খালেদা
জিয়ার নির্বাচনী প্রচারণায় সরকার সমর্থকদের একাধিকবার হামলার পর মন্ত্রী
ওবায়দুল কাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য করেছেন। তিনি ২৩ এপ্রিল বলেছেন,
খালেদা জিয়ার ওপর হামলার দায় নির্বাচন কমিশনের (ঢাকা টাইমস)। এর আগে বিবিসি
বাংলার একটি অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী বলেছিলেন,
নির্বাচন কমিশনের দায়দায়িত্ব সরকার নেবে না। তবে নির্বাচন কমিশন একটি
দায়িত্ব পালন করেছে। খালেদা জিয়াকে অতিরিক্ত গাড়িবহর নিয়ে নির্বাচনী
প্রচারণায় না যাওয়ার জন্য সতর্ক করে দিয়েছে। যেখানে খালেদা জিয়ার ওপর
হামলার ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনের নিষ্ক্রিয়তাকে অনেকে দায়ী করেছেন, সেখানে
সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে নির্বাচন কমিশনের ভূমিকাটি সামনে চলে এলো।
বিএনপি এবং আরও কয়েকটি দল নির্বাচনের সময় সেনাবাহিনী নামানোর অনুরোধ
জানালেও ইসি এক্ষেত্রেও একটি ‘দ্বৈত ভূমিকা’ পালন করে। তখন তাদের
সিদ্ধান্তে জানা যায়, সেনাবাহিনী ২৬-২৯ এপ্রিল মাঠে থাকবে। ঠিক ১২ ঘণ্টা পর
ইসি মত পরিবর্তন করে জানায়, সেনাবাহিনী ক্যান্টনমেন্টে থাকবে। শুধু
সেনাবাহিনীকে ডাকা হলেই তারা মাঠে যাবে! ইসির ওই ভূমিকাকে বিবেচনায় নিয়ে
সাবেক সিইসি বিচারপতি রউফ মন্তব্য করেছিলেন কিনা জানি না, তিনি বলেছিলেন,
যদি সরকারের কাছ থেকে নির্বাচন কমিশনকে ‘মুক্ত’ করা না যায়, তাহলে সুষ্ঠু
নির্বাচন সম্ভব নয়!
১৯, ২০ ও ২১ এপ্রিল খালেদা জিয়ার
নির্বাচনী প্রচারণায় বাধা দেয়া হয়। তাকে কালো পতাকা ও তার গাড়িতে লাঠি
নিক্ষেপ করা হয়েছে। তিনি নির্বাচনী প্রচারণা (উত্তর ঢাকাতে) অনেকটা
অসম্পূর্ণ রেখেই ফিরে গেছেন। বিএনপির ও সুজনের পক্ষ থেকে নির্বাচনের অনেক
আগেই সেনা মোতায়েনের দাবি করা হলেও প্রথমে মিশনের পক্ষ থেকে চার দিনের
(২৬-২৯) জন্য সেনা মোতায়েনের কথা বলা হলেও, ইসি পরে তাদের মত বদলায়।
সরকারের সিনিয়র মন্ত্রীরা প্রকাশ্যেই বলেছিলেন, সেনা মোতায়েনের প্রয়োজন
নেই। এমনকি র্যাবের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিও বলেছিলেন, সেনা
মোতায়েনের প্রয়োজন নেই। বিএনপি সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থীরা গ্রেফতার
হয়েছেন। আর তাদের প্রচারণায় বাধা দেয়া হচ্ছে- এ অভিযোগ আমরা প্রতিদিন
শুনছি। একাধিক প্রার্থীর প্রার্থিতা নিশ্চিত করা, বুথে পোলিং এজেন্টদের
থাকা নিশ্চিত করা এবং একইসঙ্গে একটি শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি
করার দায়িত্বটি নির্বাচন কমিশনের। এটা বলার অপেক্ষা রাখে না, ইসি এক কঠিন
বাস্তবতার মুখোমুখি।
বিএনপি প্রার্থীদের নির্বাচনী
প্রতিযোগিতায় রাখা (অভিযুক্ত হলে কীভাবে আইনি সহযোগিতায় জটিলতা দূর করা
সম্ভব, তা দেখা) এবং তাদের নিরাপত্তা দেয়া, একটি ‘লেভেলপ্লেয়িং ফিল্ড’ এর
পরিবেশ সৃষ্টি করার দায়িত্বটি নির্বাচন কমিশনের। আইন তাদের যথেষ্ট ক্ষমতা
দিয়েছে। নির্বাচনের এক মাস আগে সিটি করপোরেশনের আওতাধীন পুলিশ প্রশাসনের
‘নিয়ন্ত্রণ’ এর দায়িত্বটি নির্বাচন কমিশনের ওপর বর্তিয়েছে। অর্থাৎ ইসির
আন্ডারে এখন কাজ করছে পুলিশ প্রশাসন। ফলে একটি বড় দায়িত্ব রয়েছে নির্বাচন
কমিশনের। আইন বলে, ওই সময় নির্বাচন কমিশনের অনুমতি ছাড়া কোনো প্রার্থীকে,
কোনো পোলিং এজেন্টকে গ্রেফতার করা যাবে না। কিন্তু প্রার্থীদের গ্রেফতারের
খবর ছাপা হয়েছে। সুতরাং ‘ইসির’ মুখের কথায় চিড়ে ভিজছে না। কমিশনকে তার
ক্ষমতা প্রয়োগ করে তার নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করতে হবে। কমিশন এটি পারবে কিনা,
সেটিই এখন দেখার বিষয়। মাত্র কয়েকটি দিন। এ নির্বাচন দুইটি বড় দলের জন্যই
‘প্রেস্টিজ ইস্যু’। কোনো ধরনের ‘প্রভাব’ বিস্তার না করে নির্বাচন কমিশনকে
সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন পরিচালনা করতে দেয়া সরকারের জন্য মঙ্গল। এর মাধ্যমে
সরকার প্রমাণ করতে পারবে যে, সরকার এ ধরনের নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করে না!
অতীতে বেশ কয়েকটি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে (সিলেট, গাজীপুর, খুলনা ইত্যাদি)
সরকারের কোনো ‘হস্তক্ষেপের’ রেকর্ড নেই। কোনো ধরনের কারচুপিও হয়নি।
আরেকবার সুযোগ এসেছে সরকারের কাছে, এটা বিশ্ববাসীকে দেখানো যে, সরকার
নির্বাচনে কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ করছে না। আমরা যেন ভুলে না যাই, পৃথিবীর
অনেক দেশ, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন তাকিয়ে
আছে এই নির্বাচনের দিকে। শেষ মুহূর্তে কে কোন যুক্তি তুলে ধরে। বিএনপি যদি
নির্বাচন বয়কট(?) করে, তা সরকারের ভাবমূর্তির জন্য কোনো ভালো সংবাদ বয়ে
আনবে না। বিএনপির জন্যও এটা ‘প্রেস্টিজ ইস্যু’। নির্বাচনের মধ্য দিয়ে
বিএনপি মূল ধারায় যাওয়ার একটি সুযোগ পাচ্ছে এবং দীর্ঘ ৯২ দিনের আন্দোলনের
একটা ফল আমরা দেখতে পাব ভোটারদের প্রতিক্রিয়ায়। একইসঙ্গে তাদের আন্দোলনের
পেছনে কতটুকু জনসমর্থন ছিল, তাও বোঝা যাবে। যদিও সারা দেশের মানুষের পাল্স
এতে বোঝা যাবে না। কিন্তু তারপরও দুইটি বড় শহরের মানুষের মনোভাব এতে বোঝা
যাবে। দেশের মানুষের পলিসি বুঝতে এই নির্বাচনের ফলকে আমরা একটি মাপকাঠি
হিসেবে ধরতে পারি। সেজন্যই বিএনপিকে নির্বাচনী মাঠে রাখা জরুরি।
আমরা
একটা ভালো নির্বাচন চাই। একটি সুষ্ঠু নির্বাচন আমাদের অনেক প্রশ্নের জবাব
দেবে। দেশে গত প্রায় ৯২ দিন ধরে যে অসহনীয় পরিবেশ বিরাজ করছিল, এ থেকে
বেরিয়ে আসা প্রয়োজন ছিল। আমাদের সবার জন্যই তা মঙ্গল ছিল। ‘কনফিডেন্স
বিল্ডিং মেজারস’ এর যে কথা আমরা বারবার বলে আসছি, খালেদা জিয়ার
জামিনপ্রাপ্তি, তাতে একটি ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে। তবে আস্থার সম্পর্কটি
স্থাপিত হবে কিনা, সে ব্যাপারে আমি পুরোপুরি নিশ্চিত হতে পারছি না।
নির্বাচনী বিধি ভঙ্গ করে সরকারের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি অনেক আগেই
প্রচারণা শুরু করেছিলেন সরকারি দল সমর্থক প্রার্থীর পক্ষে। কিন্তু নির্বাচন
কমিশন কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেনি। উপরন্তু ঢাকায় একজন ব্যবসায়ী প্রার্থী
অনেক আগে থেকেই বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে ‘মতবিনিময়’ শুরু করে নির্বাচন
বিধি ভঙ্গ করলেও ইসির কোনো ভূমিকা আমরা দেখিনি। এই নিবন্ধ লেখা পর্যন্ত
বিএনপির প্রার্থীরা প্রচারণা শুরু করলেও তাদের অভিযোগ অনেক।
এ
নির্বাচনকে জাতীয় নির্বাচনের সঙ্গে তুলনা করা যাবে না, এটা সত্য কথা। তবে
আগেই উল্লেখ করেছি জাতীয় রাজনীতিতে এর একটা প্রভাব থাকবে। ইসি এবং
পরোক্ষভাবে সরকারের দায়িত্ব যেমনি বিএনপিকে নির্বাচনের মাঠে রাখা, ঠিক
একইসঙ্গে বিএনপির উচিত হবে ‘সব প্রতিকূলতা’ উপেক্ষা করে নির্বাচনে অংশ নিয়ে
‘জনমত’ যাচাই করা। এটা ঠিক, ডজন ডজন মিডিয়াকর্মীর উপস্থিতিতে ‘কারচুপি’
করাটা অত সহজ হবে না। কোনো না কোনো মিডিয়ায় এটা আসবেই। এ যুগে মিডিয়াকে
নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। শুধু তাই নয়, বিদেশি দূতাবাসের প্রতিনিধিরাও এ
নির্বাচন ‘পর্যবেক্ষণ’ করবেন। ফলে ‘সুষ্ঠু’ নির্বাচনের একটা সম্ভাবনা
কিন্তু আছেই! এক্ষেত্রে ‘লেভেলপ্লেয়িং ফিল্ড’ এর প্রশ্নটি এসেই যায়- বিএনপি
সমর্থিত প্রার্থীরা, তাদের সমর্থকরা কতটুকু প্রচারণা চালাতে পারবেন?
খালেদা জিয়া জামিন পেয়েছেন। কিন্তু মির্জা আব্বাস জামিন পাননি। মিসেস
আব্বাস নিরাপত্তার প্রশ্ন তুলেছেন। আর সর্বশেষ ঘটনায় খালেদা জিয়ার
নির্বাচনী প্রচারণায় হামলা হলো।
একটি কথা এখানে বলা
প্রয়োজন, খালেদা জিয়ার ক্ষেত্রে সরকার যে ‘নীতি’ অনুসরণ করেছে (আদালত
কর্তৃক জামিন দিয়ে তাকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যাওয়ার সুযোগ), তা যদি বিএনপি
সমর্থিত কাউন্সিলর পদপ্রার্থীদের ক্ষেত্রে অনুসরণ করা না হয়, তাহলে
‘জটিলতা’ বাড়বে। এক্ষেত্রে বিএনপিকে একটি শক্তিশালী বিরোধী অবস্থানের দিকে
ঠেলে দিতে পারে! সেটি হবে না, আমরা এটাই প্রত্যাশা করি। মোট কথা, উভয় দলের
জন্যই একটি সম্ভাবনার জন্ম হয়েছে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সামনের দিকে
তাকানোর। বিএনপি নিশ্চয়ই গত তিন মাসের ‘আন্দোলন’ থেকে অনেক কিছুই শিখেছে।
বিএনপির শীর্ষ নেতারা নিশ্চয়ই এটা উপলব্ধি করবেন যে, তাদের ব্যর্থতা কোথায়!
এককভাবে খালেদা জিয়া এখনও একটি ‘শক্তি’। বিএনপির হাজার হাজার কর্মী ও
সমর্থকের মাঝে তার কোনো বিকল্প নেই। প্রায় ৩৩ বছরের রাজনৈতিক জীবনে তিনি
তিন তিনবার প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, আশির দশকে এরশাদবিরোধী আন্দোলনে তিনি
‘আপসহীন নেত্রী’তে পরিণত হয়েছিলেন। কিন্তু এবারের পরিস্থিতি থেকে নিশ্চয়ই
তিনি কিছু ‘শিখেছেন’। দলের সিনিয়র নেতারা যারা স্থায়ী পরিষদে রয়েছেন, তাদের
সবার সমর্থন তিনি পেয়েছেন, তা বলা যাবে না। তাই দল গোছানোর কাজটি তাকে এখন
করতে হবে।
আরও একটি কথা, যা সবার জন্যই ভালো এবং বড়
দলগুলোকে তা বিবেচনায় নিতে হবে। এক. স্থানীয় সরকার পর্যায়ে দলীয়ভাবে
নির্বাচন হওয়াই মঙ্গল। আর এজন্য আইন পরিবর্তন করাটা জরুরি। দুই. নির্বাচন
কমিশনকে সত্যিকারভাবে ‘নিরপেক্ষভাবে’ কাজ করতে দেয়া। নির্বাচনের তারিখ যখন
ঘোষণা করা হয়, তার ঠিক এক সপ্তাহ আগেই পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজি) এপ্রিলের
মধ্যে নির্বাচন করার কথা প্রকাশ্যেই বলেছিলেন। কাকতলীয়ভাবে প্রধান
নির্বাচন কমিশনার ২৮ এপ্রিলই তারিখ ঘোষণা করলেন। এতে করে মানুষ বিভ্রান্ত
হতে পারে। সিইসি মে মাসের প্রথম সপ্তাহে নির্বাচনটি করলে, তাতে ক্ষতি তেমন
ছিল না। এখন সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, তারা নির্বাচন কমিশনের কর্মকা-ে
হস্তক্ষেপ করছে না। কিন্তু নির্বাচন কমিশনের ভূমিকায় মানুষ সন্তুষ্ট হতে
পারছে না। আইজিপি প্রশ্ন রেখেছেন, খালেদা জিয়া আচরণবিধি লঙ্ঘন করেছেন কিনা?
(কালের কণ্ঠ, ২০ এপ্রিল)। একজন সরকারি বেতনভুক্ত কর্মচারী হিসেবে তিনি কি এ
ধরনের প্রশ্ন করতে পারেন? যুক্তির খাতিরে যদি ধরে নিই খালেদা জিয়া
আচরণবিধি লঙ্ঘন করেছেন, তাহলে এটির দেখার দায়িত্ব তো নির্বাচন কমিশনের!
কোনো সরকারি কর্মকর্তা কি বলতে পারেন? একজন সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার
ড. এটিএম শামসুল হুদা এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘স্থানীয় সরকার নির্বাচনের
সময় সরকারের ক্ষমতা অঘোষিতভাবেই থেকে যায়। ...তাই আমরা ‘লেভেলপ্লেয়িং
ফিল্ড’ চাই বলি না কেন, বাস্তবে এটা করাটা খুব সহজ নয়। তিনি আরও বলেছেন,
‘দুর্নীতি দূর করতে না পারলে সিটি করপোরেশনের কোনো সমস্যারই সমাধান হবে না।
(কালের কণ্ঠ, ২০ এপ্রিল)। তিনি দলীয়ভাবে স্থানীয় সরকার নির্বাচন করার
পক্ষেও অভিমত দিয়েছেন। একজন সাবেক সিইসি। তিনি জানেন সমস্যাটা কোথায়? তাই
একটি কার্যকর সিটি করপোরেশনের স্বার্থে তার পরামর্শ বিবেচনায় নেয়া যেতে
পারে।
একটি নির্বাচন হচ্ছে বটে, কিন্তু এই নির্বাচন অনেক
প্রশ্নের জন্মও দেবে। মেয়র প্রার্থীরা যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, এসব
প্রতিশ্রুতি তারা আদৌ পূরণ করতে পারবেন না। কেননা তাদের ক্ষমতার সীমাবদ্ধতা
রয়েছে। এ কারণে ‘নগর সরকারে’ ধারণাটি নিয়ে চিন্তাভাবনা করা উচিত। তবুও
নির্বাচনটি অনেক দিক দিয়ে ভালো। এর মধ্য দিয়ে বিএনপি মূল রাজনৈতিক
প্রক্রিয়ায় ফিরে আসার একটি ‘পথ’ পেল। কিন্তু নির্বাচন যদি সুষ্ঠু না হয়,
তাহলে আমাদের জন্য আরও খারাপ দিন অপেক্ষা করছে! তাই দায়িত্বটি সবার- সরকার,
বিরোধী দল এবং সেই সঙ্গে নির্বাচন কমিশনেরও।
Daily Alokito Bangladesh
26.04.15
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
0 comments:
Post a Comment