দিয়েছে। ভারত মহাসাগরে চীনা নৌবাহিনীর তৎপরতা বৃদ্ধি পাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে গাওদারের গুরুত্ব অনেক বেড়েছে। এমনকি সিসতান বেলুচিস্তানের সঙ্গে একত্রিত হয়ে অদূর ভবিষ্যতে একটি গ্রেটার বেলুচিস্তান রাষ্ট্র গঠন বিচিত্র কিছু নয়। ভারত মহাসাগরে জ্বালানি সরবরাহ লাইন নিশ্চিত রাখা, কিংবা তেহরানে কেন্দ্রীয় সরকারকে ‘চাপে’ রাখার কাজে এই বেলুচিস্তান আগামী দিনে বাইরের শক্তির কাছে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে। অনেকেরই মনে থাকার কথা, বেলুচিস্তানের গভীর মরুভূমিতে যুক্তরাষ্ট্রের একটি বিমান ঘাঁটি ছিল। ২০১২ সালে পাকিস্তানের আপত্তির মুখে যুক্তরাষ্ট্র এই ঘাঁটিটি বন্ধ করে দেয়।
সুতরাং নয়া সরকার বেলুচিস্তানের ব্যাপারে কী পদক্ষেপ নেয়, সে ব্যাপারে লক্ষ্য থাকবে অনেকের। সপ্তমত, পাকিস্তানে অব্যাহত জঙ্গি তৎপরতা বৃদ্ধি পাওয়ায় পাকিস্তানে বিদেশী বিনিয়োগ নেই। সরকারের আয় কমে গেছে। রেমিটেন্সের প্রবাহও কম। এখন নয়া সরকারের দায়িত্ব হবে বিদেশীদের আস্থা ফিরিয়ে আনা। কিন্তু কাজটি সহজ নয়। অষ্টমত, একটি তরুণ প্রজšে§র জš§ হয়েছে পাকিস্তানে। মোট ভোটারের তিন ভাগের এক ভাগ হচ্ছে এই তরুণ প্রজš§। ইমরান খান হচ্ছেন এই তারুণ্যের প্রতীক। যদিও তার নিজ বয়স ৬০, তথাপি এই তরুণদের নিয়েই এক ‘নয়া পাকিস্তানের’ গল্প শুনিয়েছেন ইমরান খান। তিনি যাদের নির্বাচনে প্রার্থী করেছিলেন, তাদের বেশির ভাগের বয়স ৩৫-এর নিচে। এই তরুণ সমাজকে নিয়ে এখন কাজ করতে হবে নয়া সরকারকে। নির্বাচনের আগে গেল মার্চ মাসে পিউ গবেষণা সংস্থা ভোটারদের ওপর একটি জনমত সমীক্ষা চালিয়েছিল (চবি ষেড়নধষ অঃরঃঁফব ঝঁৎাবু)। তাতে বেশ কিছু ফলাফল পাওয়া গিয়েছিল। তাতে দেখা গেছে, দেশ যেভাবে চলছে, তাতে ৮ ভাগ মানুষ সন্তুষ্ট থাকলেও ৯১ ভাগ মানুষ ছিল অসন্তুষ্ট। ৮১ ভাগ উত্তরদাতা জানিয়েছিলেন অর্থনীতি ভালো নয় (১৭ ভাগের কাছে অর্থনীতি ভালোভাবে চলছে)। ৫২ ভাগ উত্তরদাতা মনে করেন, ভারতই পাকিস্তানের জন্য অন্যতম হুমকি। তালেবানদের হুমকি মনে করছেন ৪৯ ভাগ মানুষ। আর আল কায়দাকে হুমকি মনে করছেন ৩৫ ভাগ মানুষ। ৭২ ভাগ মানুষ যুক্তরাষ্ট্রকে ‘বন্ধু’ মনে করে না। ৭৪ ভাগ মানুষ মনে করে ড্রোন বিমান হামলায় মানুষ মারার ঘটনা সঠিক নয়। নির্বাচনে এই জনমত প্রতিফলিত হয়েছে।
এটা সত্য, ব্যাপক সংখ্যক (শতকরা ৬০ ভাগ) মানুষের নির্বাচনে অংশগ্রহণ প্রমাণ করল জঙ্গিবাদ বাস্তবতা স্বীকার করে নিয়েও পাকিস্তানের জনগণ চেয়েছে একটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকুক। এক কঠিন সময়ে নওয়াজ শরিফ তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নিতে যাচ্ছেন। তার অতীত রেকর্ড খুব ভালো নয়। নিজে পাঞ্জাবি ও ধনাঢ্য ব্যবসায়ী। দুর্নীতির অভিযোগও আছে। পাঞ্জাবি কর্তৃত্ব থেকে তিনি যদি পাকিস্তানকে বের করে আনতে না পারেন, তাহলে বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন সেখানে আরও শক্তিশালী হবে। তাই নোয়াম চমস্কি যখন জাতিকে ঐক্যবদ্ধ থাকার প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন, তখন পাকিস্তানের এই মুহূর্তের সঠিক চিত্রই ফুটে ওঠে। তেহরিকে তালেবানদের তৎপরতা বৃদ্ধি, ২০১৪ সালে আফগানিস্তান থেকে সব সৈন্য প্রত্যাহারের আলোকে নওয়াজের ক্ষমতা গ্রহণ পাকিস্তানের রাজনীতিতে আদৌ কোন গুণগত পরিবর্তন সাধিত হবে কিনা, সেটা একটা বড় প্রশ্ন হয়েই থাকল।
Daily JUGANTOR
13.05.13

0 comments:

Post a Comment