রাজনীতি, আন্তর্জাতিক রাজনীতি এবং সমসাময়িক ঘটনাবলীর বিশ্লেষণ সংক্রান্ত অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর রেহমানের একটি ওয়েবসাইট। লেখকের অনুমতি বাদে এই সাইট থেকে কোনো লেখা অন্য কোথাও আপলোড, পাবলিশ কিংবা ছাপাবেন না। প্রয়োজনে যোগাযোগ করুন লেখকের সাথে

যুক্তরাষ্ট্র-কিউবা সম্পর্ক

গত ১২ এপ্রিল মধ্য আমেরিকার দেশ পানামায় আমেরিকান দেশগুলোর তিন দিনব্যাপী শীর্ষ সম্মেলনে বারাক ওবামা ও রাউল কাস্ত্রোর মধ্যকার বৈঠককে একটি ঐতিহাসিক বৈঠক হিসেবে চিহ্নিত করা হলেও খুব দ্রুত দেশ দুটির মধ্যে সম্পর্কের উন্নতি হবে, এমনটি আশা করা যাচ্ছে না। দীর্ঘ ৫৪ বছরের বৈরিতার অবসান ঘটিয়ে গত ২১ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্র ও কিউবার মধ্য আলোচনা শুরু হয়েছিল। এর আগে ১৭ ডিসেম্বর (২০১৪) প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা কিউবার সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের কথা বলেছিলেন। তবে বেশ কিছু ‘সমস্যা’ রয়ে গেছে, যার সমাধান হয়নি। যেমন বলা যেতে পারে, প্রেসিডেন্ট ওবামা বিশ্ব সন্ত্রাসী তালিকা থেকে কিউবাকে বাদ দিয়েছেন। কিন্তু কংগ্রেস তা এখনো অনুমোদন করেনি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ‘কালো তালিকায়’ অন্তর্ভুক্ত দেশ হচ্ছে কিউবা। আর কালো তালিকায় অন্তর্ভুক্ত থাকায় কিউবার সঙ্গে সব ধরনের ব্যবসা-বাণিজ্য নিষিদ্ধ। তবে ওবামা-কাস্ত্রো বৈঠক বরফ গলাতে সাহায্য করবে। রাউল কাস্ত্রো নিজে ওবামাকে ‘সৎ মানুষ’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। আর ওবামা কাস্ত্রোর নেতৃত্বের প্রশংসা করেছেন। তবে কিউবা নিয়ে প্রশ্ন আছে। আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ছাত্রদের কাছে যুক্তরাষ্ট্র-কিউবা সম্পর্ক অনেকদিন ধরেই আলোচনার একটি বিষয়। কিউবা কী আদৌ তার সমাজতান্ত্রিক নীতি পরিত্যাগ করবে, নাকি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ‘আবারও’ হাভানায় সরকারের উৎখাতের উদ্যোগ নেবেÑ এসব প্রশ্ন বারবার মিডিয়া ও বিভিন্ন পর্যবেক্ষকের লেখনীতে উঠে আসছিল। ১৯৯১ সালের ডিসেম্বরে পূর্ব ইউরোপে ‘সোভিয়েত ধাঁচের’ সমাজতন্ত্রের পতনের রেশ ধরে সোভিয়েত ইউনিয়নে যখন সমাজতন্ত্রের পতন ঘটল, তখন বলতে গেলে সারা বিশ্বের দৃষ্টি এক রকম নিবদ্ধ ছিল কিউবার দিকে। কেননা কিউবা ছিল সোভিয়েত সমাজতন্ত্রের অন্যতম সমর্থক এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের মিত্র। দ্বিতীয় প্রশ্ন ছিল কিউবার অর্থনীতির অন্যতম উৎস সেই সঙ্গে নিরাপত্তার অন্যতম গ্যারান্টার ছিল সোভিয়েত ইউনিয়ন। সোভিয়েত ইউনিয়নের অবর্তমানে অর্থনৈতিকভাবে কিউবা টিকে থাকতে পারবে কি না? এ প্রশ্নটি বারবার উচ্চারিত হয়েছে। একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের ‘আগ্রাসনের’ মুখ থেকে কিউবা তার অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে পারবে কি না, এটা নিয়েও প্রশ্ন ছিল। আরও একটি প্রশ্ন সমাজতান্ত্রিক বিশ্বে আলোচিত হচ্ছিলÑ তা হচ্ছে কিউবা কি আদৌ তার সমাজতান্ত্রিক নীতিতে কোনো পরিবর্তন আনবে? কেননা চিন ও ভিয়েতনামের মতো দেশেও স্নায়ুযুদ্ধের অবসানের পর পরিবর্তন এসেছে। ওই দুটি দেশ এখন আর ধ্রুপদী মার্কসবাদ অনুসরণ করে না। তাই খুব সঙ্গত কারণেই প্রশ্ন ছিল কিউবা চিন বা ভিয়েতনামের পথ অনুসরণ করবে কি না? কিউবা-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের ক্ষেত্রে প্রধান অন্তরায় ছিল কিউবার নিরাপত্তাহীনতা। যুক্তরাষ্ট্র কখনোই কিউবায় একটি সমাজতান্ত্রিক সরকারকে স্বীকার করে নেয়নি। বরং কিউবায় বিপ্লবের পর (১৯৫৯), কিউবা সরকার যখন লাতিন আমেরিকাজুড়ে বিপ্লব ছড়িয়ে দিতে চাইল, চে গুয়েভারা যখন ‘বিপ্লব’ সম্পন্ন করার জন্য কিউবা সরকারের মন্ত্রিত্ব ত্যাগ করে বলিভিয়ায় গেলেন (সেখনেই তাকে পরে হত্যা করা হয়), তখন যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন ক্ষমতাসীনদের কাছে ভিন্ন একটি বার্তা পৌঁছে দিয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্র কখনোই চায়নি, তার প্রভাবাধীন এলাকায় অন্য কোনো শক্তি প্রভাব খাটাক। ‘মনরো ডকট্রিন’-এর আদলে যুক্তরাষ্ট্র চেয়েছে এ এলাকায় তথা লাতিন আমেরিকায় তার পূর্ণ কর্তৃত্ব। কিন্তু কিউবার বিপ্লব যুক্তরাষ্ট্রের এই ‘হিসাব-নিকাশ’-এ বড় বাধা হয় দাঁড়ায়। যুক্তরাষ্ট্র কিউবা বিপ্লবের মাত্র দুবছরের মধ্যে ১৯৬১ সালে ভাড়াটে কিউবানদের দিয়ে কিউবা সরকারকে উৎখাতের চেষ্টা চালায়। সিআইএর অর্থে পরিচালিত এ অভিযান ‘বে অব পিগস’-এর অভিযান হিসেবে খ্যাত। বলাই বাহুল্য ওই অভিযান ব্যর্থ হয়েছিল। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র থেমে থাকেনি। ঠিক এর পরের বছর ১৯৬২ সালের অক্টোবরে ‘কিউবা সংকট’ একটি পারমাণবিক যুদ্ধের সম্ভাবনার জন্ম দিয়েছিল। ওই সময় যুক্তরাষ্ট্র অভিযোগ করেছিল কিউবায় সোভিয়েত ইউনিয়ন পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র বসিয়েছে, যা তার নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ। সোভিয়েত ইউনিয়ন কিউবায় ক্ষেপণাস্ত্র স্থাপন করেছে, এটা বিবেচনায় নিয়েই যুক্তরাষ্ট্র একটি নৌ-অবরোধ আরোপ করে, যাতে করে কিউবায় কোনো ধরনের সামরিক মারণাস্ত্র সরবরাহ করা না যায়। এই নৌ-অবরোধ অনেকটা সোভিয়েত ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্রকে একটি যুদ্ধের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেয়। সোভিয়েত ইউনিয়ন তখন দাবি করে যুক্তরাষ্ট্রকে তুরস্ক থেকে তাদের পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রত্যাহার করে নিতে হবে। দীর্ঘ ১৩ দিন ওই নৌ-অবরোধ বহাল ছিল। অবশেষে যুক্তরাষ্ট তুরস্ক থেকে মিসাইল প্রত্যাহার করে নিলে সোভিয়েত ইউনিয়নও কিউবা থেকে ক্ষেপণাস্ত্রগুলো সরিয়ে নেয়। এর মধ্য দিয়ে পারমাণবিক যুদ্ধের সম্ভাবনা কমে গেলেও সংকট থেকে গিয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্র কিউবার বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপ করে। দীর্ঘ ৫৪ বছর ধরে এই অর্থনৈতিক অবরোধের বিরুদ্ধে কিউবা ‘যুদ্ধ’ করে আসছে। স্নায়ুযুদ্ধের অবসানের পরও মার্কিন দৃষ্টিভঙ্গিতে কোনো পরিবর্তন আসেনি। প্রেসিডেন্ট ওবামা সম্পর্কোন্নয়নের ও বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের কথা বললেও এটি খুব সহজ হবে না। কেননা ওবামাকে এ সংক্রান্ত একটি আইন পাস করতে হবে। কিন্তু সমস্যাটা হচ্ছে কংগ্রেসে তীব্র একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নেই। কংগ্রেসের উভয় কক্ষ এখন নিয়ন্ত্রণ করে রিপাবলিকানরা। রিপাবলিকানরা ওবামার ঘোষণায় খুশি নন। আমি একাধিক কংগ্রেস সদস্য তথা সিনেটরের বক্তব্য দেখেছি, যেখানে তারা নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে ওবামার ওই বক্তব্যের সমালোচনা করেছেন। সিনেটর জন মেককেইন ও সিনেটর লিন্ডসে গ্রাহাম এক বিবৃতিতে জানিয়েছিলেন, প্রেসিডেন্ট ওবামার ওই সিদ্ধান্ত বিশ্বে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবকে সংকুচিত করবে। অন্যদিকে সিনেটর রয় প্লান্ট মনে করেন, এই ঘোষণা রাহুল কাস্ত্রোকে ক্ষমতায় রাখতে সাহায্য করবে। ডেমোক্রেট দলীয় সিনেটর রবার্ট মেনডেজ মনে করেন প্রেসিডেন্ট ওবামার এই সিদ্ধান্ত হচ্ছে কিউবার মানবাধিকার লংঘনের ঘটনা ও স্বৈরশাসনকে স্বীকার করে নেওয়া। সিনেটর মেনডেজ নিজে কিউবান-আমেরিকান। এতে করে ধারণা করা স্বাভাবিক যে, কিউবার ওপর থেকে বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার-সংক্রান্ত কোনো আইনকে কংগ্রেস অনুমোদন দেবে না। ফলে ওবামার ঘোষণা ও উদ্যোগ শেষ পর্যন্ত ‘একটি ঘোষণা’ হিসেবেই থেকে যেতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের আইনপ্রণেতাদের দাবি, কিউবায় আরও বেশি গণতন্ত্রায়ন, আরও বেশি অর্থনৈতিক উদারীকরণ, মানবাধিকার পরিস্থিতির আরও উন্নতিÑ একই সঙ্গে রাজনৈতিক সংস্কার। এটাই হচ্ছে মোদ্দা কথা। বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের শর্তে কিউবা সবকিছু ‘উন্মুক্ত’ করে দেবে না। সোভিয়েত ইউনিয়নে গর্ভাচেভের সংস্কার কর্মসূচির ফলাফল তাদের অজানা নয়। সংস্কার, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক আনতে গিয়েই সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে গিয়েছিল। চিন ও ভিয়েতনামে অর্থনৈতিক সংস্কার এসেছে। কিন্তু রাজনৈতিক সংস্কার আসেনি। অর্থাৎ সোভিয়েত ইউনিয়নের সংস্কার কর্মসূচির ‘পেরেস্ত্রৈকা’ বাস্তবায়ন হয়েছে। কিন্তু ‘গ্লাসনস্ত’ কার্যকর হয়নি। রাজনৈতিক সংস্কার আসেনি। কিউবাতে কোনোটাই আসেনি। চিন তার সংস্কার কর্মসূচির সফল বাস্তবায়নের মাধ্যমে বিশ্বের দ্বিতীয় অর্থনৈতিক শক্তিতে পরিণত হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র চিন থেকে এখন ঋণ গ্রহণ করছে। ভিয়েতনামও কম যায়নি। যে ভিয়েতনাম প্রায় ৪০ বছর আগে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যুদ্ধ করেছে, তারাই আজ যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম মিত্র। ভিয়েতনামের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যের পরিমাণ প্রায় ৩০ বিলিয়ন ডলার। যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি পোশাকের যে বিশাল চাহিদা তার একটা বড় অংশ ভিয়েতনাম সরবরাহ করছে। এখানে রাজনীতি অগ্রাধিকার পায়নি। পেয়েছে বাণিজ্য। এখন কিউবা কী প্রতিক্রিয়া দেখায়, তাও দেখার বিষয়। তবে হুট করে দুদেশের সম্পর্কে কোনো বড় পরিবর্তন আসবে না। প্রেসিডেন্ট রাহুল কাস্ত্রো ইতোমধ্যে জানিয়ে দিয়েছেন, ওবামার এই প্রস্তাবের ভিত্তিতে কিউবার রাষ্ট্রব্যবস্থায় কোনো পরিবর্তন আসবে না। কিউবার জনগণ এখনো কিউবা সরকারকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছেন। তবে এটাও ঠিক বিশ্বায়নের এই যুগে কিউবা ‘একা একা’ চলতে পারবে না। দেশটিকে ‘দুয়ার’ উন্মুক্ত করে দিতে হবেই। দেশের অর্থনীতির শতকরা ৮০ ভাগ এখনো সরকার নিয়ন্ত্রিত। কিছু কিছু ক্ষুদ্র ব্যবসা বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। সারা দেশে এ সংখ্যা প্রায় ৪ লাখ ৫০ হাজার। বেসরকারি খাত সম্প্রসারণের সুযোগ রয়েছে। বিশেষ করে ট্যুরিজম খাত। এ খাত কিছুটা উন্মুক্ত করা হয়েছে। আরও উন্মুক্ত করা হলে যুক্তরাষ্ট্রের হোটেল চেন ব্যবসায়ীরা এই খাতে বিনিয়োগে এগিয়ে আসবে। কিউবাতে সীমিত আকারে ‘ডলার বাণিজ্য’ হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত কিউবান-আমেরিকান পাঠানো অর্থ এখন নিয়মিত কিউবাতে আসছে। ক্রেডিট কার্ড ব্যবহৃত হচ্ছে। তবে একটা সমস্যা রয়েছে। কিউবা প্রতিদিন এক লাখ ব্যারেল তেল ‘অত্যন্ত কম মূল্যে’ ভেনিজুয়েলা থেকে পেয়ে আসছে। এর বিনিময়ে কিউবা ডাক্তার, নার্স, শিক্ষক দিচ্ছে। এসব ডাক্তার, নার্স আর শিক্ষক এখন ভেনিজুয়েলার হয়ে ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জে কাজ করছে। পুরো ব্যয়ভার বহন করছে ভেনিজুয়েলা। প্রয়াত হুগো শাভেজ এই পরিকল্পনা শুরু করলেও বর্তমান প্রেসিডেন্ট মাদুরো এই পরিকল্পনা কতদিন টিকিয়ে রাখতে পারবেন সেই প্রশ্ন ইতোমধ্যেই উঠেছে। কেননা ভেনিজুয়েলার রমরমা তেল ব্যবসার দিন শেষ। অর্থনীতি আগের মতো আর শক্তিশালী নয়। রাজধানী কারাকাসে বিশাল বিশাল ভবন খালি পড়ে আছে। বিদেশি বিনিয়োগকারীরা আসছেন না। রাজনৈতিক অস্থিরতা বাড়ছে। এরই মাঝে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভেনিজুয়েলার সম্পর্কের অবনতি ঘটেছে। ভেনিজুয়েলার ওপর বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। যখন ওবামা কিউবার সঙ্গে সম্পর্ক উন্নত করার উদ্যোগ নেন, তার ঠিক একদিন পর ১০ ডিসেম্বর এই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। এই নিষেধাজ্ঞা আরোপের ঘটনাকে যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটর মেনডেজ ‘ভেনিজুয়েলার জনগণের বিজয়’ হিসেবে চিহ্নিত করেছিলেন। গত এপ্রিল থেকেই সেখানে অসন্তোষ চলছে। যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে বেশ কয়েকজন ভেনিজুয়েলার ভিআইপির ব্যাপারে। সম্পদ আটক থেকে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞাও রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগে ভেনিজুয়েলার মারাত্মক মানবাধিকার পরিস্থিতি অবনতির। এটা সত্য হুগো শাভেজের মৃত্যুর পর ভেনিজুয়েলায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক নয়। কিন্তু এর চেয়েও খারাপ পরিস্থিতি বিরাজ করছে কলম্বিয়ায় কিংবা মেক্সিকোতে, যেখানে গেল বছর ৪৩ জন স্কুলশিক্ষার্থীকে অপহরণ করে হত্যা করা হয়। কিন্তু সেখানে কোনো বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়নি। ভেনিজুয়েলার বিষয়টি যে পরিপূর্ণ রাজনৈতিক, তা আর কাউকে বলে দিতে হয় না। এখন খুব সঙ্গত কারণেই ভেনিজুয়েলার ওপর মার্কিনি ‘চাপ’ যদি বাড়ে, তাহলে কিউবাকে দেওয়া তাদের আর্থিক সহযোগিতা বন্ধ হয়ে যাবে। ফলে তা কিউবার অর্থনীতিকে আঘাত করবে। কিউবার সঙ্গে সম্পর্ক উন্নত করে খোদ যুক্তরাষ্ট্রও উপকৃত হতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্য খাত মারাত্মক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র পর্যাপ্ত ডাক্তার, নার্স কিংবা স্বাস্থ্যকর্মী তৈরি করতে পারছে না। স্বাস্থ্যকর্মীদের একটা বড় অংশ আসছে বাইরে থেকে। এ ক্ষেত্রে কিউবার স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা জগদ্বিখ্যাত। তারা যুক্তরাষ্ট্রের এই চাহিদা পূরণ করতে পারে। ২০০২ সালে ফিদেল কাস্ত্রো এ ধরনের একটি প্রস্তাব যুক্তরাষ্ট্রকে দিয়েছিলেন। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র তা গ্রহণ করেনি। গেল বছর পশ্চিম আফ্রিকায় মারাত্মক ইবোলো রোগ ছড়িয়ে পড়ায় কিউবার স্বাস্থ্যকর্মীরা সেখানে গেছেন। এখন কিউবার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের উন্নতি হলে যুক্তরাষ্ট্র স্বাস্থ্য খাতে উপকৃত হতে পারে। ওবামা-কাস্ত্রো বৈঠক এই সম্পর্ক উন্নয়নের ক্ষেত্রে একটি বড় ধরনের অগ্রগতি হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। তবে উদ্যোগটি নিতে হবে যুক্তরাষ্ট্রকে। যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেস কালো তালিকা থেকে কিউবাকে বাদ দেবে এবং বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নিলে এ অঞ্চলের স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নে তা এক বড় অবদান রাখবে। Daily Amader Somoy 17.04.15

0 comments:

Post a Comment